অনি বনি এমনিতে খারাপনা, কিন্তু ওদের কেমন একটা ধারণা হয়ে গেছে নিখিলেশ কে কেড়ে নিচ্ছে শ্রীময়ী। ভাইয়ের বউ যে বন্ধুও হতে পারে এটা যেন ভাবতেই চায়না। অথচ শ্রী ওদের প্রশ্রয় দিচ্ছে বেশি বেশি এইকথা শুধু সমু না মহেন্দ্রর কাছেও শুনেছে শ্রী। রোজ অফিস যাওয়ার আগে রান্না করে, ফিরে এসেও। কারণ ? অনি বনি রান্নার মাসির হাতের রান্না খেতে পারেনা; আর এতদিন তারা অনেক করেছে, এখন এই সংসারের বউ এসেছে অতএব এক কাপ চাও তারা করতে নারাজ। শ্রী হাসি মুখে ছেড়ে দিয়েছে ওদের। রান্না জানতো না, তবু এই কদিনেই বেশ শিখে ফেলেছে। অফিস ফেরতা প্রায়দিনই কিছু না কিছু নিয়ে আসে অনিবনির জন্য। তাদের শপিং, সাজের জিনিষের আবদার সব মেটায় শ্রী বিনিময়ে শুধু বন্ধুত্ব আশা করে সে। বিয়ের পর সেভাবে হনিমুনও হয়নি শ্রীদের; যেই শুনেছে মহেন্দ্র ছেলে ছেলের বৌকে ঘুরতে পাঠাচ্ছেন দুই বোনে এমন বাচ্ছাদের মতো কান্না, তাদের বাবা তাদেরকে এভাবে ঘুরতে পাঠায়নি বা নিয়ে যায়নি কোনো দিনও। সমুর আপত্তি সত্বেও শ্রী সঙ্গে নিয়েছিল ওদের। সেখানে গিয়ে অনিবনি এক ঘরে সমুরা আরেক ঘরে; এই ভাবে থাকায় কিছু অন্তরঙ্গ মুহূর্ত কেটেছে ঠিকই কিন্তু সারাক্ষণ একটা কান সজাগ থাকত, দুজন অবিবাহিত মেয়ে সারারাত ওই ঘরে, বিপদ আপদ নাহয়। নিশ্চিন্ত নিরবচ্ছিন্ন উপভোগ করতে তারা পারেনি।
শ্রীর জন্য কেউ কিছু কিনতে পারবেনা। নিখিলেশ, মহেন্দ্র তো নয়ই এমনকি আত্মীয় রাও কেউ একা শ্রী কে দিলে মুখ কালো হয় ওদের; কাউকে কাউকে বলে দিতেও ছাড়েনা। শ্রীও মানা করে, কাজেই আরওই পেয়ে বসছে অনিবনি। শ্রী বুঝেছে নিজেদের সংসার নাহলে বা নিজেদের একটা রিকগনিশন না পেলে অনিবনি ঠিক হবেনা। তবু রাগ করা শ্রীর ধাতে নেই, আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে বন্ধু হওয়ার। বিষয়টা না মহেন্দ্র না সমু কারোরই দৃষ্টি এড়ায়নি, কিন্তু অনিবনি কে যেন বদলানোই যাচ্ছেনা।
মহেন্দ্র যদিও সত্তরোর্দ্ধ কিন্তু নিজেকে বৃদ্ধ মানেননা। ওনার টানটান চেহারা এবং এখনো যে পরিমান সচল তাতে বৃদ্ধ বলাও ঠিক নয়। শ্রীকে রান্না শেখানোর মূলে উনিই; কতদিন উনি এসে সাহায্য করেন শ্রীকে তবু উদ্বুদ্ধ করতে পারেননি মেয়েদের। কে বলবে শ্রী আসার আগে এই মেয়েদুটোই গুছিয়ে রেখেছিল এই সংসারটা।
