গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

মঙ্গলবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

সকাল রয়


কে প্রথম ভালোবেসেছিল, কে প্রথম কাছে এসেছিলো

 
 
আপনি আমায় ভালোবাসবেন তো ? ‘প্রশ্নটা ছুড়ে দিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল অনুপম
কেবিন রুমের চেয়ার টেনে এক ঝলক হাসি ছড়িয়ে পাবন্তি বলে, ভালোবাসবো বলেই তো এলাম, না হলে কি এত দূরের পথ পেড়িয়ে রোদের আঁচ গায়ে লাগাই। পাবন্তি শম্ভুগঞ্জ থেকে সিএনজি চেপেই এসেছিল ষ্টেশন রোডের সাহা কফি হাউসের সামনে। অবশ্য সে আসবার আগেই কফি হাউসে বসে ছিল অনুপম। টাকার বিনিময় যে আজকাল অনেক অসম্ভব সম্ভব হয় তারই জলজ্যান্ত প্রমান দিতেই পাবন্তি এসেছে।

স্কুলের গণ্ডি পার হবার পর থকেই অনুপমের ভালোবাসার একটা মানুষ পাবার ইচ্ছে ছিল । কলেজ বয়সের শেষ দিনগুলো থেকেই তার আক্ষেপের শুরু। চারপাশে এত এত মানুষ প্রেম করে করে পার্কের ঘাস বাগান সব চষে ফেললো আর ও কিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে ঘুড়েও একটা প্রেম করতে পারলো না। স্কুল বয়সে ফাগুনের দোল পূর্ণিমার দিন চারপাশে সিনিয়রদের ভালোবাসার রব দেখে একজনের কাছ থেকে একটিবার ভালবাসি শুনবার আশায় দশটি টাকা খরচা করেছিল কিন্তু ওর ওই ম্যাদামার্কা চেহারায় সেটাও ফেল হয়েছে। এক ক্লাস সিনিয়র নিপেন দা বললো সেকি রে, অনুপম তোর মা ও কি তোকে ভালোবাসে না; সে ও তো নারী ! অনুপম বললো বাসে তবে সেটার মূল্য আলাদা । মা বলে তুই আমার কালোমানিক। কিন্তু কালো মানিকের যে কোন দাম নেই সেটা কে বোঝাবে তাকে ।
অনুপমের অন্যi ভাইবোন লাল্টু-টাল্টু দুধ সাদা গায়ের রং পেয়েছে । মা যে ওকে সান্তনা দেয় সেটা এদ্দিনে বুঝে গেছে । কালো নিয়ে প্রবাদ বাক্য শুনতে শুনতে কানটাও গেছে । কালো হলো গলার মালা । মালা না ছাই! কালো হলো জ্বালা । ছোট বেলায় সাহেব বাবুর ছেলেরা নিগার বলে বলে ওকে অনেক খেপিয়েছে ।

