রুমকিদের বাসাটা শহরের একেবারে মাঝখানে। আলো হাওয়া ঢুকতে পারে না তেমনভাবে। মাঝে মাঝে ভাঙ্গা টুকরো টুকরো আকাশ এ বাড়ি ও বাড়ির ফাঁক ফোঁকর দিয়ে দেখা যায়। আর আছে প্রচুর গাছ। ছায়াচ্ছন্ন ঘর বাড়ি উঠোন। গরম কালে তাল পাখা ভিজিয়ে বাতাস খায় আর গজগজ করে রুমকির মা ধুচ্ছাই জ্যান্ত থাকতেই হাবিয়া দোজখের শাস্তি খাচ্ছি।
বহুদিনের প্রাচীন বাড়ি।
ছেড়ে যাওয়া যায় না । আবার একসাথে কেউ কিনে নিতেও চায় না। নগদ টাকা নেই যে আলোহাওয়া খেলা করে এমন একটি বাড়ি বানাবে। কিন্তু
এত যে গজগজানি মুখতোড় শাপ শাপান্তি সব থেমে যায়
যখনই রুমকির বাপি বলে আচ্ছা চলো
শহরতলির দিকে নতুন বসতি হচ্ছে। নতুন নতুন
ডিজাইনের বাড়ি ঘর বাগান। ছবির মত লাগে
দেখতে। রুমকির মা তখন তানা নানা শুরু করে
দেয়, নতুন বসতির নানান খুঁত বের করে। জুতার বাক্সের মত বাড়ি। ওদের গাছ আছে বৃক্ষ নাই।
পুকুর নেই যে ঘাটে বসব। আর এই বিশাল বাড়ি , চারপাশের চেনা জানা আপন লোক কি ওখানে
পাওয়া যাবে!
হার মেনে তিনি নেমে আসেন
উঠোনে । সেখানে মিষ্টিবউ আম গাছের একটি আধপাকা পাতা শরীর মুচড়ে পড়ে আছে বাঁকানো
চাঁদের মত। পাতাটি তুলে গন্ধ শোঁকেন । বেশ গন্ধ। এই গাছটি তার বিয়ের পরে তার শ্বশুর লাগিয়েছিল।
তাই নাম মিষ্টিবউ । আসলে তো ফজলি আমের গাছ।
রুমকির বাপি পাগল কিসিমের
মানুষ । ওষুধের দোকান চালায় কর্মচারিরা। উনি দোকানে বসে কবিতা লেখেন। মাঝে মাঝেই
তিনি জঙ্গল, নদী, ধান ক্ষেত, গাছগাছালি দেখাতে নিয়ে আসেন ওদের। খোলা হাওয়ায় সবুজের
সাথে ওরা খুব আনন্দে মেতে ওঠে । আজ নীল দেখাতে নিয়ে যাবো নদীর পার। রেনুকে ডেকে বললে
ওদের সাজিয়ে গুজিয়ে দে ত রেণু।
ঘাসের উপর শুয়ে মাথার নীচে দু হাত রেখে পা নাচাতে নাচাতে আকাশ
দেখার মজাই আলাদা। মেঘ ভেসে যায় কত ভঙ্গে। মোতির মার ছেঁড়া কাঁথার মত। আবার কখনো এক চাকা ভাঙ্গা রিকশার মত, ঠুক ঠুক চালাচ্ছে সেলিম
মিয়া। রুমকি আর ওর ভাইয়া মেঘের মন্ড দিয়ে
নিজেদের মত করে একেকটা ছবি বানিয়ে নিচ্ছে । ওদের
হাসির শব্দে উড়ে যাচ্ছে গাঙ শালিকের দল। নদীর ওপারে নীলের সাথে নীল জমে পাহাড় হচ্ছে। নীল ডেকে নিচ্ছে নীলকে। ভাইইয়ার
চোখে তখন রংধনু ঢেউ খেলছে । রুমকি ছুটে
যায় দূরের সবুজ ঢিপির দিকে। ওর শরীরে তখন তীব্র নাচন, শাওন গগনে ঘোর ঘনঘটা – এক
দুই তিন , এক---
তিরিশ মিনিটের ধ্যানে বসেছে ওদের বাপি। দৌড়ে গিয়ে গিয়ে ঘাসের উপর রাখা হয়েছে তিন কাঁটার ঘড়িটা ঘড়ি দেখছে ওরা। এই কদিনে চিনে গেছে ঘণ্টা, মিনিট আর সেকেন্ডের কাঁটা। এমন সময়ে মিনতি কাকিমা এলো।
