গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৮

সুস্মিতা নাথ

নিউ ইয়ার রেজোল্যুশন
   
 'হিক্ক্কিক' করে একটা বড়সড় হিচকি তুলে শ্যামাচরণ বেশ গলা চড়িয়ে বলল, "বুঝলিহে লাল্টুর মা, আর মাল ছোবো না। এই পোতিজ্ঞা কল্লাম। নতুন বছরে এক্কেরে ভদ্দরলোক হয়ে যাব। পয়লা জানুয়ারি থেকে নো মদ খাওয়া। দিস ইজ মাই নিউ ইয়ার রিজোল্যুশন।"  

শ্যামাচরণকে নিয়ে এই এক মুশকিল। কিছুটা তরল গলায় পড়লেই একদিকে যেমন ওর হিচকি শুরু হয়ে যায়, তেমনি শুরু হয় অনর্গল কথা। সে কথার শুরু থাকলেও শেষের ঠিক-ঠিকানা থাকে না। প্রসঙ্গ ডিমাপুর থেকে সিঙ্গাপুরে গিয়েও ল্যান্ড করতে পারে। পায়জামা থেকে ওবামা, আলুরদম থেকে অ্যাটম ব্যোম, ... কী থাকে না ওতে ! সেজন্যে ঘরণী মনোরমা ওর কথা এককানে শুনে অপর কান দিয়ে বের করে দেয়। কিন্তু আজকে মনোরমা  থমকে গেল। বাসন মাজতে মাজতে এঁটো বাসন হাতেই দাঁড়িয়ে পড়ল। শেষপয্‌যন্ত তাহলে মিনসের সুমতি হল ! স্বামীর দিকে তীক্ষ্ণ চোখে আধমিনিট ধরে তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করল সে, কথাটা ও ঠিক শুনেছে তো ? তারপর বলল, "এটা কি মনের কথা, নাকি নেশার ঘোরে বলচ?"

   --- বিশ্বাস কর মনোরমা, একদম মনের কথাই বলচি। এই তোর দিব্যি দিলাম, নতুন বচ্ছর থেকে মদ ছুঁয়েও দেখব না। এই নাকে খত দিয়ে বলচি। এ শালা বড্ড বাজে জিনিস। টোটাল বরবাদি।
   --- যাক, শেষ পযযন্ত যে বুজতে পেরেচ, এতেই ধন্যি। মনোরমা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। তারপর গদগদ চিত্তে আবার বাসন মাজতে শুরু করল। মনটা ভীষণ খুশি খুশি লাগছে এখন। দেরি করে হলেও যে মিনসের সুবুদ্ধি এসেছে, এতেই পরম শান্তি।

      মনোরমা মনে মনে ভাবে, মানুষটা এমনিতে তো খারাপ নয়, কেবল ঐ নেশার দোষটাই যত অশান্তির মূল। রোজ রাতে নেশায় বুঁদ হয়ে বাড়ি ফেরা শ্যামাচরণের নিত্যদিনের অভ্যেস হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারপর নেশার ঘোরে চিৎকার চেঁচামেচি, রাগারাগি, মারামারি, একের পর এক চলতে থাকে গভীর রাত পর্যন্ত। শ্যামাচরণের নেশা ছাড়াতে কত চেষ্টাই না করেছে মনোরমা; --- বুঝিয়ে বলেছে, রাগ করেছে, অভিমান করেছে, ঝগড়া করে বাপের বাড়িও চলে গেছে কতবার, কিন্তু শ্যামাচরণ নেশা ছাড়েনি। বরং মনোরমাই বারংবার বিফল হয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছে। আর শুধুই কী আর মনোরমা? বাসব ডাক্তার, যার গাড়ি চালায় শ্যামাচরণ, সেও তো দিনরাত ওকে নেশা ছাড়তে বলে। কিন্তু শ্যামাচরণকে কে শুধরায়? দিনের বেলা যখন ড্রাইভারি করে তখন সে নিপাট ভালোমানুষ থাকলেও, কাজ থেকে ফেরার আগে ঐ বস্তু বোতল বোতল গলায় ঢেলে তবেই বাড়ি ফেরে। তারপর শুরু হয় ওর মাতলামি। আজকাল আবার কথায় কথায় ইংরেজিও বলে শ্যামাচরণ। মনোরমা বোঝে এসব বাসব ডাক্তারের সঙ্গে থাকার ফল। ডাক্তারবাবুর সঙ্গে থেকে থেকে অনেক ইংরেজি কথা শিখে ফেলেছে ও। কিন্তু ডাক্তারবাবুর ভালো উপদেশটা নিতে পারেনি। উল্টে দিনকে দিন ওর নেশার প্রকোপ বেড়েই চলেছে। এখন শ্যামাচরণ যখন নেশা করে বাড়ি ফেরে, মনোরমা তখন নিজের মনেই গজর গজর করে মনের জ্বালা মেটায়। সেই শ্যামচরণই কিনা আজ নিজের থেকেই নেশা ছাড়ার কথা বলছে মনোরমার আহ্লাদ আর ধরে না। আগে যখন মদের নেশা ছিল না, কী ভালো মানুষই না ছিল শ্যামাচরণ। আদ্যন্ত প্রেমিক মানুষ। মনোরমাকে তখন ও চোখে হারাত। সেইসব দিনের কথা মনে পড়লে মনোরমা উদাস হয়ে যায়। চোখের কোণা ভিজে ওঠে।