আজকের অ্যাক্সিডেন্ট এর মাস তিনেক আগে সুহৃদ হঠাৎ দুষ্টু বুদ্ধি দিয়েছিল ওদের। সে এখন আর একা নিখিলেশের বন্ধু নয় শ্রীময়ীরও দারুন বন্ধু শ্রীর কথায় "কৃষ্ণ সখা।" সমু শ্রীর বিয়েতে যেমন আনন্দিত হয়েছিল তেমনি অনিবনির এহেন আচরণে ব্যথিত হয়েছিল। সুহৃদের দুঃখ ছিল ওদের হনিমুন সেভাবে না হওয়াতে; শ্রী এডভেঞ্চার ভালবাসে, ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে অথচ বিয়ের পর থেকে কোত্থাও যায়না। কেমন হাসি মুখে মেনে নিছে মেয়েটা। ওদের আসন্ন বিবাহবার্ষিকী তে তাই সুহৃদের তরফের উপহার দুষ্টু বুদ্ধি। সুহৃদের এক মাসি থাকেন চন্ডিগড়। সুহৃদের মায়ের আপন বন নন কিন্তু কিভাবে যেন ওদের সাথে সুহৃদদের যোগাযোগ খুবই আছে।
মাসি, মেসো ওনাদের বিশাল বাড়িটাকে গেস্ট হাউস হিসাবে ভাড়া দেন। মাসি দারুন গুনি মহিলা, আজওগেস্টদের নিজের হাতে রেঁধে খাওয়ান; মেসো আর্মিতে ছিলেন অত্যন্ত্য পন্ডিত, অভিজ্ঞ, নিয়মমেনেচলা ব্যক্তি। সুহৃদের বক্তব্য পরিষ্কার এই ঠান্ডায় এমনিতে কেউ চন্ডিগড় বেড়াতে যায়না; এডভেঞ্চারের মন থাকলে সে হয়ত যাবে। অতএব সমুদের বিবাহবার্ষিকীর আসেপাশে ওদের দুজনেরই অফিসের কাজে বাইরে যেতে হবে আর যাবে ওরা চন্ডিগড়। সব যদি ঠিক থাকত আজ এই লুকোচুরির প্রয়োজন পড়তনা। একটু মন খচখচ করলেও সুহৃদের প্ল্যান অনুযায়ী গেছিল ওরা। মহেন্দ্রকে অবশ্য সত্যিটা জানিয়েছিল শ্রী; খুশিই হয়েছিলেন তিনি। অনি বনি সন্দেহের চোখে তাকালেও মেনে নিয়েছিল ওদের 'অফিসের কাজে' যাওয়া। দুজনে দুদিনে বেড়নোতে ব্যাপারটা আরওই বিশ্বাসযোগ্য হয়েছিল।
ওই সাতটা দিন স্বপ্নের মত কেটেছিল ওদের; চূড়ান্ত ঠান্ডা কিন্তু মাসির বাড়ির উষ্ণ অভ্যর্থনা যেন সেই ঠান্ডা গায়ে লাগতে দেয়নি। মাসিদের দেখে শ্রী সমু যেমন মুগ্ধ, তেমনি ওদের দেখেও মেসো মাসি। এমন মানাসই যুগল খুব কমই দেখা যায়। সুহৃদের কাছে শোনাই ছিল সব, সামনা সামনি দেখে যেন মায়া আরও উথলে উঠলো। অন্যান্য গেস্টদের ক্ষেত্রে মেসো সময়ের বেশ কড়াকড়ি করেন কিন্তু শ্রী সমুর জন্য সব মাফ। বিশেষ করে শ্রীর জন্য । চন্ডিগড় থাকার দিন কটা এত উপভোগ করেছে দুজনেই; কোনো চিন্তা নেই, ভাবনা নেই, তাড়া নেই শুধু পরস্পরের কাছে আসা আর কি দিন কি রাত এতদিনের জমে থাকা আদর। ঘরে আর বাইরে এত তফাত হয়ে যেতে পারে ওরা ভাবতেও পারেনি।
ঘুরে আসার পর দেখল অনি বনির কিছুটা হলেও পরিবর্তন হয়েছে; আসলে খুব মিস করেছে শ্রীকে। এখন ওরা ভাঙ্গে তবু মচকায় না। অনেক সময়েই কাজ করছে বা সাহায্য করতে যাচ্ছে কিন্তু সেটা সম্পূর্ণ নিজেদের মর্জি অনুযায়ী।
সেদিন সকাল থেকেই শ্রী কিছু একটা ফন্দি আঁটছে টের পেল সমু। ঘুরে আসার পর থেকেই যেন আরো দুষ্টু আর রহস্যময়ী হয়ে উঠেছে
"কি ব্যাপার বলত ?"
