পরকীয়া
আজ সাতদিন হলো সুনন্দার সাথে কথা নেই । হ্যাঁ ঠিক সাতদিনই তো হলো । সেদিন আনন্দবাজার কাগজে খবরটা বের হতেই রাতে ফোন করেছিল সুপর্ণ । ফোন রিসিভ করতেই সুপর্ণ প্রায় চিৎকার করে বলেছিল ডার্লিং আর কোন বাধা নেই, আজ থেকে পরকীয়া প্রেম স্বাধীন । ও প্রান্ত থেকে কোন সাড়া না দিয়েই ফোনটা কেটে গেল । তারপর থেকে সাতদিন হলো কোন যোগাযোগ নেই । সুপর্ণ ভেবে পাচ্ছে না ঠিক কী ঘটলো । কিন্তু নিরুপায় সুপর্ণ যতই বলুক সুনন্দার শ্বশুর বাড়ি যাওয়া যায় না । তবে কী কোন প্রকার শরীর খারাপ হলো । না আর ভেবে উঠতে পারছে না । এ নিয়ে প্রায় একশো বার ফোন করা হলো, কিন্তু না বারবার দুটো রিং হওয়া সাথে সাথে ফোনটা কেটে দিচ্ছে । কী যে করা যায় । এইসব সাতপাঁচ যখন ভাবছে এমন সময় মেয়ে অহনা ঘরে ঢুকে বলে বাবা মাকে কখন থেকে ফোন করছি ধরছে না তুমি একবার দেখো না ।
পৌলমী, সুপর্ণের স্ত্রী । সেই কলেজ লাইফের প্রেম ভেঙে যাওয়ার পর বাড়ির চাপে গ্রামের এই সরল মেয়েটাকে বিয়ে করেছিল । সুপর্ণ যেমনটা চেয়েছিল তেমনটা নয় । তবু নয় নয় করে দশ বছর হয়ে গেল । বর্তমানে এই শহরে পৌলমী অনেকটাই সরগর , তবু এখনও ফিরছে না কেন, আর ফোনটাই বা রিসিভ করছে না কেন । তবে কী....। না না পৌলমী তার মতো নয় । মেয়ের কথা শুনে নিজের মোবাইল থেকে ফোন করতে যাবে এমন সময় কলিংবেলটা বেজে ওঠে । মেয়ে ছুটে গিয়ে দরজা খুলতে যায় ।
কী ব্যাপার মা ফোন রিসিভ করছো না কেন ?
শুনতে পাইনি ।
মেয়ের মায়ের কথা শুনে সুপর্ণ বারান্দার কাছে এসে দেখে বড়ো থমথমে লাগছে পৌলমীকে । কী গো শরীর খারাপ না কি ।
একটা তির্যক দৃষ্টিতে সুপর্ণের চোখ আটকে গেল ।
কই না তো , বলে হনহন করে ঘরের দিকে চলে গেল ।
সুপর্ণের সব কিছু যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে । আর ভেবে পাচ্ছে না । একদিকে সুনন্দা, অন্যদিকে পৌলমী । তবে কী পৌলমীরও তার মতো .....। তার বন্ধু সৌমেন ...... না না । বস ..... মি. আগরওয়াল । উফ কী সব ভাবছে । না আর পারছে না নিজেকে ধরে রাখতে । দেওয়াল আলমারি থেকে স্কচের বোতলটা বের করে সবে এক পেগ গলায় ঢেলেছে, দরজা খুলে গেল । একি ঠিক দেখছে তো । এভাবে তো পৌলমীকে কোনদিন দেখেনি । পৌলমীই তো না কী এক পেগেই.....। না তা কী করে হয় । পৌলমী, কিছু বলবে ? সঙ্গে সঙ্গে ঘরের লাইটা জ্বলে উঠলো । ঘরের আলো আঁধারি খেলা শেষ । দেখে পৌলমী খবরের কাগজ হাতে নিয়ে সুপর্ণের পাশে এসে দাঁড়াল ।
পৌলমী ! খবরের কাগজটা একহাতে নিল সুপর্ণ । সাতদিন আগের সেই কাগজ । ফ্রন্ট পেজে পরকীয়া ।
কী ব্যাপার পৌলমী ?
সুপর্ণ আমি কী তোমায় কিছুই দিইনি এই দশ বছরে ।
কী বলছো তুমি, আর কেন ।
সুনন্দা বৌদি আমার দূর সম্পর্কের পিসতুতো দাদার বন্ধুর বৌ । সেদিন ফোনটা বৌদি ধরেনি দাদা ধরেছিল । আর আজ সকালে তুমি যখন বাথরুমে ছিলে তোমার ফোনটা আমি ধরেছিলাম, দাদা করেছিল ।
সুপর্ণ আমতো আমতো করে বলে কেন, কী, কী হয়েছে .... ?
ছিঃ সুপর্ণ ছিঃ । অহনা জানতে পারলে ......
সুপর্ণের হাত থেকে কাঁচের গ্লাসটা মেঝেতে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেল । ধপ করে সে সোফায় বসে পড়লো । আর পাশে দাঁড়িয়ে পৌলমী ডুকরে ডুকরে কাঁদছে ।