হৃদয়ের বাস্তুতন্ত্র
রান্নাঘরের
জানালায় ,প্রায়
চাল হয়ে আসা ভাতের দানা খুঁটে খেতে আসে কাঠিড়ালির ছানা ।বাহারি লেজ উর্ধমুখী করে
বসে, ভাত
মুখে তোলে ।জানালায় তার ছায়া পড়ে ।আমি এপার থেকে দেখি ।আমাদের দুজনেরি তৃ্প্তি
ছুঁয়ে থাকে জানালার কাচ ।আহার সমাপ্ত হলে সে ফিরে যায় ঝুপসি আমগাছটার ডালে ।আমার
ভোকাট্টা চোখ উড়ে যায় ওর পিছুপিছু ।কানের ভেতর পাক খেতে থকে চ্রিক্ চ্রিক্ ডাক ।এ
পাতা সে পাতার আড়ালে উঁকি দিতে থাকে মধ্যবয়সী অধ্যবসায় । ততক্ষণে জানালায় ল্য।ন্ড
করেছে বায়স পাখিটি__বন্ধু
বৎসল । কা কা রবে জড়ো করেছে দু একটি সাঙ্গোপাঙ্গো ।কতটুকুই আর খাবার পড়ে আছে ওই
কা্ণিশে ।তাও দেখি ভাগ করে নেয় একে অন্যের মুখের ভিতর ।আমার মনে পড়ে যায় ঠাকুমার
কথা, “কাগে
আহার বাঁটছে গো ,বাড়িতে
অতিথি আসবে ,দুটো
বেশি করে রেঁধো ” ।একমনে
দেখি ওদের খাওয়ার ধরণ ।ঠুকরে খায় অন্তরাত্মায় ।ওভাবে কি খোঁজো কাক ভূষণ্ডী ?রামনাম নাকি
গড পার্টিকেল? ইতিমধ্যে
বৃষ্টি নেমেছে ।ঘৃতকুমারীর কাঁটা চুঁইয়ে পড়ছে বৃষ্টির ফোঁটা ,সেই জলে
স্নান সেরে নিচ্ছে দুটো কিশোরী ফড়িং , তাদের স্বচ্ছ ডানায় ফুটে উঠছে লুকনো রামধনু
রঙ। পাতাবাহারের
টবে কবে যেন আনমনে ছড়িয়ে দিয়েছিলাম দুটো কুমড়োর দানা সেখানেই জন্মেছে দুটো সবুজ
কবিতা । মন্দাক্রান্তা ছন্দে কার্ণিশ ছুঁয়েছে । পশ্চিমের
ব্যালকনিতে একটা বাতিল কেক আভেনকে বেছে নিয়েছে মা পাখিটা ।স্পটেড ডাভ ।ওর নরম ডাকে
ভরে উঠছে ভাদ্রের গরম দুপুর সঙ্গে ধূপ-ছায়া যুগলবন্দি ।ওর খড়কুটোর বিছানা আলো করল দুটি ধূসর বরণ ডিম ।তারপর দুটি শ্যামলতনু ছানা ।সারাদিন তাদের দুটি
খিদের হাঁ ,বাদামি
হয়ে থাকে ।ক্রমে ডানা গজালে উড়ে যায় আকাশের দিকে । কোনো আদরচিহ্ন আঁকতে পারিনি
ওদের পালকে তাই রোজ তাদের খুঁজে মরি পাখিদের ঝাঁকে । সেনবাড়ির
বাগানের মস্ত শালগাছটা যেন দত্তক নিয়েছে এক আইভির লতা।শালের কোলে সে দিনভর দোলে
।সারাদিন গাছের সাথে রং মিলিয়ে লুকোচুরি খেলে দুটো বহুরূপী । প্রতিবেসী তক্ষকের
চেরা জিভে কলহ সঙ্কেত।পুরনো কার্ণিশে সারাটা দপুর জুড়ে প্রেমে মজে থাকে নোটন পায়রা
।বকম গানে পালক ফুলিয়ে নাচে ।আমাদের দাম্পত্য থেকে মাঝেসাঝে চূন খসে পড়ে ,শয়নকক্ষে
বাজে কাঁসর ঘন্টা ।ঘুলঘুলিতে বাসকরা পায়রা জোড়াটি তখন হয়ত একে অপরকে আশ্লেষে
বেঁধেছে । দূরে
স্কাইক্র্যাপারের উঁচু জলট্যাঙ্কিতে সংসার পেতেছে চিল দম্পতি । আকাশের নীল
ছুঁয়ে ওড়ে সারাদিন ।আমার সতর্ক চোখ ওদের ডানা থেক নীল চেটে খায় ।মেঘ এসে ছুঁয়ে যায়
ওদের পালক । বাড়ির
পিছনের দিকে রয়েছে একটা মজা পুকুর।বহু চে্টাতেও সেটাকে ডাঙাজমি বলে প্রমান
করতে পারেনি সর্বশক্তিন প্রোমোটর ।সেখানেই কচুরীপানার দল গর্বে উড়িয়েছে বেগুনি
নিশান।আমার ঈযাণ কোণে তুলসীর টব । মঞ্জরী খেতে আসে চড়ুইয়ের দল । কিচিরমিচির গানে
ভরে দেয় নাগরিক কান ।প্রতিদিন সূর্য ওঠে । প্রতিদিন ব্রাহ্মমুহূর্তে তুলসীর দূটি
করে পাতা আমি উৎসর্গ করে দিই আলোর অভিমুখে ।প্রতিদিন সেই দুটি পাতা আমি স্থাপন করি
আমার বিদায়ী বাবার বন্ধ চোখের পাতায় ।সেই আমার সূর্যপ্রণাম , সেই আমার
পিতৃতর্পণ ।।