মুখাগ্নি
সনাতন বাবা মায়ের একমাত্র পুত্র । সে বাবা মায়ের আশা পূরণ করেছে ভেবে স্বস্তি পায় । সে নিজ হাতে বাবা মায়ের মুখাগ্নি করায় তারা স্বর্গে গেছে এটা সনাতনের এক সময়ের ধারণা । তার বাবা মা একরাতে কলেরায় মারা যায়া ।
সনাতন তার একমাত্র বিধবা পিসির কাছে মানুষ । পিসির সাতকূলে সে ছাড়া কেউ নেই ।পিসি সনাতনকে লেখাপড়া শিখাতে সব কিছুই করেছে । সে এখন এলাকার একজন নাম করা ডাক্তার ।
সনাতনের আগেকার ধ্যান ধারণায় পরিবর্তন হয়েছে । ‘পুত্রার্থে ক্রিয়তে ভার্যা ’এই শাস্ত্র বাক্যে এখন আর বিশ্বাস নেই ।সুপুত্র না হলে পুত্রও পিতামাতার গলগ্রহ হতে পারে তার নজির তো হরহামেশাই সে দেখছে ।
ভার্যা গ্রহণ করার পর তার ঔরসজাত পুত্র যদি কুপুত্র হয় তবে কী পরিণতি হবে তা ভেবে সনাতন শংকিত হয় । সনাতনের বিয়ে করার ইচ্ছে না থাকলেও পিসি’র অনুরোধে শেষ পর্যন্ত তাকে বিয়ে করতে হয় তার প্রায় সমবয়সী এক মুদির দোকানীর মেয়েকে । সে এখন ভাবে মাথামোটা টাইপের মেয়েটিকে বিয়ে করা ঠিক হয়নি । তার কামুক স্বভাবের স্রীটি যে কী চায় সনাতন বুঝে উঠতে পারে না ।
পিসি তাকে বৌ করে ঘরে আনলেও কয়েক মাস যেতে না যেতেই সনাতনের বৌ পিসির সাথে খারাপ আচরণ করতে থাকে । সনাতন এক সময় বুঝতে পারে তার বৌ পিসিকে মোটেই সহ্য করতে পারে না । সনাতন বাধ্য হয়ে পিসিকে শহরের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিয়ে সে তার সমস্ত
খরচপাতি চলায়। সনাতনের বৌ এটা চাচ্ছিল ।
সনাতন ডাক্তার মানুষ , সব সময় রোগী নিয়ে ব্যস্ত । সনাতনের কপট স্বভাবের বৌটা চায় সনাতন গ্রামের জায়গা জমি বিক্রি করে শহরে একটা বাড়ি করুক ।সনাতনকে রাত করে বাড়ি ফিরতে হয় ।বৌটা যা যা চায় তা সনাতন দিতে পারে না । সনাতন বুঝতে পারে তার বৌ সব সময় তার স্বামীর কাছ আদর সোহাগ বেশি বেশি পেতে চায়।কিন্তু সে তো মানবতার সেবায়
নিবেদিত।বৌয়ের নেওটা হয়ে বসে থাকার অবসর তার কোথায়!
সনাতনের বিত্তের কোন অভাব নেই । অভাব আছে রাতভোর বৌয়ের কামুক বাসনা মিটানোর ।বৌয়ের কোলের ভেতর শুয়ে থাকা অবস্থায় ফোন পেয়ে তাকে
ছুটতে হয় হাসপাতালে । বৌ আর তার চরম উত্তেজনা মুহুর্তে সনাতনের হাসপাতার ছুটে যাওয়াকে মেনে নিতে পারে না । সে চায় রাতভোর সনাতন তাকে নিয়ে থেলায় মেতে থাকুক । সনাতনের পক্ষে সেটা সম্ভব হয় না। তবুও সনাতন ভাবে, সে যতটুটু তার বৌয়ের সঙ্গ দেয় তাতেই সে পুত্র কিংবা কন্যা সন্তানের পিতা হতে পারে।কিন্তু তার স্ত্রীর এক কথা সে মা হবে না কোন কালেই। মা হলে সে আর চিরযৌবনা থাকতে পারবে না।
সে চায় সনাতনের যৌবনের সব রস নিংড়ে নিতে ।সত্যি কথা বলতে সনাতনের চেয়ে শরীর স্বাস্থ্যে তার বৌ সুঠাম দেহী ।পুরুষ্ট স্তনযুগোল বৌয়ের অঙ্গ সৌষ্ঠবকে প্রস্ফুটিত করে তুলেছে , যা সনাতনের চোখে লাগে না বলে বৌটার বেজায় কষ্ট হয় একথা ভেবে যে তার স্বামী শুধুই সন্তান চায় । হাসপাতালে সনাতনের নাইট ডিউটি থাকলে বৌটার রাত কাটতে চায় না ।সনাতনের সাথে বৌয়ে খটমট শুরু হয় । সনাতন চায় একটি সন্তান , তা ছেলে
হোক বা মেয়ে হোক! অন্যদিকে বৌ চায় কোন সন্তান জন্ম না দিয়ে চির যৌবনা থাকতে ।
সনাতন
ভাবে তার সম্পত্তির মালিক কে হবে,যদি না তাদের কোন সন্তানাদি থাকে ‘পুত্রার্থে ক্রিয়তে ভার্যা ’এই শাস্ত্র বাক্যে এখন আর তার বিশ্বাস নেই। মুখাগ্নি র কথা সে
ভাবে না। সনাতন একটা বিদেশী পত্রিকায় পড়েছে ইউরোপীয়ান কান্ট্রিতে অনেক মেয়েই এখন মা হতে চাচ্ছে না। গভে সন্তান ধারণ করে কষ্ট করতে তাদের অনেকেই রাজি নয়। ইউরোপীয়ান কান্ট্রির অনেক দেশেই শিশুদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।সনাতন ভাবে, তার বৌ কি বিদেশিনীদের এই নীতি আকড়ে ধরে গভে সন্তান নিতে চাচ্ছে না! কে তার মনে গেঁথে দিয়েছে পেটে সন্তান নেওয়ার পর সে চিরযৌবনা থাকবে না।
সনাতন তার
বৌকে অনেক বুঝিয়েছে। ‘ আমি ‘পুত্রার্থে ক্রিয়তে ভার্যা ’ এর যুগ অনেকদিন আগেই বাসি হয়েছে।এখন টেস্ট টিউব বেবির জন্মাচ্ছে। এমনকি মা নিজের পেটে বাচ্চা না রাখতে অনিচ্ছুক হলে সারোগেট মাদারও পাওয়া যাচ্ছে।এমনকি মা নিজের পেটে বাচ্চা না রাখতে অনিচ্ছুক হলে সারোগেট মাদারও নাকি পাওয়া যায়।কিন্তু এখন আইন হয়েছে
সারোগেট মাদারও নেওয়া আইন বিরুদ্ধ। আইন বিরুদ্ধ না হলেও তার পক্ষে সারোগেট মাদারও ভাড়া করা সম্ভব না। শেষে সনাতন বিড়বিড় করে বলে- বৌটা একটা পুত্র জন্ম না দেয় তবে সে মারা গেলে তার তারে বিষয় সম্পত্তি কে দেখবে! সে এখন তার
মৃত্যুর পর মুখাগ্নি করার কথা ভাবে না। সে ভাবে তাদের কোন সন্তান না থাকে তবে তার অগাধ সম্পত্তি কে ভোগ করবে!