নয়নতারা
পুজোর প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে
ছোট্ট মেয়েটি ঘুরে বেড়াচ্ছিল আপন মনে. সংগে একটা বড় বেলুন. সংগে কেউ বলে মনে
হলনা. পরিচিত কেউ ওকে খুঁজছে এমন ও নয়. তবে কি
মেয়েটা একা!
কাছে গিয়ে বলি তোমার নাম কি?
কোন উত্তর নেই!
একটু কাছে গিয়ে কানের কাছে মুখ
রেখে একই প্রশ্ন করি. তবুও কোন উত্তর নেই.
কি আশ্চর্য মেয়েটা কি তবে কালা?
কৌতুহল হল মেয়েটির বিষয়.
আমাকে কিছু বলতে দেখে মেয়েটি
মুখে হাত দিয়ে তার ডান বৃদ্ধাংগুষ্ঠি নাড়ায় পরে আবার কানের কাছে নিয়ে ওই একই ইশারা
করে. ফ্যাল ফ্যাল করে আমার মুখের দিকে তাকায়.
আমি বুঝি মেয়েটি বোবা কালা.
ভারি মুশকিল আমি কি করে ওকে
বোঝাই আমার মনের কথা?
মেয়েটি আমার কাছে কি মনে করে আসে
তারপর ইশারায় বোঝায় তার বাড়ি ওই দিকে.
আমি দু হাতে চালা করে বোঝাই
তোমার বাড়ি?
- মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়. মানে হ্যাঁ.
- আহারে কত কষ্ট এই নিষ্পাপ শিশুটির মনে.কিন্তু কে তার বাবা মা?
- মেয়েটি আমাকে কিছু বলতে চায় যা দেখে আমি বুঝি ও ওর বাড়িতে নিয়ে যেতে চায়.
- একেই বলে শিশু যে আপন পর বোঝেনা. বলি চল... হাত
দেখিয়ে বলি চল.
- গুটি গুটি পায়ে এগোই ওর পিছু পিছু.
- এক পরিত্যক্ত মোটর গ্যারেজের মধ্যে এক বৃদ্ধাকে দেখি সেলাই করতে. একটা
ছোট্ট আলো জ্বলছে. বৃদ্ধা
ছুঁচ সুতো নিয়ে আপন মনে কি সেলাই করছেন.
- আমাদের দেখে চকিত আমার মুখপানে তাকিয়ে বলেন, কে তুমি বাবা?
- যাক ইনি কথা বলতে পারেন তাহলে.আমি বলি মাসি আমি তোমার নাতনী কে একা একা ঘুরতে দেখে নিয়ে
এলাম তোমার কাছে.ওকে এখানে ছেড়ে দিয়ে আমি ফিরে যাব আমার ঘরে.
- ও আমার নাতনী নয়. ওকে আমি এক মেলায় পেয়েছিলাম.ও এই রকম একা একা ঘুরছিল. অনেক
জিজ্ঞ্যেশ করেও ওর বাড়ির ঠিকানা পাইনি. জতটুকু ঠারে ঠোরে বুঝি ওর বাবা মা কেউ নেই ও
প্রায় অনাথ.কার
সংগে এসেছিল তাও বুঝিনি.দিনকাল যা খারাপ ওই মেয়েকে কেউ বদ উদ্দেশ্যে চুরি
করে নিয়ে যেতে পারে তাই আমার কাছে নিয়ে এলাম.প্রায় তিন মাস হয়ে গেল কেউ খোঁজ খবর করে নি. ভাবলাম থানায় দিয়ে আসি কিন্তু থানায় নিয়ে যাচ্ছি বুঝতে পেরে ও ভয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে. আমার মনে হয় ওর থানায় ভয় আছে.
- মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে কি বলতে চায়.
-আমি বলি কিছু খাবি?
-মাথা নাড়িয়ে বৃদ্ধার দিকে হাত দেখিয়ে বলে ও দেবে খেতে.
- মেয়েটিকে দেখে মনে হচ্ছিল নিশ্চই বড় ঘরের মেয়ে.অবহেলায় আছে জামা কাপড় খুব ই সাধারন, মাথার চুল উস্কো খুস্কো কিন্তু মুখের হাঁসি আর চোখ দুটোই বলছে নিশ্চই কোন
সম্ভ্রান্ত বঁশের মেয়ে .হয় হারিয়ে গিয়েছে নয় অন্য কোন কিছু রহস্য আছে.
- আমি ত ফেলুদা নই কি ব্যোমকেশ বক্সি নই যে রহস্যের উৎস জেনে তার পেছনে ঘুরে
কিছু সুরহা করব !
- কি করাযায় এই নিষ্পাপ শিশুটির জন্য.চাইল্ড হেল্প লাইনে ফোন করলে হয়. নেট সার্চ করে নাম্বার পেলাম.ওর ফটো
মোবাইলে তুলে হোয়াটস এপ এ পাঠালাম. রিপ্লাই এলো. আমরা
পৌঁছচ্ছি.
