ভগবানের নামে খোলা চিঠি
শ্রীচরণেষু ভগবান,
আশা করি ভাল আছো । ভাল থাকারই তো কথা । কারণ তোমার ক্ষেত্রে ভাল না থাকার কোন কারণই তো খুঁজে পাওয়া যাবেনা । অনেক ভাগ্যবান তুমি, তাই তুমি ভগবান । তোমার আপন রাজত্বে তো খাওয়া পরার অভাব নাই, নাই শোক, দুঃখ, জ্বরা,
মৃত্যু , জ্বালা, যন্ত্রণা । ভোগ
বিলাসের সামগ্রীর তো অফুরন্ত ভাণ্ডার তোমার রাজত্বে । সুতরাং তুমি তো ভাল থাকবেই । তোমাদের ব্যাপারটা তো আমাদের এই পৃথিবীর মত নয় । তোমাদের সংসারে চিরসুখ বিদ্যমান । সুখ, ঐশ্বর্যয়ের মধ্যে তোমাদের অবস্থান -- নিশ্চিন্ত , নিরুদ্বিগ্ন তোমাদের জীবন ।
অনেক দিন ধরেই তোমাকে কিছু কথা বলার আর তোমার সামনে কিছু প্রশ্ন তুলে ধরার ইচ্ছা মনে পোষণ করে আসছি । আজ বলছি -- আশা করি, তোমার কাছ থেকে সঠিক জবাব পাবো । এই পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের তোমার উপর অগাধ বিশ্বাস । সবাই বলে, " ভগবান যা করেন, মঙ্গলের জন্য "। একটা হাসিখুশি আনন্দে উচ্ছ্বল সংসার যখন বিধ্বস্ত, তছনছ হয়ে যায়, তখনও সেই সংসারের মানুষ বলে , " ভগবান যা করেন, মঙ্গলের জন্য " । মানুষ সব সময় তোমায় ডাকে আর বলে , " হে ভগবান, রক্ষা করো " । নিশ্চিন্ত , নিরুদ্বিঘ্ন আরামের গদিতে বসে তুমি কি কখনও ভাবো এই পৃথিবীর মানুষের কথা , কেন তারা কষ্ট পায়
? কথায় বলে, বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহু দূর ।
মাঝে মাঝে এই পৃথিবীতে ঝড় ওঠে, তুমি আছো কি নাই অর্থাৎ ভগবান বলে কেউ আছে কি নাই, সে নিয়ে । কিন্তু সে তর্ক ধোপে টেকে না - প্রায় সবাই কায়
মন বাক্যে বিশ্বাস করে ভগবান আছেন । এবং তাঁর নির্দেশে এবং ইচ্ছায় এই পৃথিবীটা চলে । চলুক না এই পৃথিবীটা তোমারই ইচ্ছায় আর নির্দেশে - তাতে কী এসে যায়, কেউ তো তোমার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে না বা তোমার অসীম ক্ষমতায় ভাগ বসাতে যাচ্ছে না । কিন্তু একটা কথা তোমায়
স্মরণ না করিয়ে পারছি না –
স্মরণ না করিয়ে পারছি না –
তোমার বিচার ব্যবস্থা নিয়ে কিন্তু বেশ জোরালো প্রশ্ন উঠছে -- মানুষের আস্থার ভিতটা নড়ে যাচ্ছে । একদিন না একদিন তোমাকে মানুষের দরবারে দাঁড়িয়ে জবাবদিহি করতেই হবে আর মানুষের প্রশ্নবাণ তোমাকে জর্জরিত , ক্ষতবিক্ষত করে
তুলবে । প্রায় সবাই বলে এই পৃথিবীতে যা কিছু ঘটে , সবই তোমার অদৃশ্য হাতছানিতে, এমন
কি এই পৃথিবীটাও তোমারই সৃষ্টি । তোমার নিজস্ব রাজ্যটাও তোমারই সৃষ্টি । তবে কেন তোমার ঐ রাজ্য আর এই
পৃথিবী যেখানে আমরা বাস করি এবং যা তোমারই অঙ্গুলি হেলনে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, সে দুটোর মধ্যে এত বৈষম্য ? তোমার ওখানে কেউ কখনও শোকে বিহ্বল হয় না, হয় না দুঃখে কাতর, ওখানে শোক বা দুঃখ বলতে কিছু নেই । তোমার রাজ্যে নেই প্রিয়জন হারানোর ব্যথা । নেই জ্বালা, যন্ত্রণা । সবাই অমর এবং চিরতরুণ । আর সেই তুমিই সমস্ত দুঃখ, ব্যথা, রোগ, জ্বালা, যন্ত্রণা , প্রিয়জন হারানোর কষ্ট শুধু এই পৃথিবীর মানুষের জন্যই কেন তুলে রেখেছো ?
