গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮

সোনালি ভট্টাচার্য মুখার্জী


মৃচ্ছকটিক

সেই যে একটা মেয়ে। তার সঙ্গে সেই যে ছেলেটার হঠাৎ দেখা হল।
এই নিয়েই কত গল্পগাছা।
অথচ দেখো এতো আকছারই হচ্ছে। রোজ রাস্তায় ঘাটে্‌, হাটে বাজারে, ট্রামে বাসে।সব সময়ই ।
তাও এই নিয়েই কত গল্প।
সদ্য গোঁফ গজানো বা না-গজানোর দুঃখওয়ালা ফুটফুটে খোকারা চার দিকে চোখ মেলতে চেয়েই ভাবেন; কাকে দেখি?কাকে দেখি?
আর সদ্য তেরচা করে তাকাতে শেখা, শরীরে ফুলফোটা টুকটুকে মেয়েরাও ঘাড় বাঁকিয়ে রাজহাঁসের মত ভাবে, ইসশ তাকালো না কেন রে।
সেইখানেই যত সমস্যা।

সংসার করবে বলে মাঝবয়েসী মানুষরা, ছোটদের জন্য পরিপাটি ব্যবস্থা করেন। বিয়েথা, ঘরগেরস্থি, আসবাবপত্র।আর সদ্য ডানাগজানো সারা পৃথিবীর মানুষ বলে,না না এইসব নেহাৎ বাকোয়াস, এই সব কে চায়?ও তোমরা বুড়োরা রাখো।আমরা অন্য রকম।আমরা নতুন রকম ভাবে বাঁচবো। অন্য রকম কিছু করব।একেবারে অরিজিনাল।
সেই ছেলেটার ঘাড় অব্ধি লম্বা চুল, একটা চামড়ার সরু ফিতে দিয়ে বেঁধে রাখে।খাড়া নাক, আর টানটান কপালের নিচে চকচকে চোখ।খুব ধারালো দৃষ্টি।বোঝাই যায়,সহজে বোকা বনতে রাজি না। কাঁধের কাছে উল্কি। একটা সাপ পেঁচিয়ে আছে সেখানে।গলায় আজকালকার দস্তুর অনুযায়ী কালো সুতোর সঙ্গে ধাতুর লকেট।মনে হয় কোন অস্ত্রের ডিজাইন। এক হাতে তামার তার দিয়ে তৈরি বালা।পায়ে সরু চামড়ার ফিতে দিয়ে বাঁধা চপ্পল।

অনেকখানি লম্বা ছেলেটা।আর হাড়ের কাঠামোটা দেখে বোঝা যাচ্ছে, কালে দিনে চওড়া কাঁধের মালিক হবে।
রোজ ফাঁক পেলেই বাড়ির পাশের গলিতে একবার ঢুঁ মেরে আসে।
ওর সঙ্গে গেলে দেখা যাবে সেই সময়েই দোকানে জিনিস কিনতে এসেছে একটি শ্যামলা তন্বী।ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া এক বোঝা চুল এলোমেলো হয়ে পিঠ ছুঁয়ে রয়েছে। চোখে মুখে এসে পড়া চুল সারাক্ষণ সরিয়ে দিতে হয়। কোমর থেকে হাঁটু অব্ধি রঙে চোবান কাপড় পেঁচানো থাকে বেশির ভাগ সময়েই।চ্যাক চ্যাক করে কি যে চিবিয়ে চলে সারাক্ষণ।
এই এদেরই রোজ দেখা হয় আর দেখা হয়। গ্রীষ্ম বর্ষা শরৎ হেমন্ত,আর শীত বসন্তেও।
আস্তে আস্তে পাড়ার লোক ও খেয়াল করে।

মেয়ের মা গালি দ্যান, কার ছেলেটার এখনও কোন রোজগার নেই।
ছেলের বাপ তার চোদ্দ পুরুষ উদ্ধার করেন কারণ মেয়ে কালো, এবং বাপের বাড়ি সাধারন মধ্যবিত্ত।

দু বাড়িতেই মাঝে মাঝে বড়রা চেঁচামিচি করে খাওয়া বন্ধ করেন, মাঝে মাঝে ছেলেটা বা মেয়েটা বাড়ি থেকে রাগ করে বেরিয়ে গিয়ে কোন বন্ধুর বাড়ি বসে থাকে।
বেশ কিছু বছর এই রকম চলার পর ছেলেটা একটা কাজ পেল রাজভবনে। আর পরের মাসেই মাকে বলল, ওই মেয়েটাকে কিন্তু বাড়ি নিয়েই আসব।

মা বাবাকে অনেক বোঝালেন।বললেন ছেলে দূরে চলে গেলে খুব কষ্ট, রইলই না হয় পরের মেয়েটা সঙ্গে।এত লোক বাড়িতে; আর একটা মানুষে ক্ষতি কি?
তারপর আর কি, বন্ধুরা হ্যা হ্যা করতে করতে বিয়ে বাড়ি গেলো ।আত্মীয়স্বজন পেট পুরে খেলো।ও পাড়ার মেয়ে এসে সংসার করতে থাকল এ বাড়িতে।
আর কিছুদিন পরে এরাও তেমনি করেই বাচ্চাকে মানুষ করতে থাকল যেমন করে এদের বাবা মা করেছিলেন।

এই সবই সেই জায়গার গল্প যেখানে মাটির গরুর গাড়ী নিয়ে খেলা করত বাচ্ছারা।
সেই মহেঞ্জোদারোর গল্প।
তো, তোমরা কি ভাবলে আমি এই যাদবপুর প্রেসিডেন্সিতে পড়া খোকা খুকুদের কথা বলছি?

ওই জন্যই বলি,কোন কালেই মানুষ বিশেষ পাল্টায় না।চারপাশের যন্ত্রপাতিগুলোই যা পাল্টায় শুধু।