গল্প সিনেমায় নায়করা খুব একটা কালো হয়না । গায়ের বরণ শ্যামলার চেয়ে নিচে নামে না । সিনেমার নায়ক অন্ধ হয়, পঙ্গু হয় কিন্তু কালো হবার প্রশ্নই আসেনা, কালো রংটা ভিলেনের জন্য তোলা থাকে । বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষগুলো সান্তনা পুরস্কার যেন হাতে নিয়েই বসে থাকে; কালো প্রসঙ্গ উঠলেই বলবে- আরে গায়ের রং যাদের একটু ময়লাটে বা কালো ওদের মন খুব ভাল হয় । সে জানে এ যুগে ভাল মন ফ্রেমে বাঁধাই করে ঘরের দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখতে হয় ওটা দিয়ে সব কাজ হয়না । কোকিল তো কত সুন্দর গান গায় ! কিন্তু কজানার প্রিয় পাখি কোকিল ? এসব নিয়ে আরো অনেক কিছুই ভাবছিল অনুপম । কফি হাউসে বসে এসবই ভাবছিল ভাবনার মাঝখানে পাবন্তি এসে হাজির। পাবন্তি বসবার পর ওয়েটার এসে বললো আপনাদের জন্য কি দেব ? অনুপম ধ্যান ভেঙ্গে বললো পাবন্তি অনেক রোদ্দুর গায়ে মেখে এলেন বলুন কি খাবেন ? মুখের ঘাম মুছে পাবন্তি বললো তেমন কিছু না, সামান্য কোল্ড ড্রিংক হলেই চলবে ।
-তাই কি হয় নাকি বলে অনুপম আরো কিছু অর্ডার করলো।
পাবন্তির সাথে অনুপমের পাকা কথা হয়ে গেল । এক বছরের চুক্তি হলো । এক বছর অনুপমকে ভালোবাসবে পাবন্তি । একেবারে মন দিয়ে; যাকে বলে রিয়েল লাভ । ঘুরবে, ফিরবে মোট কথা সবাই যেন বুঝতে পারে অনুপম প্রেম করছে চুটিয়ে । শর্তের কথা গোপন থাকবে। এক বছর পর পাবন্তির যদি মনে হয় অনুপমের সাথে সে থাকবে তাহলে থাকতে পারে, নয়তো অনুপম সেই ম্যাদা মার্কা সাইন বোর্ড হয়ে আবার ঝুলবে । অনুপমের এই অভিনব চুক্তির কথা কাউকেই সে জানালো না । আর এটা জানাবার মতো কথাও নয় । বাড়ি ফিরে অনেকদিন পর লম্বা ঘুম দিল। এবার তার সময় এসেছে ভালোবেসে দেখাবার। এদ্দিন সেটা দেখানে সম্ভব হয়নি।
  
।। ২।।

ক্যাফেতে বসে ফেসবুকের নোট পড়ছিল পাবন্তি । ওর নিজের কোন ফেসবুক একাউন্ট নেই; খোলাও হয়নি । ওর বান্ধবী জয়ার একাউন্ট থেকে মেসেজ পড়ছিল । জয়াদের বাসায় পাবন্তির প্রায়শই যাতায়াত করতে হয় । মধ্যবিত্তদের জীবনটা ধার-দেনা দিয়ে শুরু হয় ; মধ্যবিত্ত পরিবার আর রঙচটা সুটকেস যেন একই রকম ঠোকর খেতে খেতে জীবন চলে যায়। পাবন্তির বাবার একার আয়ে পুরো সংসারটা বড্ড টাল-মাতাল। আর সেই বা কত হাত পেতে চলবে। এদিকে পড়ালেখাটাও শেষ হচ্ছেনা। নিজের খরচ মেটাতে দুটো টিউশনিতে চলে যায়। কিন্তু সম্প্রতি দুটো বোন কলেজে উঠে গেছে বলে খরচাও বাড়ন্ত! চাকুরীর একটা ভীষন দরকার।  

ভালো অফিস হলে ভালো । একটা চাকুরী তার দরকার। ফেসবুকে জয়ার মেসেজে একটা চাকুরীর বিজ্ঞপ্তি উদ্ধার করতেই বসেছিল। বিজ্ঞপ্তি উদ্ধার করবার পর লগ-আউট দিতে যাবে অমনি ফেসবুকের একটা নোট চোখে পড়লো। নোট লিখেছেন অনুপম দত্ত, ছোটবাজার, ময়মনসিংহ। নোটের শিরোনাম: একটা ভালোবাসা পেলে মন্দ হত না। একটু উৎসুক হয়েই চোখ রাখলো । নোট পড়েই জানতে পেল ছোটবেলা থেকেই ভালবাসা না পাওয়া এক তরুণের গুচ্ছ গুচ্ছ দীর্ঘশ্বাসের কথা । কারো নির্মল ভালবাসাকে সে কিনে নিতে চায় অর্থের বিনিময়ে । তবে অর্থ বিষয়ক কথাটা খুব শৈল্পিক ভাবেই উপস্থাপন করা হয়েছে । কথাগুলো পড়ে অনেকক্ষণ অবাক বিস্ময় নিয়ে বসেছিল পাবন্তি । নোট থেকে ঠিকানা ফোন নং নিয়ে সেদিনের মতো বেরিয়ে এলো।

