অন্য মা
“হারামজাদা, আর একটু
হলেই মেরে ফেলেছিল বাছাকে,
বাবা সোনা, চাঁদের
কণা...” কম্বলের ভেতর শুয়ে
থাকা বাচ্চার গায়ে হাত
বুলিয়ে দিয়ে আদর করতে
থাকে পাগলী। শীতের রাতে
হাতের ছোঁয়ায় ওম্ লাগে
ছানার গায়ে। পাগলী বাম
দিকের বুকের ময়লা শাড়ি
সরিয়ে উন্মুক্ত স্তন ঠেসে
দেয়, ছানা মুখ সরিয়ে
নিয়ে শুধুই কুঁই কুঁই
করে।
ছাতাকল বস্তি,
ঠাসাঠাসি করে টিন আর
টালির ছাউনির শ’খানেক ঘর। রাজেশরা
এ বস্তিতে বেশ পুরোনো,
তিন পুরুষের বাসিন্দা। সাত
আট বছর হল বিয়ে
হয়েছে রাজেশের, কত দেবতার
মানত করে, কত
বট অশ্বত্থ গাছে লাল
সুতোর ঢিল ঝুলিয়ে,
দিন তিনেক আগে ছেলে
হয়েছে তাদের। হাসপাতাল থেকে
ছুটি পেয়ে বৌ-বাচ্চাকে এনে তুলেছে
বস্তির ঘরে। বস্তির এক
কামরা ঘরে চাঁদের আলো
এসে ধরা দিয়েছে এতদিনে,
আর সেই খুশির আলো
ছড়িয়ে পড়েছে গোটা মহল্লায়।
আট থেকে আশি সবাই
একবার করে এসে ছেলের
মুখ দেখে যাচ্ছে।
সন্ধ্যেবেলায় রাজেশের বউ
কমন টয়লেট থেকে ফিরে
এসে দেখে বাচ্চাটা বিছানায়
নেই। খবরটা ছড়িয়ে যেতে
খুব বেশি সময় লাগেনি,
দলে দলে জড়ো হয়েছে
সারা বস্তির লোক,
নানান জল্পনা...।
খুঁজতে খুঁজতে সন্ধ্যে
গড়িয়ে রাত, ঘড়ির
কাঁটা এগারো ছুঁয়েছে। আয়ার
কাজ সেরে বাড়ি ফিরতেই
খবরটা যায় ষাটোর্ধ্ব দীনুর
মায়ের কানে। মুরুব্বির ঢঙে
দীনুর মা বলে
“বাচ্চাটাকে
চুরি করে নিয়ে গেছে
সারিকা পাগলী, আমি নিজের
কানে শুনে এসেছি,
গাড়ী বারান্দার নিচে বাচ্চাটা
কুঁই কুঁই করে কাঁদছে।”
সব জায়গাতেই হুজুগে
লোকের অভাব থাকে না,
বস্তি মহল্লায়তো লোকেরা যেন
একটা হুজুগের অপেক্ষাতেই থাকে।
রে... রে... করে
সবাই তেড়ে যায় লাঠি
সোটা নিয়ে, নির্মমভাবে
মারতে থাকে পাগলীটাকে। এর
মধ্যেই কেউ একটা আধলা
ইট ছুঁড়ে দিয়েছে তার
বুকে, তীব্র আর্তনাদে পাগলী
গড়িয়ে গেল ফুটপাথের ডান
দিকটায় আর কম্বল সমেত
গড়িয়ে যেতেই বেরিয়ে এল
মা হারা তিন-চার দিন বয়সের
একটি কুকুর ছানা। পাগলীর
অনাবৃত স্তন বৃথা নালিশ
জানাতে থাকে অসহায় আকাশের
কাছে। বেশ
হকচকিয়ে গেছে ছানাটি,
একটু থেমে টলমল পায়ে
এগিয়ে যায়, পাগলীর
স্তন শোঁকে, জিভ বোলায়
আর থেকে থেকেই কুঁই
কুঁই...কুঁই কুঁই।