"চুপ চুপ, এখন বলতে পারবনা, আজ প্লিজ অফিস থেকে জলদি জলদি আসব; মানে তুমিও আসবে আমার সাথে" গলাটা একটু নীচু করেই বলল। সমু অবাক হচ্ছে
"কি এমন ব্যাপার যে, এত লুকোচুরি?" ইশারায় সমু কে চুপ থাকতে অনুরোধ করলো শ্রী।
অনি বনি নিজেদের ঘরে ছিল; শ্রী গিয়ে হাসি হাসি মুখে বলল
"বড়দি,ছোড়দি বলছি কি, তোমরা তো অনেকদিন শপিং যাওনি; আজ বিকেলে যাবে?"
"হঠাৎ?" একটু সন্দেহ হয়েছে ওদেরও।
"না, আসলে, আমরা তো সবাই-ই ধর চাইনিজ খেতে ভালোবাসি; অনেকদিন হয় ও নি তাই... ভাবছিলাম তোমরা বিকেলের দিকে শপিং গেলে, আর ডিনারটা নিয়ে আসো যদি" প্রস্তাবটা মনে ধরল বৈকি। অনি বনির জন্য কার্ডও করে দিয়েছে শ্রী।
"কার্ডটা আছে তো?"
"হ্যাঁ ,হ্যাঁ"
পুরো ব্যাপারটায় সমু অবাকও হলো একটু অভিমানও হলো। বাইকে উঠে অফিসের দিকে চলতে চলতে বলল
"আমায় বুঝি বলা যেতনা?"
"কি?"
"ওই চাইনিজ খাওয়ার ইচ্ছে হয়েছে"
"নাহ, বলা যেত; তবে ওটা তো... তুমি তাড়াতাড়ি আমায় নিয়ে ঘরে ফের তো, সবটা বুঝিয়ে বলতে পারব। বড়দি,ছোড়দি না থাকা কালীন বলতে হবে এটুকুও বুঝলে না?"
বিকেলে ওরা ফিরে দেখল অনিবনি নেই তখন; সমুকে মহেন্দ্রর ঘরে পাঠিয়ে দৌড়ে কোথায় গেল শ্রী। হাঁপাতে হাঁপাতে এসে গোটা দুএক ডায়েরি ধরালো মহেন্দ্রর হাতে
"এগুলো একটু পড়ে দেখনা" মহেন্দ্র ডায়েরি খুলে দেখেন ভর্তি কবিতা লেখা। সমুও বোঝে তবে মহেন্দ্রর মত অত কবিতার রসিক নয় সে। দুজনে দুটো ডায়েরি পড়তে লাগলো
"কিরে তুই আজকাল কবিতা লিখছিস? তাও এত সুন্দর?" মহেন্দ্র অবাক
"না গো, আমি নই, বড়দি"
"কে?" এক সাথে সমু আর মহেন্দ্রর প্রশ্ন
"বড়দি গো বড়দি"
"বলিস কি অনি এত ভালো কবিতা লেখে?"
