বোধোদয়
মুহূর্তে পরিবেশটা মোচর খেয়ে গেলো খরস্রোতা নদীর কুড়ে ঘোলাটে
জলের পাকের মতন । শেষটায়
পরিস্থিতি এমন হল যে কিনা, পাহাড় গাত্র থেকে কেন্দ্রীভূত জলধারা পতনের মতকরে অকস্মাত
একটা ঘটনার জন্ম নিল ।
কলেজের
মেরুনরঙা দেয়াল চোখের সামনে ভাসতে লাগলো যেন উদোম আকাশ হয়ে । ঠেশ
দিয়া দাঁড়ানোমেয়েটা এবং ছেলেদুটোর
কিংকর্তব্যবিমূঢ় ফ্যাকাশে মুখ আর ঘোলাটে চোখগুলারঅনড় পাতা
জেগে থাকল সামনের জটলার দিকে; চোখেএই মাত্র ঘটে যাওয়া ভয়ার্ত ঘটনার পর সমাচার
দেখার যেন এক মৌন অপেক্ষা !
এই নির্জন জায়গাটা প্রতিদিনের মত নয় আজ । ঝিঁঝিঁ পোকাদের ক্রমাগত চিৎকারে প্রকৃতির বেহাল দশা। কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতর থেকে ভেসে আসা কনসার্টের শব্দের উৎপাত আর হাজারো শিক্ষার্থীর আনন্দ উল্লাস ধ্বনি মিলেমিশে অনেকটা শোরগোলের মত শোনাচ্ছে কানে । প্রতি বছর ঠিক এই সময়টায়, হালকা শীত শীত আমেজ যখন আসছে আসছে করে, হাইওয়ের পাশের খালপাড়ে যখন কাশফুল পাখনা মেলে, তখন কলেজের এনুয়েল প্রোগ্রাম শুরু হয় । গত তিনদিন ধরেচলছে অনুষ্ঠান ।সামনে চলবে আরো চারদিন । সাত দিনের প্যাকেজপ্রোগ্রাম এবার । বিশাল মাঠের মধ্যিখান জুড়ে চারকোনা ছাতার মত প্যান্ডেলের নিচে দর্শককুল উন্মত্ত; নেচে গেয়েখুশি ভাগাভাগি করে নিচ্ছে । আর দর্শককুল বলতে এই কলেজেরই শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং কলেজের সাথে সংশ্লিষ্টতা আছে যাদের তারা সব এবং তাদের সাথে যাদের নিবিষ্টতা আছে তাদের কেউ কেউ যেমন, ভাই-বোন, বাবা-মা কিংবা নিকটাত্মীয়-বন্ধুবান্ধব। রিক্সাভ্যানগুলার উপর দাঁড়ায়ে পরিপাটি করে সাজানোএই মফস্বল শহরেরকিছু মানুষ কনসার্ট উপভোগের পতিত নির্যাস শুষে নেয়ার চেষ্টায় রত । তারা কলেজ বাউণ্ডারির বাইরে মিশমিশেকালো পিচ ঢালা রাস্তার উপর । হয়তো আরো অনেকেদূরে কোন বাসার বারান্দায় কিংবা নিভৃত ঘরের আবছা আলোময় আবহে মাতোয়ারা হয়ে সুরে-গানে তন্ময় ।
মেয়েটি
দাঁড়ানো একদম নাঙা
পায়ে । পা-হাত কাঁপছে । গোটা শরীরেও কাঁপন তার, মৃগী রোগীর মতন । তার খসে
পড়া উর্ণার অবশিষ্ট ভাগ সামলানোর ব্যর্থ চেষ্টা
একহাতে, অন্যহাতে দেয়ালের কাছ ঘেঁষে অযথা বেড়ে ওঠা ডুমুর গাছের কাণ্ড ধরা মুঠোকরে
। স্ট্রীট লাইটের সাদা-ফ্যাকাশে
আলো এদিকের গলিমুখ ছাড়ায়ে ভেতরে পৌঁছেনা । কারন হিসেবে
অধিককাল পুরানা বাল্ব এবং সেই সাথে গলিমুখে