একজন মানুষের ভালোবাসা পাবার আকুতি আর হোক সেটা বেশ অনেক দিনের জন্য; চাকুরীটা অফিসের নাম মাত্র পিএ হলেও একটা শর্ত আছে । প্রেমের অভিনয় কিংবা প্রেম করে যাওয়া । আর এ জন্যই তাকে সম্মানী প্রদান করা হবে। পাবন্তি প্রথম ভাবলো এটা কেমন কাজ! তবে সাময়িক পারিবারিক দুর্যোগ কাটিয়ে উঠার জন্য যেহেতু চাকরী মিলছে না সেহেতু একবার দেখাই যাক । ভালো মানুষ হলে না হয় হলোই একটু অভিনয় করবে ।
 
 

এক ফাগুনের দিন থেকে অনুপমের প্রেম পর্ব শুরু হলো । বাড়ির বড়দা তো প্রথম দিনই অবাক ! পাবন্তিকে গেট থেকে ড্রয়িং রুমে বসিয়ে অনুপমের ঘরে গিয়ে ওকে ডেকে বললো অনু, কে রে মেয়েটি ? ‘আমার বন্ধু’ বলে অনুপম মুখের দিকে তাকিয়ে রইল । বড়দা অবাক হ’ল । অনুপমের যে গার্লফ্রেন্ড হতে পারে সেটাই ভাববার বিষয়! অনুপমের বোন রুপা দিগুন আবাক হয়েছে এটা জেনে যে, অমন পরীর মতো মেয়ে অনুকে ভালবাসে! নিশ্চই অনু মিথ্যে বলছে, অনুপম বললো মিথ্যে হবে কেন ? কৃষ্ণ কালো ছিল বলে কি রাধা তাকে ভালোবাসেনি ? রুপা বললো ওটা তো প্রেমলীলা ছিল, তাহলে ধরে নে আমারটাও লীলা হবে বলেই হাসির রোলঅনুপমের।
প্রথম কয়েকমাস অনুপম বেশ ঘুরলো পাবন্তিকে নিয়ে । বাদ রইলো না কোন পার্ক, রেস্তোরাঁ আর সিনেমা হল। বন্ধু-বান্ধব সহ আশ-পাশ মোটামুটি এখন জেনে গেছে অনুর এতদিন পর প্রেমের খাতা খুলেছে ! তবে এদের মাঝে অনেকেই পাবন্তিকে দুচার কথা শুনিয়েছে, আর লোক পেলি না এই রকম একটা হাদারামের সাথে প্রেম করে কেউ ! 

মাস ছয়েক পর আশ্বিনের এক দুপুর বেলায় পাবন্তির মা, ওকে ডেকে বললো, কি-রে পাবন্তি তুই যে বলছিস ছোট-খাটো একটা চাকুরী করিস, তো কি সেই চাকরী ? পাবন্তি অবশ্য ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বললো অফিসের পিএ তবে চুক্তির ব্যাপারটা বললো না । পাবন্তির মা মনোরমা দেবী নিশ্চিত হলেও পাবন্তির দিনকে দিন পরিবর্তনটা চোখে পড়লো । পরিবর্তন শুধু পাবন্তির মধ্যে নয়, অনুপমের মধ্যেও এসেছে । এখন দিব্যি দিন কেটে যাচ্ছে । সব কিছুতে রঙ আর রঙ। মাঝে মাঝে ভুলেই যায় যে এটা একটা অভিনয় মাত্র । তার খেয়াল-খুশি আজকাল পাবন্তির চারপাশে ঘিরে থাকে । রোজকার দিন হাসিমুখে শুরু হয় । হৃৎকম্পন ও মাঝে মাঝেই ঝড় বয়ে যায় যখন শোনে পাবন্তি অসুস্থ কিংবা কোথাও বেড়াতে গেছে । আজকাল লক্ষনীয় বিষয় হলো পাবন্তি ধীরে ধীরে ভালোবাসার বিশালতা নিয়ে খুব কাছে চলে আসছে । অনুপম চোখ বন্ধ করলেই অনুভব করতে পারে তার চোখে, মুখে, ঠোঁটে পাবন্তি! 
এভাবেই অনুপমের ভাবনা ঘুরে বেড়ায়, ভালো লাগা বাড়ে । কিন্তু শর্তের কথা মনে হলেই হিম হয়ে যায় শরীর। সাত-আট মসের স্মৃতির খাতা ভরে গেছে হাসি আর আনন্দে । আর এভাবেই দিন ফুরিয়ে এলো !
  