"তবেই আর বলছিকি। আমি এই ঘুরে আসার পরে পরেই আবিষ্কার করি। আচ্ছা আমার একটা প্ল্যান এসেছে; কবিতা তো অনেক, একটা বই বের করলে কেমন হয়? আসলে বড়দির এমন একটা গুন, এটা দিয়েই তো ওনার দারুন নাম হতে পারে। আমি না, তোমাদের না বলে একটা কাজ করেছি; ছোড়দি তো অত ভালো ড্রেস বানান, আমার বিয়ের সব ড্রেস, সমুর বিয়ের ড্রেস সবই তো ছোড়দির ডিজাইন করা; তাই একটা দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে 'চন্দরা'স' বলে একটা বুটিক করার ব্যবস্থা করেছি। বেশ সাজানো টাজানোর কাজও শুরু করে দিয়েছি। আর ভাবছিলাম বড়দির জন্য কি করা যায়, তার মধ্যেই এটা পেলাম; তাই ভাবছি বই বের করার... শুধু একটাই অনুরোধ এগুলো কিন্তু ওদের জন্য সারপ্রাইজ থাকবে; কেমন?" মহেন্দ্র উঠে মাথায় হাত রেখে আশীষ দিলেন, মুখে কিছু বলার পেলেননা। কৃতজ্ঞতায় চোখে জল। একটু পরেই ফিরল অনি বনি প্রচুর শপিং করে ডিনার নিয়ে।
ডিনার সেদিন বেশ তাড়াতাড়িই সারা; যে যার ঘরে কাজেই শ্রীও গুটি গুটি পায়ে নিজের ঘরে। গিয়ে দেখে সমু স্বভাবসিদ্ধ উপুর হয়ে শোয়া মুখটা অন্য দিকে; ঘুমিয়ে পড়েছে ভেবে আস্তে করে পাশে শুয়ে পড়তে গেল শ্রী। ঝপ করে নিজের হাতের ওপর শুইয়ে নিল শ্রী কে।
"এ কি তুমি ঘুমাওনি?"
"কি করে ঘুমোবো?"
"কেন আবার নতুন করে কি হলো?" হাসছে শ্রী
"একটা মেয়ে এমন সাংঘাতিক একটা কাজ করেছে তার তো কিছু প্রাপ্য হয়, নাকি?" কপালে,গালে চুমো দিতে দিতে বলল সমু।
"কি করেছি আমি?" আদুরে গলায় চোখ বুজে আদর খেতে খেতে জিজ্ঞেস করে।
"আমরা সবাই শুধু দিদিদের বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবতাম; কোনদিন এভাবে ভাবিনি, যে ওদের যে গুন গুলো আছে সেগুলোকে কাজে লাগিয়েই ওরা দারুন ভালো থাকতে পারে। আমাদের সাথেই থাকবে অথচ নিজেদের আইডেন্টিটি নিয়ে। তুমি এটাই করলে শ্রী; দুটো দুঃখী মেয়েকে দারুন লাইফ দিলে।"
"ও, এই কথা? তুমি খুশি হয়েছ? দিদিরাও হবেন বলো?"
"হবেন বৈকি; তবে দিদিরা যতদিন জানতে না পারছেন, তত দিন দিদিদের ভাই হিসাবে আমিই কিছু করি" বলে নাক ঘষে, চুমো দিয়ে অস্থির করে তুলল শ্রীকে।
"হয়েছে, কাল অফিস নেই?"
