আলোচনাটা শুনে মন ভরে গেল আজকে। এত
সুন্দর ভাবে কথা বলতে কবে শিখল কে জানে!ভাবতে অবাক লাগে যে এই মেয়েকে জন্ম দিয়েছিল
ও।এই মেয়ের জন্য. . .! দুচোখ জলে ভরে গেছে গর্বে আজ।একটু অহংকারও কি হচ্ছে না!এই
যে সবাই কতকিছু বলাবলি করছে,বাহবা দিচ্ছে একি পরক্ষোভাবে তারই প্রশংসা
নয়!অবশ্যই তাই!অথচ ক'বছর আগেও ওকে দেখলে লজ্জা আর রাগ
ছাড়া কিচ্ছু হত না।পরিচয়টা পর্যন্ত দিতে ইচ্ছে করত না যে এ আমারই ঔরসজাত সন্তান।কি
জানি কোন গ্রহের ফেরে এতবড় ভুলটা হয়েগিয়েছিল। আজ আয়নার দিকে তাকাতে বড় লজ্জা বোধ
হয়। নিজের মুখোমুখি হওয়া কি এতটাই কঠিন! জন্মানোর পরের দিনগুলো আজ ও মনে পড়ে
স্পষ্ট;দুঃখ,চেষ্টা,হতাশা ক্রমে ক্রমে উদাসীনতায় পরিণত হয়েছিল নিজের অজান্তেই। অস্বীকার
করতে কোন দ্বিধা নেই আজ যে নিজের সন্তানের প্রতি তাকাতেও অসহ্য লাগত সে সময়।কিভাবে
যে দিনগুলো কেটেছে!যেটা ভবিতব্য তা কোনদিনই মেনে নিতে পারিনি...শুধু নিজেকে অযথা
বন্দী করে রেখেছিলাম অনাবশ্যক এক কারাগারে।কিন্তু আজ সব কিছু অন্যরকম।সত্যি কী
ভাগ্য করেছিলাম যে আজ এমন একটি মেয়ের বাবা বলে পরিচিতি পাচ্ছি। পেছন দিকে তাকাতে
আর সাহস হয়না আজ কাল।উফ্!কী অবহেলা!অথচ এই অবহেলা আর তাচ্ছিল্যের মধ্যে কখন যে
মেয়েটা. . . ।
হাততালির শব্দে হঠাৎ ঘোরটা কেটে
গেল।মাইকে তখন ঘোষণা হচ্ছে ওর নাম। আমি দেখছি দুচোখ ভরে আমার আত্মজাকে।বুকের
ভেতরটা যদি কেটে কাউকে দেখাতে পারতাম!একটু পরই আমার মেয়ে তার কাজের স্বীকৃতি
হিসেবে মঞ্চে পুরস্কার নিতে উঠবে,নাম ঘোষণা করছেন ঘোষক।মেয়ে আস্তে আস্তে মঞ্চের
দিকে এগুচ্ছে ওর মায়ের হাত ধরে। আমি দেখছি দুচোখ ভরে।মাইক হাতে নিয়েই আমার মেয়ে,হ্যাঁ আমারই তো ...আমাকে আরো একবারের মত অবাক করে বলে উঠল "এই
পুরস্কার ও সন্মান আমার প্রাপ্য নয় এটা আমার বাবা মায়ের জন্য যারা আমাকে এই
পৃথিবীতে এনেছেন!"ঘনঘন হাততালির শব্দে পরের কথাগুলো আর শোনা যাচ্ছিল না। আমি
শোনার চেষ্টাও করছিলাম না,আস্তে আস্তে বাইরে বেরিয়ে
এলাম।যে জন্মান্ধ মেয়েকে কোনদিন স্বীকার করিনি সেই আজ আমায় স্বীকৃতি দিয়ে গেল
পৃথিবীর কাছে।