কী এমন বস্তু চুরি
হলো
কে জানে
লোকজনের
হাঁকডাকে কাঁচা ঘুমটা ভেঙে যেতে শোয়া ছেড়ে ধড়মড়িয়ে উঠে বসলেন বিপ্রতীপবাবু ।
তারপরই যা দেখলেন তাতে তাঁর দু’চোখ কপালে
উঠলো । ঘরের বাইরে এতো
লোক জমেছে কেন ! ওরা নিজেদের মধ্যে
কীসব যেন বলাবলি করছে
ফিসফিস করে ! বাড়িতে কি চুরি-ডাকাতি হলো ! এতোটাই ঘুমে তলিয়ে
ছিলেন যে কিচ্ছুটি টের
পেলেন না ! ভাবনা ছেড়ে দ্রুত
নেমে এলেন বিছানা থেকে
। তাকে দেখেও লোকগুলো
না দেখার ভান করে
সমানে ফিসফাস চালিয়ে যেতে
থাকলো নিজেদের মধ্যে ।
বিপ্রতীপবাবু ওদের
পাশ কাটিয়ে এসে ঢুকলেন
বসার ঘরে । স্ত্রী বহ্নিশিখা
কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে ইনিয়েবিনিয়ে কাঁদছেন সেই ঘরে । কেন
? তবে কি বহ্নিশিখার সাধের গহনাগুলো চুরি
হয়ে গেল ? কতবার সাবধান
করেছেন, ‘অত সোনাদানা পড়ে
থেকো না । কে
কখন দেখে ফেলবে । বিপদ ঘটতে কতক্ষণ
।’
শোনেননি । রাত্রে বুঝি সেই
বিপদই ঘটেছে । কাছে গিয়ে
শুধোনোর সাহস পাচ্ছেন না
। যা মুখরা মহিলা
। গত রাত্রের ঘুমের যে
সুমধুর রেশটুকু এখনো দু’চোখের
পাতায় লেগে আছে এই
মহিলা যে কথার খোঁচায় সেটুকুর দফারফা করে
ছাড়বেন ।
বাইরে এসে
দেখেন একমাত্র ছেলে বিবেক
বারান্দার এক ধারে দাঁড়িয়ে
নিঃশব্দে কাঁদছে । ক’দিন আগেই দামী একটা সেলফোন
কিনেছে একপ্রকার জেদ করে ।
সেটাই চুরি গেল নাকি ! সেই শোক সামলাতে না
পেরে কেঁদে সাড়া হচ্ছে
দেখে বন্ধুরা কি ওকে সান্ত্বনা দিচ্ছে !
গতরাত্রে এই সেলফোন নিয়েই বেদম
কাজিয়া বেঁধেছিলো বাপ ছেলের
মধ্যে । ছেলেটার কী দুর্মতি
হয়েছিলো কে জানে বাকবিতণ্ডার মাঝেই
রাগের মাথায় বাপকে সজোরে
একটা ধাক্কা মেরে ফেলে
দিয়েছিলো মেঝের ওপর ।
বিপ্রতীপবাবু সেই দুঃখে রাতের
খাবার না খেয়ে শুতে
চলে গিয়েছিলেন নিজের ঘরে । তারপর কখন যেন
গাঢ় ঘুমে তলিয়ে গিয়েছিলেন নিজেও টের
পাননি ।
কিছুদিন
যাবৎ শরীরটা ভালো যাচ্ছে না । গত রাত্রে ভালো ঘুম
হবার দরুন অনুভব
করছেন অসুস্থ শরীরটা বেশ ঝরঝরে হয়ে গিয়েছে
। তিনি সেই আনন্দে শিস
দিতে দিতে উঠে এলেন তিনতলার ছাদে ।
ডাক্তারের পরামর্শ মতো আজকাল এতোগুলো সিঁড়ি
ভেঙে সচরাচর ছাদে ওঠেন
না । আজ উঠলেন এবং
উঠতে উঠতে টের পেলেন
বুকের বামদিকটায় অসম্ভব ব্যথা
চাগাড় দিয়ে উঠেছে । এই ব্যথার দরুন
মনে পড়ে গেল একটা কথা
।
গত রাত্রে
বিবেকের সঙ্গে রাগারাগি করে
এক মাথা আগুন নিয়ে
এসে বিছানায় শুয়েছিলেন । শোবার খানিক পর
ঠিক এমনই ব্যথা উঠেছিলো
বুকের বামদিকে । সেইসঙ্গে তেষ্টায়
ছাতি ফেটে যাবার উপক্রমও
হয়েছিলো । জল খেতে গিয়ে দেখেছিলেন
বহ্নিশিখা তখনো জলের গেলাস
রেখে যাননি মাথার কাছে
। তারপর আর কিছু
মনে নেই তাঁর ।
মনে থাকবে কীকরে ? তিনি
যে ততক্ষণে গাঢ় ঘুমে
তলিয়ে গিয়েছেন ।