"থাকলেও বা; আমার তো সারা রাত জাগতে ইচ্ছে করছে। নতুন করে একটা মেয়ের প্রেমে পড়লাম যে"
গতকাল অফিসে খুব চাপ গেছে নিখিলেশের, শ্রীও কিযেন বলছিল বাড়ি ফেরার পথে, শরীর ভালো লাগছেনা। ঘরে ফিরে সেই শ্রীকেই চা জলখাবার বানাতে হচ্ছে দেখে অনিবনি কে বলতে গেছিল সমু আর না পেরে; ওমা!!! শ্রী এসে কিনা উল্টে অনিবনির দলে যোগ দিল? সমু অবাক হয়েছিল খুব 'যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর?' সারাদিন পরিশ্রমের পরে এমন একটা ঘটনায় এতই বিরক্ত হয়েছিল যে, রাত্রে ঘুমোতে এসে শ্রী কিছু একটা দরকারী কথা বলতে চেয়েছিল; শোনার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে না থাকায় ঘুমের ভান করে পড়েছিল।
সকালে দেখে শ্রী জানি কোথায় যাচ্ছে; বাবার অনুমতিও নিয়েছে কারণ বাবা নিজেই ড্রাইভারকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, অনিবনিও কাঁচুমাঁচু মুখে উপস্থিত। তার মানে সমু ছাড়া সবাই জানে শ্রী কোথায় গেল আর কেনই বা গেল। এমনিই মুখচোরা তায় অভিমান জমে পাহাড় হলো; কাউকে তাই কিচ্ছুটি জিজ্ঞেস করলনা।
শুধু অন্যমনস্ক হয়ে ছিল আর তাই অমন বিশ্রী অ্যাক্সিডেন্ট টা হলো। কিছুই না এক বৃদ্ধা একটি ছোট বাচ্চা সহ এসে পড়ে তার বাইকের সামনে; এমনিতে সমু যথেষ্ট সাবধানী ড্রাইভার। ওদের বাঁচিয়ে টাল সামলাতে মাটিতে পা রাখতে গেছে, পা পড়েছে জল যাওয়ার একটা ভাঙ্গা ঝাঁঝরির ওপর। ব্যাস, পা ঢুকে গেছে ঝাঁঝরিতে উল্টে পড়েছে নিখিলেশ আর পায়ের ওপর ভারী বাইকটা। ভাগ্য ভালো অফিসের কাছেই হয়েছে; তাই লোকজন তাকে নার্সিংহোম নিয়ে যাওয়া, বাড়িতে খবর করা, অফিসে খবর দেওয়া সব করতে পেরেছে।
আধা তন্দ্রায় আধা জাগরনে টুকরো টুকরো মনে পড়ল সমুর; মাল্টিপল ফ্রাকচার হয়েছে, অপারেশন লাগবে এই অবধি মনে আছে তার। 'এতক্ষণে নিশ্চয়ই সব হয়ে গেছে; আচ্ছা শ্রী কি খবর পেয়েছে? এসেছে কি? ওই ভাবে চলে গেল কেন?' ভাবতে ভাবতে ওষুধের ঘোরে আবার ঘুমিয়ে পড়ল।
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গলো বেশ ব্যথা যন্ত্রনা নিয়েই কিন্তু কাঙ্ক্ষিত একটা মুখ দেখে কিছুটা বুঝি লাঘব হলো কষ্টের। শ্রী এসেছে, ব্যথা ভরা একটা মুখ আর টলটলে জল ভরা দুটো চোখ নিয়ে আস্তে আস্তে মাথায় হাত বোলাচ্ছে।
"খুব জোর বেঁচে গেছ; কষ্ট হচ্ছে? আরেকটু ঘুমিয়ে নাও সেরে উঠবে, পায়ে অপারেশন হয়েছে, এখন প্লাস্টার করা, ব্যথা হচ্ছে না খুব?" এক তরফা বলে যাচ্ছে শ্রী। সমুর কথা বলতেও যেন কষ্ট হচ্ছে; শুধু জল গড়িয়ে পড়ল চোখ দিয়ে; অনেক অভিমান জমা হয়ে আছে তার। শ্রীকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছিল 'কেন চলে গেছিলে? আমার অ্যাক্সিডেন্ট না হলে তো তুমি আসতেনা' আবার পরক্ষনেই মনেহলো 'আচ্ছা কি বলতে চেয়েছিলে রাত্রে? আমি শুনিনি তাই তুমি চলে গেছিলে?' জেগে থাকতে পারলনা বেশি সময়; তবে এখন খুব স্বস্তি হচ্ছে।
পরদিন একটু সুস্থ হতেই বাড়ি যাওয়ার জন্য বাচ্চাদের মত বায়না জুড়ল; শ্রী আসে হাত চেপে ধরল
"আমি আর থাকবনা, নিয়ে চলো আমায়, জানো রাত্রে আমার ঘুম হয়না" আজ লক্ষ্য করছে নিখিলেশ শ্রী শুধু মুখ চিপে চিপে হাসছে, গালের টোলটা বোধহয় আরও গভীর হয়েছে; আর এই সেই হাসি যেটা সমুর নেশা ধরিয়ে দেয়, ভুলে যায় কি বলছিল, কি করছিল। মাথায় হাত বুলিয়ে স্বান্তনা দিল শ্রী
"এইতো আর কটা দিন, ডাক্তারবাবু বললেই নিয়ে যাব"
"না আমি এখনি যাব"
"আচ্ছা সেদিন কার দিকে দেখতে গিয়ে এমন কান্ড ঘটালে বলোতো?"
