যাপিত জীবন
এক
কেমন কাটছে দিন?এই
প্রশ্নটা যদি কেউ করতে চায় দীপকে,অনুরোধ
করব একটু সময় নিয়ে করুন প্লিজ।
হাইস্কুলের এক প্রাক্তন সহপাঠী সফটওয়ার
ইঞ্জিনিয়ারিং এর ডিগ্রী নিয়ে বহুজাতিক কোম্পানীতে চাকরি করার গৌরব অর্জন করে
বর্তমানে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া নিবাসী।ফেসবুকে তাকে খুজে পেয়ে ফ্রেন্ডশিপ
রিকোয়েস্ট পাঠাতে দীপ কয়েক সেকেন্ডের বেশী দেরী না করলেও অপর প্রান্ত থেকে
রিকোয়েস্টটি কনফার্ম হতে অনেক সময় লাগল।তারপর বন্ধুটি আবার চুপ,মেসেজেরও উত্তর আসে না।হয়ত তার
সাথে কথা বলার প্রয়োজন মনে করছে না সে,
এই উত্তরটা মনে মনে তৈরী করলে,আরেকটি
প্রশ্ন তৈরী হয়,একেই
কি বলে ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স?
তখনই ফোন আসে কয়েক হাজার মাইল
দূর থেকে।তবে বিদেশের নয়, এদেশেরই
যে ছোট্ট একটা শহরে বড় হয়ে উঠা, সমস্যা
ও দৈন্যতার মধ্যেও যেখানে ছিল দূর্গাপূজার আনন্দ, সেখান থেকে।কয়েক বৎসরের বড়
তমোজিৎ পাল কোন সূত্রে দীপের ফোন নাম্বার পেয়ে গিয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়াবাসীর সাথে তখন
দীপের একটা প্রতিযোগীতা শুরু হয়।বলল,বর্তমানে
পুনেতে আছি।কোরিয়ান ভাষায় ডিপ্লোমা নিয়ে একটা কোরিয়ান কোম্পানীতে কাজ করছি।বিদেশী
কোম্পানীতে বেতন বরাবরই ভাল।কোম্পানীর দেওয়া ফ্ল্যাটে থাকি,ফুডিং এর এরেঞ্জমেন্টও
কোম্পানীর।কোম্পানীর গাড়ী স্টাফদের ফ্ল্যাট থেকে অফিসে নিয়ে যায়।অতএব বেতন যা পাই,সামান্য পকেট খরচ বাদে প্রায়
সবই জমে যায়।
তারপর অবধারিত প্রশ্ন মাসিক বেতনের পরিমান নিয়ে।এর
উত্তর শুনে তমোজিত বলল,তাইলে
তো তুমি রাজা।
নিজেকে গৌরবদান করতে দীপ আরও
বলে,এই কোম্পানীতে প্রায় দুই বৎসর
হয়ে গেছে।কিছুদিন পরই কোরিয়াতে চলে যাচ্ছি এক বৎসরের জন্য।তখন কোম্পানীর হেড অফিসে
কাজ করার পাশাপাশি ভাষাটা ঝালিয়ে নিতে পারব।
ফোন রেখে দিলে বুঝতে পারে,অনেক কথাই বলা হয়নি।কোম্পানী
এদেশে ট্যুরিজম সেক্টরে আছে।আর এই বিজনেসে আপ ডাউন প্রচুর বলে চাকরিতে অনিশ্চয়তা
অনেক।কোরিয়া যাওয়ার ব্যাপারটা শুধু একটি প্রতিশ্রুতি মাত্র ছিল। এখনো ফাইনাল
হয়নি।আর এই চিন্তাটাই কুরে কুরে খায়। তবে যদি একবার যাওয়া যায় সেখানে ,কেল্লাফতে।
ভোর সাড়ে চারটায় ঘুম থেকে উঠে
সাড়ে পাচটায় ফ্লাইট ধরে পুনে থেকে ব্যাঙ্গালোর।সেখানে ফ্লাইট চেঞ্জ করে অন্য
ফ্লাইট ধরে ত্রিভাঙ্কুর পৌছে যাওয়া গেল দুপুর বারোটার মধ্যেই। সেখানে মিটিং শেষে
আবার একই পথে ফিরে বিছানায় যেতে রাত একটা।মোবাইলে বেতন ক্রেডিট হবার মেসেজ আসলে
এসব ডিউটি গায়ে লাগে না।
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সেসব
