গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বুধবার, ৯ জানুয়ারী, ২০১৯

তাপসকিরণ রায়


ধারাবাহিক হ্যান্টেড কাহিনী--৩৬

আসানসোলের সেন্ট প্যাট্রিক এইচ এস স্কুলের রহস্য কথা



আসানসোলের সেন্ট প্যাট্রিক এইচ এস স্কুলকে ভুতুড়ে স্কুল বলে মনে করা হয়। কোন অলৌকিক রহস্য একে নাকি গ্রাস করে আছে।
রুনা এই স্কুলের ক্লাস এইটের ছাত্রী। সে সে দিন দুপুরে তার অফ পিরিয়ডে নিজের ক্লাসে বসে ছিল। অন্য ছাত্র-ছাত্রীরা তখন ক্লাসের বাইরে ছিল। রুনা মনোযোগ দিয়ে ইতিহাসের বই পড়ছিল। কারণ ছিল ভয়--ইতিহাসের মাস্টারমশাই ভারী বকাবকি করেন, এমন কি বেত চালাতেও তিনি পিছু পা হন না। বয়সে তিনি বৃদ্ধ আর বৃদ্ধ হলে বোধহয় কিছুটা রগচটা স্বভাবের হয়। সেই ইতিহাসের মাস্টারমশাই ক্লাসে ঢুকলে সবাই ভয়ে একেবারে চুপ মেরে যায়। তাঁর পিরিয়ডে পড়া না পারার জন্য ভানু ও অরুণকে একদিন কি পেটান টাই না তিনি পিটিয়ে ছিলেন। এ সবের জন্য স্কুলের সব ছাত্র-ছাত্রীরাই তাঁর ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকে। ব্যাস আর পাঁচ সাত মিনিট পরেই তিনি এসে তাঁর ইতিহাসের ক্লাস শুরু করবেন। আর একটু পরেই মাস্টারমশাই আসবেন, কথাটা ভেবে রুনা পড়ায় গভীর মনোযোগ দিয়ে ছিল আর ঠিক এমনি সময় হঠাৎ তার সামনের শিক্ষকের চেয়ারটা কেমন যেন নড়েচড়ে উঠলো। প্রথমটায় রুনা বিশেষ গায়ে লাগায় নি, তারপরে তার চোখ পড়ল, তার সামনের শিক্ষকের টেবিলটাও কেমন যেন ঠকঠক শব্দ করে নড়ে যাচ্ছে !
--কে? কে?? বলে, রুনা নিজের জায়গা থেকে ভয়ে উঠে দাঁড়াল।
এ কি ! কি হচ্ছে কি ? রুনা তখন ভয়ে চারদিকে রাখা বেঞ্চ ডেস্ক পার করে বাইরে বের হতে পারছিল না। তারই মধ্যে এক এক করে ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীরা প্রবেশ করছিল। ওরা কিছুই লক্ষ্য করেনি। সামান্য পরে সবাই যার যার জায়গায় গিয়ে যখন টেবিল চেয়ারের নাড়াচাড়া লক্ষ্য করল তখন ওরা ভয়ে থ মেরে দাঁড়িয়ে পড়ল। শিক্ষকের টেবিল-চেয়ার দস্তুর মত থরথর করে কেঁপে উঠছে। ছাত্রছাত্রীদের কেউ কেউ এবার ভয়ে চিৎকার করে উঠছে। একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে, ভয়ে ওদের মধ্যে কেউ কেউ কেঁপে কেঁপে উঠছে। ভয় আর কাঁপা-কাঁপির মধ্যে হঠাৎ ইতিহাসের মাস্টারমশাই ক্লাসে এসে ঢুকলেন আর ছাত্র-ছাত্রীদের চেঁচামেচি থামাবার জন্যই তিনি চিৎকার দিয়ে উঠলেন, কি হচ্ছে ? কি হচ্ছে কি ? দাঁড়া তোদের সবকে চাপকে আমি সিধা করছি।
এবার মাস্টার মশাই তার চেয়ার টেবিলের কাছে এসে থমকে দাঁড়ালেন। তার চেয়ার টেবিল তখন মেঝে থেকে তিন চার ফুট উপরে উঠে ঝুলছে! এমনি ঘটনা ছাত্র-ছাত্রীদের ও টিচারদের সামনে এই প্রথম ঘটলো। এর আগে স্কুলের চৌকিদারদের মুখেও অনেক বার এমনি ধরনের ঘটনা শোনা গেছে বটে--স্কুলে নাকি ভূত আছে, ওরা নাকি রাতে চেয়ার টেবিল নাড়াচাড়া করে। 