এটা তোমার কেমন বিচার ? "ভগবান যা করেন মঙ্গলের জন্য" ---মানুষের এই বিশ্বাসটাকে নিয়ে কেমন করে তুমি এত নির্দয়, নির্মম হয়ে উঠতে পারো , ভাবতেই অবাক লাগে ।
পৃথিবী যেখানে আমরা বাস করি এবং যা তোমারই অঙ্গুলি হেলনে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, সে দুটোর মধ্যে এত বৈষম্য ? তোমার ওখানে কেউ কখনও শোকে বিহ্বল হয় না, হয় না দুঃখে কাতর, ওখানে শোক বা দুঃখ বলতে কিছু নেই । তোমার রাজ্যে নেই প্রিয়জন হারানোর ব্যথা । নেই জ্বালা, যন্ত্রণা । সবাই অমর এবং চিরতরুণ । আর সেই তুমিই সমস্ত দুঃখ, ব্যথা, রোগ, জ্বালা, যন্ত্রণা , প্রিয়জন হারানোর কষ্ট শুধু এই পৃথিবীর মানুষের জন্যই কেন তুলে রেখেছো ?
এটা তোমার কেমন বিচার ? "ভগবান যা করেন মঙ্গলের জন্য" ---মানুষের এই বিশ্বাসটাকে নিয়ে কেমন করে তুমি এত নির্দয়, নির্মম হয়ে উঠতে পারো , ভাবতেই অবাক লাগে ।
আমার তো মনে হয়, শুধু মনেই হয় না, আমার দৃঢ়
বিশ্বাস , পৃথিবীর মানুষের এই
অসহ্য ,
অসহনীয় অবস্থার কথা হয় আদৌ তুমি গায় মাখতে চাও না বা দুঃখ, ব্যথা বুকে যে কতখানি বাজে, তা উপলব্ধি করার বোধ তোমার নাই । থাকলে এ রকম বৈষম্যমূলক আচরণ হতে পারতো না । এই বোধটা তোমার থাকবে কি করে, মানুষ হয়ে তো তুমি জন্মাও নি, জন্মেছো দেবতা হয়ে । মানুষ হয়ে জন্মালে মানুষের জন্য ভাবতে পারতে । আরাম কেদারায় বসে মানুষের দুর্দশা দেখতে দেখতে শুধুমাত্র আপন রাজ্যের জীবদের জন্য আলাদা একটা জগৎ সৃষ্টি করতে পারতে না । যুগে যুগে ,ভিন্ন ভিন্ন রূপে তুমি এই
পৃথিবীতে অবতীর্ণ হও অবতার রূপে । ঐ অবতারগণও তোমারই ভিন্ন রূপ , অংশ এবং
অঙ্গ । তারাও দেবতা, মানুষ নয় কেউই । আমার একান্ত প্রার্থনা , "হে ভগবান, তুমি একটিবার মানুষ রূপে , মানুষ হয়ে, মানুষের ঘরে
এই পৃথিবীতে জন্ম নাও আর আমাদের মত একটা জীবন এই পৃথিবীতে কাটাও" । আমি হলপ করে বলতে পারি এই একটা জন্মই পাল্টে দেবে তোমার সমস্ত ধ্যানধারণা , তোমার শাসন পদ্ধতি , তোমার বিচার ব্যবস্থা । সম্যক জ্ঞান লাভ হবে তোমার এবং যে অবস্থার মধ্যে মানুষকে বেঁচে থাকতে হয় আর মরে যেতে হয় , তাতে পরিবর্তন আসতে বাধ্য । আমার কথাগুলো একটু আলাদা ভাবে,
একান্তে চিন্তা করো ভগবান, সরল মনে আর সুস্থ মস্তিষ্কে । এই পৃথিবীর মানুষের চেয়ে তোমার চিন্তা শক্তি অনেকটাই বেশী মনে করি । তাই, চিরাচরিত বস্তাপচা ধ্যানধারণা নিয়ে তোমার এই শাসনযন্ত্র চালানোটারও পরিবর্ত্তন প্রয়োজন হয়ে পড়েছে । সীমিত ক্ষমতার মানুষ তাদের বুদ্ধি দিয়ে তোমারই সৃষ্ট পৃথিবীটার কি অপরিসীম উন্নতি সাধন করেছে এবং করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত, তা দেখেও কি তোমার মনে করুণা সঞ্চার হয় না ?