কিছুই মনে থাকে না।বরং এই কথাটিই যেন প্রতিধ্বনিত হতে থাকে দেয়ালগুলিতে,কোম্পানীতে চাকুরির তিন বৎসর
পুর্ন হলে এক বৎসরের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে সিওলের হেড অফিসে। চাকরির পাশাপাশি
কোরিয়ান ভাষাটা আরো ভাল করে শেখার জন্য একটা ইন্সট্যুটেও সে ভর্তি হতে পারবে
কোম্পানীর খরচেই।একটা তাড়নায় সঠিক সময়েই হাজির হল ব্রেকফাস্ট টেবিলে।
একজিকিউটিভ যত
আগেই ঘর থেকে বেরোক,অফিসে
গিয়ে দেখবে ম্যানেজার তার আগে পৌছে গেছে।
কোম্পানীর কান্ট্রি ম্যানেজার
মানিকলালকে মাঝেমধ্যেই দিল্লী থেকে পুনের অফিসে এসে কাজ করতে হয়। ফলে এই সময়টা
স্টাফদের মধ্যে একটা তোড়জোর ভাব থাকে।
গুড মর্নিং মিস্টার মানিক!পরিমিত হাসিতে বলল।
মর্নিং!মানিকলাল
পুনে মিরর পত্রিকায় চোখ বুলাচ্ছিল।বাট নো সিস্টার,নো ব্রাদার,অনলি মানিক।
আবার পরিমিত হাসির সাথে একটা সরল মুখ মেলে ধরতে হল
বুদ্ধি করে।
স্যার,কোম্পানীতে
কি শুরু হল,এই
মাসে স্যালারী এল আটদিন পর।দীপ প্রসংগ পাল্টাতে চাইল।
কান্ট্রী ম্যানেজার মানিকলাল
বললেন, তুমি জানো এমনও অনেক কোম্পানী
আছে যেখানে স্যালারী হতে পনেরো বিশ দিনও লেগে যায়?
আবার এমনও অনেক কোম্পানী আছে
যেখানে বেতন পেতে এক তারিখের বদলা দুই তারিখ হয় না। এই কথাগুলো মনে তৈরী হলেও দীপ
বলল,স্যার, আমাদের গতি কি হবে? এরকম দিন পাস করা তো খুব
অসুবিধা।এত অনিশ্চয়তা।হতাশা জর্জরিত কন্ঠে বলি।
মানিকলালের মুখটা একটু নিষ্প্রভ
হল। এই চাকরি নিয়ে মাঝে মধ্যে আমিও দোটানায় পরে যাই। তুমি তো ব্যাচেলার। আমার তো
বউ বাচ্চা ফ্যামিলি আছে।
দীপ বলল, না
স্যার, আমারও অনেক রেস্পন্সিবিলিটি
আছে। জানেন তো বাড়ীতে টাকা পাঠাতে হয়।
সব টাকা পাঠিয়ে দাও?
হ্যাঁ।
আরে, কিছু নিজের জন্যও রাখিও।দেখবে
বিপদের সময় পয়সা কাজে আসে। কোন সম্পর্ক কাজে আসে না।
দীপ এতদিনে বুঝে ফেলেছে এই কোম্পানীর ইন্ডিয়ান
অফিসে চাকরি করতে হলে যার আশীর্বাদের হাত আমাদের উপর সবচে বেশী দরকার সে কান্ট্রি
ম্যানেজার, চাকরির
অভিজ্ঞতা প্রসুত এই জ্ঞান থেকে সংসার সম্পর্কিত তার উপদেশ নীরব শ্রোতা হয়ে যায়।
ফ্ল্যাটের অপর বাসিন্দা পিটার ঘর থেকে বেরিয়ে এলে এ যেন
এক স্বাভাবিক ঘটনা এরকম ভাব দেখিয়ে দীপ ও মানিকলাল দুজনেই সতর্ক হয়। দীপকে দেখেও
কালকের পুনে-ত্রিভাংকুর
ট্রিপ সম্পর্কে কিছু বলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করল না।
কিচেনের দিকে পিটার ঢূ মারলে
কুক আর আর তার এসিস্ট্যান্টের মধ্যে একটা ভয়কাতুরে ভাব আসে। পিটার আবার নিজের রুমে ঢুকে
গেলে
হয়ত আর কথা বলার সুযোগ হবে না,তাই প্রশ্নটা করেই ফেলল।স্যার, আমার কোরিয়া যাওয়ার ব্যাপারটা
কি হল?