     আজকাল চেনা পরিচিত ও পাড়ার লোকেরা শ্যামাচরণ সম্পর্কে কত কু কথাই না বলে বেড়ায়। ওর চরিত্র নিয়েও নানান গুজব শোনে মনোরমা। কিন্তু এসব কথা মনোরমা বিশ্বাস করে না। শ্যামাচরণ বেপাড়ায় যায় বলেও শুনেছে সে। কিন্তু কোনও গুজবই শ্যামাচরণের ওপর  মনোরমার বিশ্বাসে চিড় ধরাতে পারেনি। রাতে শ্যামাচরণের ফিরতে খুব দেরি হয়, অনেক রাতে আবার ফেরেও না। এর জন্যেই পাড়ার লোকের যত খারাপ সন্দেহ। আসলে প্রতিবেশিদের স্বভাবই এরকম, কেবল নিন্দে করার ফন্দি-ফিকির খোঁজে। কারো কোনও ত্রুটি পেলেই বাড়িয়ে চড়িয়ে তিল থেকে তাল করে। কিন্তু মনোরমা তো জানে, আসল কারণটা কী। যার গাড়ি চালায় শ্যামাচরণ সেই বাসব ডাক্তার মস্ত ব্যস্ত মানুষ। রাত বিরেতে রোগী দেখতে যেতে হয় তাঁকে, কখনও সখনও ইমার্জেন্সী কেসে হাসপাতালেই রাত কাটাতে হয়। এসব ক্ষেত্রে শ্যামাচরণের দেরি হওয়াই তো স্বাভাবিক। কিন্তু এসব কথা বাইরের লোক বুঝবে কী করে মনোরমা তাই অন্যের কথায় কান দেয় না। বরং মনে প্রাণে বিশ্বাস করে, শ্যামাচরণ মোটেই খারাপ নয়, উপরন্তু ভীষণ সরল সাদাসিধে ও ভালোমানুষ। দোষের মধ্যে একটাই ওর দোষ, আর সেটা হল এই মদের নেশা। এটা ছেড়ে দিলেই শ্যামাচরণের মতো আর মানুষ হবে না। এ এমন এক সর্বনেশে নেশা, যা নাকি শুধু বোধ বুদ্ধিই লোপ করে না, মানুষকে শরীরেও মারে, ভাতেও মারে। আজকে ওর সংসারে এই যে এত অভাব অনটন, সেটা শ্যামাচরণের এই নেশা না থাকলে হত?   এই একটা নেশাই ওর সংসারের শান্তি কেড়েছে, স্বচ্ছন্দ কেড়েছে, সুখ কেড়েছে। তবে আজ বোধ হয় বছরের শেষ রাতের মতো দুঃখেরও শেষ রাত। অনেক  দেরি করে হলেও মানুষটার সুবুদ্ধি হয়েছে। নিজে থেকেই বুঝেছে নেশার কুফল। কথায় বলে যখন জাগবে তখনই প্রভাত। দেরিতে হলেও তাই সুদিন সমাগত। নতুন বছরে ওর সংসারে নতুন করে সুখ ফিরতে চলেছে। আশার ভেলায় চড়ে বসে মনোরমা।

