পরকীয়া
কনফারেন্স রুম। অপেক্ষা করতে করতে অস্থির হয়ে পায়চারি করছিল রঙ্গন। সৃজা ঢুকল। যেমন থাকে সবসময়ে, ফিটফাট সাজগোজ। কোনও পরিবর্তন নেই আজও।
“চলে এলে তো মুশকিল। পাশাপাশি কিউবিকল। কথা বলার জন্যে কনফারেন্স রুমে আসা মানে কৌতূহল বাড়ানো। সেটা বোঝ!”
“ফিরে চল প্লিজ। তুতুন নেই, তুমি নেই, ভাল লাগছে না।”...
“আমি যে আর ফিরব না সে তো বলে দিয়েছি। আমার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না।”
“যা ভাবছ সবটা ভুল। আমার কোন সম্পর্ক নেই দিয়ার সঙ্গে।”
“তাই আমি চলে যেতেই ওকে ডেকে এনেছিলে বাড়িতে?”
“আমি ডাকিনি, বিশ্বাস কর।”
“দিয়া ফোনে শুনল আমি রাগারাগি করে তুতুনকে নিয়ে বেরিয়ে গেছি। অমনি নাচতে নাচতে চলে এল। সঙ্গে তোমার ডিনার। তুতুনের ফেভারিট টয় এঞ্জিনটা নিতে ফিরে না এলে তো জানতেও পারতাম না! অসহ্য।”
“আমি তুতুনকে ছেড়ে থাকতে পারছি না। অতবড় ফ্ল্যাটটা খাঁ খাঁ করছে। প্লিজ চল।”
“আমরা তো আগেও কথা বলেছি এটা নিয়ে। আমি ডিভোর্স চাই। তারপর তুমি দিয়াকে নিয়ে এস।”
“তাহলে ওটাই আসল কথা। দিয়ার কথাটা বাহানা! যে কোন ভাবে ডিভোর্স চাই তোমার্! আর তুতুন? আমি ওকে ছেড়ে থাকব কী করে?”
“তুমি আননেসেসারি ট্রাবল না তৈরি করলে তুতুনের ব্যাপারেও একটা এগ্রিমেন্ট করে নেব এমিকেব্যলি।”
“অসম্ভব। আমি তুতুনকে চাই। আমার কাছে।”
আর কোনো কথা না বলে রঙ্গনের দিকে একবার তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে বেরিয়ে গেলো সৃজা। হতবাক হয়ে বসে পড়ল রঙ্গন। ভাবছিল, সৃজা কি সত্যিই বোঝে না যে দিয়া শুধু একজন ভালো বন্ধু ছাড়া কিছু নয়! নাকি বুঝতে চায় না! দিয়া জানলে কষ্ট পাবে খুব!
ডোরবেলটা বাজতে দরজা খুলল শুভ।
“রোজ এক কথা আর ভালো লাগছে না । প্রত্যেক দিন স্টার্টিং ফ্রম স্ক্যোয়ার ওয়ান। মনে হচ্ছে না সহজে মিউচুয়াল ডিভোর্স দেবে।”
“বি পেশেন্ট সৃজা । অপেক্ষা করা ছাড়া তো উপায় নেই।”
“আমি যদি অ্যাডাল্টারির চার্জ আনি?”
“খুব ডিফিকাল্ট। প্রমাণ করা যাবে না। মিউচুয়ালি হলেই সব দিক ঠিক থাকে।”
“আর তুতুন? ওর কাস্টডি নিয়ে তো ঝামেলা করবে মনে হচ্ছে!”
“তুতুন ওর খুব দুর্বল জায়গা। ব্যাপারটা খুব ট্যাক্টফুলি হ্যান্ডল করতে হবে। রঙ্গনের সবকিছুতেই তো তুতুনের অধিকার। ভ্যালুয়েশনটা ভাবো! সব ছেড়ে দেবে!”
“কবে মিউচুয়াল ডিভোর্স দিতে রাজি হবে তার জন্যে অনন্তকাল বসে থাকব?”
“উপায় কী? দরকার হলে তুতুনের ব্যাপারেও সফট হয়ে, ও যেরকম চায় সেরকম ব্যবস্থা করতে হবে।”
“না তুতুনকে ছাড়ব না।”
শুভ এগিয়ে এল। হাত রাখল সৃজার কাঁধে।
“তাড়াহুড়ো করা যাবে না সৃজা। জোর করে কিছু করতে গেলে সব গোলমাল হয়ে যাবে। উকিলদের গাঁটে গাঁটে দুর্বুদ্ধি। উল্টে যদি তোমাকে চার্জ করে! শেষে দেখলে রাজপুত্তুর আমাদেরই রইল, ওদিকে রাজপুত্তুরের রাজত্ব হাতছাড়া ! ডিএনএ টেস্টের চ্যালেঞ্জটা তো আর অ্যাকসেপ্ট করা যাবে না!”