মানুষ নাকি তোমার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি । এই
মানুষই রূপ , রস, গন্ধে ভরা
এই পৃথিবীতে কত বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে অহরহ ,কিন্তু হথাৎ হঠাৎ তোমার নিষ্ঠুর আঘাতে মানুষের সংসার কেন
ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে যায় ? আমাদের এই
পৃথিবীর মানুষদের জন্য তোমার নির্দেশ , "জন্মিলে মরিতে হবে" , আর তোমাদের বেলায় "জন্মিলে অমর হবে"-- বেঁচে থাকবে আবহমান কাল । আবহমান কাল বেঁচে থাক তোমার সংসার, তাতে আমাদের কোন ক্ষোভ বা দুঃখ নাই, নাই বিদ্বেষ বা ঈর্ষা । শুধু তোমার কাছে জানতে চাই আমাদের সন্তানেরা কেন অকালে ঝরে যাবে ? সুখী , শান্তিময় আমাদের সংসারের সন্তানদের প্রতি কেন তোমার এই নির্মমতা ? বাধ্য হয়েই মেনে নিয়েছি, জন্মেছি যখন,
মরতে হবেই -- তবে সে
মৃত্যু কেন হবে অকাল মৃত্যু ? বৃদ্ধ মা, বাবা, স্ত্রী ,
সন্তানকে অকূল পাথারে ভাসিয়ে দিয়ে তরতাজা, প্রাণবন্ত , সংসারের সহায়, অবলম্বন সন্তানদের জীবনদীপ কেন তুমি নিভিয়ে দাও অকালে ? এটা কী
বিচার, কেমন বিচার, কিসের বিচার ?
বিচারকের আসনে বসে হে ভাগ্যবিধাতা, পক্ষপাতদুষ্ট হলে চলে না । বিচার মানে সুবিচার, সঠিক বিচার, সুবিবেচিত বিচার -- সবার জন্য সমান । কিন্তু আমরা, এই পৃথিবীর মানুষেরা অত্যন্ত খেদ ও দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি তোমার বিচার একপেশে -- তোমার বিচারে শুধু দেবতাদের জন্য সুখ, শান্তি, ধন, ঐশ্বর্য আর
অমরত্ব । পৃথিবীর মানুষের ঘরে ঘরে কেবল রোগ , জ্বরা, দুঃখ,
কষ্ট, ব্যথা, অপমৃত্যু আর অকালমৃত্যু । আমাদের চোখের জলে ভাসিয়ে হৃদয়বিদারী যন্ত্রণার বিনিময়ে সর্ব সুখ শুধু কি তোমার আপন রাজ্যের জন্য ? এটা কি
উচিৎ বিচার, ন্যায় বিচার ?
