তখনও
সকাল স্পষ্ট হয়ে ওঠেনি। ধীরে ধীরে রাত তলিয়ে যাচ্ছে সূর্যের আলোয়। ফর্সা হচ্ছে পৃথিবী
ক্রমশ। ঋতমের আধখোলা চোখে ফর্সা পৃথিবীর আলো জানলা দিয়ে এসে লেপ্টে যাচ্ছে। ঘুমের ঘোরে
বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে করতে কানে ভেসে আসে বাইরে কোলাহলের শব্দ। আন্দাজ করতে পারে
না। মনে হয় অনেক লোক জড়ো হয়েছে তাদের বাড়ির পাশেই। এপাশ করতে করতে সে দেখে পাশে মা-বাবা কেউ নেই। এতো সকালে সবাই উঠে পরেছে! যদিও ঋতমের মা নিবেদিতা দেবী ভোরেই ওঠে।
কিন্তু তার বাবা সুশীলবাবু? ঋতমও উঠেগ পরল। মনে হয় কিছু হয়েছে বাইরে। সে উঠে দরজা খুলে বাইরে বেড়িয়ে
গেল।
বাইরে এসে ঋতম দেখে বহুলোক এসে ভিড় করেছে তাদের গোয়ালের পাশে। এই গোয়ালটি
ছিল ঘরের পেছনে। সে গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখে কেউ বলছে দড়ি আনতে,
কেউ জিজ্ঞাসা করছে-
'তুলবি কি করে?'
সেই
ভিড়ের মধ্যে সুমন নামে একজন বলে উঠল, 'আমি নীচে নামব। দড়ি জোগাড় কর!'
ঋতম
কিছু বুঝতে পারে না। সে দেখতে পায় তার বাবাও শশব্যস্ত। ঋতম পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মাকে
জিজ্ঞাসা করে, 'মা
কী হয়েছে?'
নিবেদিতা
দেবী উত্কণ্ঠিত
কণ্ঠে বলেন, 'আমাদের
গোরুটা কুয়োর মধ্যে পরে গেছে!'
'ঊষা!'
'হ্যাঁ রে! ঊষা কখন কুয়োর মধ্যে পরে গেছে।'
ছোটো ঋতমের মনটা খারাপ হয়ে যায়। সেও ভয় পায়। তাদের গোয়ালের পাশে পায়খানা ঘর করার জন্য তিরিশ ফুটের কুয়ো খোঁড়া হয়েছিল। রাতে গোরুটি দড়ি ছিঁড়ে চড়তে চড়তে সেই কুয়োর বেড়ের উপর উঠে পরে কোনোভাবে এবং বেড়টি সেই মূহূর্তে ভেঙে গোরুটি নীচে পরে যায়। রাতে কেউ বুঝতে পারেনি। ভোরবেলা নিবেদিতা দেবী গোয়ালে যাওয়ার সময় গোঙানির শব্দ পেয়ে গিয়ে দেখে গোরুটি ঘাড়টা কোনোরকমে উপর দিকে তুলে চিত্কার করছে। ভিতরে পৃথিবীর আওয়াজ উপরের পৃথিবীতে অস্পষ্ট। ঊষার পাগুলো জড়োসড়ো হয়ে আছে, নাড়াতে পারছে না। সামনের ডানদিকের পা'টি বেকায়দায় পরেছে। অসহ্য যন্ত্রণায় বাম চোখটি বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে উপরের মানুষগুলোকে আকুল মিনতি করছে, নিজেকে প্রাণে বাঁচানোর জন্য। ঋতম ছোটো বলে কেউ তাকে কুয়োর পাশে যেতে দেয়নি। সে দূর থেকে মানুষগুলোর কথা শুনছে, আর ঈশ্বরের কাছে মনে মনে প্রার্থনা করছে। মায়ের কাছে শুনেছে ঈশ্বর নাকি বিপদে পাশে দাঁড়ায়। এই চার বছরের ঋতম ঊষাকে ভীষণ ভালোবাসে। মা যখন গোয়ালে যেত সেও সঙ্গে যেত। ঊষার গায়ে, মাথায়, গলায় হাত বোলাত। আদর করত। আর মনে মনে কথা বলত। ঊষাও ছিল শান্ত প্রকৃতির। সে এই ছোটো ঋতমের আদর উপভোগ করত। যখন ঋতম তার গলায় হাত দিত, তখন সেও গলা তুলে ধরত যাতে ঋতমের সুবিধা হয়।