প্রশ্নটা শুনতে পেল কি না বুঝা গেল না,পিটারের দরজার দিকে ঈশারা করে
মানিকলাল অনেকবার জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন আবার করে,কি রকম?
অন্যকে নিয়ে যতই জেলাসী থাক,টিমওয়ার্কই আসল।এসব
ম্যানেজম্যান্টের ফান্ডা।বলি,চলতা
হ্যায়।
মানিকলাল বলল,মেইক
হিম ফ্রেন্ড।
এটা কি দীপের প্রশ্নের উত্তর ছিল?
দুই
ফলে সকালবেলা ব্রেকফাস্টের
টেবিল কোন সুখদুখের আলোচনা বা পত্রিকায় আসা কোন নিউজের আলোচনা নয়,হয়ে যায় অফিসের মিটিং্যের টেবিল।
ফ্ল্যটে
অফিসের আলোচনা নয় নিয়মের প্রবক্তা পিটার প্রস্তাবনা পেশ করে। কোরিয়া থেকে আসা
ক্লাস নাইনের একটি মেয়েকে পড়ানোর জন্য এমন একজন টীচার নিযুক্তি দেওয়া হয়েছিল যার
যোগ্যতা এম বি এ।কাল সে ফোন করে জানিয়েছে আজকে সে পরাতে যেতে পারবে না।
মেয়েটিকে রিক্র্যুট করেছিল দীপ।এই পৃথিবী কাজের
কৃতিত্ব কেউ উল্লেখ না করলেও ব্যার্থতার দায় ঠিকই ঘাড়ে চাপিয়ে দেবে।মানিকলালের
উপস্থিতির কারনে কৈফিয়ত দেওয়াটা আরো প্রয়োজনীয় মনে হল।
যারা টীচার
পোস্টটার জন্য এপ্লাই করেছিল তাদের মধ্যে সেই মেয়েটিই ছিল হাইয়েস্ট
কোয়ালীফাইড।বাকী সবাই গ্র্যাজুয়েট আর স্টুডেন্ট।দীপ বলল।কথাগুলোর মাধ্যম স্বাভাবিকভাবেই
ইংরাজীতে।আচ্ছা,সে
আসবে না কেন?
প্রশ্নটার উত্তরে বিরক্তি নাকি সত্যি লুকিয়ে আছে
বুঝা গেল না। ওর
পিরিয়ড চলছে,তাই
আসবে না!
দীপ মানিকের মুখের দিকে তাকালে
পিটার বলল, আমার মনে হয়,ক্লেয়ারকে পড়ানোর জন্য তুমিই যেতে পারো। তুমি তো আগে ছাত্র পড়িয়েছো।
হ্যাঁ, কিন্তু সেগুলো ছিল সাইন্সের স্টুডেন্ট।দীপ জানাল।আর ভ্যাকেশনে আমাদের ফার্ম হাউসে থাকতে এসেছিল।
দীপ,দিস
ইজ এ সিম্পল জব।পিটার বলল।
এতটুকু কথার পর এবং মানিক
নীরবতার ধারাবাহিকতায় দীপ অনিচ্ছাতেই সম্মতি জানায়।মানিকলালকে বলেছিল,বাসায় টাকা পাঠাতে হয়।আসলে না পাঠালেও চলে।তবে টাকা পাঠানোর চেয়ে
গুরুত্বপুর্ন অন্তত ফোন করে খোজখবর নেওয়া।
ফার্স্ট,ইউ
রিপোর্ট ইন অফিস এন্ড ফ্রম দেয়ার ইউ কেন গো টু টিউশন। পিটার দুই আঙ্গুলে চপস্টীক
নিয়ে নুডুলস তুলতে তুলতে বলে।
কিন্তু দীপ এখন
ফোন করবে কিভাবে? ফ্ল্যাটের নীচে গাড়ী নিয়ে ড্রাইভার অপেক্ষা করছে।
তিন
ক্লেয়ারকে পড়াতে গিয়ে একটি নতুন অভিজ্ঞতা হবার
পরিপ্রেক্ষিতে সেখান থেকে ফিরে দীপ সোজা পিটারের টেবিলেই গেল।একটা বাচ্চা মেয়ে,আমার কাছে জানতে চায় আমার বেতন
কত? বলে, তোমার একদিনের বেতন কত?সেই টাকাটা পেয়ে যাবে,অতএব, বি কোয়াইট। পড়ানোর বৃথা চেষ্টা
করে লাভ নেই।
হয়ত উত্তর দিতে সময় নিতে গিয়ে পিটার কম্প্যুটারে
ব্যস্ততা অব্যাহত রাখলে দীপ নিজেই চিন্তায় পড়ে যায়।আজকের অভিজ্ঞতা কি ‘ইউ ব্লাডী ইন্ডিয়ান” এর চেয়ে খারাপ ?যদি না হয় তবে অভিযোগ কেন?
