স্মৃতি-বিভাজন
-খেপেছ নাকি? তোমার মায়ের সঙ্গে সঙ্গে কি তোমারও মাথা
খারাপ হল ?
-অতনু, আমার মায়ের মাথা খারাপ নয়,
এলঝাইমারস হয়েছে।
-ঐ একই হল, বাংলায় ওটাকেই বলে ভীমরতি ।
-প্লিজ, একটু বোঝার চেষ্টা কর,
মোটে আড়াই মাসের ব্যাপার। দিদিয়া আর জাম্বু আমেরিকায়
বুবানের কাছ থেকে ফিরে এলে মাকে আবার ওদের কাছেই পানিহাটীতে নিয়ে গিয়ে রাখবে,
ওরাই তো সব করে এসেছে এতকাল। আমাকে তো
কিচ্ছুটি ভাবতে হয়নি। কটা দিনের তো মামলা ।
-অনিতা, আমার কর্তব্য করতে আপত্তি নেই। আপত্তি অন্য
জায়গায়... তুমি সেটা জান... আমি আড়াই মাসের জন্য অনিকেত সাজতে
পারবোনা ।
-কি মুস্কিল! তোমাকে কি দাদার মত সাজতে বলেছি আমি? আমাকেই তো মা
চিনতে পারেনা। বুনিকেই মনে করে আমি, আর বুনি তো দিব্যি মজা পায় তাতে ।
-বুনি মজা পায়, কারণ বুনি ছেলেমানুষ আর এটা সত্যি যে তোমার
অল্পবয়সের চেহারা আর বুনির এখনকার চেহারা একই রকম
।
-‘শোন, ব্যাপারটা বোঝবার চেষ্টা কর একটু প্লিজ। মা
তোমাকে অনেকদিন বাদে দেখল। অসুখটা বাড়ার পরে তুমি তো কাজের চাপে সেভাবে মাকে দেখতে
যেতে পারনি। এখন যদি মা তোমাকে দেখে মনে করে তার হারিয়ে যাওয়া ছেলে,...
আমি কি করতে পারি’?
-বোঝাও, মাকে বোঝাও... যে আমি অতনু, তার ছোটমেয়ে অনিতার বর
।
-একটা অসুস্থ মানুষ... কি বোঝাবো? আর মা তো বুনিকে
আমি মনে করে বসে আছে... বাচ্চা মেয়ের বর আসবে কোথা থেকে ?
-হুম, তা তোমার মা তোমাকে কি ভাবছে এখন
?
-আমাকে বোধহয় মা আয়া
মাসির ঊর্ধ্বতন ... এই নার্স গোছের কিছু একটা
ঠাউরেছে ।
-বাঃ! অসাধারণ! আমাকে নিজের ছেলে ভাবছেন আর তোমাকে নার্স... তা নিজের ছেলেকে নার্সের সঙ্গে একঘরে ঘুমাতে দেখলে কি ভাববেন ?
-উফফফ,পারি না... তোমাকে নিয়ে আর পারি না আমি। মা কি দোতলায় উঠতে পারবে?সে শক্তি আছে ওঠবার?
আমাদের বেডরুম অবধি আসবে কি করে মা ?
-হুমম, কি করতে হবে আমাকে একজ্যাক্টলি ?
-‘এই তো, সোনা আমার, যাক বাবা... অনেকখানি বুঝেছ। শোন, বিশেষ কিছু নয়,
ঐ ব্রেকফাস্টের সময়টাই যা একটু... তুমি অফিস যাওয়ার আগে একটু মায়ের সামনে বসে
খাবে, আর অফিস থেকে ফিরে আধঘণ্টাখানেক একটু মায়ের
ঘরে বসে থাকবে... এই আর কি! মা হয়তো তোমাকে বাবু বাবু বলে একটু পিঠে
মাথায় হাত বোলাবে। খুব কি অকওয়ার্ড লাগবে তোমার? ভাবো না, তোমার নিজের মা যদি আজ থাকতেন! দেখো তো..
তোমাকে দেখে
কতদিন পরে মা একটু বারান্দায় হাঁটল, নিজে নিজে হেঁটে
বাথরুম গেলো। দিদিয়ার ওখানে তো নিজের ঘরটা ছেড়ে বের হতনা এক পা। আর মা তো রাতে
তাড়াতাড়ি খেয়ে সাড়ে আটটার মধ্যে শুয়ে পড়বে, কাজেই তুমি দোতলায় বসে তোমার বাবার সঙ্গে
যেমন ডিনার কর, তেমনি করবে’।
- বুঝলাম, কিছুটা... আমি সকালে অনিকেত, অফিসে অতনু,
বিকালে অনিকেত আবার রাতে অতনু।... কিন্তু আমার যদি গুলিয়ে যায় কিছ ?
-আমি ম্যানেজ করে নেব সব। আর হ্যাঁ,
আলটিমেটলি তোমাকে তো অতনু হতেই হবে। হ্যাঁ,
মনে রেখো, হতেই হবে। অনিকেতদের যে কোন ঘর থাকেনা... তারা যে হারিয়ে যেতে চায়, তাদের মায়েরা, তাদের আপনজনেরা কষ্ট পায় খুব... আমি কিছুতেই তোমাকে পুরোপুরি অনিকেত হতে দেবনা ।