গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বুধবার, ৯ জানুয়ারী, ২০১৯

সমীরণ চক্রবর্তী


মানবিক


      দুদিন ধরে পেটে দানাপানি নেই, বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা আর শয্যাশায়ী অন্ধ মা, ওষুধ কেনার পয়সাটুকুও নেই। মাস দুয়েক হল মন্দার বাজারে সেলস্ এর চাকরিটাও চলে গেছে সৌম্যের। কোনো দিশা নেই, গন্তব্য কোথায় তাও জানে না সে, তবুও হেঁটে চলে রাজপথে, একে কি বেঁচে থাকা বলে? ভাবতে ভাবতে অসুস্থ মায়ের করুণ মুখটা ভেসে ওঠে। অনেক হয়েছে... আর নয়...একটা চলন্ত ভীড় বাসে উঠে পড়ে সৌম্য। হ্যাণ্ডেল ধরে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে একটা টেঁকো মতন লোক, শাঁসালো ব্যাক পকেট। সৌম্য আর দ্বিতীয় বারের জন্য ভাবলো না, পকেট থেকে মানি-ব্যাগটা তুলে নিয়ে লাফ দিল রাস্তায়। সমস্বরে চিৎকার, চোর চোর...
        আপ্রাণ চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হল না, প্রায় এক কিলোমিটার দৌড়ানোর পর ক্ষুধা জর্জরিত অপুষ্ট শরীরটা হার মানল, ততক্ষণে সৌম্যের কলার জাপটে ধরেছে পুলিশ। প্যাণ্টের পকেট থেকে মানি-ব্যাগটা তুলে নিতেই সৌম্য হাত দুটি জড়ো করে কিছু বলতে যাবে এমন সময় বেজে উঠল সৌম্যের মোবাইল। পুলিশ মোবাইল কেড়ে নিয়ে হ্যালো বলতেই ও দিক থেকে ভেসে এলো-
       সৌম্য, বাবা বলছি, তাড়াতাড়ি ফিরে আয়, আর ওষুধ লাগবে না রে, মায়ের বোধহয় আর বেশি সময় নেই...
        পুলিশের চোখ দুটো চিকচিক করে উঠল, সৌম্যের হাতে মোবাইল আর মানি-ব্যাগ ফিরিয়ে দিয়ে বললো-
- তোমার নাম?
- আজ্ঞে, সৌম্য,... সৌম্য ব্যানার্জী...
- যাও, তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যাও।