গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৬

পলাশ কুমার পাল

প্রবহমান

আচমকা একটা মারুতি গায়ের পাশ দিয়ে চলে গেল। কোনোরকমে নিজেকে সামলে নিল অরিন্দম। তিনটে ব্যাগ নিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় খেয়ালই করেনি পিছনে গাড়িটা চলে এসেছে। আর একটু হলে পায়ের উপর দিয়ে গাড়িটা চলে যেত।
ঠিক সেই মূহূর্তে দূর থেকে একটা আওয়াজ ভেসে এল, "দেখে এসো অরিন্দম!"
অরিন্দম চারপাশ তাকাল। কিছুটা দূরে রাস্তার উল্টো দিকে প্রতীক্ষালয়ে একজন তাকে দেখে সহাস্য বদনে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছে । অরিন্দম রাস্তার দু'দিক ভালো করে দেখে রাস্তা পার হয়ে প্রতীক্ষালয়ে উঠল। ব্যাগগুলো পিঠ থেকে নামাতে নামাতে অরিন্দম সেই ভদ্রলোকটাকে জিজ্ঞাসা বলল, "কেমন আছেন, স্যার ?"

   ভালো।  তুমি ?

   ভালোই, স্যার ! অরিন্দম তাকে প্রণাম করে বলল।

ভদ্রলোকটা মুচকি হাসল। ইনি স্বনামধন্য অধ্যাপক ডঃ প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায়। অরিন্দম যখন কলেজে সংস্কৃতে সাম্মানিক পড়ে, তখন এই ডঃ প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন কলেজের সংস্কৃত বিভাগের প্রধান। অরিন্দমের বুদ্ধিদীপ্ত কথাবার্তার জন্য প্রবীরবাবুর প্রিয় হয়ে উঠেছিল। অরিন্দমও প্রবীরবাবুর কিছু সমাজকল্যাণ মূলক কাজের কথা শুনেছিল। এবং তখন থেকে এই মানুষটার প্রতি তার শ্রদ্ধা জন্মায়। অরিন্দমেরও ছোটোবেলা থেকে ইচ্ছা ছিল কিছু সামাজিক কাজ করবে। প্রত্যন্ত গ্রামে বড় হওয়ার সময় দেখেছিল গরীব মানুষের আর্থিক অনটন, শিক্ষার অভাব, জীর্ণ আশ্রয়, ছিন্ন বস্ত্র। দারিদ্রতার চরম রূপ সে নিজের পরিবারের মধ্যেও দেখেছিল। তাই শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দৃঢ় মানসিক সংকল্প অসহায়ই থেকে গেছে। মুখচোরা স্বভাবের অরিন্দম সাহসিকতার সঙ্গে সেভাবে কোনো কাজই করে উঠতে পারেনি। কেবল গ্রামে থাকাকালীন গরীব ছেলেমেয়েদের বিনা পারিশ্রমিকে পড়াত। সেভাবে তেমন কিছু করতে পারেনি। অন্যদিকে প্রবীরবাবু তখন নিজে তিন-চার জন শিক্ষার্থীর পড়াশোনার খরচ বহন ঙ্করতেন এছাড়া গ্রামের দরিদ্র মানুষদের বস্ত্র দান করত। আর বর্ধমান শহরে একটা বৃদ্ধাশ্রমের দায়িত্বেও ছিল।

তার এই সমাজসেবা মূলক কাজের কথা সংবাদপত্রে এবং টিভিতেও প্রকাশ হয়। এইসব কাজের জন্য অনেক জায়গায় তাকে সম্বর্ধনা দেওয়া হয় এবং একটি জনপ্রিয় টি.ভি. চ্যানেলও তাকে সেরার শিরোপা দেয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রবীরবাবুর কাজের পরিধিও কিছুটা বেড়ে যায়। কলেজ থেকে বেড়িয়ে আসার সময় অরিন্দম যে প্রবীরবাবুকে দেখেছিল, এখন সেই প্রবীরবাবু কর্মের পরিধিতে অনেকটাই বড় হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে ফোনে কথাবার্তার মাধ্যমে অরিন্দম প্রবীরবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। আজ হঠাত্এভাবে দেখা হয়ে যাবে অরিন্দম ভাবেনি।