ঋতমের ঠাকুমা গোরুটার নাম ঊষা রেখেছিল। ঊষাকালে জন্ম বলে এই নাম। ঠাকুমা অনেকদিনই গত হয়েছেন। কিন্তু তার দেওয়া নাম ধরে তাকে সবাই ডাকত। এই ঊষার বিগত বছর একটি বাচ্চা হয়। সেটির নাম রেখেছিল বৃহস্পতি। ঋতম এই বৃহস্পতিকে খুব ভালোবাসত। একটি শিশু মনের কথা একটি শিশুই বোঝে। বৃহস্পতি ছুটে ছুটে ঋতমের সঙ্গে খেলা করত। আর দূরে ঊষা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখত। বৃহস্পতি দূরে চলে গেলে ঊষার চিত্কার করত। ঋতম বৃহস্পতিকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে ঊষার কাছে দিয়ে যেত। ঊষা খুশি হয়ে মাথা, কান নাড়ত। কিন্তু এই বৃহস্পতি একদিন হঠাত্ করেই মারা যায়। সেদিন যখন বৃহস্পতির পাগুলো বেঁধে বাঁশে ঝুলিয়ে তুলে নিয়ে যায়, ঊষার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরছিল। সেদিন সে কিছু খায়নি। ঋতমের মনও বিষন্ন হয়ে ওঠে। আজ সেই ঊষা জড়ো হওয়া মানুষগুলোর কাছে প্রার্থনা করছে, নিজের প্রাণের জন্য। সুমন নামে মানুষটির সাহসিকতায় ঊষাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। এই সুমন হল তাদের পাশের বাড়ির দাদা। অসম্ভব সাহসী ও সামাজিক। সে একজনকে সঙ্গে নিয়ে দড়ির সাহায্যে কুয়োতে নামে। ঊষার পায়ে দড়ি বেঁধে দড়ি দিয়ে উপরে তোলে। ঊষা অসুস্থ হয়ে পরে। ডাক্তার এসে দেখে যায়। ঊষা কয়েক দিন নিজে ওঠাবসা করতে পারে না। নিবেদিতা দেবী ও সুশীলবাবুর সেবা শুশ্রূষায় ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে।
২.
সেদিনের দূর্ঘটনার
পর প্রায় দেড় বছর বিগত হয়ে গেল দেখতে দেখতে। ঋতমের বয়সও বেড়ে গেছে। সেদিন শুক্রবার।
সকালে জানলার পাশে দাঁড়িয়ে ঋতম গোয়ালের দিকে তাকিয়েছিল। হঠাত্ই দেখে ঊষা ছটপট করছে। মা-বাবা ছুটে গেল। ঋতমও পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
ঊষা একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিল। সন্তান জন্ম দেবার কষ্ট একমাত্র মায়েরাই বোঝে, সে মানুষ হোক বা অন্য পশু। সন্তান জন্মানোর
পর মা ঊষা নিজের সন্তানকে আগলে রাখছে বাকি সবার কাছ থেকে। ক্রমে বেলা বাড়ে। সদ্যোজাত
এই কন্যা সন্তানটিও ক্রমশ স্ব-প্রচেষ্টায় উঠে দাঁড়ায়। ঋতম সকাল থেকে দূরে দাঁড়িয়ে শুধু ঊষা এবং তার
কন্যা সন্তানটির ভালোবাসার রূপ দেখছিল। ঋতম মনে মনে ঐ সদ্যোজাত কন্যা সন্তানটির নাম
রাখে সুখী। শুক্রবারে জন্মেছে বলে এই নাম। সুখী উঠে দাঁড়াতেই ঋতম মায়ের কাছে ছুটে এল- 'মা,
মা! দেখবে এসো, সুখী উঠে দাঁড়িয়েছে!'
