থপ..বাঁহাত থেকে খানিকটা নিয়ে আবার
থপাস। মাটির দেওয়ালে ঘুঁটে দিচ্ছে ভাদ্দুরি অর্থাৎ ভারতী। দাঁড়িয়ে দেখছে নীপা।
অনার্স পাশ করে স্কুলসার্ভিস পরীক্ষা দিচ্ছে এবার। দূর গাঁয়ে বাস।ডিস্ট্যান্সেই এম.এ.পড়তে হচ্ছে। ছোটকাল
থেকেই এই ভারতী অনিমাদি দের কোলে পিঠে বড় হয়েছে। বাবা মা শিক্ষকতা করেন।নীপাও তাই
করতে চায়।ফর্ম ফিলাপের জন্য পাসপোর্ট ছবি চাই।ছবি তুলতে নিয়ে যাবে ভারতী।অনেক দূরে
দূরে সব দোকানপাট। তার উপর দিনকাল ভালো নয়।একা যাওয়ার প্রশ্নই নেই।ভারতীর মেয়ে
ক্লাস নাইন এ পড়ে।পড়াশোনায় ভালো।বাঁহাতে বুকের কাছে বই আর ডানহাতে চপ্পল নিয়ে
দৌড়োতে দৌড়োতে ফিরল স্কুল থেকে। বললো :
-ও মা! যাসনি একনো? যা যা সন্দে হয়ে
এলো যে।
-এইটুখানি তুই দে দিবি? যাই থালে?
মামনি বেশ হাসি মুখেই থপাস থপাস
করে আরম্ভ করে দিল।কেমন গোল গোল ঘুঁটের উপর চার আঙুলের ছাপ পড়ে যাচ্ছে। মাটির
দেওয়ালে ফুটে উঠছে ত্রিমাত্রিক যাপন চিহ্ন।
দেড়মাইল ঠেঙিয়ে গিয়ে বিবির হাট।
মফস্বলের বাজার।আস্তে আস্তে তাকে সুপারমার্কেট বানাবার তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে
কলকাতার ব্যবসায়ীরা। শপিংমল ও হবে খুব তাড়াতাড়ি।বড় রাস্তার ধারে নির্ণীয়মান তিনতলা
চারতলা ইমারতের কোন একটায়। ওরা ফটোর দোকানে ঢুকলো।ছবি তোলা হয়ে গেল।ফটোগ্রাফার বিল
এর সঙ্গে একটা পেন ফ্রী দিলো। খুব সস্তা,তিন টাকা কি পাঁচ টাকা দাম হবে।ভারতী বলে
বসলো :
-পেনটা আমার মেয়েকে দিবি হ্যাঁ
রে,আমার মেয়ে লিখবে?
নীপা অদ্ভুত একটা দোটানায় পড়ে
গেল।কী করবে এখন সে? কম বেশী যে দামেরই হোকনা কেন।ফ্রী পাওয়ার মজাই আলাদা।কেন এরকম
চেয়ে বসলো ভারতীদি? মামনি ও তো কতো ছোট ওর চেয়ে।না বলে কেমন করে? পেনটা দিয়ে
দিল।কিন্তু সারা শরীর জুড়ে কেমন আশ্চর্য রকম একটা গুমোট গরম লেগে গেল। ভ্যানে চড়ে আসতে আসতে ভাবলো,মামনির এতক্ষণে ঘুঁটে দেওয়া শেষ
হয়ে গেছে।হাতমুখ ধুয়ে মুড়ি চিবোতে চিবোতে পড়তে বসে গেছে। ভারতীদি পেনটা নিয়ে গেলে
মামনি লিখবে।