গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বুধবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৯

নীহার চক্রবর্তী

পুরুষে-পরুষে 


সেদিন সন্ধে নাগাদ সুশীল হনহন করে চলেছে রাস্তা দিয়ে । ওকে অমন করে যেতে দেখে ওর বন্ধু নিত্য এগিয়ে এলো ওর কাছে ।
খুব আগ্রহের সঙ্গে ওকে বলল,কী হয়েছে রে ? কোথায় যাচ্ছিস এখন ?
তখন সুশীল উত্তর দিলো আশঙ্কার সুরে আর বলিস না । বিকালে আমার সঙ্গে বৌ খুব ঝগড়া করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লো । তারপর থেকে আর ওর কোথাও দেখা নেই । কি যে করি এখন ভেবে পাচ্ছি না ।‘’
সুশীলের কথা শুনে নিত্য খুব অবাক হল ।
তারপর বলল,পাড়ায় সব বাড়ি খুঁজেছিস ? যে পুরনো পাড়ায় আগে থাকতিস,সেখানে খবর নিয়েছিস ? আর আত্মীয়-স্বজন ?
সুশীল মুখ-কালো করে বলল, “সব রে সব
তাহলে এখন কোথায় যাচ্ছিস”?
নিত্য চিন্তার সুরে বলল সুশীলকে ।
উত্তর দিলো সুশীল নিচু-গলায়, “একটু স্টেশনের দিকে । কি হতে কি যে হয়ে যায় । বড় ভয় লাগছে রে
সুশীলের কথা শুনে নিত্য কষ্টের হাসি হেসে বলল তখন, “কি হয়েছে জানি না । নিশ্চয় ঘোরতর কিছু । নইলে অমন ভাবনা আসে ? আর একবার বাড়ি ফিরে চল । বৌদি ফিরেও আসতে পারে । আমি সঙ্গে আছি তোর সবসময়
তারপর মিনিট পনেরোর মধ্যে সুশীল আর নিত্য বাড়ি ফিরে এলো । নিত্যর ধারণা সত্যি হল সুশীলের বৌ বাড়ির বাইরের বারান্দায় হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে আছে । তাকে দেখে এগিয়ে যাওয়ার সাহস হল না সুশীলের । বেশ রাগ-রাগ মুখ করে নিত্য এগিয়ে গেলো তখন সুশীলের বৌয়ের কাছে ।
জিজ্ঞেস করলো, “কী হয়েছে,বৌদি ?
সাথে-সাথে সুশীলের চোখ-ভরা জল নিয়ে মুখ তুলে বলল, “কী আর হবে,ঠাকুরপো ? আমি আর পারছি না । সারাদিন আমাকে গালমন্দ । শুধু আমাকেই না । আমার মা-বাবা-ভাই তুলে পর্যন্ত কথা বলে । আমি নাকি টাকা পাস করি বাপের বাড়িতে । এখন আবার চরিত্র তুলেও কথা বলে । আর না । আমি এবার এ সংসার থেকে মুক্তি চাই গো
সব শুনে যারপরনাই বিস্মিত নিত্য । খুব রেগে গেলো সুশীলের ওপর । হঠাৎ হাত তুলতে গেলো সুশীলের ওপর । সুশীল কোনোরকমে ওকে ঠেকিয়ে দিলো । তারপর একটু পিছিয়ে এলো ভয়ে-ভয়ে । 
নিত্য তারপর ক্ষিপ্ত-সুরে বলতে থাকলো সুশীলকে, “এই বুঝি তুই পুরুষ ? অবলা দেখে তাকে যা খুশী বলবি ? নিজের দোষগুলোর খোঁজ নিয়েছিস ? কতবার বলেছি গোছা-গোছা লটারির টিকিট কাটিস না । শুনিস তুই ? তাস খেলছিস অনেকদিন ধরে । সেখানে বুঝি পয়সা যায় না ? আরও কিছু বলি ? থাক । আর বৌয়ের চরিত্র নিয়ে তখুনি প্রশ্ন ওঠে,যখন নিজের মধ্যে ভালোবাসার কণাটুকু থাকে না । এরপর শুনি আমি । বাড়িতে আমি নিজেই পুলিশ নিয়ে আসবো বলে দিচ্ছি
তারপর সুশীল একেবারে মাথা নিচু করে ফেললো । লজ্জায় প্রায় মাটিতে মিশে গেলো । সন্ধ্যার নিম-অন্ধকারে বেশ বোঝা গেলো ওর ভয়ার্ত মুখটা । অন্যদিকে সুশীলের বৌ তখন চোখ মুছতে মুছতে উঠে দাঁড়ালো । মুখে তখন তার অদ্ভুত হাসি । 
তা দেখে নিত্য খুব কাছে এগিয়ে এক-মুখ হেসে বলল তাকে, “ওকে আজ কড়া ডোজ দিয়েছি,বৌদি । তবে আরও কড়া আমার কাছে আছে । ওর কি করতে হয় আমি দেখছি এবার । ব্যাটা স্টেশনে যাচ্ছিলো তোমার লাশ আনবে বলে । এবার দেখছি কে কীভাবে কোথায় লাশ হয় । ঘরে যাও,বৌদি । এ ঘর তোমার । সব বুঝে নাও এখন থেকে । তোমার সঙ্গে আমরা সবাই আছি
একথা বলে নিত্য তৃপ্তির হাসি হাসতে হাসতে সুশীলদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লো তারপর কিছু পরে সুশীল একেবারে মাথা নিচু করে ঘরে ঢুকে গেলো । আর ওর বৌ নিত্য সন্ধ্যার মতো ওভেনে চা বসাল মুখে এক চিলতে স্বস্তির হাসি নিয়ে ।