     রাত পোহালেই নতুন বছর। নতুন আশা, নতুন উদ্দীপনা, নতুন করে সব শুরু করার পালা। মনোরমা হাতের কাজ সারতে সারতে নতুন স্বপ্নের জ্বাল বুনতে শুরু করে। রাত হয়েছে অনেক। শেষ ডিসেম্বরের হাড়কাঁপানি ঠাণ্ডায় জমে যাওয়ার মতো অবস্থা। তারোপরি সূর্যের দেখা নেই। প্রায় সারাটা দিন কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকছে আকাশ। এই শীতের সময়টা বড্ড কষ্টে কাটে মনোরমার। ছেলেগুলোরও শীতবস্ত্র  বলতে পুরোন পাতলা সোয়াটার ছাড়া আর কিছু নেই। নিজের গায়ের চাদরটাও শতচ্ছিন্ন। কবে যে শীতটা কমবে, শুধু এরই অপেক্ষা। শ্যামাচরণের অবশ্য চিন্তা নেই। বাসব ডাক্তার ওকে নিজের পুরনো পোশাকগুলো দিয়ে দেয়। সেগুলো নামেই পুরনো, সবই থাকে নতুনের মতো ঝকঝকে। মূলত শ্যামাচরণের কিছুই কিনতে হয় না। কিছুদিন আগে যে দামী একটা জ্যাকেট আর জিন্স প্যান্ট দিয়েছে ডাক্তারবাবু, সেগুলি পরলে শ্যামাচরণকে এমন নায়কের মতন দেখায় যে মনোরমা চোখ ফেরাতে পারে না। গর্বে ওর মনটা ভরে ওঠে।
    হাতের কাজ গুটিয়ে ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে বিছানায় আসে মনোরমা। নেশার প্রভাবে বেহুঁশ হয়ে ঘুমোচ্ছে শ্যামাচরণ। কিন্তু বিছানায় এলেও মনোরমার চোখে ঘুম নেই। আর ঘুম না এলে যা হয়, হাজারও এলোমেলো ভাবনা এসে কিলবিল করে মাথায়। অন্ধকার কাটলেই নববর্ষ। হলই বা ইংরেজি নতুন বছর, এখন এটাই বাঙালির ঘরে ঘরে উৎসবের মতো। মনোরমা ঠিক করেছে কাল পাঁঠার মাংস রেঁধে খাওয়াবে ছেলেমেয়ে দুটোকে। ইচ্ছে থাকলেও বাচ্চাদের নতুন সোয়েটার কিনে দিতে পারেনি বলে মনোরমার মনটা বড্ড ভার হয়ে আছে। কিন্তু ওই বা কী করবে। ওর ক্ষমতাই বা কতটুকু? অঙ্গনওয়ারীর কাজ করে যে সামান্য উপার্জন হয় সেটা দিয়ে চারটে পেটের দুবেলা ভাত জোগাতেই হিমসিম খেতে হয়। শ্যামাচরণ তো বাড়িতে টাকা পয়সা দেওয়া কবেই ছেড়ে দিয়েছে।  ডাক্তার সাহেবের গাড়ি চালিয়ে নেহাত কম মাস মাইনে পায় না শ্যামাচরণ। কিন্তু সবটাই প্রায় চলে যায় মদের ঠেকে। মনোরমার হাতে কিছুই আসে না। মাঝমধ্যে এক আধদিন বড়জোর বাজার করে দেয় শ্যামাচরণ। ব্যাস ঐ পর্যন্তই। এভাবেই রোজকার অভাব নিয়ে চলতে চলতে মনোরমা হাঁপিয়ে উঠেছে।

