গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮

সৌমিত্র চক্রবর্তী

ভোগ

বাবাজী ভারী অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন।
বীভৎস গরম। গাড়ীর ভেতরে এসি চলা সত্বেও গিয়ার বক্সের পেছনে রাখা বোতলের জল পানের অযোগ্য। রাস্তার ধারে একটাও ঠিকঠাক দোকান চোখে পড়ছে না যেখান থেকে জল কিনে আপাততঃ বাঁচার মত অবস্থায় ফিরি। হঠাৎই বাঁ দিকে চোখ চলে গেল।
বেশ চমৎকার একটা সবুজ ঘেরা আশ্রম। ছিটে বেড়ায় ঘেরা দুপাশে বাগানের শেষে একতলা একটা বাড়ী। গাড়ীর গতি কম ছিল। পরিষ্কার দেখতে পেলাম ছিটে বেড়ার গেটে বড় বড় হরফে আলকাতরায় লেখা আছে গুরু সম্মোহনানন্দজীর যোগাশ্রম। আর দেখলাম বাড়ীর পাশেই আহা মরুভূমির মরুদ্যান একটা টিউবওয়েল।

একটুও চিন্তা না করে রাস্তা থেকে গাড়ী নামিয়ে গেটের ধারে পার্ক করে সোজা গেট ঠেলে ভেতরে। ওইটুকু ক্যাঁচ শব্দ শুনেই খোলা বারান্দায় বেরিয়ে এলেন ছবিতে দেখা বেশ ভারিক্কি জটাজুট ওয়ালা এক সাধু। খালি গা, নীচে একটা ধুতি গেরুয়া রাঙিয়ে লুঙ্গির মত করে পরা।
কোনো প্রশ্ন করার আগেই বললাম, "জল!"

হাত নেড়ে ইশারা করে বারান্দায় বসতে বলে ভেতর থেকে ঝকঝকে এক পেতলের ঘটি তে জল আনতেই আমি ঢকঢক করে আস্ত ঘটি শেষ করে থামলাম। এতক্ষণে নিজে একটু ধাতস্থ হলাম বলে মনে হল। আর ঠিক তক্ষুনি নাকে এল মাংস রান্নার আহ্লাদিত গন্ধ।

থতমত খেয়ে মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল, "আপনি সাধুসন্ত হয়ে মাংস খান?"
ভীষণ অবাক হয়ে আমাকে দেখলেন সেই সাধু। ঠিক যেন দেখছেন চোখের সামনে এক নধর বোকাসোকা ছাগল ম্যাঅ্যাঅ্যা করে ডাকলো।

-"আমি খাই কি রে! তো তাঁর প্রসাদ!"
-"কার? ভগবানের? তিনি মাংস খান!"
আমি আরও ভোম্বল হয়ে তাকালাম।
-"তিনি সর্বভূক। তাঁর কি কোনো বিচার আছে রে পাগলা!"
-"কিন্তু ভগবান আমিষ খান জানতাম না।"
-"আমিষ! জয় রাম! জয় রাম! কি সব অলুক্ষুণে কথা বলিস! তোরা সাহেবই হয়েছিস। শাস্ত্র একেবারেই পড়িস নি। তাঁর ভোগের মাংস পেঁয়াজ ছাড়া প্রস্তুত করতে হয়। তাহলে আমিষ কোথায় হল? একেবারে শুদ্ধ নিরামিষ মাংসভোগ।"

সম্মোহনানন্দজীর সম্মোহনে আমি কাত।