'সুখী!', নিবেদিতা
দেবী অবাক হলেন।
'আমাদের বাছুরটা গো!'
'ও! তা
ভালোই তো! এবার
দেখবি তোর সঙ্গে ছুটে ছুটে খেলা করবে!'
'হুম।', বলে ঋতম আবার ছুটে গেল সেই সুখীর কাছে। গিয়ে দেখে সুখী দাঁড়িয়ে লেজ তুলে মায়ের দুধ খাচ্ছে। আর ঊষা জিভ দিয়ে তার শরীর চেটে দিচ্ছে। এক মধুর ভালোবাসা। মা-সন্তানের ভালোবাসার জীবন্ত চিত্র দেখতে দেখতে ঋতমের বুকে এক আনন্দের স্রোত বয়ে যাচ্ছে। দুধ খাওয়া হলে গিয়ে সুখীর গায়ে হাত বোলায়। ঋতমের হাতের স্পর্শে সুখী সরে যায়। ঋতম আবার তার কাছে গেলে আবারও সুখী সরে যায়। ঋতম এইভাবে সুখীর সঙ্গে খেলা করতে শুরু করে। কিছু দিনের মধ্যেই অবসর সময়ে ঋতমের খেলার সঙ্গী হয়ে উঠল সুখী। ঋতম পড়াশোনার সময় ছাড়া বাকি সময় মায়ের সঙ্গে সঙ্গেই ঘুরত। মায়ের কাজে সাহায্য করে দিত। আর্থিক অনটনে পাঁজর বেড়ানো সংসারে আয়ের উত্স ছিল চালকো করা। মা বাবা সারাদিন কঠিন পরিশ্রম করত ধানকে চাল করতে। তাই ঋতম ঘুঁটে তোলা, ঘর ঝাঁট দেওয়া, শুকনো ধান ত্রিপল থেকে বস্তাতে ভরে দেওয়া ইত্যাদি নানা কাজ করে দিত। মায়ের কষ্টের কথা ভেবে কাঠবেড়ালির মতো সাগর বাঁধত। কঙ্কালসার সংসারে আর্থিক অভিঘাতে তার মন বিষন্ন থাকত সর্বদা। তাই আর পাঁচটি শিশুর মতো ঘুরে বেড়ানো, খেলা করা -এইসব করত না। তবে অবসর সময়ে সুখীকে পেয়ে ঋতম খুশি হয়ে উঠত। মুখে তুত্তুরি কাটতে কাটতে সুখীর পেছু পেছু ছোটা- আবার সুখী ঋতমের পেছু পেছু ছোটা, দারুণ মজা হত দু'জনেরই। আবার ঘরের উঠানে সুখী যখন শুয়ে থাকত, ঋতম তার গায়ে, মাথায় হাত বুলিয়ে সুরসুরি দিত। কোমল হাতে সুখীর গায়ের লোমের চুম্বনে ঋতমের হৃদয়টা খিলখিল করে উঠত। আবার ঋতম যখন ঊষার গায়ে সুরসুরি দিত, সুখী এসে গলা বাড়িয়ে দিত। 'তুই এখন যা!' বলে ঋতম সুখীকে সরিয়ে দিতে গেলে ঊষা নিজে সরে গিয়ে সুখীকে জায়গা করে দিত। ঋতম নিরুপায় হয়ে দু'হাতে করে দু'জনকে আদর করত। কেউ ঘাড় ঘোরালে তার কান ধরে, 'এই এইদিকে ঘোর!' -এই আদেশের ভঙ্গিতে নিজেই তার মুখটা ঘুরিয়ে দিত। এইভাবে এই তিনটি প্রাণের মধ্যে এক সখ্যতা তৈরি হয়ে যায়।
৩.
