গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৫

সাঈদা মিমি

ধম্মের ষাঁড়

ও বুজি, আমার পুরা বাগান শ্যাসl ওই দেহো, ক্ষেতে নামছে, তোমার সাধের লাউগাছ গেলো! বুজি নিরুত্তাপl খাইবার দে, উইডা ধম্মের ষাঁড়, কিছু কইলে আমাগের উপর অভিশাপ আইসপো ।
কে ছেড়ে দিয়ে গেছে এই ষাঁড়? যে গেছে সেতো এই গ্রামেও থাকে না । মাসান্তে গাড়ি হাঁকিয়ে আসে, নানা ঋতুর ফসল বুঝে নেয়, বিক্রি করে দিয়ে আবার চলে যায় । সেই কিনা মানত করে ছেড়ে দিয়ে গেছে এই ষাঁড় । একমাত্র কন্যা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত, তার আরোগ্য প্রার্থনায় এই মানত । এদিকে গেরস্থের বাঁশl ছাড়া বলদ যখন ইচ্ছে যার ফসল খেয়ে যাচ্ছে, কাউকে তাড়া করছে, গুঁতোচ্ছে । ধর্মের ভয়ে সবাই চুপ, অভিশাপের ভয়েও ।

উঠতি বয়েসি উচ্চিংড়ে বখাটের দল কি সব ফুসুরফাসুর করে । তাদের সঙ্গে কয়েকজন বয়সী নেতাদেরও দেখা যায় । কথা শোনা যায় না, মাঝে মাঝে উচ্চহাসির শব্দ ভেসে আসে ।
বুজি, আমার বাগান ঠিক কইরা দিয়া যাও, পরমাণু অনু কে বলছে; মানে হলো ছোট বোনটি বলছে বড় বোন কে । অনু বললো, পারুম না... সে এখন রেডিও বাংলায় গান শুনছে । পরমাণু ক্ষেপেছে এবার: -মার কাছে কইয়া দিমু -যা কইয়া দে -মাজেদ ভাইয়ের কথা কইয়া দিমু, ভোর রাইতে গাঙপাড়ে দাঁড়াইয়া কি করতাছিলা, সেই কথা ।

এবার টনক নড়ে অনুর, এই ক্ষুদে টর্চলাইল কবে থেকে গোয়েন্দাগিরি করছে! একবারও এরকম ভাবেনি অনু! হ্যাঁ, মাজেদের কথা পরিবারের সবাই জানবে, মাজেদই প্রস্তাব নিয়ে আসবেl কিন্তু এখনই নয়, নতুন চাকরি হয়েছে তার । এই গাবলু পরমাণুর মুখ বন্ধ করাতে হবে, 'সোনা বুনু আমার, এইসব কথা এহনই কাউরে কইস না । মাজেদ তরে কত আদর করে, কত কিছু কিনা খাওয়ায়, সে তর দুইলাভাই হইবো । নু যাই, তর বাগান ঠিক কইরা দেই ।' পরমাণু ফিঁচলে হাসি দেয়, অনু দাঁত কিড়মির করে বলে, 'বদমাইশ ।'

দুইদিন থেকেই আকাশ ঝরছে, একঘেয়ে মেঘসফর । পরমাণু ঘরে বসে বসে অতিষ্ঠ । স্কুলে যাওয়া হচ্ছে নাl একদিন বৃষ্টিতে ভিজে, বালুকাঁদায় গড়িয়ে, নদীতে ঝাপিয়েছিলো । এখন সর্দি কাশি বাঁধিয়ে ঘরে, মা বকা দিয়েছে তুমুল । জানালার কাছে বসে আছে সে । এখান থেকে মিয়া শরীফুদ্দিনদের পারিবারিক গোরস্থান দেখা যায় । মিয়া শরীফুদ্দিন ধর্মের ষাঁড়ের মালিক । মেয়েটা গত সন্ধ্যায় মারা গেছে তার । দাফন শেষে বৃষ্টিতে ভিজেই ফিরছে অনেকে । 'মেয়েটা আমার বয়সী ছিলো', পরমাণু ভাবছিলো ।

বখাটের দল পরমাণুদের ঘরের পশ্চিম কোনা দিয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছেl কেউ বললো, এহন উইয়া কোন কামের না, যার জন্যি হেই নাই । পরদিন ধম্মের ষাঁড়টিকে আর খুঁজে পাওয়া গেলো না, তার হাঁড় মাংসও না ।