কান পেতে রই
হানাই ফোন করল শেষ অবধি । ফোন না করে তার
উপায়ই বা কি ?ব্যবসা
তো তাকে করতে হবে ? ব্যাপারটা এমন নয় যে , একদিনেই সব মিটে যাবে । তাকে আর কখনও এই কাজে ফিরে আসতে হবে না ?
হানাই খুব গরীব মুসলমান যুবক । তার ব্যবসাটা
খুব একটা আকর্ষণীয় নয় । তবে করে - কম্মে খেতে পায় এই যা । ২৪
ঘণ্টা চক্কর কাটতে
হয় । হাজার লোকের সঙ্গে কথা বার্তা বলতে হয় । তারপর হল গে তোমার ফাইনাল ডিল । অনেক
সময় সবকিছু ঠিক হয়ে যাওয়ার পরেও কেস কেঁচিয়ে যায় না , তা নয় ।
এই ব্যবসায় দুটো জিনিসে বেশ সজাগ থাকতে হয় ।
চোখ আর কান সদা সর্বদা খুলে রাখতে হয় । না হলে সর্বনাশ । কে যে কোথা থেকে এসে
তোমার ক্ষতি করে দেবে তা তুমি বুঝতেই পারবে না । হানাই সেই কারনে খুব ভেবে চিন্তে
কাজ করে । করলে কি হবে , বিপদ যখন আসে তখন তো আর বলে কয়ে আসে না ? হানাইয়ের জীবনে এমন অভিজ্ঞতা আগে প্রায় হয় নি বললেই চলে ।
রতন দত্তের বিঘা ১২ জমি । সেই জমির বিচালি
কেনবার বরাত পেল হানাই । ফাইনাল ডিল হয়ে গেছে এবার খড় বা বিচালি যাই বলুন তুলবে
হানাই । ঠিক এই সময়ে রতন বাবুর ছেলে মিলন এসে বলল ,' বাবা বলেছে খড় না বাঁধতে ।'
হানাই তো অবাক । সে বলল ,'
পাকা কথা হয়ে গেছে ,
আমি লোক ঠিক করে ফেলেছি । এখন না বললে তো হবে
না ।'
মিলন পাকা খেলয়ার ।
হানাই শুনেছে ছেলেটি নাকি কি সব শুকনো নেশা
ভাঙ্গ করে । রতন বাবুর খামার বাড়িতে লোকে লোকারণ্য । খর বা বিচালি বাঁধতে এসেছে
তার জনা দশেক লেবার । আসে পাশের বহু মানুষ এতো জন সমাগম কেন ,
তা দেখার জন্য এসেছে । আর এসেছে মিলন আর তার
নেশার সাথি কয়েকজন ।
'বল , বাপজান ! তুমি কি বলবে ?' - হানাই অতি ভদ্র
ভাবে প্রশ্ন করে ?
রতন দত্ত কলকাতায় চাকরি করেন । তার স্ত্রী - পুত্র - পরিজন
সকলে গ্রামে থাকেন ।এই নেশাখোর ছেলেটিকে নিয়ে তার যত চিন্তা । হানাইয়ের হয়েছে যত
বিপদ !
মিলন বলে ,' তুমি খুব কম টাকায় বাবাকে ঠকিয়ে খরটা কিনেছ ।
যাক , যা করেছ করেছ । আমি
কিছু বলবো না । তবে আমাকে শ'খানেক দিতে হবে ।'
'আর যদি টাকা না দিই ?'
রাগত স্বরে প্রশ্ন করে হানাই ।
'
তাহলে খর বাঁধা বন্ধ রাখ !' মিলন জবাব দিল ।
রতন বাবু গণ্য মান্য মানুষ । তাকে অযথা
বিরক্ত করবে না ভেবেছিল হানাই । সে ও তো গরীব ।শেস মেস একশ'
টা টাকা দিয়েই দিল হানাই । বড় লোকের ছেলে বলে
কথা । তার ওপর সকাল বেলা এই সব অশান্তি কার আর ভাল লাগে ?
রতন বাবুর খর প্রচুর । একদিনে সমস্ত খরটা
বাঁধা হয় নি হানাইয়ের । দ্বিতীয় দিনে আবার একই কাণ্ড । আবার মিলন তার দলবল নিয়ে
হাজির । আবার একশ টাকার দাবী । এবার আর ধৈর্য রাখতে পারল না হানাই । তার ছেলে যে
গাঁজার নেশা করে সে কথা জানতেন না রতন বাবু । সব শুনে তিনি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে
বাড়ি ফিরলেন । ছেলেকে পাঠালেন রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে । হানাই যে তার কত বড় উপকার
করেছে তা তিনি জনে জনে বলেছেন । হানাইয়ের কাছে তার পুত্রের কাজের জন্য ক্ষমা
চেয়েছেন তিনি ।