      আজ পয়লা জানুয়ারি। বাংলার পৌষের মাঝামাঝি। বছরকার প্রথম দিন বলে এই ভরা শীতেই খুব ভোরে উঠে স্নান সেরে পুজো দিয়েছে মনোরমা। তারপর হাত লাগিয়েছে ঘরের কাজে। ডাক্তার সাহেব ছুটি নিয়ে বেড়াতে যাওয়ায় আজ শ্যামাচরণেরও ছুটি। ছেলেমেয়েরও ইশকুল নেই বলে সবাই বাড়িতে আছে। বাড়িটা তাই গমগম করছে। আজ শ্যামাচরণই বাজার করে এনেছে। সেই বাজার দিয়েই সাধ করে রাঁধছে মনোরমা। খুশি উপচে পড়ছে ওর সর্বাঙ্গ দিয়ে।

      দিন কাটল হাসি আনন্দে। হইহই রইরই করে দু'কামরার ভেতর  মনোরমার ছোট্ট সংসার ভরে থাকল সারাদিন। সন্ধের দিকে শ্যামাচরণ একটু বের হল। এর আগে অবশ্য শ্যামাচরণের প্রতীজ্ঞাটাকে মনে করিয়ে দিতে ভুলল না মনোরমা। শ্যামাচরণও বাধ্য ছেলের মতো আউড়ে নিয়ে বলল, এই বছর আর কিছুতেই মদ ছোবে না সে।

   সন্ধে গড়িয়ে রাত হল, রাত গডিয়ে গভীর, কিন্তু শ্যামাচরণের ফেরার নাম নেই। উদ্বিগ্ন হয়ে কেবল ঘর-বার করে চলল মনোরমা। রাত যত বাড়ে, মনোরমার কপালের  ভাঁজ ততো গাঢ় হয়। ছুটির দিনে এত দেরি করছে কেন মানুষটা? ছেলেদের খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে মনোরমা। নিজে খায়নি, শ্যামাচরণের অপেক্ষায় বসে আছে সে। সেকেন্ড, মিনিট পেরিয়ে ঘন্টা যায়, অপেক্ষা তীব্র হয়, কিন্তু শ্যামাচরণ আসে না। শ্যামাচরণের মোবাইল ফোন একটা থাকলেও ঘরে অন্য ফোন নেই বলে খবরও নেওয়া যাচ্ছে না। দুশ্চিন্তায় অস্থির হয়ে ওঠে মনোরমা।  অন্যান্য দিন হলে মাতাল মিনসের চিন্তা অদৃষ্টের হাতে সঁপে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে চেষ্টা করত ও। কিন্তু আজকের দিনটা অন্যরকম। আজ যে বিপথগামী মানুষটা পথে আসার জন্যে প্রতীজ্ঞাবদ্ধ। আজ তবে এত দেরি কেন?

      বাচ্চা দুটোই ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘরের আলো নিভিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দুশ্চিন্তায় এপাশ ওপাশ করে চলে মনোরমা।

      রাত তখন কত হয়েছে কে জানে, বাইরের দরজায় ধুপধাপ ধাক্কার আওয়াজে চমকে উঠল সে। রাতের নিস্তব্দতা ভেদ করে শ্যামাচরণের আওয়াজ ভেসে এল। ধড়মড় করে বিছানা ছেড়ে ছুটে এসে দরজা খুলল মনোরমা। সামনে দরজা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে শ্যামাচরণ।  শরীরটা কেবলই টলছে। সর্বাঙ্গ দিয়ে ভুরভুর করে টিকড়ে বেরোচ্ছে ঝাঁঝালো গন্ধ। নিত্যকার এই দৃশ্য, এই বিষময় গন্ধ মনোরমার বড় ভয়ানক রকমের পরিচিত।  একরাশ হতাশা ও বিস্ময় নিয়ে মনোরমা যেন আর্তনাদ করে ওঠে, আবার গিলে এসেচ?
  --- এসেচি তোবেশ করেচি। তাতে তোর কী?

