গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৬

শেখর কর

শব্দবিহীন


হিমেল রাত গভীর হয়  । নিস্তব্ধ ঝুপরি বস্তি । ছোট্ট পরাণ ওদের তাবুর ওপরে পলিথিনের ফুটো দিয়ে আকাশের তারাদের দিকে চেয়ে থাকে অপলক । ঘুমবুড়ি উধাও আজ দুচোখের পাতা থেকে । পাশে মা অসারে ঘুমিয়ে থাকে । কি আর করবে । সারাদিন এপাড়া সেপাড়ায় ভিক্ষে করে শরীরের আর কিছু থাকে না যে । তার মধ্যে এবার শীতের প্রকোপ বড্ড বেশি । আজ অনেক চেয়েচিন্তে হাতেপায়ে ধরে ঘোষপাড়ার পরিমলের  গাদা থেকে অনেকটা পোয়াল যোগাড় করতে পেরেছে সে । পুরোণো চটের বস্তায় ভরে লেপের মত বানিয়েছে সারাদিন ধরে । রাতে ছেলের গায়ে সেই পোয়ালের লেপ দিতে পেরে শশিবালার মনে আনন্দ আর ধরেনা ।  যাক্ এবার পরাণটা শীতে আর অত কষ্ট পাবেনা । আচমকা ঘুম ভাঙতেই দেখে পরাণ জেগে আছে আর এক নিমেষে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে । শশিবালা কিছু বলার আগেই পরাণ জিজ্ঞেস করে –‘ইডা আমার গায়ে কি দিছিস মা ? আইজ খুব ওম হইছে ।শশিবালা হেসে বলে ইড্যা খ্যার, ছালার মইধ্যে ভইরা তরে দিছি । ক্যান আরাম পাইতাছস না ?’ ছোট্ট পরাণ আকাশের দিকে তাকিয়ে আত্মগতভাবে বলে ওঠে – ‘ঈস এই ঠান্ডায় জ্যাগোরে খ্যার নাই ত্যগোরে জ্যান কি কষ্ট । শিশুমনে কি সতি্যই বাসা বাঁধেন ঈশ্বর !  শশিবালা অবাক হয়ে পরাণের মুখে দিকে চেয়ে থাকে ।  পলিথিনের ছাউনি ভিজে ওঠে শিশিরের কোমল ছোঁয়ায় । সারারাত শব্দবিহীন ।