গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

মঙ্গলবার, ৩০ জুন, ২০১৫

সুধাংশু চক্রবর্ত্তী



ভিন্নতর হাতছানি

গঙ্গার বুকে হেঁইয়ো হেঁইয়ো বলে নৌকার বৈঠা টানছে দুই মাঝি । ওদিকে মাঝগঙ্গা আকুলভাবে ডেকে চলেছে আমায় । গঙ্গার গভীর শীতল জলে ঝাঁপ দেবো কি দেবো না সেই দোটানায় রয়েছি । একটা শুশুক চমকে দিলো ভুস করে জল থেকে উঠে পরমুহূর্তে জলের গভীরে তলিয়ে গিয়ে । নৌকা কি থামলো তাতে ? নাকি থামলো আমার মন ? বরং নবোদ্যমে মেতে উঠলো শুশুক হতে চেয়ে ।

অন্য সময় হলে ভয়ে কুঁকড়ে যেতাম । আজ আর ভয় পাচ্ছি না । অহেতুক মৃত্যুভয় আর কেন পুষে রাখি এই বুকে ? এমনিতে তো মরেই আছি । তুমিও জানো, মা গঙ্গাও জানেন । দেখছি তো, তোমরা দুজনেই হাত নাড়ছো আমাকে লক্ষ্য করে । অথচ সেই হাতের ভাষা একেবারে ভিন্নতর । তুমি বিদায় জানিয়ে হাত নাড়ছো । হয়তো নিজেই শান্তনা দিচ্ছো নিজেকে । হয়তো এখনো ভেবে আকুল হচ্ছো ঠিক করছো ? নাকি ভুল করলে কিছু ! ওদিকে মা গঙ্গা চোখের জলে বুক ভাসিয়ে আমাকে ডাকছেন তাঁর শীতল বুকে স্থান করে দেবেন বলে । হয়তো আমাকে পিতামহ ভীষ্ম ভেবেছেন । অথচ আমি যে তা নই । হতেও চাই না চিরকুমার । আমি সংসারী যে হতে চাই মনেপ্রাণে ।


এই মুহূর্তে কিছু খুচরো বাতাস হুল্লোর বাঁধিয়েছে গঙ্গার বুকে । ওরাই এসে কানে কানে বলে গেল, মনস্থির করে নে ঠিক কি চাস তুই ? কাকে চাস ? মা গঙ্গা ? নাকি অনিশ্চিত ভবিষ্যত ? তবে যেটাই চাস না কেন দেখবি সুখের মাঝে সেই দুঃখই কিন্তু গুঁজে রয়েছে । আরও একবার ভালো করে ভেবে দ্যাখ তেমন কিছু সিদ্ধান্ত নেবার আগে । এখনো সময় আছে হাতে । এখনো বৈঠা টেনে চলেছে দুই মাঝি । এখনো মাঝগঙ্গায় এসে পৌঁছোয়নি তোর নৌকা । ঐ দ্যাখ, এখনো প্রিয়ার হাতদুটি বাতাসে আন্দোলিত হচ্ছে । হয়তো তোকে ফিরে পেতে চাইছে । হয়তো না ।