গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বুধবার, ৯ জানুয়ারী, ২০১৯

সুধাংশু চক্রবর্ত্তী


 মনীষা


নিউমার্কেট থেকে দ্রুত বের হবার সময় তোমার সঙ্গে লেগে গেলো ধাক্কা । সদ্য কেনা পোষাকের প্যাকেটটা হাত থেকে ছিটকে পড়লো রাস্তার ওপর । দ্রুত কুড়িয়ে নিয়ে হাতে দিয়ে চোখে চোখ রেখে সামান্য হেসে বললে সরি, অনিচ্ছাকৃত ধাক্কা লেগে গেল । আসলে অফিস থেকে বেরোতে দেরী হয়ে গেল আজ বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়ে সেই ভেবে তাড়াহুড়ো..........’অদ্ভুত একটা জোর পেলাম তোমার ওই হাসি দেখে । যেন কত যুগের চেনাজানা তুমি । তাই তো সাহস করে তোমার ঠোঁটে তর্জনি ঠেকিয়ে বললাম, ‘আর বলতে হবে না আমি কিছুই মনে করিনি
- সেই দিনটির কথা আজও মনে আছে তোমার ! কতকাল আগেকার ঘটনা ! অথচ আমি কিনা বেমালুম ভুলে......মনীষার আর বলা হলো না ঘড়ঘড়ে কাশির গমকে গলা বুজে যাওয়ায় ।
ওকে বুকে চেপে ধরে বললাম আর একটাও কথা নয় মনীষা । ডাক্তার তোমাকে বারণ করেছেন না ? আর একটাও কথা নয় ।
থাকতে পারি না যে । খুব ইচ্ছে করে প্রচুর কথা বলি তোমার সঙ্গে । ভুলেই যাই বেশী দম নিতে গেলে বামদিকের ফুসফুসটা বেদনায় কুঁকড়ে যেতে চায় । ঘড়ঘড়ে কাশিটা যে তাতেই.....
আহ্‌ মনীষা , বললাম না আর একটাও কথা নয় । এবার একটু শান্ত হয়ে শোও দেখি । পারলে একটু ঘুমিয়ে নাও । আমিও সেইফাঁকে গিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলে আসি । এইসময়ে ছেলেটা যদি পাশে থাকতো......
সবই কপাল । নইলে দেখেশুনে পছন্দ করে....... ছেলেটা যে পর হয়ে যাবে স্বপ্নেও ভাবিনি ।
সব সুখ যে সকলের কপালে সয় না মনীষা । এই জীবনে তোমাকে পেয়ে যে-সুখ পেয়েছি তারচেয়ে বেশী সুখ যে লেখা নেই আমার অদৃষ্টে । জানি না এখনো আরও কত দুঃখ লেখা আছে এই কপালে ।
 
মনীষা আমার দিকে তাকালো ছলোছলো চোখে । ওর দুচোখের কোলে অশ্রুবিন্দু টলটল করছে । সহসা ওর ওই চোখের জলের প্রতিটি বিন্দুতে লেখা হয়ে ফুটে উঠতে দেখলাম আমার চরম সর্বনাশের কাহিনী । দেখেই মনেমনে শক্ত হলাম । নাহ্‌, এক্ষুনি ভেঙে পড়া চলবে না । যতক্ষণ শক্ত থাকতে পারবো দুঃখের পাহাড়টা ততক্ষণই জমাট হয়ে থাকবে । চট করে ভেঙে পড়বে না ঝুরঝুর করে ।