সুখীর বয়স তখন ছয়
মাস প্রায়। একদিন বিছানায় বসে ঋতম পড়ছে এবং গোয়াল চালার দিকে তাকাচ্ছে। ঊষা তখন শুয়ে
শুয়ে জাবর কাটছিল। আর গোয়ালের ভিতর সুখী বাঁধা। ঋতম হঠাত্
এক অপরিচিত কণ্ঠস্বর শুনতে পায়- 'এর আর কত দাম হবে! জোড় পাঁচশো-ছ'শো!'
ঋতম
তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে জানালা দিয়ে উকি মেরে দেখে যে তার বাবা একজন গোরু-পাইকেরের সঙ্গে কথা বলছে। সুশীলবাবু বলেন, 'না না!
যদি হাজার হয় তো,
নিয়ে চলে যান!'
ঋতমের
বুকটা ধড়াস করে ওঠে। কাকে বিক্রী করবে? সে মায়ের কাছে ছোটে, 'মা! মা! বাবা কী গোরুগুলো বিক্রী করবে?'
'তুই কী করে জানলি? পাইকের এলো কি তাহলে!' বলে নিবেদিতা দেবী উঠানের ধান নাড়া ফেলে
রেখে গোয়ালে যান। ঋতম ছুটে গিয়ে আবার জানলার কাছে দাঁড়ায়। পাইকেরের সঙ্গে ঋতমের মা-বাবা ঊষার দর কষছে। ক'দিন ধরেই ঊষা একদম ওঠা বসা করতে পারছিল
না। বয়সের ভারে ও
রোগে সে ন্যুব্জ প্রায়। প্রতিদিন পাড়ার দু-তিনজনকে ডেকে থলে করে তুলে গোয়ালে ঢোকানো
ও গোয়াল থেকে বের করে সুশীলবাবু। আর্থিক অনটনের জন্য ডাক্তারও দেখাতে পারেনি। তার উপর
দুধ দেয়নি। বেকার গোরুটাকে ফেলে রাখা। কিছুদিন বাদ তো মারাই যাবে হয়তো। বরং তার আগে
বেচে দিলে যা পাওয়া যায়, তাই সংসারের প্রয়োজনে লাগবে। বৃদ্ধ মানুষগুলো যেমন সন্তানের কাছে অপ্রয়োজনীয়
হয়ে যায়। ঠাঁই হয় বৃদ্ধাশ্রমে। সন্তান ভাবে এতে সংসারের শান্তি ফেরে। ঊষাও যেন আজ সেইরকম
বৃদ্ধ নিবেদিতা দেবী ও সুশীলবাবুর কাছে। নানা প্রয়োজন ও অপ্রয়োজনের কথা ভেবে তারা গোরুটাকে
বিক্রী করে দিতে চায়। জানলার পাশে দাঁড়িয়ে ঋতম শোনে তাদের কথা। নিবেদিতা দেবী বলেন, 'আড়ে আটশো নয়,
ন'শো দেবেন!'
'এই নিন টাকা!' বলে পাইকেরটি টাকা ধরাতে যান। তখন নিবেদিতা দেবী বলন, 'আজ গোরু দিতে নেই। কাল আসবেন।'
পাইকেরটি
একশো টাকা বায়না দিয়ে চলে যায়। মা-বাবাও গোয়াল থেকে চলে আসে। ঋতম জানলার রড ধরে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টিতে ঊষার
দিকে তাকিয়ে থাকে। এই সরল প্রাণীর দিকে তাকিয়ে তার চোখ ছলছল করে ওঠে। দীর্ঘশ্বাস নিতে
নিতে হাতের মুঠো ছেড়ে দেয়। হাতের চাপ আলগা হলে জানলার রডের কিছু মরচে খসে পরে।
ঋতম সারাদিন ঊষার
পাশে গিয়ে বসে থাকে। মাথায়, পিঠে, পেটে, গলায় হাত বুলিয়ে আদর করে। মনে মনে বলে, 'তুই কাল সকালে আমাদের ছেড়ে চলে যাবি! কেন?