বৃদ্ধাকে বলাতে তেলে বেগুনে
জ্বলে উঠলেন. তোমাকে কে বলেছে ওই সব করতে.ও আমার
কাছে আছে আমার কাছেই থাকবে.
- আমি বলি মাসি ও ওখানে অন্য ছেলে মেয়েদের সংগে ভালো থাকবে.তুমি কি চাওনা মেয়েটি ভালো থাকুগ?
- আমি একা একা এই গ্যারেজে থাকি.আমার কেউ নেই. ও থাকলে আমার ভালো লাগে.যা রোজগার হয় তাতে ওর আমার চলে যায়.
- কিন্তু এরকম ক দিন চলবে? তুমি কি সবদিন ওর কাছে থাকবে?
- তা কেন বালাই সাঠ.
- এর মধ্যে পুলিস এবং চাইল্ড লাইনের কিছু সমাজ সেবিকা এসে হাজির.
-বৃদ্ধাকে নানা প্রশ্ন করেন. বেগতিক দেখে মেয়েটি বৃদ্ধাকে জোড়িয়ে ধরে বোঝায় ও ভালো.
মেয়েটিকে
চাইল্ড হেল্প লাইনের ম্যাডাম রা মুক
বধিরদের বোঝার মত ঠারে ঠুরে কি সব জিজ্ঞাসা করলেন. মেয়েটি যা বুঝলো তার উত্তরে বলে ওর মা বাবা কেউ বেঁচে নেই
ওকে পুলিস ধরে নিয়ে গিয়েছিল কিন্তু ও সেখান থেকে পালিয়ে এসেছে. পুলিসকে কেন মেয়েটি ভয় পায় বোঝা যাচ্ছেনা. বৃদ্ধাকে আঁকড়ে ধরে বলে ও ওই মাসির কাছেই থাকবে.
তবুও চাইল্ড লাইনের ম্যাডাম রা
নাছোড় বান্দা. ওকে অনেক বুঝিয়ে নিয়ে যান তাঁদের সংগে.
আমি নিশ্চিন্ত হলাম.
পরের দিন আমার কাছে ফোন এল
একটু আসুন বিশেষ প্রয়োজন. আমি ভাবি
আবার কি হল?
গিয়ে দেখি অবাক কাণ্ড মেয়েটি না
খেয়ে আছে গত কাল থেকে. তার এক জেদ মাসির কাছে যাবে.
কিন্তু মাসির সম্পর্কে পুলিশের
তথ্য খুব একটা ভালো নয়. মাসি চুরীর দায়ে জেল খেটেছে. এখন অবশ্য
ওঁর বিরুদ্ধে কোন অভিজোগ নেই.
মেয়েটি কেন মাসির কাছেই থাকতে
চায় ওই গ্যারেজে সকলে চিন্তা প্রকাশ করে এবং আমার সাহায্য চায়.
একে মেয়েটি প্রতিবন্ধী তার ওপর
অনাথ. একটু ভূল হলে বেচারিকে আমাদের ভূলের মাসুল দিতে হবে.
আমি একটি
প্রস্তাব দি... আচ্ছা ওকে কি আদ্যাপিঠের
আশ্রমে রাখা যেতে পারে. ওখানে অনেক বাচ্চা পড়াশুনো করে খেয়ে পরে ভালো থাকে. আদ্যামায়ের আশ্রম খুব সুন্দর. যদি কিছু টাকার প্রয়োজন হয় আমি দিতে রাজি কিন্তু ও ওখানেই ভালো থাকবে আমার মনে হল. মায়ের
আশ্রয়ে থাকলে মা' ই ওকে
রক্ষা করবেন. মা করুণাময়ী, মা রক্ষা
কালী, মা' র করুণা
পেলে জীবন ধন্য হবে.
শেষে তাই
হল. আদ্যাশ্রমে ওকে ছেড়ে আসা হল. বাচ্চাদের সংগে থেকে ও খেলা করবে কিন্তু ওর শিক্ষা? আরে ওটা ত চিন্তা করিনি? আশ্রমের পরিবেশ অত্যন্ত মনোরম. শান্তির বাতাবরন. এখানে
শিক্ষা পাবে নিশ্চিৎ.
ফিরে এলাম ঘরে. মনটা
ভারাক্রান্ত মেয়েটির জন্য. আমার
কন্যা সন্তান নেই তাই বোধ হয় একটি কন্যার প্রয়োজন আমার. কিন্তু আমি নিজেকে বোঝাই ও আশ্রমে থাকলেই ভালো থাকবে এবং
শৃঙ্খলিত জীবন ওর চলাপথ সুগম করবে. তাই ওর
ভালোর জন্য সব মায়া ত্যাগ করে ওকে প্রাণভরে আশীর্বাদ করে ঘরে ফিরি......