গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৬

তাপসকিরণ রায়

কফন


রমাকান্তর বয়েস সত্তরের কাছাকাছি। বয়সের ভাবনাগুলি মাঝে মধ্যে তাঁকে অদ্ভুত এক জাগায় নিয়ে এসে দাঁড় করায় ! এমনটাও ভাবেন রমাকান্ত, আচ্ছা, মরে যাবার পর কি আর তাঁর কিছুই করার থাকে না? জন্মান্তরের প্রমাণ তো কেউ দিতে পারেন না--তবে ? অভিজ্ঞতা তাঁকে কি বলে ?
রমাকান্ত স্বপ্নে নিজেকে অনেকবার মৃত দেখেছেন। তাঁর শব কাঁধে তুলে হরিবোল, ধ্বনি দিয়ে লোকেদের বয়ে নিয়ে যেতে দেখেছেন। শবদেহ হয়েও তিনি যেন সব কিছু দেখতে পাচ্ছিলেন। স্বপ্নের এ মত কথা শুনে অনেক বিজ্ঞ-অভিজ্ঞ লোকেরা বলেছেন, নিজের মৃত্যু দেখা ভালো, তাতে নাকি আয়ু বাড়ে ! 
আয়ু বেড়েছে, কারণ সত্তর তো রমাকান্তর ছুঁই ছুঁই চলছে ! জীবন ব্যতীত করা প্রায় শেষ হল। এখন তো বলতে গেলে সেই মৃত্যুর দিকেই এগিয়ে যাওয়া। 
এমনি একদিন রমাকান্ত ভাবছিলেন, তিনি মরে গেছেন, কান্নার একটা রোল উঠেছে তাঁর চারদিক ঘিরে। কিন্তু কে কাঁদবে ? এখন যে তিনি ঘরে একা থাকেন। স্ত্রী গত হয়েছেন বহুদিন হল। হ্যাঁ, বিদেশ থেকে ছেলে, ছেলে বৌ, নাতনীরা এলে কাঁদবে, জানেন তিনি। সেই মাঝের দুটো দিন তিনি কি চিরনিদ্রায় যাপন করবেন ? 
যেন মৃত রমাকান্ত সত্যি সবকিছু দেখতে পাচ্ছিলেন। তাঁর মরদেহ কফনের নিচে শায়িত। কিন্তু তিনি উঠে বসেছেন--চারদিকে পায়চারী করছেন। মৃত্যুর পরে নাকি কল্পলোক, স্বপ্নলোক এসবের মাঝেই আত্মার বিচরণ! 
এ কি ! সত্যি তিনি দেখতে পাচ্ছিলেন, ফ্লাইটে বসে তাঁর ছেলে, ছেলে বৌ, নাতনীরা রমাকান্তর অন্তিম যাত্রা দেখতে আসছে ! ছেলে একবার চোখ মুছল। ছেলে বৌ ছেলের দিকে তাকিয়ে ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ল। আর তাঁর পাঁচ আর সাত বছরের  দুই নাতনী অনেকটা স্বাভাবিক। তাদের মাঝে বিয়োগ ব্যথার চেতনা নেই। এমনি হয়, ছোটবেলাটা সব কিছু ভুলে থাকার বেলা যে !
রমাকান্ত স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন, কফনের নিচে তাঁর মৃতদেহ। কফন ভেদ করে তিনি দেখতে পাচ্ছেন তাঁর নিশ্চল ভাবলেশহীন দেহটাকে।
হঠাৎ দুপুরের ভাতঘুম ঝেরে উঠে বসলেন রমাকান্ত। সত্যি, নিজের মৃত্যু কল্পনা করতে গেলেও যে বড় ভয় লাগে !