গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বুধবার, ৯ জানুয়ারী, ২০১৯

তপন মণ্ডল অলফণি


পরকীয়া 


আজ সাতদিন হলো সুনন্দার সাথে কথা নেই হ্যাঁ ঠিক সাতদিনই তো হলো সেদিন আনন্দবাজার কাগজে খবরটা বের হতেই রাতে ফোন করেছিল সুপর্ণ ফোন রিসিভ করতেই সুপর্ণ প্রায় চিৎকার করে বলেছিল ডার্লিং আর কোন বাধা নেই, আজ থেকে পরকীয়া প্রেম স্বাধীন প্রান্ত থেকে কোন সাড়া না দিয়েই ফোনটা কেটে গেল তারপর থেকে সাতদিন হলো কোন যোগাযোগ নেই সুপর্ণ ভেবে পাচ্ছে না ঠিক কী ঘটলো কিন্তু নিরুপায় সুপর্ণ যতই বলুক সুনন্দার  শ্বশুর বাড়ি যাওয়া যায় না তবে কী কোন প্রকার শরীর খারাপ হলো না আর ভেবে উঠতে পারছে না নিয়ে প্রায় একশো বার ফোন করা হলো, কিন্তু না বারবার দুটো রিং হওয়া সাথে সাথে ফোনটা কেটে দিচ্ছে কী যে করা যায় এইসব সাতপাঁচ যখন ভাবছে এমন সময়  মেয়ে অহনা ঘরে ঢুকে বলে বাবা মাকে কখন থেকে ফোন করছি ধরছে না তুমি একবার দেখো না

পৌলমী, সুপর্ণের স্ত্রী সেই কলেজ লাইফের প্রেম ভেঙে যাওয়ার পর বাড়ির চাপে গ্রামের এই সরল  মেয়েটাকে বিয়ে  করেছিল সুপর্ণ যেমনটা চেয়েছিল তেমনটা নয় তবু নয় নয় করে দশ বছর হয়ে গেল বর্তমানে এই শহরে পৌলমী অনেকটাই  সরগর ,  তবু এখনও ফিরছে না কেন, আর ফোনটাই বা রিসিভ করছে না কেন তবে কী.... না না পৌলমী তার মতো নয় মেয়ের কথা শুনে নিজের মোবাইল থেকে ফোন করতে যাবে এমন সময় কলিংবেলটা বেজে ওঠে মেয়ে ছুটে গিয়ে দরজা খুলতে যায়

কী ব্যাপার মা ফোন রিসিভ করছো না কেন  ? 
শুনতে পাইনি
মেয়ের মায়ের কথা শুনে সুপর্ণ বারান্দার কাছে এসে  দেখে বড়ো থমথমে লাগছে পৌলমীকে কী গো শরীর খারাপ না কি
একটা তির্যক দৃষ্টিতে সুপর্ণের চোখ আটকে গেল
কই না তো , বলে হনহন করে ঘরের দিকে চলে গেল  

সুপর্ণের সব কিছু যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে আর ভেবে পাচ্ছে না একদিকে সুনন্দা, অন্যদিকে পৌলমী তবে কী পৌলমীরও তার মতো ..... তার বন্ধু সৌমেন ...... না না বস ..... মি. আগরওয়াল উফ কী সব ভাবছে না আর পারছে না নিজেকে ধরে রাখতে দেওয়াল আলমারি থেকে স্কচের বোতলটা বের করে সবে এক পেগ গলায় ঢেলেছে, দরজা খুলে গেল একি ঠিক দেখছে তো এভাবে তো পৌলমীকে কোনদিন দেখেনি পৌলমীই তো না কী এক পেগেই..... না তা কী করে হয় পৌলমী, কিছু বলবে  ? সঙ্গে সঙ্গে ঘরের লাইটা জ্বলে উঠলো ঘরের আলো আঁধারি খেলা শেষ দেখে পৌলমী খবরের কাগজ হাতে নিয়ে সুপর্ণের পাশে এসে দাঁড়াল  

পৌলমী  ! খবরের কাগজটা একহাতে নিল সুপর্ণ সাতদিন আগের সেই কাগজ ফ্রন্ট পেজে পরকীয়া

কী ব্যাপার পৌলমী  ?
সুপর্ণ আমি কী তোমায় কিছুই দিইনি এই দশ বছরে
কী বলছো তুমি, আর কেন
সুনন্দা বৌদি আমার দূর সম্পর্কের পিসতুতো দাদার  বন্ধুর বৌ সেদিন ফোনটা বৌদি ধরেনি দাদা ধরেছিল আর আজ সকালে তুমি যখন বাথরুমে ছিলে তোমার ফোনটা আমি ধরেছিলাম, দাদা করেছিল
 সুপর্ণ আমতো আমতো করে বলে  কেন, কী, কী হয়েছে ....  ?

ছিঃ সুপর্ণ ছিঃ অহনা জানতে পারলে  ......

সুপর্ণের হাত থেকে কাঁচের গ্লাসটা মেঝেতে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেল ধপ করে সে সোফায় বসে পড়লো আর পাশে দাঁড়িয়ে পৌলমী ডুকরে ডুকরে কাঁদছে