হৈ হৈ করে উঠে, কি এনেছ কাকিমা দাও দাও।
ঠোঁটে আঙ্গুল চেপে নাড়ু বের করে কাকিমা। রুমকি হাসে। কিচ্ছু জানে না কাকিমা। বাপি
বলেছে তোমরা তোমাদের মত থাকবে। আমরা আমাদের মত। কেউ ধ্যান করবে, কেউ নাচবে, কেউ
গাইবে এই সবাইকে নিয়েই আমাদের এই পৃথিবী। কাকিমা ঘাসের উপর বসে থাকে। দু গালে নাড়ু
পুরে ব্যাক সিনে নলখাগড়ার বনকে রেখে রুমকি
নেচে উঠে , এক দুই তিন এক – মম চিত্তে নিতি নৃত্যে --
- কি রে তুই? ধ্যান ভেঙ্গেছে বাপির।
- একটা বুদ্ধি দাও ঠাকুর।”
-- আহ আবার ঠাকুর— চাপা ধমকে উঠে রুমকির বাপি।
--ঠাকুর ছিলে তাই ঠাকুর বলছি। তুমি কি চাও তোমাকে হুজুর বলি? পালটা
ঝামটে ওঠে কাকিমা। তারপর গলা নামিয়ে বলে,
তুমি নিতাই সাহাকে একটি কথা বলবে?”
- কি কথা, আরও টাকা চাস?”
-না , শোভার সিঁথিতে যেন সিঁদুর দিতে দেয়। সেই তো নিয়েছে শোভাকে” বাপির
চোখের দিকে তাকিয়ে শক্ত করে বলে কাকিমা। কিন্তু কাকিমার চোখে জল। তাতে অসংখ্য অসহায়
ঢেউ । বাপি চোখ নামিয়ে বলে,
-তুই পারিসও শান্তির বউ। মেয়ে দিয়েছিস ভোগে। তাকে কেউ সিঁদুর দেয়।’
-তুমি বললে মানতে পারে।
- তোর সিঁদুরের কথা মনে হল
যে ?
-নিতাই সাহার ঘরে যে জোয়ান ছেলে। সেও যে শোভাকে ঠুকরায়’ আঁচলে চোখ ঢেকে ফেলে কাকিমা।
--
নিজেদের পেটে ভাত দেব বলে মেয়ে দিলাম, গলা দিয়ে যে ভাত নামে না ঠাকুর!
রুমকির বাপি হাসে। রঙ ধোয়া ফ্যাঁকাসে নিরানন্দ হাসি।
--“শান্তির বউ, প্রাণী সে পশু বা
মানুষ , সবাই দলবল নিয়ে খেতে খেলতে ভালবাসে
। কাঁচা মাংস হলে ত কথাই নেই। আচ্ছা তুই বললি, আমি বলব নিতাইকে । কিন্তু তুই তো ভালোই জানিস সিঁদুরের
কতখানি জোর। যা,ওদের বাড়ি নিয়ে যা।’
রুমকিদের
বাড়িতে মাসে দুবার মাংস হয়। রেনুদি একাই কেটে, ধুয়ে, রান্না করে। রুমকির মা দূরে
দাঁড়িয়ে দেখিয়ে দেয়। তার মধ্যে হাজারবার একই কথা বলে চলে, কি গন্ধ রে বাবা! ও রেণু একটু ভাল করে ধুয়ে নিস মা। রেণুদি
মাংস ধোয় আর খুশী খুশী গলায় বলে,
--বড় কাকিমা আমি কিন্তু এবার আগেই এক বাটি সরায়ে রাখবানি। তোমার
ডাক্তারকে বিশ্বাস নাই। কতজনরে যে খাতি ডাকবেনে তার কি ঠিক আছে। শেষে আমাগের জন্যি
ভাঙ্গাচুরা আলুর ঝোল ছাড়া কিছুই থাকবেনা। মনে নাই সেবার ------ রুমকির মা আর রেণুদি হাসে আর কেটে ধুয়ে রান্না
করে। কই আর কেউ ত হেল্প করে না! কিন্তু খেতে বসলেই সুপার ম্যাজিক। কত যে লোক হয়!
