গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বুধবার, ১৩ মে, ২০১৫

দেবাশিস সেনগুপ্ত / দুটি অনুগল্প

কাঠকয়লা

গায়ের রঙটা একটু বেশীই কালোর দিকেবাবা আফশোস করে বলতো নিশ্চই হাসপাতালে অদলবদল হয়ে গেছিলোমা রাগ হলে খোঁটা দিতো বটে, কিন্তু বাইরে বলতো একটু চাপাএসব শুনতে শুনতেই বড় হওয়া সুতপারদুঃখ হলেই স্বপ্ন দেখে নিতো কষে, ভালো ভালো স্বপ্নস্বপ্নেরা তো রঙ দেখে আসে না ! বরং রঙ নিয়ে আসে একমুঠো, ভাসিয়ে নিয়ে যায় সব মনখারাপ, কষ্টশ্বশুরবাড়ীতে চোরের মার খেতে খেতেও দেখেছে, স্বপ্ন দেখলে ব্যথাও কম লাগে অথচ, আজ এই হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে শুয়ে, পুড়ে প্রায় কাঠ হয়ে যাওয়া মেয়েটা হাজার চেষ্টাতেও কোনো স্বপ্ন দেখতে পাচ্ছে না আর

দৌড়

সারা বিকেল একচিলতে জানলাটায় মাথা রেখে বসে আছে হাফিজানিজেই জানে না কি দেখছে, আকাশটা তিতো লাগছে, পুকুরপাড়ের আমগাছটার ডালে বসা ডাহুকটার গলা টিপে দিতে ইচ্ছে করছেআম্মা দুপুরে ভাত মেখে এনেছিলো, একটুও খায়নিএইবার বুঝি স্কুল ছুটি হোলো, দেখা যায় আলপথ দিয়ে দল বেঁধে ফিরছে নাজমা, চন্দনা, বিন্তি, সাজেদারাএদিকপানে কেউ এলো না, তিনদিন ধরে সে স্কুল যায় না, তবু কেউ খোঁজ নিলো না আজওতার মানে সব জেনে গেছে ওরা আরও একটু পরে, ঘরের কপাট খুলে বেরিয়ে এলো হাফিজা, দুদ্দাড় পেরিয়ে গেলো উঠোন, কলঘর, দরমার বেড়া ছুটছে মেয়েটা, প্রাণপন ছুটছে, ছেঁড়া ফ্রকটা উড়ছে হাওয়ায়, লালচে উস্কোখুস্কো চুলগুলো ঝাপটা দিচ্ছে চোখেমুখে, পা টা কেটে গেলো বুঝি কাঁটায়তবু তার থামার লক্ষণ নেই, কারণ সে জানে না কোথায় গেলে তার নিকাহ্টা খারিজ করা যায়, কার কাছে গেলে আবার স্কুলে যাওয়া শুরু করা যায়আপাততঃ সে শুধু পালাতে চায়, সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে