জমিজায়গা টাকাপয়সা আর ঝকঝকে একখানা বাড়ি । এর বাইরেও যে জীবন আছে বিকাশদা জানত না । একটি মাত্র পুকুর ছিল বিকাশদার । ঠিক পুকুর নয় । আমাদের আঞ্চলিক গোদা বাংলায় তার নাম ছিল শালুকগড়্যা । ক্লান্ত বর্ষণ শেষে ভাদ্র মাসের দুষ্টু রোদের আভায় ঝলমল করত সেই জলাশয় । তার তীরে বসে গম্ভীর মুখে বিকাশদা মাছ ধরত । নানা সাইজের মাছ । আমরা মাছের চেয়েও বেশি করে দেখতাম বিকাশ বিশ্বাসের মত মানুষটিকে ।তার কথা বলার ধরণ , মাছের চার ফেলার ভঙ্গি , লাটসাহেবি চালচলন , মাছ না পাওয়ার হতাশা কিম্বা আকস্মিক বড় মাছ পেয়ে যাওয়ার উল্লাস লিপিবদ্ধ করতাম আমাদের কমবয়সী চোখে ।গাছের পাতার ফাঁকে বৃত্তাকার আলো এসে পড়ত পুকুরে । হাততালি দিয়ে উত্তেজনায় বলে উঠতাম – দেখো বিকাশদা , কী অপূর্ব আলো ।অথবা পুকুরের জলে যখন স্থির প্রতিবিম্ব ভাসত আমাদের। সেই মৌন নীরব আয়নার দিকে তাকিয়ে বিস্ময়চিহ্ন ছড়িয়ে দিতাম – দেখো দেখো বিকাশদা তোমাকেও দেখতে পাবে জলে ।
বিকাশদা চুপ করে থাকত । কখনও সখনও উত্তর দিত – ওসব দেখার কি সময় আছেরে । দুটো মাছ ধরলে দশটা টাকা আসবে ।
* পয়সা ছাড়া তুমি কি আর কিছু বোঝো না ?
* বুঝি , জমি জায়গা ঘরবাড়ি ।
* তার বাইরে কোনও স্বপ্ন ?
একদিন অনেক পয়সা করবো । হাজার হাজার লোক সেলাম করবে
বিকাশদার বাবার নাম ছিল কালিপদ বিশ্বাস ।সবাই ডাকত কালু বলে । কালিবাবু বলে কাউকে কখনো ভুলেও ডাকতে শুনিনি ।কুঁজো হয়ে হাঁটত সবসময় । ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে থাকত । অঙ্কে শূন্য পাওয়া মানুষের মত চেহারা ।আপাদমস্তক ব্যর্থ অসফল । সেই কালু জেঠুর ছানি পড়া চোখে ছিল সবুজের সমারোহ । সারা দুনিয়াকে শ্যামল করার অঙ্গীকারে শক্ত হয়ে উঠত হাত । কেউ এর প্রশংসা করলেই কাঁচুমাচু হয়ে বলত – এ আর এমন কি ? আমি তো কিছুই পারিনা । আর মনের মধ্যে চলত অন্য বিক্রিয়া – পৃথিবীর প্রানবায়ু কমে যাচ্ছে মানুষ বাঁচবে কি করে ? তার ছিল গাছ লাগানোর বাতিক । এক চিলতে ফাঁকা জায়গা পেলেই নিত্য নতুন চারা এনে পুঁতে দিত সেখানে । স্নেহে আর মমতায় ভরিয়ে তুলত গাছেদের ।
মুখোমুখি ঘর ছিল আমাদের । মাঝখানে স্যাঁতস্যাঁতে সরু রাস্তা । কাদায় ঢেকে যেত বর্ষাকালে। সেই রাস্তায় যে কতবার পিছলে পড়েছি তার হিসেব মেলা দুস্কর । বিকাশদার মাকে অনুমাসি বলে ডাকতাম আমরা । মায়ের সাথে অনুমাসির ছিল গলায় গলায় ভাব ।যেদিন আমাদের বাড়িতে পায়েস রান্না হত , মা বলত – শুভ, যা তো বিকাশকে একবাটি পায়েস দিয়ে আয় । ছদ্মরাগে ফেটে পড়ত অনুমাসি – রুমি টার কোনোদিন জ্ঞান গম্যি হবেনা, এত পায়েস কেউ পাঠায় । তোরা খেয়েছিস তো বাছা ? ঠিক সেভাবেই অনুমাসি আমাকে দিয়ে যেত ছোলার ডাল বা পটলপোস্ত । গরমের দুপুরে যখন আমরা লুডো খেলতাম আর মা অনুমাসির উকুন বেছে দিত। তখন অনেক প্রানের কথা হত মা আর অনুমাসির মধ্যে ।যার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতাম না আমরা । এক নির্জন নিরালায় গড়ে উঠেছিল তাদের বন্ধুত্বের জগত । মাঝে মাঝে রাগ অভিমান ও কম হত না । একদিন মাকে দেখতে না পেলে ছটফট করত অনুমাসি ।
* তোর শরীর ভাল আছে তো রুমি ? সকালে দেখিনি যে ।
-আমি তো ঠিকই আছি । তোমার মুখটা শুকনো লাগছে কেন অনুদি ?
তারপর মা অনুমাসির পেট থেকে কিল মেরে বার করে আনত কত গোপন কথা । সারাদিন না খেয়ে বা শুধু জল খেয়ে কাটানোর নির্মম ইতিহাস । শাশুড়ির সাথে চরম ঝগড়ার খবর ।
-তুমি আমাকেও লজ্জা পাও অনুদি । এটা রাখো বলে মায়ের জমানো টাকা অনুমাসির হাতে তুলে দিত মা , কতবার । কতবার ।
বিকাশদার বোন টুসকি । সে আমাদের সাথে পড়ত ।পোলিওতে আক্রান্ত হওয়ার জন্য একটা পা টেনে টেনে অনেক কষ্টে হাঁটত । প্রায়ই যেতে পারতোনা ক্লাসে। প্রতিদিনের পড়া বুঝিয়ে দিয়ে আসতে হত আমাকেই । সন্ধ্যেবেলা ছাড়া আমার কোনো অবকাশ ছিল না ।ওই সময় টুসকির সাথে অনেক কথা হত আমার । ওর যন্ত্রনা দুঃখ বিপন্নতা ছায়া ফেলত মনের গভীরে । অভাব আর দারিদ্র ঘেরা বাতাবরণের মধ্যে দাঁড়িয়ে টুসকি যখন বলত- আমার খুব মরে যেতে ইচ্ছে করে , শুভ ।
* অমন কথা মুখেও আনবি না একদম ।
-কি লাভ বেঁচে ? এই ঘৃণা আর অবজ্ঞার ভেতর । আমি তো বাড়তি এক বোঝা ।
একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে দেখে নিস । সবকিছু... বলে পকেট থেকে ঠাকুরের প্রসাদ আর ফুল ওর হাতে দিয়ে বলতাম – আমাদের মত গরীবদের তো এসবই ভরসা ।
আমাদের চোখের জলে বর্ষা আসত । বিকাশদা মেতে উঠত পুকুরটা ভর্তি করার জন্য । কিন্তু কোনোমতেই পেরে উঠত না । পুকুরটা ছিল অদ্ভুত । জমি থেকে অনেক উঁচুতে ছিল তার অবস্থান ।বহমান জল সেখানে পৌঁছতে পারত না ।
-দেখছিস পুকুরটাকে । অনন্ত তৃষ্ণা নিয়ে বসে আছে । কোনোদিন দিন ওর পেট ভরবেনা ।
