মনীষা
নিউমার্কেট
থেকে দ্রুত বের হবার সময় তোমার সঙ্গে লেগে গেলো ধাক্কা । সদ্য কেনা পোষাকের
প্যাকেটটা হাত থেকে ছিটকে পড়লো রাস্তার ওপর । দ্রুত কুড়িয়ে নিয়ে হাতে দিয়ে চোখে
চোখ রেখে সামান্য হেসে বললে – সরি, অনিচ্ছাকৃত ধাক্কা লেগে গেল । আসলে অফিস থেকে বেরোতে দেরী হয়ে গেল আজ । বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়ে সেই ভেবে তাড়াহুড়ো..........’। অদ্ভুত
একটা জোর পেলাম তোমার ওই হাসি দেখে । যেন কত যুগের চেনাজানা তুমি । তাই তো সাহস
করে তোমার ঠোঁটে তর্জনি ঠেকিয়ে বললাম, ‘আর বলতে হবে না । আমি কিছুই মনে করিনি ।’
- সেই দিনটির কথা আজও মনে আছে
তোমার ! কতকাল আগেকার ঘটনা ! অথচ আমি কিনা বেমালুম ভুলে......মনীষার আর বলা হলো না ঘড়ঘড়ে কাশির গমকে গলা বুজে যাওয়ায় ।
ওকে বুকে
চেপে ধরে বললাম – আর একটাও কথা নয় মনীষা । ডাক্তার তোমাকে বারণ করেছেন না ? আর একটাও
কথা নয় ।
থাকতে
পারি না যে । খুব ইচ্ছে করে প্রচুর কথা বলি তোমার সঙ্গে । ভুলেই যাই বেশী দম নিতে
গেলে বামদিকের ফুসফুসটা বেদনায় কুঁকড়ে যেতে চায় । ঘড়ঘড়ে কাশিটা যে তাতেই.....
আহ্
মনীষা , বললাম না আর একটাও কথা নয় । এবার একটু শান্ত হয়ে শোও দেখি । পারলে একটু ঘুমিয়ে
নাও । আমিও সেইফাঁকে গিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলে আসি । এইসময়ে ছেলেটা যদি পাশে
থাকতো......
সবই কপাল
। নইলে দেখেশুনে পছন্দ করে.......
ছেলেটা যে পর হয়ে যাবে স্বপ্নেও ভাবিনি ।
সব সুখ যে
সকলের কপালে সয় না মনীষা । এই জীবনে তোমাকে পেয়ে যে-সুখ পেয়েছি তারচেয়ে বেশী সুখ যে
লেখা নেই আমার অদৃষ্টে । জানি না এখনো আরও কত দুঃখ লেখা আছে এই কপালে ।
মনীষা
আমার দিকে তাকালো ছলোছলো চোখে । ওর দু’চোখের কোলে অশ্রুবিন্দু টলটল
করছে । সহসা ওর ওই চোখের জলের প্রতিটি বিন্দুতে লেখা হয়ে ফুটে উঠতে দেখলাম আমার
চরম সর্বনাশের কাহিনী । দেখেই মনেমনে শক্ত হলাম । নাহ্, এক্ষুনি
ভেঙে পড়া চলবে না । যতক্ষণ শক্ত থাকতে পারবো দুঃখের পাহাড়টা ততক্ষণই জমাট হয়ে
থাকবে । চট করে ভেঙে পড়বে না ঝুরঝুর করে ।