পাকাদেখা
ত্রিভুবনজিৎ মুখার্জী
আমাদের এপার্টমেন্টের থার্ড ফ্লোরে থাকেন এক ভদ্রলোক । নাম প্রতাপ সিংহ রায় ।
বেশ কিছুদিন আমাদের এপার্টমেন্টে এসেছেন । চেনা সোনা বলতে সোসাইটি মিটিং আর ক্লাবে
তাস খেলা । আমার সঙ্গে বাজারে দেখা । দেখেই বলেন ,“অনেকদিন হল একটা
কথা মাথায় চাড়া দিচ্ছে। কি করি ভেবে পাচ্ছিনা !
আমার একটাই ছেলে । ইনফোসিস বেঙ্গালুরুতে
সিনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার । বিয়ের বয়েস হয়নি তাও চিন্তা !
বিয়ে দেব কি,
যা বিয়ের বাজার !!
কি করি বলুন তো
! ”
কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলে-গেলেন ভদ্রলোক।
অপ্রত্যাশিত কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেলাম ।
আমার সঙ্গে ভদ্রলোকের সেরকম হৃদ্যতা নেই । হঠাৎ ছেলের বিয়ের ব্যাপারে আমাকে কেন এ
সব বলা বুঝলাম না । তবুও ভদ্রতার খাতিরে বললাম,
হ্যাঁ ছেলে মেয়েদের মানুষ করা তারপর যোগ্য
পাত্র পাত্রী র সঙ্গে বিয়ে দেওয়া...।
আমার কথা শেষ না হতেই ঝাঁজিয়ে উঠলেন, “রাখুন ত যোগ্য পাত্রী ! যা দুনিয়ার অবস্থা, পাত্রী ই পাওয়া যায়না তা যোগ্য পাত্রী !! ভাল মেয়ে, ভদ্র ঘরের মেয়ে , দেখতে শুনতে ভালো, ভাল চাকরী করে সেরকম মেয়ে পাচ্ছি কই ? যোগ্য পাত্রী বলতে আর কি বোঝায় বুঝলাম না ! তবুও বলি, দেখুন এ ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতা একটু কম । আপনি বরং “বেঙ্গলী মেট্রিমনিতে” আপনার ছেলের একটা বায়োডেটা দিয়ে প্রোফাইল খুলুন , ওরাই যোগাড় করে-দেবে পাত্রী । এই বলে পাশ কাটিয়ে যাই ।
আমার কথা শেষ না হতেই ঝাঁজিয়ে উঠলেন, “রাখুন ত যোগ্য পাত্রী ! যা দুনিয়ার অবস্থা, পাত্রী ই পাওয়া যায়না তা যোগ্য পাত্রী !! ভাল মেয়ে, ভদ্র ঘরের মেয়ে , দেখতে শুনতে ভালো, ভাল চাকরী করে সেরকম মেয়ে পাচ্ছি কই ? যোগ্য পাত্রী বলতে আর কি বোঝায় বুঝলাম না ! তবুও বলি, দেখুন এ ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতা একটু কম । আপনি বরং “বেঙ্গলী মেট্রিমনিতে” আপনার ছেলের একটা বায়োডেটা দিয়ে প্রোফাইল খুলুন , ওরাই যোগাড় করে-দেবে পাত্রী । এই বলে পাশ কাটিয়ে যাই ।
পরের সপ্তাহে আবার দেখা । আমি দূর থেকে ভদ্রলোককে দেখে মাছ কেনার ভান করি ।
ওমা ! ঠিক আমার কাছে এসে হাজির !! মাছ ওয়ালাকে
জিগ্যেস করছি ইলিশ কত করে ? মাছওয়ালা
বালা বলে বারোশ টাকা কিলো । সে কি,
এত দাম ? পদ্মার ইলিশ
বাবু । খেলে আবার আসবেন । বাজি রাখছি । সত্যি পদ্মার কিনা জানিনা তবে কানকোর কাছটা
লাল আছে । হয়তো তাই !
পাশে দেখি প্রতাপ বাবু হাজির। আমায় দেখে বলেন,
“দিয়ে দিয়েছি’ ! কি ?
কি দিয়ে দিয়েছেন ? ঐযে আপনি বলেছিলেন,
“বেঙ্গলী মেট্রিমনি” ! ওটার সঙ্গে
আনন্দবাজারে "পাত্র পাত্রী" কলমের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছি । মনেহয় এবারে
আমার চিন্তা গেল। ও তাই !