   প্রবীরবাবু মুচকি হাসতে হাসতে বলল, "শান্তিনিকেতন থেকে ফিরছ?
হ্যাঁ,  স্যার ! এই শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস ট্রেনটায় এলাম। বাস ধরে বাড়ি যাব।

অরিন্দমের শান্তিনিকেতনে থাকার খবর প্রবীরবাবু জানতেন। অরিন্দম কলেজ থেকে পাশ করার পর শান্তিনিকেতনে একটা বি.এড. কলেজে ভর্তি হয়। কলেজে টেস্ট পরীক্ষার জন্য কিছুদিন ছুটি থাকায় অরিন্দম ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ির পথে রওনা দেয়। শান্তিনিকেতন থেকে ট্রেনে বর্ধমান এসে, বর্ধমান থেকে বাস ধরে বাড়ি ফিরতে হয়।

   কথার রেশ ধরেই অরিন্দম বলে, "অনেকদিন পর দেখা হল আপনার সঙ্গে। তা আপনি কোথায় যাবেন ?"

   আমি দেশের বাড়ি মাকে দেখতে যাব। অনেকদিন সময় হয়নি তো। এই মেয়েকে তোমার বৌদিকে নিয়ে বেরিয়েছি ।

    অরিন্দম দেখল, পাশে ওনার মেয়ে মায়ের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটির বয়স সাত-আট বছর প্রায়। দুজনেরই পোষাকে উগ্র আধুনিকতার ছাপ। অরিন্দম সেই দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল, "আপনি কি এখন বর্ধমানে থাকেন ?"
-      হ্যাঁ। বর্ধমানেই থাকি। কাজের জন্য এখানে সেখানে ছুটতে হয় তো। এখান থেকে যাওয়ার সুবিধা।
-      তাহলে আপনার মা ? অরিন্দম বলে । একজন সমাজসেবকের মা কতটা সেবা পাচ্ছে তার ছেলের কাছ থেকে সেটা জানার কৌতুহলে। অরিন্দম এক বন্ধুর মুখ থেকে শুনেছিল যে, প্রবীরবাবুর স্ত্রী বিধবা শ্বাশুড়িকে সহ্য করতে পারে না।
প্রবীরবাবু প্রশ্নটা বুঝতে পারে। তাই অনেকটা অজুহাতের সুরে বলে, "মা শহরে আসতে চাননি। তাই তিনি একাই ঐখানে থাকেন। বাস্তু-ভিটের মায়া কাটাতে পারেননি তো ! আমিও ওনাকে জোর করে মানসিক আঘাত দিইনি। ঐখানেই শান্তিতে থাকুন ! দেখাশোনা করার একজন আছে আর আমি মাঝে মাঝে গিয়ে দেখে আসি।"
অরিন্দমের ভাবনাটাই সত্য হল। সমাজে সেবার পরিসর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রবীরবাবু সমাজের প্রবহমানতাতেও গা ভাসিয়েছে। যে বয়সী বৃদ্ধদের সেবার জন্য তার দায়িত্বে তিনটি বৃদ্ধাশ্রম চলে, সেই বয়সী তার মা পরিবারের থেকে দূরে একাকী অন্যের করুণা নির্ভর হয়ে ড়ে আছেন। কর্তব্যের খাতিরে মাঝে মাঝে সন্তানের দেখা পান। হয়তো এই ভাবনাটা মিথ্যাও হতে পারে, যদি মহ কাজের জন্য ক্ষুদ্রকে তুচ্ছ জ্ঞান করা পথ হয়। নিজের মধ্যেই অরিন্দম দ্বিধান্বিত হয়। একটা বাস এসে দাঁড়ায় রাস্তার উল্টো দিকে। বিপরীত দিক থেকে আর একটা বাস এসে প্রতীক্ষালয়ের সামনে দাঁড়ায়। দুই বাসের মাঝে সংকীর্ণ পরিসরে রাস্তার বিপরীত দিকে একটা স্টেশনারী দোকান দেখা যায়। অরিন্দম কিছু মূহূর্তের জন্য নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সেই দিকে। প্রবীরবাবুর বাকি কথাগুলো হাওয়াতেই হারিয়ে যায়।
 "বাবা, কচুরি খাব!" প্রবীরবাবুর মেয়ে রিনির কথায় অরিন্দমের অন্যমনস্কতা ভাঙে। অরিন্দম ঘুরে দেখে প্রতীক্ষালয় এবং প্রতীক্ষালয়ের কিছুটা দূরে প্রস্রাবখানার মাঝের ক্ষুদ্র পরিসরে একজন কচুরি কুমড়োর তরকারি বিক্রী করছে। দুটি লোক শালপাতার পাত্রে কুমড়োর তরকারি সহযোগে কচুরি খাওয়া সমাপ্ত করে উচ্ছ্বিষ্ট কুমড়োর  তরকারিসহ  শালপাতাটা রাস্তার পাশে একধারে ফেলে রাখল।
এদিকে প্রবীরবাবু মেয়ের কথা শুনে ধমকের সুরে বলল, "এই তো বাড়ি থেকে খেয়ে বের হলি! আবার রাস্তায় উল্টোপাল্টা বায়না ! তাছাড়া রাস্তার খাবার নোংরা।"
রিনি তবু জেদ ধরে থাকে, "না, বাবা!"

