সারপ্রাইজ
গিফট
একগোছা
রজনীগন্ধা । সক্কাল সক্কাল ঘুম থেকে উঠেই মনটা এক অদ্ভুত রকমের আবেগে ভরে উঠল ।
গুনগুন সুর ভাঁজতে ভাঁজতে চায়ের আয়োজন করতে লাগল তিয়াসা। অভীক এখনো ঘুমে অচেতন।
বড্ড ঘুম কাতুরে এই অভীকটা। কোথায় আজকে এই বিশেষ দিনটায় সকাল সকাল উঠবে,তা না ভোঁসভোঁস করে ঘুমুচ্ছে। তবু খুব ভাল লাগছিল তিয়াসার। মনে হচ্ছিল
সবাইকে ছুটে গিয়ে জানায় নিজের আনন্দের কথা।আজ তিয়াসা অভীকের প্রথম বিবাহবার্ষিকী।
তিয়াসা ভাবতেই পারেনি ভুলোমন অভীকের দিনটা মনে থাকবে!এই এক সমস্যা তিয়াসার অভীককে
নিয়ে,এমনিতে ভীষন ভালমানুষ কিন্তু এত্তো ভুলোমন যে একটা
অশিতীপর বৃদ্ধকেও হার মানায়। সব কিছু ভুলে যায় ও,এমনকি
খেয়েছে কিনা তাও ঠিকমত মনে করতে পারেনা। দরকারী কাগজপত্র তো মামুলি ব্যপার । সব
কিছু তাই তিয়াসাকেই সামলাতে হয়। মাঝে মধ্যে রাগ যে হয়না তা নয়, কিন্তু কোথায় যেন এ ক'মাসে লোকটার প্রতি একটা
মায়া পড়ে গেছে । তাই তো অম্লানকে দেওয়া কথা আজকাল বড্ড মেকি মনে হয়। অভীককেই
ভবিতব্য বলে মেনে নিয়েছে তিয়াসা। তবু মাঝে মাঝে কখনো কখনো যে অম্লানের স্মৃতি যে
মনে খোঁচা দেয় না তা বললে ভুল হবে । বিশেষ করে উদাসীন অভীকের কিছু কিছু আচরন দেখে
তিয়াসার চোখ জলে ভরে যায় । মনে পড়ে যায় অম্লান কিভাবে জন্মদিন থেকে শুরু করে
তিয়াসার জীবনের তুচ্ছাতিতুচ্ছ ঘটনায় শুভেচ্ছা ভালবাসায় ভরিয়ে তুলত! আর অভীক নিজের
জীবনের ঘটনাই মনে রাখতে পারে না, সেখানে তিয়াসার কথা মনে
থাকবে এটা তিয়াসা ভাবতেই পারে না । তাই তো আজ খুব খুব খুশি তিয়াসা । অভীক মনে
রেখেছে আজকের এই বিশেষ দিনটি।
সকালে
ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলতেই রজনীগন্ধার গোছা দেখে মন ভরে গিয়েছিল তিয়াসার। ভুলোমন
অভীকের এ হেন সারপ্রাইজে স্বভাবতই তিয়াসার আনন্দের শেষ নেই । গরম গরম চা আর
বিস্কুট নিয়ে বিছানার সামনে দাঁড়ায় তিয়াসা । ততক্ষনে অভীকের ঘুম ভেঙেছে । হাসিমুখে
তিয়াসাকে গুডমর্নিং জানায় । তিয়াসা অপেক্ষা করে অভীকের উইশ শোনার জন্য । অভীক
বিছানা ছাড়ে, বাথরুমের দিকে এগোয়, আর তখনই ঝন ঝন করে অভীকের মোবাইল রিমাইন্ডার আলার্মটা বেজে ওঠে ;
অভীক মোবাইলটি হাতে নেয়, তিয়াসার দিকে
ফিরে বলে ওঠে "হ্যাপি আনিভার্সারী তিয়াসা।" আনন্দে দু চোখ বেয়ে জল পড়ে
তিয়াসার । হোক না রিমাইন্ডার দিয়ে মনে রাখা তাও তো মনে রাখার চেষ্টা তো করেছে অভীক
। ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে তিয়াসা । সাদামাটা ভুলোমন অভীক তিয়াসার মাথায় হাত বুলোতে
বুলোতে জানায়, "জানো তো , ভুলেই
গিয়েছিলাম আজকের দিনটার কথা ,ভাগ্যিস কাল অফিসে তোমার
বন্ধু অম্লান এসেছিল, ওই তো মনে করালো আর মোবাইলে
রিমাইন্ডার দেওয়ার বুদ্ধি দিল । তারপর তো ওর সাথে বেরিয়েই রজনীগন্ধার স্টিকটা
কিনতে ...."আর কিছু শুনতে পারল না তিয়াসা, ওর চোখ
দিয়ে জল না আগুন ঝরতে লাগল ; অভীকের দেওয়া প্রথম বছরের সারপ্রাইজ
গিফট চিরদিনের জন্য দাগ রেখে গেল তিয়াসার মনে।