গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৬

নীহার চক্রবর্তী

ভুল গন্তব্য

 ''ছেলেটা খারাপ লেখে না । একটু দেখ তো । আমি আর কতটুকু বুঝি ।''
--সাহিত্যপ্রেমী দেবদাস ওর বন্ধু দিবাকরকে বলল । সেখানে ছেলেটা মানে উঠতি কবি তীর্থও ছিল । সে খুব উৎসাহী ওর প্রিয় কবির মুখের কথা শোনার জন্য ।
দিবাকর তীর্থর লেখা কয়েকটা কবিতায় চোখ বোলাল খুব সামান্য সময়ের মধ্যে । একটু আগে সে চুপচাপ বসেছিল । এবার সে তার ব্যস্ততা দেখাতে লাগলো । মুখ তুলে বলল দেবদাস,''হবে না বলছি না । লিখতে থাকুক ।'' কবিতার কাগজ সে দেবদাসের হাতে তুলে দিয়ে উঠে পড়লো ।
ফিরে আসার পথে তীর্থ বেশ মনমরা হয়ে বলল দেবদাসকে,''আমার দিকে সেভাবে কবি তাকালই না । আপনার সঙ্গে যেটুকু...'' শুনে হেসে ফেললো দেবদাস । তারপর তীর্থর কাঁধে হাত রেখে বলতে থাকলো,''পচা শামুক দেখেছিস ? তা ও তোকে সেই ভেবেছে । এটাই ওদের দেখার অভ্যাস । আবার তোর মধ্যে ভূতও দেখতে পারে । মনে কিছু করিস না । আর কারোর কাছে যেতে হবে না তোকে । এরা আবার কীসের বড় কবি ? আমি তোকে বড় কবিদের কবিতার বই দেবো । তাদের লেখা দেখলেই শিখে যাবি । লিখতে থাক তুই । আমি আশায় থাকলাম খুব ।''
তীর্থর মুখে তখন হাসি ফুটে উঠলো । ও মনে-মনে বোঝার চেষ্টা করলো,কবিরা কোন কাজেই আসে না কারোর । সাহিত্যপ্রেমীই আমার দরকার । ঠিক দেবদার মতো ।

মানব-জমিন রইল পতিত 

‘’চোখ উদাস-উদাস করলে কবি হয় না । গালে হাত দিলেও কবি হয় না । আকাশের দিকে তাকালেও না । উনি কন্যাদায়গ্রস্ত । আমি তো ওনাকে কিছু দিয়ে দিয়েছি । তোর সামনে এখনো দাঁড়িয়ে আছেন । এবার তুই দে ।‘’
--পরাশর একথা বলতেই ওর কবি-বন্ধু ধীরাজ গাল থেকে হাত নামিয়ে রাগত-স্বরে ওর দিকে তাকাল । পরাশর বলল,’’রাগ বাদ দে এখন । উনি এখুনি চলে যাবেন । দিয়ে দে ।‘’
কিন্তু ধীরাজের দেওয়া আর হল না । বেচারার সময় ছিল না আর । অনেক মানুষের মধ্যে হারিয়ে গেলেন তিনি । তা দেখে এবার পরাশর বলে উঠলো,’’এটা নিয়েই কবিতা লিখিস । সবাই তোকে ধন্য,ধন্যকরবে । তবে আমার কাছে পাঠক এলে সব বুঝে যাবে ।‘’
এবার বেশ রাগের সঙ্গে ধীরাজ উঠে গিয়ে বসলো মাঠের মাঝখানে । পরাশর সহাস্যে বলতে থাকলো,’’ওটাই তোর সেরা জায়গা । কেউ আর আসবে না ওখানে । গালে হাত দিয়ে আকাশ দেখতে থাক । বৃষ্টি তো আনতে পারবি না ।''