দাঁড়ানো শিরিষ
গাছের পাতার ফাঁকে ল্যাম্পপোস্টটার অসহায়ত্বকে সহজেই দায়ী করা
যায় । পেছনে কলেজ বিল্ডিং আর সম্মুখে রাস্তার ঐপাড়ে কারখানার উঁচু দেয়াল । দুই দিকের
বন্ধকতা ছাপায়ে কারখানা আর কলেজ বিল্ডিঙের গায়ে সাঁটানোই লেকট্রিকবাতিগুলো থেকে
ছড়ানো হলুদাভ আলোরেখা মেয়েটার মুখে আর শরীরে যেন হাতড়ায় নির্লজ্জভাবে । এমনই
বেগতিক অবস্থা ।
ছেলে দুইটার দুই গালেই মারের নিশানা স্পষ্ট । ফর্সা গালে পাঁচ আঙ্গুলের সপাটে চড় বেশ কয়খানা পড়েছে, যেন আঙ্গুলের দাগ জেব্রা লাইন হয়ে ভাসছে । একজনের নাকের ডগায় ফোঁটা কয়েক রক্তের জমাট । চশমাওয়ালা ছেলেটা একটুবেশিই চোট পেয়েছে । কার হাতের পাঞ্চে যেন চশমার কাচ ভাঙা খালি ফ্রেমটা উড়ে গিয়া আকন্দ পাতার ফাঁক গলে ঝুপের ভেতর লুকিয়েছে নিঃশব্দে । চোখে তেমন কিছু ক্ষতি হয় নি বলে রক্ষা । কেবল নাকের উপরের বাঁ পাশটা ছিলে গিয়ে হালকা রক্তের ধারা ফুলে যাওয়া ঠোঁট ডিঙায়ে থুতনাতে আটকে আছে ।নিচে পড়ার আগেই নাই হয়ে যাচ্ছে । শার্টের বাম হাতায় মুছে ফেলা রক্তদাগ স্পষ্ট । ছেলেটার এক হাত ডুমুর গাছে মেয়েটার হাত চেপে বসা । যেন এ যাত্রায় কাণ্ডারি সেজে মেয়েটাকে রক্ষার পুরু ভার ন্যস্ত তার উপর । অন্য ছেলেটাকে আরেক হাতে কাঁধ জড়ায়ে ধরে আছে । তিনজন দাঁড়ানো এক কাতারে ।
মেয়েটা স্পষ্ট কথা বলতে পারছে না, শব্দগুলো জড়ায়ে জড়ায়ে যাচ্ছেমুখের ভেতর । মুখ থেকে হালকা মদের গন্ধও আসছে । আর উড়ে আসা গন্ধ ভেসে ভেসে যেন খোঁচাচ্ছে নেশাখোর আগন্তুক ছেলেদলের প্রত্যেককে । আর সেই সাথে চাগায়ে দিচ্ছেতাদের সুপ্ত নেশাবাসনা ।অথচ মেয়েটার পাশে দাঁড়ানো ছেলে দুইটা বেশ শক্তগোছের। পাথরের মত নিশ্চল মনের দিক থেকে । টনটনে কথাবার্তা,কেবল মুখনিঃশ্বাসে বের হওয়াহুইস্কির একটা জট পাকানো মাতাল মাতাল গন্ধ ছাড়া ।
গলিতে
ঢুকার কোন কথাই ছিল না আগন্তুক দলটার । তিনটা বাইকে ওরা
মোট আট জন । গত বছর কলেজের পাঠ চুকিয়ে
মানে গ্রাজুয়েট শেষ
করা মুকিত হালদার আজকের
দলনেতা । ছাত্রত্বের আঁশটে গন্ধ যায় নি
এখনো, আজ সকালে এসেছে রাতের কনসার্টে থাকবে বলে । গত
চার বছরে কম করে হলেও ষোলবার প্রেম নিবেদনে ব্যর্থ প্রেমিক মুকিতের
স্বপ্নরানী আজ নাচবে, গাইবে প্রোগ্রামে । এও শুনেছে
বেশ কিছুদিন হল অন্য কার সঙ্গিনী সে, মানে বয়ফ্রেন্ড জুটায়েছে জয়িতা কর । প্রতিশোধ
আর ভালবাসার ঝুলানো মাচায় দুলছে মুকিতসেই থেকে । একটা
