গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বুধবার, ৯ জানুয়ারী, ২০১৯

নীহার চক্রবর্তী


সুচারুঘাত 


হরষিতের ছেলে নেই বলে খুব দুঃখ প্রকাশ করে ওর বন্ধুদের কাছে ওর মনে হয়,অন্তত একটা ছেলে থাকলে সম্পত্তি রক্ষা হত জামাই তো পরের ছেলে সে কেন সম্পত্তির ভাগীদার হবে ? আরও শুনেছে ,পুত্র থাকলে পুৎ নামক নরক থেকে পিতা নাকি উদ্ধার পায় সে আর হওয়ার নয়
বন্ধুরা শুনে হাসে ওকে অনেক বোঝায় তারা  
সেদিন হরষিতের প্রতিবেশী-বন্ধু নরেশ বলছিল হরষিতকে,’’ছেলে না থাকলে কী এসে যায় ? আর ছেলে যদি কুলাঙ্গার হয়,সে ছেলের হাতে কি সম্পত্তি রক্ষা পায় ? আর পুৎ নরকের কথা,ভাবিস তুই ? আরে,সে তো পুরাণের কথা তার বাস্তব ভিত্তি বলে কি কিছু আছে ? বিপদ থেকে উদ্ধার বাইরের মানুষও করতে পারে নিজে যদি ভালোমানুষ হওয়া যায় স্বর্গ-নরক সব এখানেই তাই না ?’’
কিন্তু হরষিতের মন মানে না
মুখ-ভার করে উত্তর দেয়,’’কি ভুল হল যে সন্তান হওয়া বন্ধ করে দিয়ে আরে আমি করিনি দুই মেয়ে হওয়ার পরে বৌই জোর করলো তার আর কি ‘’ 
হরষিতের কথা শুনে নরেশ হেসে উত্তর দিলো,’’বৌদির বেশ বুদ্ধি বলতে হবে সে অনেক ভাবে আর বাচ্চা জন্ম দিলেই হল ? তার বুঝি কষ্ট হয় না ? এটাও বুঝতে হয়,হরষিত মেয়েদের না হয় ছেলেদের মতো মানুষ করে দেখ আজ মেয়েদের মধ্যে পুরুষালি ভাব খুব দরকার চারদিকে যা চলছে বেশ ভালোই বলতে হবে ''
তারপর হরষিত আর কোন উত্তর না দিয়ে শুধু আকাশ-পাতাল ভাবতে থাকলো
ওর অবস্থা দেখে নরেশ তখন বলে উঠলো স্মিত হেসে,’’আমার তিন ছেলে একটা না হয় তোর নামে লিখে দিচ্ছি হবে ?’’
‘’
ধুর’’ বলে তখন হরষিত বেশ বিরক্তির সঙ্গে নরেশের পাশ থেকে উঠে দাঁড়ালো
তখন একচোট হেসে নরেশ বলল হরষিতকে,’’সত্যিই তো পরের ছেলেকে কি কিছু দিতে ইচ্ছা হয় ? যদিও আমি তোর সম্পত্তির দিকে চেয়েই দেখতাম না তিন ভাইকে সামলে তোর সম্পত্তি রক্ষা হলে হয় তারা কিন্তু সবাই ছেলে ‘’
নরেশের কথা শুনে তখন হরষিত যেন চমকে উঠলো এবার  
নরেশের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকাল ওর তাকানোর ভঙ্গী দেখে নরেশ হেসে মরে তখন
হাসতে হাসতে বলে হরষিতকে,’’তুই তো বড়ভাই তাই না ? তা বড়র ভূমিকাটাও পালন করিস অন্য ভাইদের ঠকিয়ে সম্পত্তি রক্ষা করা যায় নারে নিজের ছেলের কথা তো পরের ব্যাপার আমার কথাগুলো ভাবতে থাক এখন আসি ‘’
তারপরেই নরেশ বিদায় নিলো মুচকি-মুচকি হাসতে হাসতে  
হরষিত দাঁড়িয়ে থাকলো লোপ্পা ক্যাচ ফেলা ফিল্ডারের মতো চোখেমুখে তখন ওর অনন্ত বিস্ময় অধিনায়ক সমাজ বুঝি তখন ওর দিকে কটমটিয়ে চেয়ে আছে