ভিন্নতর হাতছানি
গঙ্গার
বুকে হেঁইয়ো হেঁইয়ো বলে নৌকার বৈঠা টানছে দুই মাঝি । ওদিকে মাঝগঙ্গা আকুলভাবে ডেকে
চলেছে আমায় । গঙ্গার গভীর শীতল জলে ঝাঁপ দেবো কি দেবো না সেই দোটানায় রয়েছি । একটা
শুশুক চমকে দিলো ভুস করে জল থেকে উঠে পরমুহূর্তে জলের গভীরে তলিয়ে গিয়ে । নৌকা কি
থামলো তাতে ? নাকি
থামলো আমার মন ? বরং
নবোদ্যমে মেতে উঠলো শুশুক হতে চেয়ে ।
অন্য
সময় হলে ভয়ে কুঁকড়ে যেতাম । আজ আর ভয় পাচ্ছি না । অহেতুক মৃত্যুভয় আর কেন পুষে
রাখি এই বুকে ?
এমনিতে তো মরেই আছি । তুমিও জানো, মা গঙ্গাও জানেন । দেখছি তো,
তোমরা দু’জনেই হাত নাড়ছো আমাকে লক্ষ্য করে । অথচ সেই হাতের ভাষা একেবারে
ভিন্নতর । তুমি বিদায় জানিয়ে হাত নাড়ছো । হয়তো নিজেই শান্তনা দিচ্ছো নিজেকে । হয়তো
এখনো ভেবে আকুল হচ্ছো ঠিক করছো ? নাকি ভুল করলে কিছু ! ওদিকে মা গঙ্গা চোখের জলে বুক ভাসিয়ে আমাকে
ডাকছেন তাঁর শীতল বুকে স্থান করে দেবেন বলে । হয়তো আমাকে পিতামহ ভীষ্ম ভেবেছেন ।
অথচ আমি যে তা নই । হতেও চাই না চিরকুমার । আমি সংসারী যে হতে চাই মনেপ্রাণে ।
এই
মুহূর্তে কিছু খুচরো বাতাস হুল্লোর বাঁধিয়েছে গঙ্গার বুকে । ওরাই এসে কানে কানে
বলে গেল, মনস্থির
করে নে ঠিক কি চাস তুই ? কাকে চাস ? মা গঙ্গা ? নাকি অনিশ্চিত ভবিষ্যত ? তবে যেটাই চাস না কেন দেখবি সুখের মাঝে সেই দুঃখই কিন্তু গুঁজে
রয়েছে । আরও একবার ভালো করে ভেবে দ্যাখ তেমন কিছু সিদ্ধান্ত নেবার আগে । এখনো সময়
আছে হাতে । এখনো বৈঠা টেনে চলেছে দুই মাঝি । এখনো মাঝগঙ্গায় এসে পৌঁছোয়নি তোর নৌকা
। ঐ দ্যাখ, এখনো
প্রিয়ার হাতদুটি বাতাসে আন্দোলিত হচ্ছে । হয়তো তোকে ফিরে পেতে চাইছে । হয়তো না ।