"কাউকে দেখতে গিয়ে নয়, কেউ একজন চলে গেছিল, কোথায় যেন, আমায় কিছু না বলে, তাই" ঠোঁট ফুলিয়ে বলল সমু।
"কোথায় গেছিলে তুমি? আচ্ছা সেদিন রাত্রে কি একটা বলতে চাইছিলে খুব নাকি দরকারি..."
"ওমা!!! তুমি কি করে জানলে? তুমি তো ঘুমোচ্ছিলে"
"নাঃ! তুমি দিদিদের সাপোর্ট করায় আমার রাগ হয়েছিল; ঠিক রাগ নয় অভিমান। আর তাই ঘুমের ভান করে, সাড়া দেইনি"
"ঠিক আছে বাড়ি চলো, সব বলব; তোমায় বলব না তো কাকে বলব?"
"কবে যাব?"
"ব্যাস অমনি আবার?" চোখ বড় বড় করে কপট রাগ দেখায় শ্রী।
শনিবার বাড়ি ফিরে বড্ড আরাম পেল সমু। সুহৃদ ছাড়াও আরও অফিসের কয়েকজন দেখা করে গেল। দুই দিদি কেমন হাসি মুখে সবাইকে আপ্যায়ন করছে; সমুর দেখভাল করছে আগের মত, বরং সেইভাবে শ্রীকেই দেখলনা সারাদিন। সন্ধ্যেয় যেই শ্রী এসেছে হাত টেনে ধরল
"এখন আমি ছাড়বনা, আমার কাছে বসতে হবে; সারাদিন কোথায় ছিলে? বলতেই হবে সেদিন কোথায় গেছিলে? আর কি বলতে চেয়েছিলে? যার ফলে আজ আমার এই দশা" আবার ঠোঁট চেপে হাসে শ্রী
"আমার মায়ের ওখানে গেছিলাম; আর---" একটু থেমে হেসে বলল
"কি করে যে সামলাবো, একটা ধেড়ে, আর একটা পুঞ্চুনি" বলে সমুর মাথার চুল গুলো ঘেঁটে দিয়ে পালাতে যাচ্ছিল;সমু ধরে ফেলে অবাক এবং খুশির চোখে তাকিয়ে বলল
"আর ইউ স্যুর?"
"স্যুর হতেই তো গেছিলাম; সেদিন বললাম না শরীর কেমন লাগছে"
"ইস্স, এত্ত বড় খুশির খবরটায় নাচতে ইচ্ছে করছে আমার অথচ উঠে দাঁড়াতেই পারছিনা" বলে বুকের ভেতর টেনে নিল শ্রীকে।
দরজায় নক করে ঢুকলো অনিবনি; সন্ধ্যের চা জল খাবার নিয়ে। এখন থেকে শ্রী'র কাজ যত কমানো যায়। যেই মেয়েটা তাদের দুজনকে বিয়ে দিয়ে পরের ঘরে প্রতিষ্ঠা না করে আত্মসম্মানের সাথে সমাজে প্রতিষ্ঠা করেছে, তাদের হাঁটুর বয়সী হয়েও; নিখিলেশের অনুপস্থিতি তে কবিতার বই, খবরের কাগজে তার প্রশংসা; আর বুটিকের চাবি পেয়েছে দুই বোনে। আর আজ তাদেরকে নতুন একটা সম্পর্কের স্বাদ দিতে চলেছে পিসি হচ্ছে তারা, সেই মেয়ের মত ভালো বন্ধু আর কেউ আছে?