তা ভাল ।
রবিবার অফিস নেই খোশ মেজাজে কাগজ পড়তে পড়তে চা খাচ্ছি, হটাত কলিং বেল বেজে ওঠে । দরজা খুলে দেখি
স্বয়ং প্রতাপ বাবু । গুড মর্নিং । কেমন আছেন দেখতে এলাম । বিরক্ত
করছি না তো ?
সুপ্রভাত । ওমা সেকি ? আসুন আসুন ।
আপনার পদ ধূলি আমার দ্বারে পড়লো আমার পরম সৌভাগ্য । আসুন আপনার দৌলতে আরেক কাপ চা
খাওয়া যাবে । গিন্নীকে বলি চা বানাতে । চা আসে । দুজনে চা খেতে খেতে প্রতাপ বাবু
বলেন, আজকে প্রায় ১০০ টা ফোন কল পেয়েছি । আমার এক ভদ্রমহিলার
সঙ্গে কথা বলে ভাল মনে হল । তাঁর মেয়ে দিল্লীতে পোষ্টেড । ভালো এক কোম্পানিতে ।
আপনার মতা মত নিতে এলাম । আমি ! আমি কি মতামত দেব বলুন ? আমি ওসব কিছুই
বুঝিনা !! উহু তা বললে
চলবে না । আপনার কথার দাম আছে মশাই । শুনুন ,
মেয়েটি ভাল চাকরী করে , আমার ছেলের চেয়ে
তিন বছরের ছোট । বাবা ভাল কোম্পানির ডাইরেক্টর, মা শিক্ষয়িত্রী । পাত্রী দেখতে যাব আগামী
রবিবার আপনাকে যেতেই হবে আমার সঙ্গে । কথাগুলো গড় গড় করে বলে এক গ্লাস জল খেলেন । আচ্ছা ফ্যাসাদে
পড়লাম ! আপনি কেন বুঝছেন না আমি ওসব কিছুই বুঝি না। বিয়ের ব্যাপারে আত্মীয় স্বজনকে
নিয়ে যান আমি যেতে পারবোনা । মাফ করবেন এই জোড়হস্তে বলছি আপনাকে । আমিও আপনাকে জোড়
হস্তে অনুরোধ করি আপনি আমার শুভাকাঙ্ক্ষী আপনাকে আমি কিছুতেই না নিয়ে ছাড়বনা । আমি
আপনার দাদার মতন । আমার কেউ নেই বলেই আপনাকে অনুরোধ করছি । না বলবেন না প্লিজ ।
এটা আমার বিনীত অনুরোধ । আমি বলি,
পরে ভেবে বলব । আজ কথা দিতে পারছিনা । ক্ষমা
করবেন হাত জোড় করে বলি । ভদ্রলোক বলেন ,
ঠিক আছে যা ভাল বোঝেন । আজ তবে উঠি । বলে
দরজার দিকে পা বাড়ান । আমি বুঝি ভদ্রলোক মনক্ষুন্ন হলেন তবে আমার
করার কিছুই নেই। আমি বলি ,
পরে ভেবে বলব । আজ কথা দিতে পারছিনা । ক্ষমা
করবেন হাত জোড় করে বলি । ভদ্রলোক বলেন ,
ঠিক আছে যা ভাল বোঝেন । আজ তবে উঠি । বলে
দরজার দিকে পা বাড়ান । আমি বুঝি ভদ্রলোক মন ক্ষুণ্ণ হলেন তবে আমার
করার কিছুই নেই।
মাস খানেক পর প্রতাপ বাবু সপত্নীক আমাদের ফ্ল্যাটে আসেন । হাতে একটা সুন্দর
বিয়ের কার্ড । হাত জোড় করে বলেন : আপনি আমাদের
সঙ্গে গেলে ভালো হত । মনে-হল ওইখানেই আমার ছেলের বিয়ে দিলে ভাল হবে ।
কোন দাবি দাওয়া রাখিনি । রাখবোই বা কেন ! বৌমা ত আমার সাক্ষাৎ লক্ষ্মী । পণ চেয়ে ছোট
হব কেন বলুন ? "আমার বৌমা তো নিজেই এটিএম মেশিন, পণের কি হবে
?" বলে হ্যা হ্যা করে হাঁসেন । আমি ভদ্রলোকের মুখের পানে হাঁ করে তাকাই আর
ভাবি ,"ভাগ্যিস ভদ্রলোকের সঙ্গে যাইনি"
।