গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৬

দেবাশিস কোনার

লম্বকর্ণ

বেদনা প্রকাশের কোন ভাষা জানা ছিল না সুতনুর । খুব সহজেই সে মানুষকে বিশ্বাস করে ফেলে । এই কারনে সে জীবনে কম অপমানিত হয় নি । তবু সে কখনও মানুষকে বিশ্বাস না করে পারে নি । সুতনুর জীবনে প্রথম আঘাতটা এসেছিল একজনের কাছ থেকে । ওর নাম অভি । অভির বাবা মারা যাওয়ার পর বেচারা অসহায় হয়ে পরেছিল । হাতে কোন কাজ ছিল না । বাড়িতে মা অসুস্থ । ভাইটা তখনও লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত । হটাত একটা ম্যানি মার্কেট কোম্পানিতে যোগ দিয়েছিল অভি । একে বেকারত্বের চরম জ্বালা - যন্ত্রণা আবার তার ওপর সংসারে অভাব অনটন ।অভি তাই ওদের ফাঁদে পা দেয় ।
        সুতনুকে এসে তার সমস্যার কথা অকপটে বলে । অভি তার বন্ধু । তার ওপর অভাবের জ্বালায় জ্বলছে , তাই দাদা অতনুকে ধরে ওকে একটা কেশ করিয়ে দেয় । দিলি তো দিলি বেশ করলি । সেই কোম্পানি এখন লাটে উঠে গেছে ।কিন্তু অভি আরও যেটা করল , সেটা হল তাকেও ওই পাঁকে নামাল । এখন সেই সব টাকা জলে ।
     মাঝে মাঝেই কাস্টমারদের জঘন্য অপমানে সুতনুর বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই শেষ হয়ে যায় । মনে হয় আর বেঁচে থাকার কোন অধিকারই তার নেই । আত্মহত্যাই তার শেষ অস্ত্র । অভি এখন ক্যুরিয়ার সার্ভিসে কাজ করছে । তাকেই বা কি বলবে সুতনু ?
      এইরকম সময়ে হানাই ভাই এল তার জীবনে । শুধু একটা প্লান ! একটা প্লান যে তাকে এমন বদলে দিতে পারে তা ভাবতেই পারে নি সুতনু । অথচ এই হানাইকে সে কখনও , তার কাছের বন্ধু বলে স্বীকারই করেনি  । আগে থেকেই নেট মার্কেটর অভিজ্ঞতা ছিল তার । সেই সুযোগ কাজে এল । যারা তার মাধ্যমে আগের কোম্পানিতে টাকা রেখেছিল তাদের কাছে শুধু এক বছরের সময় চেয়ে নিল সুতনু ।
     তারপর সবটাই ইতিহাস । আজ হানাই তার বস । তার জীবনে আশার আলো ফুটিয়েছিল যে বন্ধু । একই পাড়ায় থাকার সুবাদে হানাই জানত সুতনুর বিপদের কথা । হানাই 'ফর ইউ' তে জয়েন করে বসেছিল বহুদিন । এক সন্ধ্যায় চায়ের দোকানে সুতনুকে দেখে সে প্লানটা বলল । শুনে সুতনু অবাক । এত ভাল একটা প্লান । যেখানে কলার ধরে কেউ বলবে না টাকা ফেরত দেবার কথা । আধুনিক প্রযুক্তি । সরকারকে ট্যাক্স দিয়ে স্বচ্ছ পথে উপার্জনের এত ভাল পথ আর কি হতে পারে ?

      সুতনু এখন বিপদসীমার বাইরে ।