কিছু করা চাই এবং চাই-ই,এমনই যখন মোক্ষম স্পিহা তার মগজে ঠোকরাচ্ছে
বেশ কয়দিন ধরে, জুনিয়র সাত জন নিয়া জয়িতার হোস্টেলের উদ্দেশ্যে আজকের যাত্রা।
জয়িতা কর হোস্টেল ছেড়েছে অনেক দিন, সেও মুকিতের অজানা । জানা হয় জয়িতার এক পুরানা হোস্টেলমেটের সাথে কথা বলে আজ । সে এখন ভাড়া করা বাসায় থাকছেতার তিন বান্ধবীর সাথে । আর বয়ফ্রেন্ডের আদরে সোহাগে নাকি পৌষের শীতেও একশত তিন ডিগ্রী সেলসিয়াসে গরম ঝরে কথায় চলনে-বলনে, তেমন অনুযোগে নাক সিটকায় সংবাদদাতা । ঠিকানা বিত্তান্ত নিয়ে যখন মুকিতরা পৌঁছায় সম্ভাব্য বাসার গেটে, সন্ধ্যা তখন উতরে যাচ্ছে রাতের দিকে । প্রকৃতিতে আঁধারের মরণকামড় । এদিকে অনাদরে পরে থাকা রাস্তার মৃতপ্রায় সোডিয়াম লাইটগুলা থেকে কেরোসিনের সলতের মত আগুন আলো ঠিকরে বের হচ্ছে । আর তাতেই ঘাসপোকা দল উড়ছে পাখনা ছড়িয়ে ।
দুই তলা বাসার উপরের ফ্ল্যাট পুরা অন্ধকার । নিচ তলার বাসিন্দাদের বারান্দায় আটক বিলাতি কুকুরের লকলকে জিহ্বায় তখন অনর্গল লালা ঝরার দৃশ্য । বারান্দার হালকা আলোয় দেখা সেই লালা,ঘন, জলিভাতের ঘন মাড়ের মত নিচে পড়ে পড়ে প্রায় অবস্থা । বাইকগুলির ইঞ্জিনের শব্দে বিলাতির গোটা কয়েক জাঁদরেলি হুঙ্কারে বুঝা হয়ে গেছে, নাগালে পেলে ঘাড়ে ঝুলবে নিশ্চিত ।
অন্ধকার
দোতলার বাসাটায় নাকি থাকে জয়িতা কর । জয়িতার বয়ফ্রেন্ড অনুপ,এবাসায় আসে প্রায়ই । জয়িতার
রুমবন্ধ থাকাটা অনুপের নিঃশব্দ অনুপ্রবেশের
সিম্বলবাকিদের কাছে । আর অন্য
সব সময় রুমের দরোজা হ্যাঁ’খোলা ।গেট দিয়া ভেতরে ঢুকতে থাকা একজন মধ্যপ্রৌঢ়কে
জিজ্ঞাস করে নিশ্চিত হয় যে, জয়িতা নামের মেয়েটা এখানেই থাকে এবং আজ সকালেই বেরিয়ে
গেছে একটা ছেলের বাইকের পেছনেবসে চালকের গলা জড়ায়ে ।
চকিতে ম্লান হওয়ামুকিতের মুখটায় নিমিশে কেমন বিষাদ ছড়ায় । আর সবাই
ঠাহর করে তার ভেতরে বহমান কষ্টের বন্যা । সেই কষ্ট ঝরে আর ঝরে, যেন ধুপাঘাটে সদ্য ধৌত
করা কাপড় থেকে মোচড়ায়ে জল ফেলার মত করে । কেউ কেউ বুঝে যায় ।
কারন,উপস্থিত কারো কারো জীবনও যে এরকম ঘটনার জন্ম দিয়েছে অতীত ।দেরী
নয় আর, গলি থেকে বের হয়ে সোজা কলেজের পথ ধরে দলটা । মুকিতের
বাইক সবার সামনে, এর পিছু পিছু অন্য দুইটা । মাঝ রাস্তায় হঠাৎ মুকিত বাঁ দিকে মোড়
নেওয়া মাত্রই পেছন থেকে সবাই হায় হায় করে উঠে । ভাবনায় চকিতে দোল দেয়, এই বুঝি গেল
বিরহে !
