গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৫

পারোমিতা চট্টোপাধ্যায়

২২শে শ্রাবণ

আজ ফ্লাইটটা বাতিল হয়ে গেল। একটা ট্যাক্সি নিয়েই নীল বাড়ীর দিকে ফিরছে। যেতে যেতে ভাবছে নিজের মনেই... শ্রুতির সাথে সন্ধ্যাটা একটু কাটানো যাবে... আজকাল এতো মনমরা হয়ে থাকে, কিছুতেই আর মানাতে পারছেনা যেন--। শেষ কবে যে শ্রুতিকে হাসতে দেখেছে নীল মনে করতে পারছেনা...।
বেশ হাওয়া বইছে...ওদিকের আকাশটা কালো হয়ে এসেছে... এখনি হয়তো বৃষ্টি নামবে... দেখতে দেখতে হুরমুর করে বৃষ্টি এসে গেল।
বৃষ্টিতে নীলের মনটা বেশ কবি কবি হয়ে গেল... মনে পড়ে গেল কলেজ জীবনের কথা...বন্ধুরা মিলে বৃষ্টিতে ভেজা, রামদার দোকানে চটা ওঠা কাপে চা আর তেলেভাজা...  আজকাল ভাবলেই গলার কাছে একদলা অম্বল উঠে আসে... শ্রুতি আগে খুব সুন্দর গান গাইত... হয়ত এখনও গায়... তারই শোনার সময় হয়না...একসময় গান বাজনা তার প্রাণ ছিল...কতদিন কোন ভাল গানের পোগ্রামে যাওয়া হয়নি...- এই কর্পোরেট তার জীবনটা শুষে নিচ্ছে... নিজের পছন্দটা বোধহয় বদলে গেছে... ক্লাব পার্টি আর ড্রিক্সেই ইদানিং গা ভাসিয়ে  দিয়েছে...  শ্রুতি তার এই বদলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারেনি... যুগের সাথেতো তাল মেলাতে হবে এ কথা ওকে বোঝাতে পারেনি...বাড়ীর গলিটা এসে গেল... তার ফ্ল্যাটটা দেখিয়ে দিল নীল ট্যাক্সিচালককে...

দ্রুত লিটে উঠে ডুপ্লিকেট চাবি ঘুরিয়ে দরজা খুলে ফেলল... শ্রুতি হয়তো চমকে যাবে... তবে খুশী যে হবেনা নীল বেশ যানে তা...  কোথাও শ্রুতিকে দেখতে পাচ্ছেনা... এতো বৃষ্টিতে কোথায় গেল...? শ্রুতির গান ভেসে আসছে না... স্টাডিতে গিয়ে দেখল... শ্রুতি কাঁচের জানলা খুলে দিয়েছে... বৃষ্টির ছাঁট আসছে... রবীন্দ্রনাথের ছবির সামনে একটা কাঁচের প্লেটে কিছু বেল, জুই রাখা, গন্ধে ঘরটা ভরে আছে... শ্রুতি খোলা চুলে তানপুরা নিয়ে চোখ বুজে গান গাইছে... "হাত খানি ওই বাড়ি৮য়ে ধর দাওগো আমার হাতে"... তাকে দেখে চমকে উঠল... নীল দরজা ধরে দাঁড়িয়ে ছিল...--তার চোখে জল----এগিয়ে এসে শ্রুতির দুই কাঁধে হাত রেখে বলল... বড় সুন্দর একটা সন্ধ্যা উপহার পেলাম...  

শ্রুতি চোখ নামিয়ে নিয়ে বলল... আজ ২২শে শ্রাবণ...।।