হিমেল রাত গভীর হয় । নিস্তব্ধ ঝুপরি বস্তি । ছোট্ট পরাণ ওদের
তাবুর ওপরে পলিথিনের ফুটো দিয়ে আকাশের তারাদের দিকে চেয়ে থাকে অপলক । ঘুমবুড়ি উধাও
আজ দুচোখের পাতা থেকে । পাশে মা অসারে ঘুমিয়ে থাকে । কি আর করবে । সারাদিন এপাড়া
সেপাড়ায় ভিক্ষে করে শরীরের আর কিছু থাকে না যে । তার মধ্যে এবার শীতের প্রকোপ বড্ড
বেশি । আজ অনেক চেয়েচিন্তে হাতেপায়ে ধরে ঘোষপাড়ার পরিমলের গাদা থেকে অনেকটা পোয়াল যোগাড় করতে পেরেছে সে ।
পুরোণো চটের বস্তায় ভরে লেপের মত বানিয়েছে সারাদিন ধরে । রাতে ছেলের গায়ে সেই
পোয়ালের লেপ দিতে পেরে শশিবালার মনে আনন্দ আর ধরেনা । যাক্ এবার পরাণটা শীতে আর অত কষ্ট পাবেনা । আচমকা
ঘুম ভাঙতেই দেখে পরাণ জেগে আছে আর এক নিমেষে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে । শশিবালা
কিছু বলার আগেই পরাণ জিজ্ঞেস করে –‘ইডা আমার গায়ে কি দিছিস মা ? আইজ খুব ওম হইছে ।‘ শশিবালা হেসে বলে –
ইড্যা খ্যার, ছালার মইধ্যে ভইরা তরে
দিছি । ক্যান আরাম পাইতাছস না ?’ ছোট্ট পরাণ আকাশের দিকে
তাকিয়ে আত্মগতভাবে বলে ওঠে – ‘ঈস এই ঠান্ডায় জ্যাগোরে
খ্যার নাই ত্যগোরে জ্যান কি কষ্ট ‘ । শিশুমনে কি সতি্যই
বাসা বাঁধেন ঈশ্বর ! শশিবালা অবাক হয়ে
পরাণের মুখে দিকে চেয়ে থাকে । পলিথিনের
ছাউনি ভিজে ওঠে শিশিরের কোমল ছোঁয়ায় । সারারাত শব্দবিহীন ।