গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮

সুদীপ ঘোষাল

সুগার খুড়ো


সুগার খুড়োর একটা মিষ্টির দোকান আছে। বেশ নামকরা দোকান। ভালো মিষ্টি রাখেন তিনি।কিন্তু এখন তিনি নিজে আর মিষ্টি  খান না।তার কারণ কাজের লোকটি সুগার খুড়োর বউয়ের স্পাই। মিষ্টি মুখে দিলেই খবর চলে যাবে তার কানে।আর খুড়ো বউকে খুব ভয় করেন।তার কথায় ওঠাবসা করেন তিনি।
সুগার খুড়ো  যখন তরুন ছিলেন তখনকার কথা বলেন খরিদ্দারদের।তিনি বলেন,আপনারা কি মিষ্টি  খান?খেতাম আমি।
একবার বাবা বাজারে গেছিলেন।আমি লুকিয়ে আশি পিস রসগোল্লা খেয়েছিলাম।বাবা আসার আগেই কারখানা থেকে আবার রসগোল্লা এনে রেখে দিয়েছিলাম।তিনি বুঝতেই পারেন নি।সবাই শোনেন আর খাওয়া  হয়ে গেলে পয়সা মিটিয়ে চলে যান।
সুগার খুড়ো হাঁ করে চেয়ে থাকেন।জিভের রস গোপনে গিলে ফেলেন।
প্রত্যেকদিন বিকেল সাড়ে চারটের সময় দুজন স্কুল ফেরতা শিক্ষক আসেন দোকানে।তারা নানারকমের মিষ্টি খান আর পয়সা মিতিয়ে চলে যান।খুড়ো চেয়ে চেয়ে দেখেন আর জিভের জল ফেলেন।কিছু করার নেই।রোগের কাছে সবাই পরাজিত। তারপর আবার সদা সর্বদা দুটি গোয়েন্দা  চোখের চাহনি। বাড়ি গেলেই বউয়ের বর্বর চাহনির থেকে জিভের জল গিলে ফেলাই ভালো।
কেনো যে এ রোগটা হোলো,সুগার খুড়ো ভাবেন,এর চেয়ে কাশির রোগটা ভালো।কাশতাম,তবু মিষ্টি তো খেতে পারতাম।আরো কত রোগ আছে।আমাশা,ঘাড়ে ব্যথা,টিবি,ক্যান্সার আরও  কত কি?ভগবান যতদিন বাঁচি,যেনো মিষ্টি খেতে পাই। কাতর প্রার্থনা করে যান সুগার খুড়ো।
সুগার বেশি হওয়ার  রোগে কত মানুষের শখ আহ্লাদ চলে গিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই,সুগার খুড়ো ভাবেন। এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?
একদিন তিনি তার বন্ধু, ডাক্তার মন্ডলের কাছে গিয়ে বললেন,আমি মিষ্টি খেতে চাই। অথচ আমার সুগার। কি করব আমি।ডাক্তার বাবু বললেন,মিষ্টি  খাবি তবে অল্প।বেশি নয়।বেশি খেলে কিন্তু মুশকিল হয়ে যাবে।তোদের পরিবারের মা,বাবা সকলের সুগার।সাবধানে থাকবি।লোভ সম্বরণ কর।লোভ মানে পাপ।আর পাপ থেকেই মরণ।সাধু সাবধান।
ডাক্তারের কাছ থেকে একটু সাহস পেয়ে খুড়ো এখন বউয়ের  স্পাইকে কাজে পাঠিয়ে দু একটা মিষ্টি  লুকিয়ে চুরিয়ে খায়।ভালোই আছে খুড়ো।ডুবে ডুবে জল খায়, কেউ বুঝতে পারেন না।
এবার ধীরে ধীরে খুড়ো লোভের জালে পড়ে বেশি বেশি রসোগোল্লা খেলেন।আবার আসুস্থ হয়ে পড়লেন।আবার শুরু হোলো নানারকমের রক্ত পরীক্ষা। সুগার বেড়ে গেছে অনিয়মের  ফলে।ডাক্তারবাবু সাবধান করলেন,মিষ্টি জাতীয় খাবার খাবেন না।এই একটা কথাতেই সুগার খুড়ো মনে মনে খুব রেগে গেলেন।তার মনে হোলো ডাক্তারবাবু কি নিষ্ঠুর। নিজে একটা রসোগোল্লা বেশ রসিয়ে রসিয়ে খাচ্ছেন,আর বেমালুম কেমন উপদেশ দিচ্ছেন।তিনি বলেই বসলেন,ডাক্তারবাবু আপনার সুগার নেই।ডাক্তারবাবু বললেন,আছে, তবে...আপনার জানার প্রয়োজন  নেই। আপনি খাবেন না। ঠিক আছে?
সুগার খুড়ো মন কালি করে দোকানে এলেন।এখন সাড়ে চারটে বাজে।দুজন ঠিক এই সময়ে রাজভোগ খায় রাজার মত।খুড়ো হাঁ করে চেয়ে চেয়ে দেখেন।খুড়োর খাবার উপায় নেই।
একজন পাড়ার ছেলে দোকানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। খুড়োকে দেখে আড়াল থেকে বললো,এই সুগার খুড়ো। রসোগোল্লা খাচ্ছে।তোর বউকে বলবো...
সুগার খুড়ো  এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখল,কাউকে দেখতে পেলো না।রাগে গজগজ করতে করতে বললো,তোর বাপের খাচ্ছি না কি?
লোকের টিটকারি শুনতে শুনতে খুড়োর সহ্যের সীমানা পেরিয়ে  গেলো। এবার খুড়ো ঠিক করলো ভেলোরে ডাক্তার দেখিয়ে আসবে।ঠিক এক মাসের মধ্যেই  খুড়ো ভেলোর গেলো। সেখানে গিয়ে বাসা ভাড়া করলো।সঙ্গে দাদা আছেন।দুদিন পরে ডাক্তারের কাছে গেল।খুড়ো বললো,ডাক্তারবাবু আমার সুগার আছে।কিছু খেতে গেলে ভয় হয়।ডাক্তারবাবু বললেন,আগে সব পরীক্ষা হোক।রক্ত পরীক্ষার পরে সবকিছু জানা যাবে।তারপর আরো দুদিন পরে খুড়ো ডাক্তারখানা গেলো।
ডাক্তারবাবু বললেন, আপনার সুগার নেই।
-
ডাক্তারবাবু আমি মিষ্টি খেতে পারবো?
-
নিশ্চয় পারবেন।যতখুশি বাঙালিবাবু...
খুড়ো মনে হল,এক ঘর চাঁদের আলো ডাক্তারবাবুর চোখ থেকে এসে তার মুখমন্ডল আলোকিত করে তুলেছে। ভীষণ ভালোলাগার সঙ্গে সে দেখতে পেল দশ রকমের রকমারি সন্দেশ। ডাক্তারবাবু একটা করে দিচ্ছেন আর সে হাত বাড়িয়ে নিচ্ছে তার ভালোবাসা...