একটু গুছিয়ে নিয়ে পিটার বলল,একটা আঠারো বৎসরের মেয়ে আপনাকে
অপমান করে এত কথা শুনিয়ে দিল ,আর
আপনি তাকে কিছুই বলতে পারলেন না?
আমার কি বলা উচিত ছিল?দীপ
একটু সাহস করে বলে ফেলে।
আমি বলব কিভাবে?পিটার প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্ন
করে। আপনাকে যে পোস্টে কাজ করতে দেওয়া হয়েছে সে পোস্টে থেকে কি বলা উচিত সেটা
আপনিওই তো ভালভাবে বুঝবেন।
আমরা যারা সহকর্মী, তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এই
যে ,একজনের সমস্যায় আমরা অন্যরা
নিরাপদ ভোগ করি।
নিজের টেবিলে এসে দীপ কথাগুলো গুছাতে শুরু করে
কিভাবে মানিকের কাছে পেশ করবে? একজন
বসের কাজ কি ? ওর
আন্ডারে যারা কাজ করে তাদের সমস্যার সমাধান করে দেওয়া।কিন্তু কোন সমস্যা নিয়ে গেলে
পিটার মনে করে সে সমস্যার জন্য স্টাফই দায়ী।
তবে কথাগুলো ঠিকমত গুছাতে পারে না।অনেক উদাহরন
চলে এসে বক্তব্য অনেক দীর্ঘ হয়ে যায়।অতীতে মানিকলাল এজাতীয় কথাগুলো শুনেছে,কিন্তু সমাধান দিতে পারেনি।
অফিসে এরিকার উপস্থিতির কারনে
দুঃখগুলো সহজেই বাষ্প হয়ে যায়। ফর্সা রঙ আর স্লিম চেহারার চেয়ে ওকে আরো বেশী কাবু
করে ফেলে মেয়েটির সহজ চলাফেরা,নিজের
কাজটা ভাল করে করার চেষ্টা। কি কারনে মেয়েটিকে নিয়ে দীপ ভাবতে থাকে আর কি যে ভাবে
সে দীপ বুঝিয়ে বলতে পারবে না। ভিনদেশী ঐ মেয়েটার সাথে প্রেম করা সম্ভব নয় , ওর সাথে সংসার বাধা সম্ভব নয় , শুধু শারীরিক কারনে ওর সাথে যৌন
সম্পর্ক সম্ভব নয় তবু
ওকে নিয়ে ভাবনার আকাশে উড়ে বেড়াতে দীপের ক্লান্তি নেই।তবে মন্দের ভাল এই যে পিটার
ওর সাথে মাখামাখি করার চেষ্টা তো করে না মোটেই।
মানিকলাল মুম্বাই এর উদ্দেশ্যে
বেরিয়ে যাবে বলে ব্রাঞ্চ মিটিং শুরু হল।মানিকের উপস্থিতি,পিটারের কাছে অনুগত স্টাফ
হিসেবে প্রমানের প্রচেষ্টা,এরিকার
উপস্থিতির কারনে দীপ তার পারফরম্যান্স নিয়ে সতর্ক হয়।আলোচনাগুলো অবশ্যই অফিশিয়াল
ইংলিশে হচ্ছিল।
মানিকলালকে একা পাওয়ার আশায় দীপ তাকে গাড়ীতে
তুলে দিতে আসল।, স্যার,আমার কোরিয়া যাওয়ার ব্যাপারটা
একটু দেখবেন?