ছ্যা, কাঁচা মাংস কেউ খায়! রুমকির মা ঠিক
ই বলে, আমাদের ডাক্তার সাহেবের ঘটে এক
ফোঁটা বুদ্ধি নাই।
অপরাজেয় বাংলাদেশের পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে বিশাল ভার্সিটি দেখছে রুমকি।
একটু আগেই ভর্তি পরিক্ষা দিয়ে এসেছে। পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল পাঁচতলায়। বড় ভাইয়ারা সিট খুঁজে
দেওয়া থেকে জল খাওয়া পর্যন্ত অনেক হেল্প
করেছে। কিন্তু এরই এক ফাঁকে কেউ একজন
ঠিকই বুকে হাত দিয়ে নিয়েছে। অনেকেরই এক অবস্থা। এরকম হয় আগেই জানত ওরা। অর্থনীতির স্যার চমৎকার
বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বর্তমান বাজার ব্যবস্থার
উর্ধ্বগতির প্রেক্ষিতে কেবল মেয়েরা নয়
ছেলেরাও ব্যবসার খাতওয়ারী পণ্য মাত্র। সারা পৃথিবীতে পুরুষ বেশ্যার সংখ্যাও
অসংখ্য। সেই থেকে টুকটাক এমন গায়ে, বুকে হাত পড়লে রাগ হয় কিন্তু মাথা গরম করে না
রুমকিরা। কোন স্ট্র্যাটেজিতে এদের সাথে থাকবে তাই নিয়ে বরং হাসাহাসি করে।
কয়েকদিন ধরেই মিছিল মিছিলে ছেয়ে আছে ভার্সিটি। স্যাররা বলে দিলেন এভাবেই ক্লাশ করতে হবে এখানে।
এটা মানুষ গড়ার কারখানা নয়। রাজনীতির আখড়া। ওরা ভার্সিটির অলিগলি চষে অভিজ্ঞতা
নিতে থাকে। ভাইয়া এখন মিছিলের অবিচ্ছেদ্য মুখ।
ঝোলা কাঁধে উলুঝুলু দাঁড়ি গোঁফে চেনাই যায় না ওকে । অথচ আগে কি ছিল। ঠোঁটের নীচে
চিবুকের পরে টুকরো দাঁড়িতে ওয়াও। রাজনীতি করবে বলে হোস্টেলে চলে এসেহে। রুমকিকে
বলে দিয়েছে তুই তোর মত আমি আমার মত। চারুকলার ওদিকে আজ প্রচন্ড গন্ডগোল হয়েছে। জল কামান , টিয়ার শেল, লাঠি চার্জ করেছে পুলিশ। কেউ কেউ
বলছে কয়েক রাউন্ড গুলিও নাকি করেছে । রঙ ছবির
নরম মনের ছাত্ররা হাতুড়ি, ছেনি, বাঁশ , কাঠ,পাথরের দুঃসহ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। কিন্তু কিছু পরেই ভেঙ্গে পড়ে প্রতিরোধ।
নিহত হয়েছে দুজন ছাত্র , আহত অনেকে ই।
গ্রেফতার করেছে আরো বেশি। নিহতরা স্কাল্পচার বিভাগের দুই সিনিয়র ভাই। ওরা কখনো
কোন রাজনীতির সাথে ছিল না। কেবল সমভাবাপন্ন হয়ে বন্ধুদের সাথে এক কাতারে দাঁড়িয়ে
প্রতিবাদ আর প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল শিক্ষা ব্যবস্থায় ধনী গরিবের সমান সুযোগের
দাবীতে।
অনেক রাতে চারুকলার রাজু, কাওসারি,
ইমন বাসায় এসে জানায় ভাইয়া হলে নেই। বাসায়
ত আসে নি! মা বাপির বুক থেকে স্বস্তির
পাখিরা উড়ে গেল। হাসপাতাল, ক্লিনিক, থানা
কোথাও নেই। কেবল আরও কিছু দুঃখী মা বাবার সাথে দেখা হয়ে গেল। এর মধ্যে খবর হল বাতাসে। মিছিলে
আহত কাউকে কাউকে আর্মি টেনে হিঁচড়ে ভ্যানে
তুলে নিয়েছিল। কেউ বলে পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে তাদের। সমর্থিত খবর। রুমকিকে