   মেয়ের অনুরোধে  সায় দেয় প্রবীরবাবুর স্ত্রী। নিরুপায় প্রবীরবাবু অরিন্দমকে বলে, "যাও তো! ঐখানে রেস্টুরেন্ট  থেকে চারটে এগরোল নিয়ে এসো তো!"

-      আমি কিন্তু এগরোল খাব না স্যার। আমার গতকাল থেকে শরীর খারাপ।

-      সে কি! পেটের প্রবলেম ?

-      আর কি! খাওয়ার গণ্ডগোলে হয়ে গেছে।

-      বেশ। তাহলে তিনটে নেবে। আর তুমি তোমার জন্য কিছু কিনবে! -এই বলে প্রবীরবাবু টাকা ভর্তি মানিব্যাগ থেকে একটা পাঁচশ টাকার নোট বের করে দিল।

অরিন্দম তিনটে এগরোল কিনে এনে বাকি টাকা প্রবীরবাবুকে ফের দিয়ে প্রতীক্ষালয়ে বসল এবং ভাবতে লাগল- রাস্তার কিছু মানুষের হাতে কত টাকা! কথায় কথায় বেহিসেবী হয়। বাড়িতে খেয়ে এসে এই ভরদুপুরে আবার এগরোল খাচ্ছে। শুধু মেয়েটাকে দিলে কি হত না? নিজেরাও খেতে শুরু করেছে। অথচ দেশের কত মানুষ দিনের পর দিন না খেয়ে মরে যাচ্ছে । অরিন্দম এই বেহিসাবী খাওয়াটাকে মন থেকে মানতে পারে না। ছোটবেলা থেকে ক্ষুধার্ত মানুষগুলোর যন্ত্রণা সে যে বোঝে।

দূরে একটা পাগলাটে মতো লোক রাস্তার মাঝ দিয়ে হেঁটে আসছে। পরনে ছিন্ন বস্ত্র। ময়লার আস্তরনে খাঁটি রঙটিও হারিয়েছে। রাস্তার মাঝে চলে আসায় গাড়িগুলোর গতি থমকে গেল। কেউ হর্ণ বাজায়, কেউ চিত্কার করে। একটা পাগল গতিকেও রোধ করার ক্ষমতা রাখে -এটা ভেবেই অরিন্দম অবাক হয়। এই পৃথিবী পাগলের কাছে তুচ্ছ। জীবনকে তারা ভয় করে না। জন্ম মৃত্যু -এই তো জীবন! এর মাঝের পরিসরে জীবনকে চেনা, জানা ভোগ করা ছাড়া মানুষ কি বা করতে পারে। তবে এক জীবনে পৃথিবীকে জানা কি কারোর পক্ষে সম্ভব? অরিন্দমের মনে হয় এই ধরণের পাগলা মানুষগুলোর পক্ষে হয়তো সম্ভব! সাধারণ মানুষগুলো তো পাগলের মনের বিস্তৃতি বুঝতে পারে না। হয়তো পাগলগুলো মনের দিক দিয়ে সারা পৃথিবীর বিচিত্রতাকে বুঝে যায় বলে। আর সেই একই কারণে তারা পাগল বলে সভ্যতার কাছে চিহ্নিত হয়।

