গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৮

তাপসকিরণ রায়

ধারাবাহিক হ্যান্টেড কাহিনী২৯

  লোয়ার সার্কুলার রোডের গোরস্থান
   

শশীভূষণ, জনান্তিক অর্ণব তিন বন্ধু মিলে চা তেলেভাজা খাচ্ছিলেন বাইরে শ্রাবণেরঅঝোর ধারার বর্ষণ চলেছে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ দিনকে রাত বানাতে চেষ্টা করছে ঘরেরভেতরে লাইট জ্বালতে হয়েছে শশীভূষণ অকৃতদার অর্ণব বিপত্নীক আর জনান্তিকের স্ত্রীআছেন কিন্তু ছেলেপুলে না হওয়ায় সংসার নিয়ে তিনি ততো জড়িয়ে পড়েননি এই তিনপ্রাণীর দ্বারাই বুঝি এসব কাজ সম্ভবপর হয় প্যারানরমাল বা অলৌকিকতার পেছনে ছুটেবেড়ান ওঁরা ওঁরা বিশ্বাস করেন যে পারলৌকিক কিংবা অলৌকিক অনেক কিছুই আছে যাকিনা এখনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার বাইরে রয়ে গেছে মানু এত কিছু জেনেও অনেক কিছুইতাদের অজানা রয়ে গেছে বিজ্ঞান অনেক কিছু আবিষ্কার করেছে তা হলেও অনেক কিছুইআবিষ্কারের এখনও বাকি রয়ে গেছে এই শূন্য ঘূর্ণায়মান জাগতিকতার কত না রহস্য তারভাঁজে ভাঁজে রয়ে গেছে পৃথিবীর সে সব সূক্ষ্ম অনুভূতির মাঝে  বিজ্ঞান আজও পৌঁছাতেপারেনি
বর্ষা কম হতেই বিদ্যুতের সঙ্গে বজ্রপাত শুরু হয়েছিল বেশ জোরে শব্দ করে বাজ পড়ছে, সে সঙ্গে বিদ্যুৎ চমক হঠাৎ হঠাৎ সবাইকে চমকে দিয়ে যাচ্ছে অর্ণব বলে ওঠেন, কি রেআমাদের মাথার ওপর পড়বে না তো ?
জনান্তিক বললেন, পারে, অনেক সময় ঘরের ভেতরেও বজ্রপাত হয় তবে সে ঘটনা খুবইবিরল
শশিভূষণের ঘরেই আজ তিন বন্ধুর আড্ডা জমেছেশশীভূষণ বললেন,দাঁড়া আমিল্যাপটপটা নিয়ে আসছি একটা ভিডিও দেখাবো তোদের ল্যাপটপ এনে তিনি খুলেবসলেন, তারপর সার্চ করে নিয়ে চালিয়ে দিলেন একটি ভিডিও বন্ধুরা কাছে এসে বিডিওরদিকে চোখ রাখলেন ওঁদেরকে চোখ কান দুটোই খোলা রাখতে হল কারণ এখানেভিডিওর সঙ্গে ঘটনার বিবৃতির ধারাবহও চল ছিল
লোয়ার সার্কুলার রোডের এই কবরস্থানে শায়িত রয়েছে স্যার উইলিয়াম হে ম্যাকনটনপ্রথম ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধে তিনি নিহত হয়েছিলেন তাঁর দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল এইগোরস্থানে স্যার উইলিয়ামের স্ত্রী স্বামীর ছিন্নভিন্ন দেহ আফগানিস্তান থেকে নিয়ে এসেসমাধিস্থ করিয়ে ছিলেন কলকাতায় উইলিয়াম সাহেবের এই সমাধির কাছে গেলেইকবরের সামনে ছায়াদানকারী গাছটি কাঁপতে থাকে কথিত আছে, উইলিয়ামের ক্ষুব্ধআত্মার আস্ফালনেই কাঁপে গাছটি
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তর সমাধিস্থলও এই কবরস্থানে রয়েছে তিনি ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি নাট্যকার তাঁকে তদানীন্তন বাংলার নবজাগরণ সাহিত্যেরঅন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব বলে গণ্য করা হয় এখানে মাইকেল কবির কবরস্থানে তাঁরআত্মার কোন ক্ষোভ বা অসন্তুষ্টির কথা শোনা যায়নি
বিডিও চলাকালীন মাঝখানে অর্ণব বলে উঠলেন, আবার ভূতের ভিডিও--তার মানেআমাদের আগামীর অভিযান কি এই লোয়ার সার্কুলার রোডের কবরস্থান?
জনান্তিক শশী বাবুর উত্তর দেবার আগেই বলে উঠলেন,ঠিক আছে,চল চল,  মেট্রোস্টেশনে যাবার পর অনেক দিন তো হয়ে গেল রে !
শশীভূষণ বললেন, তবে কবে যাওয়া যায় বল ?
-আগামী রবিবারই চল না ! জনান্তিক বললেন
-রবি বার নয়, শনিবার, বললেন শশীভূষণ
-হ্যাঁ, হ্যাঁ সে দিনই তো তেনারা ঘুরে ফিরে হাওয়া খেতে বেরোন, অর্ণব উৎসাহ ভরে হেসেবলে উঠলেন
সময় বসে থাকে না, দেখতে দেখতে শনিবার চলে এলো তিন বন্ধু
মিলে রওনা দিলেন লোয়ার সার্কুলার রোডের গোরস্থানের দিকে চলতে চলতে অর্ণব হেসে
উঠলেন আপন মনে জনান্তিক জিজ্ঞেস করলেন,  কি হল রে হাসছিস যে ?
অর্ণব আবার মুচকি হেসে বলে উঠলেন--আমরা ভূতদের রঙ্গমঞ্চে যাচ্ছি কিনা--
লোয়ার সার্কুলার রোড গোরস্থান কলকাতা শহরের একটি খ্রিস্টান কবরখানা এটি মাদারটেরেসা সরণী আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু রোডের সংযোগস্থলে অবস্থিত ১৮৪০ সালেলোয়ার সার্কুলার রোড সেমিট্রি প্রতিষ্ঠিত হয় এর মধ্যে অনেক সমাধি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়াকোম্পানির কর্মচারীদের কবরস্থানের মালিক ছিলেন ক্রিস্টিয়ান বেরিয়াল বোর্ড, কলকাতা এই কবর স্থানের আয়তন৩৩ একর এখানে কবরের সংখ্যা বার হাজারেরও বেশী
শশিভূষণের প্রধান আগ্রহ স্যার উইলিয়াম হে ম্যাকনটনের কবরখানা দেখার এখান থেকেইতো শুরু হয়েছে অলৌকিকতার সূত্রপাত ছাড়া আছে মাইকেলের সমাধিস্থল সেখানেতাঁর স্ট্যাচুও রয়েছে সেখানেও একবার ওঁর যাবার ইচ্ছে আছে        
যুদ্ধে নিহত হবার পর উইলিয়ামের শরীরের টুকরোগুলো একত্র করে তাঁর কবর স্থানে রাখাহয় কত না যন্ত্রণাময় ছিল তাঁর মৃত্যু তাই আজও বুঝি গভীর রাতে তিনি নিজের কবরস্থান থেকেযন্ত্রণায় চিৎকার দিয়ে ওঠেন কবরস্থান দিনের বেলা সর্বসাধারণের জন্য খোলা থাকেরাতে যেতে হলে স্পেশাল পারমিশন নিতে হয় শশীভূষণ তাঁর এক বন্ধু, তিনি কালেক্টরঅফিসে বড় বাবুর কাজ করেন, তাঁকে ধরে পারমিশন বার করিয়ে নিয়ে ছিলেন
তখন রাত দশটা বাজে কবরস্থানের গেট দিয়ে তিন বন্ধু প্রবেশ করলেন শনিবার হলেওপূর্ণিমার আশপাশের কোন দিন চলছে হবে চাঁদ প্রায় মাথার ওপরে রয়েছে, তবে ওই, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন গত দু-তিন দিন বেশ বর্ষা হয়ে গেছে আজকের দিনটা যেন বর্ষা ছাড়দিয়েছে, সকাল থেকে এক ফোঁটাও বৃষ্টি হয়নি
শশীভূষণ তার বন্ধুদের পকেটে আত্মরক্ষার অস্ত্র রাখা থাকে ছাড়া শশীভূষণের কাছেথাকে একটা জোরালো পেন্সিল টর্চইদানীং তিনি হাত ঘড়ি সঙ্গে রাখেন না, মোবাইলেরঘড়িতে সময় দেখার কাজ চালিয়ে নেন
কবরস্থানের ভেতরের রাস্তা ধরে এগিয়ে যাচ্ছেন তিন বন্ধু বেশ ভীত হয়ে পড়েছিলেন অর্ণব তিনি বরাবরের মতো দুই বন্ধুর মাঝখানটা দখল করেছেন