ডেকে নেয় ভাইয়ার বন্ধুরা। ওর মাথা দুলে ওঠে। এতগুলো বছর প্রেম করেও রুমকি জানত না
ওর প্রেমিক পুলিশের ইনফর্মার।
ভাইয়া এখন ছবি। দেশে গণতন্ত্র এসেছে বিপুল কলরবে। পুঁজিবাদ দ্রুত
চেহারা পালটে জনমানুষের কাছে পৌঁছেছে । টিকে
থাকার স্বার্থে দ্রুত পরিবর্তনশীল সমাজ ব্যবস্থার সাথে খেলতে খেলতেই পুঁজিবাদ নিজেকে বদলে নিচ্ছে হরেক রঙের চাহিদায় । আর বাম রাজনীতি রঙ হারিয়ে ফ্যাকাসে
হয়ে যাচ্ছে । ক্রমশঃ হারিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী
ছেড়ে । পৌরাণিক কপিকলের গাঁটে গাঁটে আটকে
গেছে কমিউনিজম। ভাইয়ার ঝোলাটি নিয়ে গেছে ইমনদি। কানাডার কোন অন্টারিও শহরের বাড়ির
সামনে জমে থাকা বরফ সরাতে সরাতে দুহাতে বেলচা ধরে উবু হয়ে এখনো কাঁদে ইমন।
মিনতি কাকিমা মারা গেছে। মরে যাওয়ার সময়ে সর্ষে বাঁটা আর বথুয়া শাক
ছিল সাদা ভাতের পাশে। থালার পাশেই ঢলে পড়েছিল। রুমকির মাকে বলত, ও ঠাইরেন ওষুধ দেও
দিনি। আমার যে ভাতের অসুখ আর সারে না। ছেলে হারিয়ে কষ্ট বুকে ধুঁকে যাচ্ছিল রুমকির মা বাপি। আরো
কষ্ট দিয়ে রুমকি জানিয়ে দিয়েছিল, বিয়ে করব
না। একা থাকব। দুঃখ ছাড়া ওদেরও কোন অসুখ ছিল না। দুঃখের ত্যানা পেচাতে পেচাতে ওরাও মরে গেল । ততদিনে রুমকির শরীরের
মাংস পাকা হয়ে উঠেছে । একটি হেরে যাওয়া
বাম হৃদয় নিয়ে মুক্ত বাজারের উন্মুক্ত ভালবাসায় সততা নয়, ভোগের ভদকা হয়ে ও শিখে নিয়েছে শরীরী খেলা ।
পাঁচ বছরের পুরানো প্রেমে হেরে গেছে জেনে বন্ধু তমাল ছুটে এসেছিল। তমালের
হিপ পকেটের তলানিতে মাস গেলে কিছু খুচরো
পয়সা থাকে। তবুও সাহস করে বলেছিল, চল বিয়ে করবি আমাকে? চিলিস চাইনিজের ব্যক্তিগত কেবিনে আধখানা শারীরিক
উষ্ণতা ছড়াতে ছড়াতে রুমকি বলেছিল বিয়ে? মোটেই না। সম্পর্কে কোন বন্ধনী
রাখব না। চলবে? তমালের মধ্যবিত্ত মন হা
হয়ে গেলেও মেনে নেয় । বাম ভাইয়াদের অনেকেই তখন প্রবল বিক্রমে ব্যবসা করছে। ছায়াচ্ছন্ন
বাড়িটা বিক্রি করে কিছু পুঁজি দেয় তমালকে। তমালরা লাভের পর লাভ দিয়ে এক রক্তপিপাসু
ভুত বানায়। পুঁজিবাদের ভুত। কমিউনিস্টরা
এক এক করে পুঁজিপতি হচ্ছে এই ভুতের মন্ত্রণায়। লৌকিক দৃশ্যকল্পের ভৌতিক চালচিত্র
দেখে এক সময়ের বাম সমর্থকেরা বোঝে বিপ্লব
দীর্ঘজীবী স্বপ্ন ছাড়া আর কিছু নয়। সফল ব্যবসায়ী তমাল আবার বিয়ের
প্রস্তাব দেয় । ফিরিয়ে দেয় রুমকি। বার বার ফিরিয়ে দেওয়ায় বেহেড মাতাল তমাল সাত তলা
ফ্ল্যাটের ছাদ কাঁপিয়ে চেঁচিয়ে উঠে, আবে শালী। টাকা দিয়ে আমি হাজার রকম মেয়ে মানুষ
কিনতে পারি। তুই তো ছ্যা । তোর ভাই বেঁচে থাকলেও কম্যুনিজমে লাত্থি মারত। পণ্য
ছাড়া তুই কি রে হারামজাদী !