পেছনের বাইক দুইটা তাকে দ্রুত অনুসরণ করে গলিতে ঢুকে । আঁকাবাঁকা পথ মাড়ায়ে মনা’দার চায়ের দোকানে বিরতি সবার । এখান থেকে কনসার্টের আবহ টের পাওয়া যাচ্ছে, তবে কিছুটা অস্পষ্ট । ড্রাম আর গীটারের শব্দে গায়ক কণ্ঠ যেন সাময়িক চাপা পড়ে যায় । মনা’দার দোকানটা কলেজ থেকে প্রায় দেড় কিলো দূরত্বে, মেইন রোডের দিকে মুখ করা । দোকানের দুই পাশে দুইটাকাঠের বেঞ্চি । দোকানের কোনায়বড় হওয়া বহুকাল পুরানা ছাতিম গাছের ছায়াটা যেন আগলে রাখছে এদিকের অনেকটা । প্রতিসকালে কাঁচা বাজার আর মাছ-মাংসের পসরা বসে পেছনে সারি করে । আর সারাদিন উদাম পড়ে থাকে টিন শেডের উঁচু ভিটাগুলা । কিন্তু মনা’দার চায়ের ব্যবসা থেমে থাকে না । চলে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ।বাইক দলের সদস্যদের দৈনন্দিন রুটিন মাফিক রাতের আড্ডা বসে এই চায়ের দোকান ঘিরে ।
হাতে ধুঁয়াতুলা চায়ের কাপ, যেন হালকা শীতের আমেজটা বাড়িয়ে দিচ্ছে শতগুণ । দীর্ঘ ঘোরাঘুরিতে সবাই ক্লান্ত । আবার ওইদিকে কনসার্টে যাবার তাড়া । তাই উঠতেই হয় শেষেমেশ ।
মুকিতের
বাইক তখন শিরিষ গাছটার ঠিক নিচে, যেখানটায় এসে কলেজ
ক্যাম্পাসের উত্তর সীমানার উঁচু পাঁচিলটা ঠেকেছে আর ‘দ’ এর মত
বাঁয়ে ঢুকে গেছে সরু গলিটার দক্ষিণ পাশ ঘেঁষে সোজা পশ্চিমে, আর
এতে তৈরি হওয়া গলিটার ঠিক মাঝামাঝিতে
আধো আলো-আঁধারে দুইটা ছেলে একটা মেয়েকে টেনে টেনে নিয়ে আসছে মেইন রোডের দিকে, এই
দৃশ্যটা মুকিতের দৃষ্টি এড়ালেও পেছনে বসা ছোকরাটার চোখকে ফাঁকি দিতে পারে না । মুকিতকে
বলতেই বাইকটা ডান দিকে ঘুরে গিয়া গলির ভেতর ঢুকে পড়ে । বাকি দুইটাও পিছু নেয় ।
পরপর তিনটা বাইক একসাথে আসতে দেখে ওরা সরে গিয়ে দেয়াল সেঁটে
দাঁড়ায় । একটু সামনে আগিয়ে চকিতে বাইকটা ঘুরিয়ে
নেয় মুকিত । আর তখনই হেড লাইটের আলোর মুখে তিনজনকে
কুঁকড়ে যেতে দেখা যায় । শক্ত
ব্রেক কষে বাইকের ।
এই কলেজের ?