একজন চৌকিদার কদিন আগে এসে তো হেড স্যারকে বলেই ফেলল, স্যার স্কুলে ভূত আছে। রাতে আমি আর যতীন দুজন স্কুল চৌকিতে ছিলাম। হঠাৎ ক্লাস এইট এর রুমে খটখট শব্দ হতে লাগলো, সে সঙ্গে আমরা একটা গুমগুম আওয়াজ পাচ্ছিলাম। আমাদের মনে হচ্ছিল যেন দিনের বেলার মতই ওই ঘরে ক্লাস চলছে--ছেলে-মেয়েদের কোলাহল গুঞ্জন সবকিছুই যেন চলছিল !
স্যার জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমরা ক্লাস ঘরের দরজা খুলে দেখনি ?
--হ্যাঁ স্যার, ভয়ে ভয়ে আমরা যেই ওই ক্লাসের দরজার তালা খুলেছি ওমনিই একটা হু হু করা হাওয়া আমাদের পাশ থেকে বেরিয়ে গেল।
--ঘরের ভেতর তোরা কিছু দেখতে পেলি? হেড সার জিজ্ঞেস করেছিলেন।
--আমরা দেখলাম, কাঁপা গলায় চৌকিদার বলল, আমরা দেখলাম, কিছু ডেস্ক বেঞ্চে ঠক ঠক করে শব্দ হচ্ছিল, আর তার পাশেই দেখি শিক্ষকের চেয়ার-টেবিল দুটো শূন্যে ঝুলছে! একেবারে ছাদের দেয়াল ঘেঁষে লেগে আছে !
--তারপর? হেডস্যার আশ্চর্য চোখ নিয়ে চৌকিদারের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন।
--তারপর দেখি যতীন ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে মাটিতে পড়ে গেল আর আমি কোন মত তাড়াতাড়িতে চেয়ার-টেবিলে ধাক্কা খেয়ে ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।
এই ঘটনার পরই ইতিহাস টিচারের ক্লাসে এমনি ঘটনা ঘটলো। ইতিহাস শিক্ষক তখন দিশাহারা--কি করবেন, কি না করবেন, কিছুই তিনি বুঝতে পার ছিলেন না। অন্য দিকে হৈ-হল্লা শুনে অন্য ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষকরা সবাই এসে হাজির হল। হেড টিচার ক্লাসে ঢুকে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। তাঁর মুখ থেকে কোন শব্দ উচ্চারিত হচ্ছিল না। তিনি দেখলেন, ক্লাসে শিক্ষকের চেয়ার-টেবিল শূন্যে ভাসছে। হেড সার বুঝতে পারছিলেন না--এ কি দৃশ্য ! এ কি ম্যাজিক রে বাবা ! এক অলৌকিক দৃশ্য সে দিন দিবালোকে স্কুলের সবাই প্রত্যক্ষ করলেন। হেড স্যার বুজতে পারলেন, সে দিন চৌকিদার সত্যি কথাই বলেছিল। 
আসানসোলের সেন্ট প্যাট্রিক এইচ এস স্কুলের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা এমনি অদ্ভুত সব ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছিল। এমনি ভৌতিক অলৌকিক ঘটনায় উদবিঘ্ন হয়ে পড়েছেন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা, শিক্ষক ও স্কুল কর্তৃপক্ষও, সে সঙ্গে খুব দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরাও। তবে এটাই রক্ষে যে সেই ভূত বা অলৌকিক শক্তি যাই হোক না কেন কারও কোন ক্ষতি কিন্তু করছে না। তবুও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে--শিক্ষকরা না পারছেন ভালোভাবে ছাত্রছাত্রীদের পড়াতে, ছাত্র-ছাত্রীরাও না পারছে মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করতে।
এমনি ভয়ঙ্কর ঘটনার সাক্ষী হয়ে আজও সে স্কুল চলছে। ভয় সবার মনেই অনেকটা সহন হয়ে গেছে।   ভূত বা অলৌকিক শক্তি তার ভেলকি খেলা দেখিয়ে যাচ্ছে আর তার মধ্যে দিয়েই চলছে স্কুলের পড়ালেখা পর্ব।