আমি মাথা নাড়তাম আর দেখতাম অসীম মমতা আর হার্দিক শ্রমে বিকাশদা পুকুর ভর্তি করছে জলে । জলাশয়ের চারপাশে অনেক গাছ । নানা রঙের পাখি এসে বসত সেখানে। আলোহীন এক ভীরু অন্ধকারের ছায়া পড়ত পুকুরের জলে ।এক সুন্দর মায়াবী জগত । যা ছিল বিকাশদার নিজের পৃথিবী । অল্প অল্প করে আমিও ঢুকে পড়ছিলাম সেই পরিমণ্ডলে আর দেখছিলাম চারদিক। কথায় কথায় বিকাশদা একদিন বলেছিল-এই পুকুরটাই আমার সব । আমার স্বপ্ন, ভালবাসার দুনিয়া । গাছগুলো আমার ভবিষ্যৎ । গাছে আর মাছেই তো টাকা রে শুভঙ্কর । সেরকম ভাবে চাষ করতে পারলে একদিন কত উপরে উঠে যাব ।
দুই
মাধ্যমিকে তিনবার ফেল করার পর পড়াশোনা ছেড়ে দিল বিকাশদা । অনেক অনুরোধ করলাম আমরা ।কিন্তু কে কার কথা শোনে । বিকাশদার সেই এককথা- তোরা আমার হাঁটুর বয়সী তোদের সাথে পরীক্ষা , নেভার । তার চেয়ে গলায় কলসি বেঁধে মরাই ভাল ।
এরপর থেকে ঐ ছোট পুকুরটাই হয়ে উঠল তার ধ্যানজ্ঞান । তার একান্ত আশ্রয় । জলাশয় ঘিরে চারপাশে যে ভূমিখণ্ড যেখানে কালুজেঠুর হাতে তৈরি হওয়া গাছের ছায়া । সেই ছায়ার মধ্যে তার খেলার মাঠ । সুন্দর এবং অনিবার্য এক খেলায় মেতে উঠল বিকাশদা । গাছ লাগানোর খেলা । মাছ তৈরির ক্রীড়াভূমি তৈরি হল পুকুরের জলে । সেখানে হাজার মাছের অবাধ সাঁতার ।এইসব দেখতে দেখতে আলো বাতাস ও এক জলজ ভালোবাসায় নিবিড় হয়ে উঠল তার দুনিয়া ।
মাঝে মাঝে আমরা তার কাছে যেতাম । আমি মৈনাক আর শম্ভু । মৈনাক কথা প্রসঙ্গে বলেছিল – তোমাদের গাছগুলো দারুন । এই বিউটির জন্যই তো বারবার এখানে আসি ।
* বিউটি দিয়ে পেট ভরেনা মৈনাক।
* মানে ?
-ওসব বট অশথের কোন দাম নেই , ওগুলো কেটে দামি গাছ লাগাবো ।
-তোমার বাবার স্মৃতি ।
-নিকুচি করেছে স্মৃতির
- কোনও সেন্টিমেন্টাল ভ্যালু নেই এই শিকড় এই মাটির ?
-ওসব ছেঁদো আবেগ প্যানপ্যানানি আমার নেই । আমার মধ্যে খিদে আছে , পেটে জ্বলন্ত আগুন ।আগ্নেয়গিরি ।
এরপর আর কোন কথা হত না । পুকুরটার দিকে চেয়ে চেয়ে ফুরিয়ে আসত বিকেল ।ফড়িং উড়ে যেত জলের উপর ।মাছেরা খেলত জলের নীচে ।
-কি সুন্দর সুন্দর মাছ পুষেছ তুমি দেখেও মন ভরে।
-মাছ আমি পুষি নি রে , ওরাই আমাকে পুষছে পালন করছে এক নির্মম সত্যকে ।
এরমধ্যেই টুসকি একদিন আমাদের ছেড়ে চলে গেল ।অনুমাসি খুব কেঁদেছিল ।মা ও । আমি লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদতে গিয়ে বিকাশদার হাতে ধরা পড়েছিলাম – দূর বোকা , কাঁদতে নেই ।মানুষ তো একদিন মরবেই । আমি চমকে উঠি
* বেঁচে থেকেই বা কি করত বল ?