ন্যায়দণ্ড হাতে নিয়ে জগৎ সংসারের চালিকা শক্তি হয়ে যুগযুগ ধরে তুমি যে পক্ষপাতিত্ব করে চলেছ, তা কিন্তু এই পৃথিবীর মানুষ আর সহ্য করতে পারছে না, তবুও নিরুপায় মানুষ আজও বলে, সব ঐ উপরওয়ালার হাতে । উপরে বসে নীচের এই আর্ত মানুষের উপর খবরদারি ফলানোয় খুব মজা পাও তুমি । ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে মানুষের উপর তোমার এই যে অবিচার যুগ যুগ ধরে চলে আসছে, মানুষ তাই আর তোমার উপর ভরসা রাখতে পারছে না , আস্থা তো দূরের কথা । তোমার ঐ বিভিন্ন বেশধারী অবতারকূলকে পৃথিবীতে না পাঠিয়ে তুমি স্বয়ং একবার সশরীরে আমাদের মাঝে এসে দাঁড়াওতো , দেখি কত শক্তি ধরো তুমি, কত তোমার সাহস। তোমার ঐ অবতারদের বলেতো কোন লাভ নাই-- ওরা তো সব তোমার হাতের পুতুল। ওদের হাতে না আছে কোন ক্ষমতা , না আছে স্বাধীনভাবে কিছু করার অধিকার । তুমি যেটুকু ওদের করতে বলো , ওরা সেটুকুই করে -- তাতে কার কী হল, সে নিয়ে ওদের কোন মাথাব্যথা নাই। ওরা তোমার আজ্ঞাবহ দাস ।
ন্যায়দণ্ড হাতে নিয়ে জগৎ সংসারের চালিকা শক্তি হয়ে যুগযুগ ধরে তুমি যে পক্ষপাতিত্ব করে চলেছ, তা কিন্তু এই পৃথিবীর মানুষ আর সহ্য করতে পারছে না, তবুও নিরুপায় মানুষ আজও বলে, সব ঐ উপরওয়ালার হাতে । উপরে বসে নীচের এই আর্ত মানুষের উপর খবরদারি ফলানোয় খুব মজা পাও তুমি । ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে মানুষের উপর তোমার এই যে অবিচার যুগ যুগ ধরে চলে আসছে, মানুষ তাই আর তোমার উপর ভরসা রাখতে পারছে না , আস্থা তো দূরের কথা । তোমার ঐ বিভিন্ন বেশধারী অবতারকূলকে পৃথিবীতে না পাঠিয়ে তুমি স্বয়ং একবার সশরীরে আমাদের মাঝে এসে দাঁড়াওতো , দেখি কত শক্তি ধরো তুমি, কত তোমার সাহস। তোমার ঐ অবতারদের বলেতো কোন লাভ নাই-- ওরা তো সব তোমার হাতের পুতুল। ওদের হাতে না আছে কোন ক্ষমতা , না আছে স্বাধীনভাবে কিছু করার অধিকার । তুমি যেটুকু ওদের করতে বলো , ওরা সেটুকুই করে -- তাতে কার কী হল, সে নিয়ে ওদের কোন মাথাব্যথা নাই। ওরা তোমার আজ্ঞাবহ দাস ।
চিঠি শেষ করার আগে আমি তোমাকে আর একবার একান্ত অনুরোধ জানাচ্ছি , "হে ভগবান, যুগে যুগে দূত
না পাঠিয়ে তুমি নিজে একবার মানবরূপে ধরাধামে অবতীর্ণ হয়ে মানুষের সাথে বাস করো । মানুষের ঘরে ঘরে কী হচ্ছে নিজের চোখে দেখো -- দেখো তোমার বিচারের বলি মানুষগুলোর কী শোচনীয় অবস্থা । আমি দেখতে চাই তোমার বুক কাঁপে কি না, দেখি তোমার বিচার পক্ষপাতহীন হয় কি না, দেখি তোমার মন ভেজে কি না । একবার শুধু একবার তুমি এই পৃথিবীতে মানুষের সন্তান হয়ে জন্ম নাও । আর কিছু চাই না -- আর কিছু চাওয়ার নাই আমার । শতকোটি প্রনামান্তে ---
শতকোটি মানুষের একজন ।