      শ্যামাচরণ ওর পুরোনো মেজাজে সরব হয়। কয়েক ঢোক গলায় পড়লেই যেন আমূল বদলে যায় চেনা মানুষটা। তখন তুই তোকারি ছাড়া কথা বের হয় না ওর মুখ থেকে। মনোরমা কান্নাভেজা স্বরে ক্ষীণ প্রতিবাদ করে বলে ওঠে, তুমি যে কাল পোতিজ্ঞা কল্লে, আর মদ ছোবে না? ...

  --- ছুঁইনি তো, একদম ছুঁইনি। এই শ্যামাচরণ একবারের জন্যেও মাল স্পশ্য করেনি আজকে। এ হল ভদ্দরলোকের পোতিজ্ঞা, জেন্টলম্যানস পমিস। ওয়ার্ড ইজ ওয়ার্ড।  শ্যামাচরণ বুক চিতিয়ে বলে ওঠে। তারপর হতবাক মনোরমার দিকে একটা বিটকেল হাসি ছুড়ে বলে, আমি মোটেও পোতিজ্ঞা ভাঙ্গিনি লাল্টুর মা। বিশ্বাস না হয় ভানুমতীকে জিজ্ঞেস করে দেখ। বোতলে হাত লাগাইনি পয্‌যন্ত। আমার মাথা খারাপ হয়েছে যে পোতিজ্ঞা ভেঙ্গে মাল ছোবো? ভানুমতীই আদর করে আমার গলায় এই অমৃত ঢেলে ঢেলে দিয়েছে।
  --- ভানুমতী ! ভানুমতী কে? বিধ্বস্ত বিপন্নের মতো শোনায় মনোরমার প্রশ্ন। 

      শ্যামাচরণের হেলদোল নেই। সে উৎসাহিত হয়ে চোখে মুখে সামান্য বিরক্তি ফুটিয়ে বলে, ধ্যাত্তেরি ! তুই ভানুমতীকেই চিনিস না? আরে আমার চিকনি চামেলি ভানুমতী, যার সঙ্গে আমি ফুত্তি কত্তে যাই রোজ, সেই ভানুমতী রে। বড় ভালো মেয়ে। একদম রসে টইটুম্বুর। 
   ----তুমি... তুমি... ?  মনোরমা কথা খুঁজে পায় না। এতে অবশ্য শ্যামাচরণের  উৎসাহে ভাটা পড়ে না। বলে ওঠে, " কী অত পশ্ন কচ্চিস লাল্টুর মা? বচ্ছরকার পোত্থম দিনে একটু ফুত্তিটুত্তি করব না? জানিস? আজকের দিনেই ভানুমতীর ঐ ভেড়া মিনসেটা আত্মীয়বাড়ি গেছে। আর আমি ভানুমতীর ঘর বেবাক ফাঁকা পেয়ে গেলাম। খুব মস্তি করেছি। ভানুসুন্দরী তো কিছুতেই  আমাকে ছাড়ছিল না। বলছিল, আজকের রাতটা ওখানেই থেকে যেতে। আমিই জোর করে বাড়ি ফিরে এলাম। যাই বলিস লাল্টুর মা, বচ্ছরের শুরুটা মন্দ কাটল না। ..."

      মাতাল শ্যামাচরণের অন্তহীন অনর্গল কথার স্রোত বইছে। মনোরমার কানে আর কিছুই ঢুকছে না। ও শুধু ভাবছে, তাহলে আজ থেকে  মদের মতোই ভানুমতী নামের একটা নির্মম সত্যও ওর জীবনের সঙ্গে জুড়ে গেল। অন্ধকার কাটুক না কাটুক, রাত পেরোলেই আরও একটা গতানুগতিক দিন। নতুন করে ভাঙা স্বপ্ন, ভাঙা মন নিয়ে চেনা পথের যাত্রা শুরু। আসলে, নতুন বছর বলে আদোতে কিছু হয় না। প্রতিটা নতুন মূহূর্ত রোজকার টানাপোড়নের বাস্তবে এভাবেই বিলীন হয়ে যায়।