 

গত ছয় মাসে পাবন্তি অনুপমের সাথে ঘুরে ফিরে এটুকু বুঝেছে যে দুজনার পছন্দের তালিকায় কোন কিছু মিল না থাকলেও অনুপমের মাঝে আত্মত্যাগ করার প্রচেষ্টা আছে, অনু যদিও খানিকটা অবাধ্য তবে তার সীমানা সে অতিক্রম করেনি ; মাথা ভর্তি দার্শনিক কথাবার্তা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় ঠিক, তবে বাচাল নয় এবং সেন্টিমেন্টালও নয় । পাবন্তির শুধু মনে হয় যে ভালোবাসার ভবিষ্যত অন্ধকার সে ভালোবাসা নিয়ে না ভাবাই ভালো । বছর শেষ হবার আগেই যদি একটা চাকুরী জুটে যায় তাহলে ছেড়ে দেবে এই অভিনয়ের কাজ । যেখানেই যায় সেখানেই সারা সকাল-দুপুর শুধু শুনে দুজনাকে একটুও মানায়নি। তাছাড়া পাবন্তি যেমনটি চায় অনুপম তেমনটি নয় তারচেয়ে বড় কথা এটা তো আসলে একটা প্রেম নামক কাজ। সময় শেষ তো কাজও শেষ । লোকে জানবে ওদের মাঝে ব্রেকআপ হয়ে গেছে।

দুর্গাপুজোয় চন্ডিমন্ডপে পাবন্তির মায়ের সাথে অনুপমের দেখা হয়ে গেল। সে , কি লজ্জায় পড়িমড়ি! মনোরমা দেবী বলেই ফেললেন, মেয়েটার মাথা গেছে । সেদিন সীতেশ বলে গেল পার্কে নাকি ট্যারা চোখওলা একজনের সাথে পাবন্তীকে দেখেছে ; এটাই নিশ্চই সে ছেলে-আরে বাবা প্রেম করবি করতাই বলে এই ছেলে ছাড়া কি আর ছেলে নেই । অনুপম সব শুনলো আর চুপ মেরে গেল । যা হবার পরে হবে ভেবে জমিয়ে রাখলো । চুক্তি শেষ হবার আগেই পাবন্তি একটা চাকুরী পেয়ে গিয়েছিল । স্বপ্নের মতো করে প্রজাপ্রতির ডানায় ভর করে সময় ফুরিয়ে গেল । বিদায়ের দিনে অনেক স্মৃতি নিয়ে দুজনার কথা হলো । কথার ফাঁকে দু-চার মিনিটের জন্য ওরা দুজনে কাঁদলও খানিকটা। অভিনয় হোক আর যাই হোক প্রেম তো ! এই ভালোবাসায় শুধু আনন্দই না কষ্টও থাকে সম্পর্কের ভাঁজে ভাঁজে । 

অনুপমের কাছ থেকে বিদায় নেবার পর পাবন্তি বাবামা কে সরাসরি বলে দিয়েছিল তোমরা পছন্দ মত পাত্র দেখ। আমার অন্য কোন ভাবনা নেই । নতুন চাকুরীতে যোগ দেবার পর প্রথম কদিন অনুপমের জন্য খারাপ লেগেছিল, হঠাৎ করেই যেন মুখ ফুটে বেরিয়ে আসতো ; কি করছে অনু ? কিন্তু পাবন্তির উড়নচণ্ডী ভাবনা বলে যায় এটা একটা চুক্তি ছিল এত ভাববার দরকার নেই, কারো জন্য কেউ বসে থাকে না । বিদায় নেবার পর অনুপমের সাথে আর দেখাও হয়নি ওর । মাস খানেকের মধ্যে মনোরমা দেবী পাবন্তির বিয়ে ঠিক করে ফেললেন। পাবন্তি এর মাঝে একদিন পাত্রের সাথে কথাও বলে এলো । কথা বলার পর থেকেই নতুন করে মনের ভেতর খচখচ শুরু হয়ে গেল আবার, ছেলেরা উপরে যতটা সাধু ভেতরে ততটা নয় । মায়ের ঠিক করা পাত্রটি খুব সহজেই বলে দিল যে, সে আগেই প্রেম করেছে দুটো । পাবন্তি প্রেম করেনি এই মিথ্যে শুনে সে অবাক হয়েছে ।
 
