গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বুধবার, ১৩ মে, ২০১৫

ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী

উড়ালপুল

সাউথ সিঁথি তে আমার শালীর বাড়ী । শালী বলে কথা, অনেক দিন পর ওদের ওখানে গিয়েছিলাম । ওখানেই রাতের খাওয়ারটা সেরে ফেললাম । ওখান থেকে ফিরতে ফিরতে তখন রাত প্রায় ১২ টা বাজে । আরতাভআমার ছেলের ড্রাইভার নাগের বাজার , সাউথ দম দম দিয়ে ভী আই পি ধরে ক্লাব টাউনের ফ্ল্যাটে পৌঁছনর সময় ওই উড়ালপুল এর এক ঘটনার কথা বলতে বলতে গাড়ী চালায় । 
সার নাগের বাজারের কাছে ওই আই এল এস হসপিটালের লাগাও একটা উড়ালপুল আছে দেখলেন ?
আমি বলি , না খেয়াল করিনি । 
গিন্নী বলেন , হ্যাঁ হ্যাঁ দেখেছি । কেন ! কি হল !! 
আবার শুরু করে আরতাভ , ওই উড়ালপুলে এক বাইক আরোহী কিছুদিন আগে তার গার্ল ফ্রেন্ড কে নিয়ে হাইস্পিডে যাওয়ার সময় এক্সিডেন্টে হয় । ওই স্পটেই ওরা দুজনে মারাযায় । তারপর-থেকে ওই উড়ালপুলের ওপর-দিয়ে যে যায় তার কিছু না কিছু বিপদ হয় ।
সেকি ?
তা কি বিপদ হয় শুনি !
কাছে পিঠে যত ফ্ল্যাট আছে তাদের ওই ছেলে মেয়ে দুটো হয়রান করে ।
গাঁজাখুরি কথাতে মন না দিয়ে গান শুনছিলাম।
আরতাভ বলে কাকু বিশ্বাস করবেন না রাতে ওই উড়ালপুল দিয়ে যে গাড়ী যেত তার চাকা পাঙ্কচার হত নয় গাড়ীর স্টার্ট বন্দ হয়ে যেত । শেষে পুলিশ পাহারা দেয় । তাতেও সব অদ্ভুত কাণ্ড ঘটে । এক পুলিশের গালে কেউ থাপ্পড় মারে আবার অন্য পুলিশকে কেউ পিঠে কিল মারে । শেষে ওদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয় । তাই প্রশাসন ওই ফ্লাই ওভার বন্দ করে দেয় ... কি বলতে যাচ্ছিল কে যানে ...
আমরা ফেরার সময় বৃষ্টি সুরু হয়ে গিয়েছিল । গাড়ী ভী আই পি দিয়ে যাচ্ছিল হঠাৎ গাড়ীর সামনে কে যেন এসে দাঁড়ায় । তখন প্রায় রাত সাড়ে বারোটা বাজে । আবছা ঠিক দেখা যাচ্ছিল না । বৃষ্টিতে অস্পষ্ট । আরতাভ ঘাবড়ে যায় ।
আমি বুঝি , , অন্য কিছু ভেবেছে তাই বলি গাড়ী থামি-ওনা চল পাস কাটিয়ে । আমি এরকম অনেক ভুয়ো কথা শুনেছি কিন্তু ওই ছবিটা এখন মনে পড়ে গাড়ীর সামনে । হয়ত মনের ভুল হতে পারে বলা মুস্কিল । গিন্নী ভয়-পান না খুব একটা । উনি দুর্গা নাম জপেন মনে মনে । 
একটু এগিয়েই আবার সেই চেহারা । সুধু সাদা ধোঁয়াটে । হঠাৎ গাড়ীর মিউজিক সিস্টেম বন্দ হয়ে যায় ।
আরতাভ বলে সার ওই ছেলেটা ।
কি করে জানলে?
আমি জানি সার ।
আমার মনে হল ও মিছি মিছি বলছে আমাদের ভয় দেখানর জন্য । না ব্যাপারটা সুবিধে ঠেকছে না । তবুও আরতাভ কে বলি স্পীড বাড়াও ।
না সার ওটি হলে আর বিপদ ।
কি বিপদ এ-টাকি ভুতের ভবিষ্যৎ ?
তা জানিনা সার তবে আস্তে যাওয়াই ভালো ।
তুমি চালাও কিছু ভেবনা ।
আমার অভ্যাস আছে সার । আমার হামিদ চাচা একটা তাবিজ দিয়েছেন ওটা কাছে থাকলে কোন ভুত আমার কাছ ঘেঁসতে পারবে না ।
তবে ঘাবড়াচ্ছ কেন?
বৃষ্টির ছাঁটে ভালো দেখা যাচ্ছিলোনা । ওয়াইপার এর আওয়াজে একটা রিদিমিকাল আওয়াজ ।
বাড়ী প্রায় এসে-গেল । কিন্তু সামনে গাড়ীর হেড লাইটে যা দেখলাম তা নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস করতে পারলাম না । সামনে একটা লাশ । রক্তে ভেজা লাশ পড়ে আছে । রাস্তায় রক্ত । গা গুলিয়ে উঠল ।
আরতাভ বলে ওই ছেলেটা সার ।
দূর এখানে আসবে কি করে ? এত আমাদের বাড়ী এসে গেল ।
না সার সত্যি আমি ওকে চিনি ।
ঠিক আছে ঠিক আছে তুমি গাড়ী ঘোরাও । গিন্নী চুপ করে সব দেখছেন আর দুর্গা নাম জপ করছেন।
এ হেন কথা কাউকে বললে বিশ্বাস করবে না কিন্তু কি হল কে জানে আমার গায়ে কাঁটা দিল।
আর তখন ই একটা কান্নার শব্দ , মেয়ের গলার , বাঁচাও বাঁচাও .....