গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৬

মনোজিৎকুমার দাস /



আমার জীবন ভালবাসার গল্প
মাসুউদ নাসর                                                                                         
অনুবাদ: মনোজিৎকুমার দাস

(লেখক পরিচিতি: মাসুউদ নাসর নতুন প্রজন্মের পরস্যের গল্পকার জন্ম ১৯৯২ ইস্পাহানে। ইংরেজি ভাষায় তাঁর লেখা My life and love story কেআমার জীবন ভালবাসার গল্প নামেবঙ্গানুবাদ করা হল। অনিন্দ্য সুন্দরী একটি মেয়েকে এক তরফা ভালবাসার কাহিনি শুনিয়েছেন গল্পকার গভীর মমতায়।)

একদিন ভোরে আমি জেগে উঠা মাত্র আমার মনের মধ্যে এক ধরনের আবেগের সৃষ্টি হল। ভয়, আশা- দু:, আনন্দজীবন মৃত্যু যেন একাকার হয়ে দেখা দিল। এমন আবেগ অনুভূতি দেখা দিল যা আমি জীবনে কখনো অনুভব করিনি। আমার হৃদয়টাকে জ্বলন্ত আগ্নিয়গিরির মত মনে হল। এক সময় আমার হৃদয় থেকে যেন অগ্নুৎপাত শুরু হল। ভালবাসা, বন্ধুত্ব, দয়া, পাগলামী সব কিছু এক সঙ্গে মিশে ফোয়ারার মতো যেন বের হয়ে ঝড়ঝঞ্ঝার সৃষ্টি করল আমার হৃদয় মনে।

হ্যাঁ, আমি একটি অনিন্দ্যসুন্দরী বালিকার প্রেমে পড়েছিলাম। সে ছিল মৃগনয়না। ডাগর ডাগর চোখ দুটেতে অনিন্দ্যসুন্দর মোহময়তা মেয়েটির মিষ্টি হাসি পুরুষের হৃদয়ে আলোড়ন তোলে, মনের গহীনে যেন হৃৎস্পন্দন শুরু হয়।
তার কন্ঠ গ্রীক মাইথোলজির সমুদ্রকন্যার মতো, যে নাবিকদের উদ্দেশে গান গেয়ে তাদেরকে আকৃষ্ট করতো। ফলে নাবিকেরা তার গান শুনে বিমোহিত হয়ে জাহাজ বিধ্বস্ত হতো কিংবা পাল তোলা জাহাজ পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে ঠেকে তাদের জাহাজ বিধ্বস্ত হতো  

হ্যাঁ, আমি প্রতিদিনই তার সঙ্গে কথা বলতাম। আমি অনুভব করতাম, তার সঙ্গে কথা বলতে বা তার কথা শুনতে না পারলে তখন বিশ্বব্রহ্মান্ডের সমস্ত সুন্দর জিনিস যেন আমার চোখের সামনে থেকে উধাও হয়ে যেত। আমি টালমাটাল হয়ে পড়তাম এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন একটা পৃথিবী আমাকে বেষ্টন করে ফেলত। কোন কিছুই আমার দৃষ্টি গোচর হত না।আমি ওই অবস্থাটাকে সহ্য করতে পারতাম না।

একটা সুন্দর শব্দ তাকে বলে ( আমি তোমায় ভালবাসি) তার সুকোমল হৃদয়ে পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আমি একবার নিয়েছিলাম। কিন্তু সুন্দরী বালিকাটি আমার ভালবাসা গ্রহণ না করে আমাকে বলেছিল- আপনি আমাকে ভালবাসার যোগ্য ননআপনি ভালবাসার অর্থ্ জানেন না। আমার ভালবাসায় মেয়েটির সন্দেহ সম্পর্কে আমি চিন্তা করছিলাম, আমি শুধুমাত্র ভাবছিলাম তাকে আকৃষ্ট করার জন্য আমার নিজের কী করা উচিত। আমি তাকে কীভাবে আমার ভালবাসার কথা তাকে জানাব। আমি ইতিমধ্যেই ভালবাসার পরীক্ষায় পাশ করেছি। কারণ আমি আমার ভালবাসাকে চিত্রায়িত করেছিলাম  এবং  একাকী সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখেছিলাম এবং আমার হৃদয়ের ব্যথা দু: আমি নিবেদন করেছিলাম আমার ভালবাসার মেয়েটিকে।

এক রাতে আমি আমার কম্বলের মধ্যে শুয়ে সুন্দরী মেয়েটির জন্য কান্নাকাটি করেছিলাম।  ক্রমে ক্রমে আমি মেয়েটির জন্য পাগল হয়ে গেলাম। প্রত্যেকদিন আমি মেয়েটির ফটো দেখতাম আমি তার মৃগনয়না সুন্দর আঁখি পল্লব আমাকে বিমোহিত করত। আমার মনে হতো সে যেন আমার কাছেই আছে।

আমি ভাবলাম , আমি আমার মনকে শান্ত করতে পারি মদ ধুমপানের মাধ্যমে। কিন্তু আমি লক্ষ করলাম  তার সঙ্গে দেখা করা ছাড়া অন্য কোন উপায় চিকিৎসা নেই।  আমি পছন্দ করেছি এমন একজনকে যার হৃদয় যেন তপ্ত মরুভূমি, সে যেন মরিচিকাকে জল ভেবেছে। আমি তাকে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলাম। কিন্তু একবার ট্যুরে গিয়ে আমি তাকে একটা ছেলে সঙ্গে দেখলাম মেয়েটি তার নিজেদের সম্বন্ধে আগে কখনো কথা বলেনি কিন্তু এবার মেয়েটি বলল ছেলেটি আমাদের পারিবারিক বন্ধু তাদেরকে লাভিং বার্ডের মত আচরণ করতে দেখলাম
 তাদের আচরণ স্বাভাবিক ছিল না কারণ আমি ওই দিনটিতে কখনোই তাদেরকে আমার চোখের আড়াল করলাম না। সারাক্ষণ তাদেরকে একে অপরের সঙ্গে বাহুলগ্ন হয়ে থাকার দৃশ্য অবলোকন করে আমি চরম ভাবে ব্যথিত হলাম।

আমি একটা বিধ্বস্ত সিংহ , আমি সিংহদের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। আমার রাজ্য দখল করার জন্য এবং আমার জীবনটাকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য আমার মনের ভেতরে গর্জন করতে লাগল।

 আর এর ফলে আমার মনের মধ্যে দু: পাগলামী দুটোই দেখা দিল, আমার এই সমস্য সম্বন্ধে কেউই কিছু জানতো না। আমি এমন আচরণ করতে লাগলাম যেন আমার জন্ম থেকে এখন পর্যন্ত আমার কোন দু: নেই।

হ্যাঁ, প্রত্যেকবারই আমি তাদেরকে দেখলাম আলাপ, নাচানাচি এবং একে অন্যের সঙ্গে ঢলাঢলি করতে যাতে আমার মনের মধ্যে এমন আবেগ অনুভূতির সৃষ্টি হল যাতে আমার জীবনের আলো যেন নিভে গেল।  আমার সমস্ত আশা ভরসা নিরাশায় পরিবর্তীত হল।  আমি ঈশ্বরের বিচারের উপর সন্ধিহান হলাম।  আমি বিশ্বাস করলাম যে আমি একাকী আর আমার হৃদয়ে ঈশ্বরের অবস্থান নেই।

সেখানে একটা পার্টি চলছিল, হইহুল্লোড় , আন্দোল্লাসে সবাই মাতোয়ারা ছিল। আমার সমস্ত ক্লাসমেট সুখর সাগরে ভাসছিল , কিন্তু শুধু আমি একাকীত্ব অনুভব করছিলাম। আমার হাসি আনন্দ উবে গিয়েছিল।  আমি জানি না কীভাবে এই অবস্থাকে মোকাবিলা করতে হবে।

আমি এক সময় উপলব্ধি করলাম ঈশ্বরের ইচ্ছায় ওই সময়টা দ্রুত অতিক্রান্ত হল। যদি ওই দিনটি দ্রুত শেষ না হতো তবে আমি নিজেকে পৃথিবী উচ্চতম শৃঙ্গ থেকে নিচে নিক্ষিপ্ত হতাম। তাহলে তা দিনটি হতো বেদনাদীর্ণ্ মর্মান্তিক। কারণ আমার ঈর্ষা পরিণত হতো আহত সিংহের মতো।  আমার কানে প্রবেশ করা খারাপ চিন্তা ফিসফিসিয়ে উঠল যখন আমি মেয়েটির অশ্রুসিক্ত চোখ দুটো দেখতে পেলাম তার বিশেষ সমস্যার কারণে। আমি শান্ত হলাম এবং আমার পুরো শরীরটাতে কম্পন অনুভূত হল। আমি তার অসীম সাগরের মতো চোখদুটো ছাড়া অন্য সব কিছু ভুলে গেলাম। আমি তাকে আলিঙ্গন করতে চাইলাম আমার সর্ব্ শক্তি আত্মা দিয়ে   মেযেটির মধ্যে জাদুকরী শান্ত অনুভূতি নেমে এলো, যা থেকে বাসন্তের ফুলের ঘ্রাণ ভেসে এলো , এই পৃথিবীতে কেউই কখনো যা পায়নি।  কিন্তু আমি কিছুই করতে পারলাম না কারণ কে একজন আমাদের মাঝে ছিল ,যে আমাদের ভালবাসাকে আলাদা করে দিল। পরদিন, আমি টালমাটাল হয়ে পড়লাম। আমি আমার রুমের আয়নার সামনে দাঁড়ালাম নিভৃতে। আমি মা মারা গেছে এমন শিশুর মতো চিৎকার করে উঠলামওইদিন আমি অনুতপ্ত হলাম আমার অবদমিত অনুভূতির জন্য।

 আমি চেষ্টা করলাম অবস্থার কারণ জানার জন্য, কিন্তু আমি কোন উত্তর খুঁজে পেলাম না। প্রত্যেক মুহূর্তে একটা শব্দই আমাকে বিরক্ত করতে লাগল। কেন? কেন? কেন?

কেন মেয়েটি আমাকে ভালবাসে না? সে কি আমাকে ঘৃণা করে? সে কি আমাকে দেখাতে চায় তার বয় ফেন্ড কি তার জন্য উপযুক্ত? সত্যিকথা বলতে সে কি একটা কাপুরুষ? আমি কি ভুল পথে চলেছি আর  এবং এই রোগ থেকে মুক্তির উপায় কি ?  এটা কি আমার মৃত্যু জন্য সর্বরোগের ওষুধ? আমি কি একজন পাপী  দুষিত মানুষ? একাকীত্বই কি আমার সঙ্গের সাথী? আমি যেমন বুঝতে পারি তেমন কি অন্য কেউ বুঝতে পারে? –  একটা মেয়েকে পাগলের মত ভালবাসার বিষয় কম লোককে বিশ্বাস করে!
তাই বলি ভুল করেও কাউকে ভালবাস না।