মানিক লাল বলল,কালকে
স্যান্ডুইচ মিটিংযে কথাটা তুলো।
স্যান্ডুইচ মিটিং অনেকটা সাপ্তাহিক মিটিং এর
মত।প্রতিটি ব্রাঞ্চ কে তখন স্কাইপে কোরিয়ার হ্যাড অফিসের সাথে বসতে হয়।কান্ট্রি
ম্যানেজার হিসেবে মানিক তো থাকবেই। কিন্তু ইন্ডিয়ান অফিস থেকে একজন স্টাফ হ্যাড
অফিসে নিয়ে যাওয়ার মত বিষয়ে পিটারের ভূমিকা কি হবে কনফিউজড হয়ে গেলে মানিকলালের
উপদেশই মাথায় আসে।
বিকালবেলা গ্রেস আর এরিকা একটু তাড়াতাড়িই অফিস
থেকে বেরিয়ে গেলে পিটার দীপকে আর নীতীনকে ওর টেবিলে ডেকে অভিযোগটা পেশ করল।এই
অফিসে বসে যদি কেউ অফিস আওয়ারে কম্প্যুটারে পর্নো সাইটে যায় তাহলে কি সেটা
গ্রহনযোগ্য?
পিটার
সরাসরি বলল না,এই
কাজটি কে করে?
আমি আমার কমন সেন্স থেকে একটা
কথা বলছি।কয়েক সেকেন্ড পর দীপই নীরবতার কাঁচ ভাঙ্গার চেষ্টা করি যুক্তির হাতুড়ি
দিয়ে।একজন পুরুষ মানুষ , ধরা
যাক তার বয়স ৪৫ এর নীচে , তার
কাছে কম্প্যুটার ও ইন্টারনেট কানেকশন আছে , কিন্তু
সে একবারের জন্যো পর্নো সাইটে যাচ্ছে না সেটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য।
নীতিন একটু
নড়েচড়ে বসে আটকে রাখা শ্বাস ফেলে,পিটার
মনোযোগী চোখ নিয়ে তাকায়।
দেখো এটা নয় যে অফিস আওয়ারে
আমরা মেশিনের মত কাজ করি ।দীপ বলতে থাকে। অফিসের কাজ করতে করতে আমরা তো নিজেদের
কাজেও ইন্টারনেট ব্যাবহার করি।ফেসবুক, নিজেদের
পার্সোনাল ইমেইল, ইউটিঊব।এখন কারো যদি পর্নো
সাইটে কোন কাজ থাকে কি আর করার।
পিটার কথাগুলো বুঝতে পারল কি না
বুঝা গেল না।বলল, দীপ,আমার মনে হয় ক্লেয়ারকে তুমি
পড়াতে পারবে।কালকেও তুমিই চলে যেয়ো ওকে পড়ানোর জন্য।
অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়ে নতুন শাস্তির আদেশ খুব
একটা বিচলিত না করলেও অন্য একটা বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
আর মানসী?আমাদের নিয়োগকৃত শিক্ষক?
ওকে জাস্ট বলো, কয়েকটা দিন অপেক্ষা করার
জন্য।পিটার কম্প্যুটারে চোখ রাখতে রাখতে বলল।
যদি কালকেও চুপ করে বসে থাকতে বলে?
চুপ করে বসে থাকবে।পিটার বলল।আদেশ,উপদেশ কিংবা মতামত,সেটাই শিরোধার্য করতে হবে
দীপকে।
চার
আটতলা একটি ফ্ল্যাটবাড়িতে
কোম্পানী দুটো ফ্ল্যাট নিয়েছে।পার্কিং স্পেস আর দেওয়াল ঘেষে কিছু গাছ থাকলেও পার্ক
নেই। পাশের হাউজিং এ পার্ক আছে, সেখানে
বার্থডে পার্টির আয়োজনও হয়।ক্লাউন এসে হাত মেলায় নিমন্ত্রিতদের সাথে। আর একটু
দূরেই আছে ব্রম্মা সানসিটি , সেখানে
সুইমিং পুল আর ক্লাব হাউসও আছে। এই তুলনামূলক আলোচনায় প্রমানিত হয় যা দীপরা গরীব
এলাকায় বাস করে ।
দুইটা ফ্ল্যাটের একটাতে মেল
স্টাফ,অন্যটাতে ফিমেল। দুটোই তিন বেড রুমের,দুটোটেই একটা বেড্রুম খালি পড়ে
থাকে , সেটা গেশটদের জন্য।খাওয়ার
ব্যাবস্থা দীপদের ফ্ল্যাটেই,তাই
মেয়েদের আসতেই হয় সেখানে।
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে সাতটা
হল ডিনারের টাইম।ডাইনিং টেবিলে পিটার বলল, আই
ডোন্ট নো হোয়াই, আই
ফাউন্ড কমন ইন্ডিয়ানস হ্যাভ এ টেন্ডেন্সী নট টু ওয়ার্ক।দে আর ভেরী আইডল।
যথারীতি পিটার, এরিকা, গ্রেস আর দীপ- এই চারজন খাওয়ার টেবিলে। গ্রেস
বয়সে সবচে সিনিয়ার আর মহিলা বলে ওর কোন বিষয় নিয়ে পিটার কথা বলবে না।তাহলে কি দীপকেই অলস বলছে?