বিয়ের কদিন আগ পর্যন্ত অনেক ভেবেও পাবন্তি নিজেকে শেষ পর্যন্ত বিয়ের সিদ্ধান্তে দাঁড় করাতে পারল না । দু-দুটো প্রেম করা ছেলে তাকে তো শুধুই বিয়ে করবে; ভালোবাসবার মতো তারে কাছে কিছু নেই। সুন্দর চেহারার সব মানুষই সুন্দর নয়; সৌন্দর্য্যের আড়ালে থাকে নষ্ট ফড়িঙ ডানা।
এই বিয়ে বাতিল যদি করেও সে, তাহলে অপরিচিত আরেকজন যিনি আসবেন; তিনিও যে এরকম হবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে ? তারচেয়ে যার সাথে একটা বছর ঘুরে ফিরে যতটুকু বুঝেছে তাকে বিয়ে করাটাই কি ভালো নয় ।

এখন অনুপমকেই প্রয়োজন। অনুপমের সেলফোনে কল দিয়ে তাকে পাওয়া গেলনা। অফিস ফেরতা পথে অনুদের বাড়িতে গিয়েও অবাক হতে হলো । সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই সে বাড়ি নেই। কোথায় যেন ঘুড়তে বেড়িয়েছে সে। কবে ফিরবে বলা মুস্কিল। এখন কি করা যায়!  
পাবন্তি না হয় অভিনয় করেছে! কিন্তু অনুপম ? অনুপম তো ওকে সত্যি সত্যি ভালোবেসেছিল । একটিবার বলতে পারতো ? অত মুখচোরা বলেই তো কারো সাথে প্রেম করতে পারলনা । সে কি দুরে গিয়ে থাকতে পারবে। কেন জানি পাবন্তির মনে হলো ওর কথা মনে হলেই হয়তো ছুটে আসবে। কিন্তু সত্যিই কি আসবে ?

দিন পেরিয়ে সন্ধ্যে হয়ে এলো কিন্তু পাবন্তি কিছুতেই স্বস্তি খুজে পাচ্ছেনা। এখন মনে হচ্ছে প্রেমটা আসলে করা যায়না ওটা হয়ে যায়। সত্যিকার অর্থে একজনকে ভালোবেসে ফেললে সেটা যদি অভিনয় কিংবা মিথ্যে করেও ভালোবাসা যায় তারপরও সে প্রেম ভুলা যায়না। আজ মনে হচ্ছে অনুপম ওকে আসলেই ভালোবাসতো!
কিন্তু অনুপম এখন কোথায় ? যেখানেই থাকুক সে অপেক্ষা করবে? অপেক্ষা গুলো ফুল হলে ভালো হতে তাহলে একসময় চুপসে গিয়ে পড়ে যেত; শেষ হতো অপেক্ষা। কিন্তু অপেক্ষা ফুল নয়, যে শেষ হয়ে যাবে কদিন পেরুলেই।
 
দীর্ঘ মাস পর একদিন সুপার মার্কেট থেকে পেপার কিনতে গিয়ে হঠাৎ চোখে পড়লো পুরোনো পেপারের এক পাশে অনুপমের মতো দেখতেই একজনের ছোট্ট একটা ছবি সেই সাথে লেখা চট্টগ্রাম মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ৩, নিহত ১, নিহত ব্যাক্তির নাম অনুপম দত্ত।
পাবন্তি আর বাড়ি ফিরতে পারেনি সেদিন। সেখানেই হুশ চলে গেছিল তারপর মস্তিষ্কের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে এখন ব্রেন ড্যামেজ। হাসপাতালে শুয়ে থাকে শুধু। আকাশ দেখে; প্রকৃতি দেখে। আর অপেক্ষার গাছের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষায় থাকে অনুপম; অনু! আসবে একদিন। ঠিক আসবে আর সেদিনের মতো করে বলবে আপনি আমায় ভালোবাসবেন তো ?