গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৮

মনোজিত্‍কুমার দাস

প্রেম অপ্রেম 

কঙ্কাবতীর সাথে বিজনের প্রথম পরিচয় টিএসসিতে । বিজন সেজেছিল কচ আর কঙ্কাবতী দেবযানি ।নাটক ট্র্যাজেডির মাঝে পরিসমাপ্তি ঘটলেও উভয়ের মাঝে প্রেম ভালবাসা একদিন গভীর থেকে গভীরতর হয়। পরিণতিতে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সুখেই দিন কাটাছিল ।কারোই কাল চিরদিন সুখে কাটে না । ওদের জীবনেও সুখ বেশি দিন স্থায়ী হলো না । বিজন এক সময় নাটক নিয়ে এতোই মেতে উঠল সংসারের প্রতি মন নেই, এমন কী কঙ্কাবতীর উপরও দায়ছাড়া ভাব । এমনটা দেখে কঙ্কাবতী ভাবে, এমনটা তো হবার কথা নয়! তার দেহমন থেকে যৌবন তো মরে যায়নি । বিয়ের পর কঙ্কবতী নাটকপাড়া মাড়ায়নি । বিজন নাটক নিয়ে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিক সেটা কঙ্কাবতী চায়নি । সে একদিন স্বামীকে বলেই বসল,'আমি আমার কথা রেখেছি ,তুমি কিন্ত তোমার কথা রাখনি । এখন তুমি নাটকপাড়ার হিরো । আমি চেয়েছিলাম তুমি আমারই শুধুমাত্র হিরো হয়ে থাকবে । বিজন দেবযানির কথা কানেই তুলল না । দেবযানি জানে নাটকপাড়া কিচ্ছা কাহিনি। বিজনকে নিয়ে বড় ভয় ! ইদানিং বিজন রাত করে বাড়ি ফিরছে ,একটু একটু মদ গিলছে , দেবযানির মনে শঙ্কা । সে ভাবে. তার প্রতি বিজন কেন অনীহা দেখায় ভার কুলকিনারা খুঁজে পায় না! বিজনের নাটকপাড়ায় আগমন কঙ্কাবতীর হাত ধরে,সেকথা ঢাকার বেইলি রোডের নাট্যজগতের কারোই অজানা নয়। সেই বিজন এখন কঙ্কাকে ভুলতে বসেছে ! কঙ্কাবতী অবাক হয় বিজনের চরিত্রের নৈতিক খলনের কথা জানতে পেরে । গত পহেলা বোশেখের পর থেকে বিজনের মাঝে পরিবর্তন লক্ষ করে কঙ্কার মাথায় একরাশ চিন্তা ভীর জমায় । সে বিশ্বাসই করতে পারে না, তাকে না নিয়ে বিজনের রমনা বটমূলের যাবার কথা ! ওইদিনের দুদিন আগে অনেক রাতে বাড়ি ফিরে বিজন বলে, ' কঙ্কা ,তোমার শরীর ভাল না তুমি আর এবার বটমূলের অনুষ্ঠানে যেও না ।' বিজনের কথা শুনে সে অবাক হয় । সে ভাবে , মাতৃত্বের লক্ষণ তার শরীরে ফুটে উঠতে শুরু করলেও সে অনুষ্ঠানে যেতে পারবেনা এমন অবস্থা তো তার হয়নি । সে ইতস্তত ভাব দেখিয়ে কিছু একটা বলতে যাবার আগেই বিজন বলে,' এদিকে আজ রাতের ২টার ট্রেনে আমাকে চিটাগাং যেতে হচ্ছে, আমিও থাকতে পারছি না ।' বিজনের কথা বলার ধরনে কঙ্কাবতীর মন শংকিত হয় । স্বামীকে কিছু বলার আগেই বিজন খালি হাতে ঘর থেকে বের হয়ে যায় ।অগত্যা তাকে এটা মেনে নিতে হয় । সে বিজন ছাড়া বটমূলে যাবার কথা ভাবতেই পারে না । কঙ্কবতীর মন পরদিন সকাল থেকে বিষণ্নতার মাঝে ডুবে যায় । নাস্তা খাবার পর স্থির করে সে দিনটা ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেবে । ফোনের আওয়াজ শুনে কঙ্কবতী জেগে গিয়ে দেখে দুপুর গড়িয়ে গেছে । বিরক্তর সাথে সে রিসিভারটা তুলে নেয় । ওপ্রান্ত থেকে সুরাইয়া যা বলে তাতে সে যেন আকাশ থেকে পরে । বিজন তাকে মিথ্যা বলে অন্য একটা অল্প বয়সী মেয়ের সাথে .... । সে আর কিছু ভাবতে পারেনা ,মাথাটা ঝিমঝিম করে ওঠে । এটা কী করে সম্ভব ! তারপর অনেক ঘটনা ঘটে যায় । কঙ্কাবতী একসময় ভাবে , একদিন তাদের মাঝে যে প্রেম ছিল ,তা আজ অপ্রেমের রূপ নিয়েছে ।