গায়ের
রঙটা একটু বেশীই কালোর দিকে । বাবা আফশোস করে বলতো “নিশ্চই
হাসপাতালে অদলবদল হয়ে গেছিলো” । মা রাগ হলে খোঁটা দিতো বটে, কিন্তু বাইরে বলতো ‘একটু
চাপা’ । এসব শুনতে শুনতেই বড় হওয়া সুতপার । দুঃখ হলেই স্বপ্ন দেখে নিতো কষে, ভালো ভালো স্বপ্ন । স্বপ্নেরা তো রঙ দেখে আসে না ! বরং রঙ
নিয়ে আসে একমুঠো, ভাসিয়ে নিয়ে যায় সব মনখারাপ, কষ্ট । শ্বশুরবাড়ীতে চোরের মার খেতে খেতেও দেখেছে, স্বপ্ন দেখলে ব্যথাও কম লাগে । অথচ, আজ এই হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে শুয়ে, পুড়ে প্রায় কাঠ হয়ে যাওয়া মেয়েটা হাজার চেষ্টাতেও কোনো স্বপ্ন দেখতে পাচ্ছে না আর ।
দৌড়
সারা
বিকেল একচিলতে জানলাটায় মাথা রেখে বসে আছে হাফিজা । নিজেই জানে না কি দেখছে, আকাশটা তিতো লাগছে, পুকুরপাড়ের আমগাছটার ডালে বসা ডাহুকটার গলা টিপে দিতে ইচ্ছে করছে । আম্মা দুপুরে ভাত মেখে এনেছিলো, একটুও খায়নি । এইবার বুঝি স্কুল ছুটি হোলো, ঐ দেখা যায় আলপথ দিয়ে দল বেঁধে ফিরছে নাজমা, চন্দনা, বিন্তি, সাজেদারা । এদিকপানে কেউ এলো না, তিনদিন ধরে সে স্কুল যায় না, তবু কেউ খোঁজ নিলো না আজও । তার মানে সব জেনে গেছে ওরা । আরও একটু পরে, ঘরের কপাট খুলে বেরিয়ে এলো হাফিজা, দুদ্দাড় পেরিয়ে গেলো উঠোন, কলঘর, দরমার বেড়া । ছুটছে মেয়েটা, প্রাণপন ছুটছে, ছেঁড়া ফ্রকটা উড়ছে হাওয়ায়, লালচে উস্কোখুস্কো চুলগুলো ঝাপটা দিচ্ছে চোখেমুখে, পা টা কেটে গেলো বুঝি কাঁটায় । তবু তার থামার লক্ষণ নেই, কারণ সে জানে না কোথায় গেলে তার নিকাহ্টা খারিজ করা যায়, কার কাছে গেলে আবার স্কুলে যাওয়া শুরু করা যায় । আপাততঃ সে শুধু পালাতে চায়, সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে ।