গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বুধবার, ২৭ মে, ২০১৫

সীমা ব্যানার্জী রায়

লিপি কথাকলি (গল্প হলেও সত্যি)

()

মেমোরিয়াল ডে-এর লঙ উইক এন্ডের শনিবার সকাল। ঘুম থেকে উঠে সবে একটু হাত পা ছড়িয়ে পেছনের প্যাটিও-তে বসে আয়েস করছি। এই মে মাসটা-কে তো 'বৃষ্টিমাস' বলা চলে। কি ভাগ্যিস আজ সকালটা এক্কেবারে ফুরফুরাইয়া। মাথার ওপর হাসিমুন সূর্‍্য্য। তার ওপর পুরো সপ্তাহ তো ঘোড়দৌড়ের মধ্যেই থাকি। তাই একটু আলসেমির সাথে শনিবার সকাল-কে ওয়েল্কাম করা। হঠাত সক্কাল সক্কাল একেবারে ফোন । ফোন টা ধরে হ্যালো বলতেই, ওপাশ থেকে:

-ও দিভাই আমার কি হবে উপায়, রে? জানি না বাব্বাঃ আমার ভাগ্যে কি আছে?
-কেন কি হয়েছে আবার?
 কোন ঝামেলা পাকালি নাকি? 
-আচ্ছা!
 আমি কি সব সময় ঝামেলা পাকাই নাকি? হ্যাঁ, তুই কি রে? তোর বন্ধু কাম ছোট্ট বোন আমি। কোথায় আমাকে সাহারা দিবি তা না- আমাকেই দোষ দিস সময় পেলে? একটু দাঁড়া, আগে একটু জিরিয়ে নি । এক একটা ঘটনাকে সুন্দর করে বলার অদ্ভুত ক্ষমতার অধিকারিণী এই লিপি। ওর ফোন মানেই মন ভালো করে দেওয়া ফোন।
একঘেয়েমিগিরি না করে সব মজার কথা বলে । এই আভিবাসী দেশে ওকে নাকি ওর বান্ধবীরা
 'শান্তিনিকেতনী' বলে রাগায়। যদিও সে আদৌ কলকাতার মেয়ে নয়। একেবারে খাস মুম্বাইয়া। এই শান্তিনিকেতনী ডাক শুনেও ও নাকি রেগে বম্ হয়ে যায়। তবে ১০ মিনিটের জন্য যে রাগটা হয়, তাও বলে দিল। যাই হোক্, কোথা থেকে যে কোথায় চলে যাই। এই আমার মস্ত বড় দোষ । কাজের কথা বলতে গিয়ে তার নাড়িনক্ষত্র নিয়ে টানাটানি করি। লিপির কথায় আসি। লিপি এবার শান্ত হয়ে আমায় বলে যেঃ

-জানিস ভাল করে যে, তোকে না বললে আমার পেটের ভাত হজম হয় না। তোর সময় আছে তো? তাহলে একটু বলে আমার টেনশনটা কমাই।
হেসে বললাম তোর কথা শোনার জন্য তোর এই বান্দা দিদি সব সময় হাজির। এইবার নাটক না করে বলে ফ্যাল চটজলদি। কতক্ষণ আর সময় চাই তোর ? ১ ঘণ্টা - 2 ঘণ্টা?
সে তো তখনঃ “-ওরে বাব্বা!
 আমার আবার ফলস হার্ট এ্যটাক হচ্ছে দেখছি। একটুও নাটক না রে দিভাই! কাল স্কুলে শোনার পর থেকে সেই যে মাথা বনবন করে ঘুরছে তো ঘুরেই যাচ্ছে রে। আমার ছেলেমেয়ের কি হবে জানি না রে, দিভাই? একমাত্র মেয়ে হওয়া যে কত দুঃখের তা তুই বুঝবি না। তাও এখানে তোর মতন একটা দিভাই পেয়েছি ভাগ্যিস। একটু মনের কথা বলে হালকা হই।
বললাম একটু কড়া মেজাজে, “দেখ বলে ফ্যাল সরাসরি । আমার তো আর বাড়ি বসে থাকলে চলে না ? তাই না? কাজেই শুভস্য শীঘ্রম্... কাজ হাসিল কর কুইক। আমি খুব একসাইটেড কিন্তু শোনার জন্য। আমার দ্বারা যদি কোন কাজ হয় বা তোর কোন উপকার হয় তাহলে আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব দেখিস। একটু শান্ত হল বোঝা গেল। আচ্ছা বলছি তাহলে শোন, 'গতকাল প্রি স্কুল থেকে মেয়ে এসে বলে,
-মা আমাকে ইতকুলে মিত আস্ক কলেতে-"হাউ মেনি ব্লাদাল এ্যন্ড
 তিতটালস ডু ইউ হ্যাভ ?আমি বলেতি: -মি এ্যন্ড মাই আপকামিং ব্লাদাল। মিত আরো আস্ক কলেতে: -ডিড ইউ টুস
এনি নেম ফর হিম? ও কি ই বলেছে!- কি জানিস?
-
 আই উইল কল হিম লাবন!
মিস নাকি আরো প্রশ্ন
 করেছে ওকে-- বড় হয়ে সে কি হবে? বলেছে সে নাকি বড় হয়ে হলিউদ ইসটাল হবে। আমি যখন মেয়েকে আনতে যাই স্কুল থেকে ওর মিস আমাকে চোখ মেরে বলে, " হেই লিপি! ওয়ান ডে, ইয়োর ডটার উইল বি আ হলিউদ স্টার, মাইন্ড ইট। ইটস রিয়েলি ইন্টেরেস্টিং এ্যন্ড অলসো এ্যান এ্যামেজিং।"
লিপির কথা শুনেতো এদিকে আমার ফিকফিকানি হাসি শুরু হয়ে গেছিল। লিপি বললঃ
-
 আগেই হাসিস না। এইজন্য আমার রাগ ধরে তোর ওপরে। ভাবি বলব না । না বলেও পারি না যে । হাসির কিচ্ছু নেই। চুপটি করে শোন আমার অবস্থা। লিপি বলে চলল-
আমি খালি হাসলাম ওর মিস-এর দিকে তাকিয়ে। কি-
 ই বা বলা যায় এর উত্তরে তুই বল আমায় । মনে মনে খালি বলেছিলাম, বাড়ি চল- আজ দেখাচ্ছি মজা। তাই ইয়া ইয়া করে কোনরকমে পাশ কাটিয়ে বাড়িতে এসে গেছি । বাড়িতে নিয়ে এসে মেয়েকে জিগেস করেছিলাম:
-হ্যাঁরে,
 মিমি? মিস কে কেন বলেছিস যে, হলিউদ ইসটাল হবি ?
মেয়ের উত্তর শুনে আমি তো থ এক্কেবারে। ওরে দিভাই আমি কি করব রে?
-তুমিই তো সব সময় অলিউদ অলিউদ কলো। আমি ইসটাল হলে তুমি আলো আমায় ভালবাতবে তাই না,
 মাম্মা ?
- “ওরে আমি কি করি বল না এই মেয়েকে নিয়ে ?
 কি দশা হবে আমার বুঝতে পারছিস এবার ।লিপির কথা বলার ধরণ কিন্তু খুব ইন্টেরেস্টিং । সত্যি এইটুকু মেয়ে কি বা বোঝে ? হলিউডের ব্যাপার -স্যাপার!
-আরো শোন, আমি বললাম মেয়েকে যে... তুই না হয় হলিউদ ইসটাল হবি কিন্তু ভাইয়ের নাম রাবন রাখবি কেন? মেয়ের `চটজলদি জবাব শুনলে না তোরও মাথা ঘুরে যাবে।
-ওই যে লাবন বদমাইতদেল-কে মেলে ফ্যালে আর তুমিই তো পাপাকে বলছিলে যে,লাবন খুউব বাআলো-তাই আমাল ভাইয়ের নাম লাবন রাখব। আজকাল যেই বদমাইতি কলবে তাকেই মেলে ফেলবে আমাল ভাই লাবন।
আমি বলেছি মিমিকে যে, তোমরা দুটি ভাইবোনে আমাকে নাচাবে সারাজীবন, তা আমি খুবই ভালভাবে জেনে গেলাম। ওরে আমার প্রিয় জি টিভি দেখাও কি বন্ধ করতে হবে এদের জন্য, বলতে পারিস? বাড়িতে কথাবার্তাও কি ভেবে চিনতে বলতে হবে? ওরে আমি কি করি বল? একজন হলিউদ ইসটাল আর একজন রাবন!-এদের কে নিয়ে আমি কি করব? ওদের পাপাকে বললাম, সে হেসে কুটোপাটি করল। শাসন করা তো দূরের কথা।
আমার হাসি আগেই শুরু হয়েছিল ভাগ্যিস ফোন-এর এর এপারে ছিলাম। এবার আর থাকতে না পেরে হা হা হা হা করে হেসে ফেলেছি। বললাম ওকে যে,
খুব সম্ভব যথা সম্ভব যদি সম্ভব হয়-
যারা হাম্বল তথা কম্বল, হতভম্বল রয়-”
-দেখ লিপি!
 মিমি হলিউদ ইসটাল হলে আমাকে ভুলে যাস না যেন! আর রাবণ তো ভালো, আজকালকার যুগে রাবণের খুব দরকার।
লিপি বলে: - “তার মানে তুইও ওর দলে আছিস নাকি ?”
দুম্ করে ফোন এর লাইন কেটে দিল। ভাবনার কিছু নেই-কিছুদিনের মধ্যে আবার ফোন আসবে। ততদিন একটু জিরিয়ে নি। মানুষের মন তো এক অভাবনীয় বস্তু। অনেক বড় ঘটনা যেমন বিস্মৃতির অতলজলে হারিয়ে যায় তেমনি আবার সামান্য কোন ঘটনা স্মৃ্তিপটে চিরকালের জন্য লিপিবদ্ধ হয়ে থাকে। তেমনই এই উপরের ছোট্ট ঘটনা চোখ বুজলে আমি যেন স্পষ্ট চোখের সামনে দেখতে পাই।