গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৮

তন্ময় বসু

দিনযায়

খাবার টেবিলে বসে জেকব্ আর এ্যঞ্জেল নিয়ে কথা হচ্ছিল, ইস্রায়েল হয়ে চলে এল মোজেস। হিব্রু শব্দের মানেগুলো আলোচনা হতে ছেলে বলে বসল - আগে তুমি প্রচুর বই পড়তে! আর্য আর কথা বাড়াতে না চাইলেও বউ মোজেসের গল্প শুনতে চাইল। শোনার পর যথারীতি বলে দিল - দুর, যত্তসব গাঁজাখুরি! আর্য চেপে গেলেও বউ নাছোরবান্দা হয়ে বলে - তুমি বিশ্বাস কর এসব? এগুলো সত্যি হয় কখনো? অগত্যা মুখ খুলতেই হল। বলে যখন ছোট ছিলে, গ্রামের তাঁবুতে সিনেমা দেখতে, সেদিন যদি আজকের মোবাইলে সিনেমা দেখার গল্প শোনাতো কেমন লাগতো? মোবাইলে পৃথিবীর অন্যপ্রান্তে কথা বলার গল্প শুনতে - কেমন লাগতো? এক মিনিটে একটা অাস্ত সিনেমা এক যন্ত্র থেকে আরেক যন্ত্রে লেনদেন - কেমন লাগতো? আসলে কি জান আমরা যাকে কল্পনা বলি, তা ভীষণ রকম বাস্তব! অবাক হচ্ছো? কল্পনা করার সীমারেখা নির্ধারন করে আমাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অভিজ্ঞতা। তা পরিয়ে আমরা যেতেই পারি না। যখন বয়স কম ছিল, তখন এককথায় কত কি নস্যাৎ করে দিতে পারতাম। এখন পারি না, মনেহয় আমার কিই বা জ্ঞান আছে! বিরোধীতা করতে গেলে তা নিজের কাছে অজ্ঞতার আর্ত চিৎকার শোনায় যে। অন্তরা বলে - তাবলে বিজ্ঞান নেই! মানে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি বলে কিছু নেই। ছেলে ধ্রুব তখন হেসে বলে - মা সেভাবে যদি বল তাহলে সবাই যে অর্থে বিজ্ঞান বলে তা নেহাৎ সরলীকরণ। যে কম জানে সে যেটাকে বলে আরে এটা হতে হবে বা আরো জোর দিয়ে বলে এটাই হবে, সেটাকে বিজ্ঞান কার্যকারণ ব্যাখা দিয়ে বলে এটা হলে ওটা হয় বা ওটা হতে পারে। এটা একটা মনন। বিজ্ঞান আসলে একটা দর্শন, ফিলোজফী। ফিলোজফী ছাড়া কিচ্ছু নেই - যদি কিছু থাকে শুধু ধু ধু শ্যুনতা আর আত্মপ্রতারণা। আর্য বরাবর এই লাইনেই ভেবে এসেছে, আজ টুয়েলভে পড়া ছেলের কথা শুনে ভাবতে থাকে কোথা থেকে এসব শিখলো! কত বড় হয়ে গেছে! সেও তার মানে যথেষ্ট বুড়ো হয়েছে।