হ্যাঁ ।
কোন ইয়ার ।
ফার্স্ট ইয়ার ।
এখানে অন্ধকারে কি করছিস ?
না মানে... । কিছু
না... । মানে, এখানে একটু... ।
আবে শালা, মেয়েছেলে নিয়ে ফুর্তি করা হচ্ছে
?
মাস্তি করা হচ্ছে ? ছুটাচ্ছি দাঁড়া ।
ততক্ষণে
ছেলে দুটোর শার্টের কলার ধরে কিলঘুষি শুরু হয়ে গেছে
। মেয়েটা মাতালের মত বকছেআর কি যেন খুঁজছে রাস্তার ঘাসে । অস্পষ্ট
সে ভাষা, জড়ানো জিহ্বায় শুধু এটুকু বলতে
শোনা যায়, লিভ মি এলোন, প্লিজ ।
বুঝা যাচ্ছে নেশা বেশ চড়েছে । বাইক দলের অনেকেই মেয়েটার দিকে আগিয়ে যায়। সুযোগে হাত চালায়ে দেয় বুকে-পেটে-নিতম্বে । মেয়েটা জোরাজুরি করে । নিজেকে রক্ষার চেষ্টায় সামান্য মরিয়া । মুকিত মেয়েটাকে বাঁচায় । একপাশে দাঁড় করিয়ে নিজে পাহারা দেয় । কাউকে ঘেঁষতে দেয়না । দুই জন এগিয়ে গিয়ে ছেলে দুটোকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে । ওরা দাঁড়ায় পাশাপাশি । মেয়েটা মিনমিনকরে একই কথা বলে যাচ্ছে, প্লিজ লিভ মি এলোন । প্লিজ লিভ মি এলোন । মুকিতে র কড়া ধমক । শেষে বেচারা একদম চুপ হয়ে যায় ।
আর তখনই আকস্মাত ঘটে অনাহুত এক ঘটনা । বাইক দলের সবচেয়ে নিরীহ ছেলেটা ঘটিয়ে ফেলে এক অদ্ভুত কাণ্ড । বর্ণনায় ছেলেটা মাঝারি গড়নের । হালকা পাতলা শরীর, আন্ডার ওয়েট যাকে বলে ঠিক তাই । এমনিতেই খুব ভাল স্বভাবের । কিন্তু হঠাৎ কি যেন কি হয়, সবার মাঝ থেকে এক দৌড়ে মেয়েটার কাছে চলে যায় । দুই হাতে মেয়েটার মাথা ধরে নিজের ঠোঁট মেয়েটার ঠোঁটে ঠেকিয়ে এমন ভাবে স্মোচ করা শুরু করে, সবাই হাঁ হয়ে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ । এবার মেয়েটাকে সটান কাঁধে ওঠিয়ে হাঁটা দেয় মেইন রাস্তা বরাবর । এক বন্ধুর নাম ধরে চেঁচিয়ে বলে, আবে শালা, মেসের চাবিটা দে !