"কোথা থেকে এগুলো কিনেছ, অরিন্দম? প্রবীরবাবুর স্ত্রীর প্রশ্নে অরিন্দম ঘুরে তাকাল,
-      কেন?"

-      ভালো নয় ! ভিতরে শশাকুঁচোগুলো বাসি মনে হয়! গন্ধ ছাড়ছে! নাক বেঁকিয়ে হাতের এগরোল পাশে ছুঁড়ে ফেলে এবং রিনির হাত থেকে জো করে এগরোল নিয়ে রাস্তায় ছুঁড়ে দেয়।

-      তাই তো! আমারও মনে হচ্ছিল কেমন যেন একটা গ্যাস ছাড়ছে ! প্রবীরবাবুও এগরোলটা ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
অরিন্দমের খারাপ লাগে। সে নিজে কিনে এনেছে যে। তবে এত খারাপ হওয়ার তো কথা নয়! দোকানে অনেকেই খাচ্ছিল। মনটা বিষন্ন হয়ে যায়। আবার রাস্তার দিকে চোখ ফিরিয়ে নেয়। শশব্যস্ত কত মানুষ দ্রুত গতিতে চলে যাচ্ছে। কেউ সাধারণ, কেউ বা ধনী। চলার পর এক হলেও কেউ যায় বাসে, কেউ যায় অটোয়, কেউ যায় নিজস্ব দামী গাড়িতে চড়ে। কর্মব্যস্ততাতেও মানুষের কত পার্থক্য! কেউ রিক্সা চালায় উপার্জনের জন্য, কেউ চালায় ট্যাক্সি, কেউ আবার গাড়ি চড়ে ছুটে যায় সিনেমা হল বা শপিং মলে।

অরিন্দম দেখে সেই পাগলা লোকটা ব্যস্ততম পথের একপাশ দিয়ে এগিয়ে আসছে।

-      তোমার গাড়ি 'টায় অরিন্দম ? প্রবীরবাবুর প্রশ্ন।

-      জানি না ! বাসের সময়টা ঠিক জানা নেই।

-      আমার বাস তো এক্ষুণি আসবে! প্রবীরবাবু অরিন্দমের দিকে তাকায়।

-      বি.এড. শেষ হলে কী করবে? চাকরির পরিস্থিতি তো খারাপ !