তুই ওঠ না! তুই উঠে দাঁড়ালে, আর তোকে বিক্রী করবে না! ওঠ না! ওঠ!'
ঋতম
বারবার ঊষাকে ঠেলা দিয়ে তোলবার চেষ্টা করে। ঊষা উঠে দাঁড়াতে পারে না। ঊষার চোখ ভিজে
যায়। ঋতম হাত দিয়ে তার চোখ মুছে দেয়। ঊষা তার মাথাটি মাটির উপর অনুভূমিকভাবে রাখে আদর
খাবে বলে। ঋতম আদর করে। সারাদিন প্রায় সে ঐ ঊষার পাশে গুম হয়ে বসে সময় কাটায়। সকাল
থেকে কিছু খায় না। বলে খিদে নেই। রাতেও ভাতের থালার সামনে বসে ভাপ নাড়াচাড়া করে। কথা
বলে না। এইসব দেখে সুশীলবাবু জিজ্ঞাসা করেন,
'কি হয়েছে রে তোর?
কথা বলছিস না। খাচ্ছিস না ভালো!'
ঋতম
একমূহূর্ত স্থির থাকে। তারপর বলে, 'ঊষাকে বেচো না, বাবা!' এই
বলেই সে উঠে চলে যায়। নিবেদিতা দেবী ও সুশীলবাবু ছেলের মনের কথা বুঝলেও তাদের কিছু
করার নেই। বেকার অর্থ খরচ করে গোরুটাকে তারা পুষতে পারবে না। সে শুয়ে শুয়ে ঊষার কথা
ভাবে। ধীরে ধীরে রাত গভীর হয়।
ভোরবেলা ঋতমের ঘুম
ভেঙে যায়। সে উঠে জানলা দিয়ে ঊষাকে দেখে। ঊষা তখনও ঘুমাচ্ছে। আলো তখনও ভালোভাবে প্রস্ফুটিত
করেনি দিনকে। তবে সেই আলো-আঁধারীর মাঝে শীতল বাতাস মৃদুতালে প্রবহমান।
সেই
মূহূর্তে ঋতম দেখে সেই পাইকেরটা চলে এসেছে ঊষাকে নিতে।
নিবেদিতাহ
হাতে বাকি টাকা দিয়ে ঊষা ধরে তুলতে যায়। দেখে ঊষা আর নেই। সে সকলে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে।
পাইকেরটি টাকা ফেরত্ নিয়ে
চলে যায়। ঋতম ছুটে যায়। বারবার ঊষাকে ডাকে। ঊষা তবু ওঠে না। সকাল হয়ে গেলে কয়েকজন এসে
ঊষাকে তুলে নিয়ে যায়। ঋতম চোখের জল ফেলতে ফেলতে ঊষাকে শেষ বিদায় জানায়। ভিতরে সুখী
চিত্কার
করে ওঠে। মূক পশুর হৃদয় কে বুঝবে? তাদেরও প্রাণ ভালোবাসা পেতে চায়,
ভালোবাসার বিনিময়ে। অথচ মৃত্যুর প্রাক্কালে ঊষা যে অভিঘাত
পেয়েছে, সেই
অভিমানে সে আজ নিজেই সব মায়া ত্যাগ করেছে। কেউ তার সেই অভিমান ভাঙাতে পারবে না। পারবে
না তাকে এই পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে। তাই সে কথা বুঝে ছোটো ঋতম নিজের মধ্যেই নিজে ঢোঁক
গেলে।
ঊষাকে নিয়ে চলে গেলে
ঋতম গোয়ালে সুখীর কাছে যায়, কোনো এক ভুলের ক্ষমা ভিক্ষা করতে!
মুখে কিছু বলে না। শুধু তার গায়ে হাত বোলায়। আবছা অন্ধকার
গোয়ালে গোঁজে বাঁধা সুখী ফ্যালফ্যাল করে ঋতমকে দেখে। গোবর মাখা শরীরে দুটি চোখ নির্বাক
দৃষ্টিতে কী খোঁজে?