মুকিত
দৌড়ে গিয়া এমন একটা চড় কসায়, মেয়েটাকে আছড়ে ফেলে গালে হাত দিতে
ছেলেটা বসে পড়ে রাস্তার উপর । আর দেখা
যায় তার লাল টকটকে চোখ, চোখের মণি দুটো
জ্বলজ্বল করতে; কামহিংস্রতায় ভরপুর সে চোখ ।
এরপর থেকে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েও মেয়েটা কেঁপে কেঁপে উঠছে । ভয় তার চোখজোড়ায় । আর বিড়বিড় করে বলেই যাচ্ছে, প্লিজ লিভ মি এলোন ।
এই
ফাঁকে ছেলে দুটোর কাছ থেকে আসল ঘটনা উদ্ধার হয়ে
গেছে । কলেজের প্রথম বর্ষের প্রথম কনসার্ট উদযাপন তাদের । ভেবেছে
একটু অন্যরকম ভাবে পালন করবে ওরা তিন বন্ধু । ক্যাম্পাসের বাইরে কলেজ চত্বরের
পেছনে খালি বিশাল মাঠ । দুব্বা ঘাসে বসেছিল বিয়ার আর
হুইস্কির বোতপ্ল নিয়ে । কথা ছিল, মেয়েটা
শুধু বিয়ার খাবে । কোন ফাঁকে যে হুইস্কির দুই পেগ
মেরে দেয় খেয়াল করে নি অন্যরা । বেচারা মাতলামোর
চরমে পৌঁছে কেবলই ছুটে যেতে চাইছে মাঠের দিকে ।
দুই হাত শুন্যে ভাসিয়ে খোলা বাতাসে দম নিতে নিতে কেবলই যেন উড়তে
চায় । আর অসহায় ছেলে দুটো তাকে
একরকম টেনে হিঁচড়ে ক্যাম্পাসে আনতে চায় । এই
দৃশ্যটাই চোখে ধরে মুকিতের বাইকের পেছনে বসা
ছেলেটার । ব্যস, এরপর ঘটনার পর ঘটনা ।
কলেজের
সিকিউরিটি গার্ড ততক্ষণে চলে আসে । প্রিন্সিপাল স্যারকে খবর
দেয়া হয় । তিনি এসে ওদের তিনজনকে
নিয়ে যান তার অফিসে । আর ঘটনার সময় আশপাশ থেকে জড়ো হওয়া, দূরে দাঁড়িয়ে
থাকা জটলার কেউ কেউ ক্ষুধার্ত শকুনের মত তাকিয়ে দেখতে
থাকে উদ্ভ্রান্ত মেয়েটার নিতম্ব দোলিয়ে চলে যাওয়ার দিকে ।
মুকিত
হালদার তার দল নিয়ে কনসার্টে মিশে যেত যেতে শুনতে পাওয়া প্রিন্সিপাল
স্যারের কথাটার রেশে মাথা দোলায়, এক অন্যআবেশে ।
“আপাদত
তিন মাসের জন্য কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হল তোমাদের তিনজনকে । ভাগ্যিস মুকিতরা ছিল,
নইলে কি যে কেলেঙ্কারি হত, ওফ !”
মাঠের
এক কোনায় জয়িতা কর নাচছে কোমর দুলায়ে আর বয়ফ্রেন্ডের ঘাড়ে দুই হাত জড়ায়ে । পাশ থেকে
কে যেন বলে উঠে,
মুকিতদাঅ মুকিতদা, ঐ তো !
কি ?
যাকে খুঁজছো পুরুটা বিকেল।
ছাড় না, খুঁজে কি হবে আর !
কি বলছো মুকিতদা? তোমার না আজকে একটা কিছু
করার কথা ছিলো ?
কথাটা যেন মুকিতের কানের কাছে পৌছায় না।মুকিত
শুনতে পায় চারপাশের জনসমুদ্রে যেন ফেনার মত ছড়ায়ে পড়েপ্রিন্সিপাল স্যারের কথাটা প্রতিধ্বনিত
হয়ে,
“ভাগ্যিস মুকিতরা ছিল, নইলে কি যে
কেলেঙ্কারি হত, ওফ !”
একটা স্নিগ্ধ হাসি ঢেউ খেলে যায় মুকিতের
সারা মুখে ।