হজ্জ্বে লোক পাঠানোর এজেন্সি খুলে দেশের ধনীদের একজন এখন তমাল। বিয়ে
করেছে পীর বাড়ির মেয়ে। তার হাতে মোজা পায়ে মোজা। চোখ ছাড়া আপদমস্তক চলন্ত কাপড়ের
পুটুলি। ছেলে অস্ট্রেলিয়া থেকে এম বিএ করে ফিরছে এক হাত দাঁড়ি নিয়ে। বাবার সুটকেসে সযত্নে রাখা মার্ক্স এঙ্গেলসের
ইস্তেহার খুঁজে পেয়ে পুড়িয়ে ফ্ল্যাশ করে দিয়েছে কমোডে। দুঃসহ বেদনায় আঙ্গুল তোলে
তমাল, তোর জন্য, তুই ফেরালি বলে। আমার
উত্তরাধিকার কি এরকম হওয়ার কথা ছিল? ডাইনি তুই!
ছেলে হয়েছিল শোভাদির । সে
কার সন্তান জানত না শোভাদি। সেই ছেলে কেঁদে উঠতেই মুখে নুন গুঁজে দিয়েছিল কনক ধাত্রী ।
আঁতুড় ঘরের খোলা দরোজা দিয়ে দেখেছিল কনক
ধাত্রীর হাতে টাকা গুঁজে দিচ্ছে নিতাই সাহা। পেছনে নিতাই সাহার ছেলে তাড়া দিচ্ছে
মৃত শিশুটিকে জংগলে পুঁতে দেওয়ার জন্য। শোভাদি কাঁদেনি। দুধের ভারে ফুলে উঠা দুটি
অমৃত ভাণ্ডার থেকে ঝরে পড়া দুধ গা ভিজিয়ে
নেমে যায় আঁতুড় ঘরের কালো মাটিতে। ক্ষুধার্ত ঠোঁটে খেয়ে নেয় মাটি। শোভাদি বোঝে
তাকে মরতে হবে। বেঁচে থাকার মত মৃত্যুও বড় কঠিন।
শোভাদি মরেনি। অই শহর ছেড়ে রুমকির কাছে পালিয়ে এসেছে ।
মাঝে মাঝে সুর তুলে কাঁদে শোভাদি। মায়া মমতার কত যে ঝোঁপঝাড়
শোভাদির শরীর আর মনে। ছেলে বেঁচে থাকলে
খুশী হতে শোভাদি? রুমকির কথায় আতংকে কেঁপে উঠে বলে, নারে না। ছেলেও যে ঠুকরে খেতে
শিখে যেত। পশুর মত কামড়ে খুবলে খেয়ে নিত মেয়েমানুষ। শোভাদির ভয় দেখে হাসে রুমকি। ওর
পাশে এক খন্ড নোনা জমির মত খর চোখে পৃথিবীকে দেখে ভাবে উৎপাদনের উপকরণ হয়ে আর
কতদিন !
-