যখনই আমি দুপুরবেলা এপার্ট্ম্যান্টে আসি , এসে দেখি মেইড টিভী দেখছে, কুক ঘুমাচ্ছে।পিটার তার মন্তব্যের
কারন জানায়।
আমিত নেপালী।
মেইড আশা মারাঠী , কিন্তু
খ্রিষ্টিয়ান। দীপ ওকে জিগ্যেস করেনি কখনো কিন্তু মনে হয় ওরা দলিত শ্রেনীর লোক ছিল।
শালা! দুপুরবেলা
কাজ শেষ হয়ে গেলেও কি তোর আন্ডারওয়ার শুকঁবে?রাগ চরচর করে চড়তে থাকে
দীপের।অমিত সকলের লাঞ্চ স্কুটিতে করে অফিসে পৌছে দেয় ,তারপর তার কাজ অবশ্যই কম।
এরিকা তেমন
কথা বলছে না। যদিও গ্রেস মাঝে মধ্যে এটা ওটা
কথা বলছিল।
পিটার বলল, দীপ , টেল মি ওয়ান থিং!তুমি কি খাওয়ার সময় তোমার হাত
ধোও?
একমাত্র দীপই হাত দিয়ে খাচ্ছিল,বাকী সবার হাতে চামচ।এরিকা আর
পিটার তো কোরিয়ান খাবার খাচ্ছে ,তাদের
চামচ দরকার।কিন্তু গ্রেস ইন্ডিয়ান খাবার খেলেও চামচ ব্যাবহার করছে।দীপ একা হয়ে
গেল।
হ্যাঁ,অবশ্যই।
প্রত্যেকবার?
ইয়েস।
ইউ নো গ্রেস। এরিকা মাথা নিচু করে খাচ্ছিল বলে
পিটার একমাত্র তৃতীয় ব্যাক্তি গ্রেসের কাছেই পেশ করে কথাটা। যখনই আমি কাউকে দেখি
হাত দিয়ে খাচ্ছে , আমার
মনে হয় দে আর স্টার্ভিং এন্ড ডিরেক্টলি কেইম ফ্রম জাঙ্গল।
দীপকে বাচাঁল গ্রেস। সে একটা গল্প বলল।একবার
মিস্টার পার্ক,কোম্পানীর এম ডি, ইন্ডিয়াতে এলে একটা ইনভাইটেশন
ছিল সাউথ ইন্ডিয়ান ফ্যামিলিতে। একটা স্কুলের ডিরেক্টরের বাড়ীতে।ওরা আয়োজন করে ছিল
সাউথ ইন্ডিয়ান খাবার।সেদিন ওরা খাবারের সাথে চামচ দেয়নি।স্কুল ডিরেক্টর বলল,হাত দিয়ে খেলে তবেই রিয়েল টেস্ট
পাবেন।সেদিন মিস্টার পার্কও হাত দিয়ে খেয়েছিল।
খাবার পর দীপ রুমে এসে আয়নার
প্রতিবিম্বের দিকে তাকায়।শালা,তুমি
কি ? আদমী
হো,ইয়া পানি? কুত্তাকে যখন বেন্দা দিয়ে মারা
উচিত ছিল তখন তুমি ওর মাথায় হাত বুলাচ্ছিলে?
(শেষাংশ পরের সংখ্যায় ...)