   দেখি কী হয়!  
-      আমার বৃদ্ধাশ্রমের দায়িত্ব নাও। আমি বেশি সামলাতে পারছি না ! ভালোরকম বেতন দেওয়া হবে।
বেতন ? অরিন্দমের খটকা লাগে। তাহলে কি কেবল পয়সার বিনিময়ে সমাজসেবা ? অরিন্দম চোখে চোখ রেখে বলে, "কে বেতন দেবে ?
-      কেন! বৃদ্ধের পরিবারের লোক! প্রায় সবাই খুব ধনী ঘরের বাবা-মা'কে দেখাশোনা করার ভয়ে আশ্রমে রেখে যায়।
অরিন্দমের বৃদ্ধাশ্রম সম্বন্ধে পুরানো ধারণা ভেঙে চুরমার  হয়। এখন বৃদ্ধাশ্রমটা যেন ব্যবসা হয়ে গেছে। অরিন্দমের মনে প্রবীরবাবু সম্বন্ধেও নূতন ভাবনার পালক যোগ হয়। যে শিক্ষককে সে সমাজ-সেবক বলে মানত, তার এই সেবাটাকে অরিন্দম কেবল সদিচ্ছার কর্ম বলে ভাবত সেই ভাবনা কোথায় যেন ক্ষয়ে গেল। সে জানল এটা কেবল ইচ্ছা নয়, জীবিকা যশ পাওয়ার উপায়।
অরিন্দমকে চুপ করে থাকতে দেখে প্রবীরবাবু আবার বলল, "আমার কাজে সাহায্য করার জন্য তোমার মতো একজনকে চাইছি!"
-      অরিন্দম রাস্তার দিকে তাকিয়ে বলে, দেখি! পরের কথা, তখনই ভাবব !
অরিন্দমের চোখের সামনে এখন সেই পাগল লোকটা। কি যেন বিড়বিড় করতে করতে কচুরি বিক্রেতার পাশে ড়ে থাকা পরিত্যক্ত শালপাতায় উচ্ছ্বিষ্টটুকু মহানন্দে কুড়িয়ে খাচ্ছে। তাই দেখে একটা লোক তার হাতে দশ টাকার একটা নোট ধরায়। পাগলটা হাত নাড়তে নাড়তে অসম্মতি প্রকাশ করেও টাকাটা নেয়। অরিন্দম দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কি বিচিত্র এই পৃথিবী! যে খাদ্য কিছু মানুষে খারাপ বা উচ্ছ্বিষ্ট বলে ছুঁড়ে ফেলে, সেই খাদ্য ক্ষুধার্ত মানুষকে মহানন্দ দেয়। দেশে অনেক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে দিন দিন। কিন্তু এইসব নিরন্ন, ক্ষুধার্ত, মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষগুলো আজও রাস্তায় কেন? -এই ভাবনায় অরিন্দম নিজেকে অসহায় মনে করে। নিজেও তো সে কিছু করতে পারে না।
অরিন্দম উঠে গিয়ে পকেট থেকে পঞ্চাশ টাকার একটা নোট বের করে পাগলটার হাতে দিল। এর বেশি অরিন্দম আর কি বা করবে- কিছু ভেবে পেল না। তার তো কোনো প্রতিষ্ঠান নেই, নেই কোনো প্রতিষ্ঠা।

   প্রবীরবাবু দাঁড়িয়ে অরিন্দমের কাণ্ড দেখে চমকে গেল। বলল, " লোকটাকে অত টাকা দিলে ?"

   অরিন্দম নিরুত্তর রয়ে পাগলটার চলনভঙ্গী পর্যবেক্ষন করতে লাগল।
  প্রবীরবাবুর বাস এসে যায়। প্রবীরবাবু বাসে উঠে পড়ে। ওঠার সময় শুধু বলে, "আমার প্রস্তাবটা ভেবে দেখে দেখো !"
অরিন্দম কিছু বলল না। বাসটি দ্রুত গতিতে পাগলটাকে অতিক্রম করে চলে গেল। পাগলটা টলমল পায়ে মহানন্দে হেঁটে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে দৃষ্টির বাইরে চলে গেল। তবু খনেক দৃশ্য অরিন্দমকে নাড়িয়ে দিয়ে গেল। অরিন্দমের মাথা ঝিমঝিম করতে লাগল। সে রাস্তা থেকে উঠে এসে প্রতীক্ষালয়ে বসল। ব্যাগগুলো এতক্ষণ  তার খেয়ালেই থাকেনি। ব্যাগগুলো কাছে টেনে নিয়ে একটা জলের বোতল বের করে মুখে জল দিল। অপেক্ষা শেষ হয় না। রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখল কত গাড়ি আসে যায়। যাত্রীরা নামে, যাত্রীরা উঠে যায় গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। অরিন্দমের বাস এলো না এখনো। বিরক্ত হয়ে উঠে সে পায়চারি করতে লাগল। পাশে প্রস্রাবখানার গন্ধে গা আরও গুলিয়ে উঠল।