গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

রবিবার, ১৪ জুন, ২০১৫

দেবাশিস লাহা

মা দিবস

আর কটা চাই তোর? ডজন খানেক তো তুলে ফেললি বাপান !
না, বাপি আর একটা! তুমি এপাশে এস ! হ্যাঁ এবার মিষ্টি করে জড়িয়ে ধর ঠাম্মাকে। মাম্মা তুমিও এসো ! তুমি কিন্তু বাঁ দিক থেকে জড়িয়ে ধরবে ! আর ঠাম্মা তুমি এই খানে বসো ! কি হল বাপি, এস না প্লিজ !” “আর ইউ ক্রেজি? মাথায় কি ভূত চেপেছে ! তোর মা-কে বল ! আমি পারব না !
আয় না খোকা ! বাপান এত করে বলছে ! একটি বার জড়িয়ে ধর না আমায় ! লজ্জা কিসের ? ছোট্ট বেলায় তো কোল থেকে নামিয়ে দিলেই কেমন ভেউ ভেউ করে কেঁদে উঠতিস ! তোর বাবা তো রেগেই যেত মাঝে মাঝে। বলত বেশি লাই দিও না ! কত মরা কান্না কাঁদতে পারে দেখি ! কে জানত এত আগেই চলে যাবে লোকটা ! এক মাঝ রাত্তিরে তোকে আমার কাঁধে চাপিয়ে ---এত কম বয়সে যে কারো এমন হার্ট ফেল করে আমি কি ছাই জানিতুম ! বাপানকে দেখলে কি যে খুশি হত ! পোড়া কপাল ! -----যাক গে সে সব কথা। আয় না বাবাআমাদের তো একটাই নাতি। তার একটা ছোট্ট আব্দার ! তোকে শুনতেই হবে বাবা ! কি হল বউ মা ! অমন করে দাঁড়িয়ে রইলে যে বড় ! এস মা ! এই দস্যি তোর ক্যামেরা ঠিক কর !
তুমি কিচ্ছু বোঝ না ঠাম্মা ! এটা ক্যামেরা নয় ! এটা আইফোন— !”
তাই নাকি ? দেখেছ দস্যিটা কত কিছু জানে ! আমি যে সেকেলে মানুষ বাবা ! এসব জানব কি করে ! সব কত বদলে গেছে এখন ! তোর দাদুকে নিয়ে কয়েকবার ছবি তুলেছিলাম বটে ! কিন্তু সে তো বাইরে গিয়ে। স্টুডিও না কি বলে ! কত কাণ্ড করে সে সব ছবি তুলতে হত ! কত্ত বড় সব ক্যামেরা ! অমনটি এখন আর দেখি না । কত সহজ হয়ে গেছে সব এখন। এই তো তোর বাবা আমায় জড়িয়ে ধরেছে ! এস বউমা তুমি আমার বাঁ দিকে এসো। আমি বরং তোমায় জড়িয়ে ধরি কেমন !
ওকে ঠাম্মা আমিও রেডি ! এবার যখন হাসতে বলব হাসবে ! একটু জুমটা ঠিক করে নিই ! মাদারস ডে পিক বলে কথা ! অসাম হওয়া চাই। না হলে আমার এফ বি ফ্রেন্ডস রা এমন চেটে দেবে ! ওকে নাউ ---স্মাইল প্লিজ ! কি হল ঠাম্মা ! হাসো ! ওয়াও গ্রেট ! ডান ঠাম্মা, ডান !” ********************************************** কা ! কা ! কা ! কা ! কা ! কা ! কা ! কা ! কা !
কি আপদ রে বাবা ! কা কা করে পাগল করে দিলে ! এই ভর সন্ধেবেলায় এটা আবার কোত্থেকে জুটল ! যা বলছি হতচ্ছাড়া ! হুস হুস ! আরে এই সরলা ! কাকটাকে তাড়িয়ে দে না সই ! শেষে কি এই অলুক্ষুনে ডাক শুনেই মরতে হবে গা ! বলি এই সরলা কোন চুলোয় গেলি তুই ?”
এই ত সই ! ঠাকুর ঘরে ছিলাম ! কি হল ! এমন চেল্লাচ্ছিস কেন ?”
কেন শুনতে পাচ্ছিস না ! কাকটা কেমন জ্বালাচ্ছে ! এত তাড়াচ্ছি, হতচ্ছাড়াটার নড়ার নাম নেই গা !” “ওহ এই কাণ্ড ! আমি ভাবলাম বুঝি চোর ডাকাত পড়েছে ! কাকের কি দোষ বল ! দেখ কোথাও কি মরে পড়ে আছে ! পচা গন্ধ টন্ধ পেয়েছে নিশ্চয় ! ওদের নাক কি আমাদের মত ! যাক, তোর তো আজ আনন্দের দিন রেতা নাতির এবার কোন ক্লাস হল ?”
একটু যেন চমকেই উঠল গৌরী ! জানা হল না তো ! কিন্তু কাকটা ওর দিকে এমন করে তাকিয়ে আছে কেন ! বুকটা কেমন যেন ধুক পুক করে উঠল !কি মরেছে ওর ঘরে ? না, আজ সকালেই তো খুব ভাল করে ঘর-দোর মোছা হয়েছে। তবে কি কোথাও কোন ইঁদুর টিদুর মরল নাকি ? না তাই বা কি করে হয়!
তবু কিছু একটা মরেছে মনে হচ্ছে ! একটা অসহনীয় দুর্গন্ধে ভরে যাচ্ছে ঘরটা ! গা-টা কেমন ছমছম করে উঠল ! এই মাত্র ধুনো দিয়ে গেল সরলা। কিন্তু সেই ধূপের গন্ধকে মুহূর্তেই ধরাশায়ী করে কি অবলীলায় ছড়িয়ে পড়ছে গন্ধটা ! কিন্তু কি মরল ? টেবিলের উপর ডাই করে রাখা মিষ্টি আর ফল অতিক্রম করে এবার নিজের দিকে তাকাল গৌরী। বুকের উপর মুখটা ঝুঁকে পড়তেই গা-টা কেমন গুলিয়ে উঠল ! ! হ্যাঁ ! ওর শরীর থেকেই আসছে গন্ধটা ! কিন্তু তা কি করে হয় ! একটু আগেই তো খোকা ওকে--------এতদিন পর-----
বৃদ্ধাশ্রমের জানালায় তখন একটু একটু করে রাত নেমে আসছে।