* তুমি একথা বলছ বিকাশদা ?
* হ্যাঁ , আমিই বলছি ।
আমি স্থির তাকিয়েছিলাম শূন্য দিগন্তের দিকে । যেন আমার সামনে কোন মানুষ নেই। আর ভাবছিলাম শোকবর্জিত এক পাথরের অবয়ব । যেখানে খনন চালিয়েও উঠে আসবেনা টান মায়া স্মৃতি কিম্বা অশ্রুপাত ।
-টুসকিটা মরে আমাকে বাঁচিয়ে দিয়ে গেছে, শুভ ।
আমার চোখের পাতায় তখনও দাগ । বিকাশদা বলে চলেছে
- বিশ্বাস কর ওর বিয়ে দিতে পারতাম না । সে অনেক টাকার ব্যাপার । আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনি অনেক ঘৃণা নিয়ে উঠে এসেছিলাম । আত্মসর্বস্ব এই লোকটা কোনোদিন চিনবেনা দুনিয়ার রঙ ।দেখতে পাবেনা গাছের ছায়ার নীচে ফড়িঙের ধ্যানমগ্ন ঘুম । শুনতে পাবেনা অপূর্ব আঁধার রাতে ডাহুকের ক্লান্ত আর করুণ আওয়াজ । সে কিভাবে অনুভব করবে প্রতিটি সম্পর্কের ভিতরে নিঃশব্দে শিশির ঝরে পড়ে ।
এরপর রাগে আর কোনোদিন বিকাশদার মুখোমুখি হইনি ।কলেজে ভরতি হওয়ার পর দ্রুত ফুরিয়ে যেতে লাগল সময় ।পুজোতে বাড়ি এলে অনুমাসির সাথে দেখা করতে যেতাম । ওদের বাড়িটা খাঁ খাঁ করত ।খাপছাড়া কিছু গল্প হত সেরকম জমাট বাঁধত না আসর । ধূসর ছায়াপথে ঘুরতে ঘুরতে ফুরিয়ে যেত সবকথা ।মায়ের কাছে শুনতাম নানা গল্প ।বিকাশদার দ্রুত উত্থানের কাহিনি ।আক্ষেপের সুরও শুনতাম – অণুদির খুব কষ্ট ।
* সে কি? চমকে উঠতাম আমি
* হ্যাঁ পেট পুরে খেতে পায় না বেচারা, শাড়ীগুলো ছেঁড়া ।
* তবে যে বললে বিকাশদার অনেক টাকা ।
-সে তো বিকাশের । ব্যঙ্কে সুদে আসলে বাড়তে থাকে ।গোপন দীর্ঘশ্বাস মায়ের আঁচল থেকে ঝড়ে পড়ত । আমি স্পষ্ট দেখতে পেতাম ।
তিন
আমাদের কৈশোরের দিনগুলো ম্লান হয়ে আসছিল । রুমালে গিঁট দিয়ে বেঁধে রাখা টিনএজ বয়স টুপ করে পড়ে গেছে কোথায় ।বদলে যাওয়া চারপাশ ।কাদামাখা পথও রূপসী হয়ে উঠছিল ।তার জায়গা দখল করে নিচ্ছিল বিটুমিনাসের রাস্তা । ভুবন ময়রার মিষ্টির দোকান ভেঙে তৈরি হচ্ছিল পঞ্চবটী গেস্টহাউস । মফঃস্বলের গন্ধ মুছে গ্রামটার পেটে ঢুকে যাচ্ছিল নাগরিক হাওয়া । চেনা মানুষগুলোও পাল্টে যাচ্ছিল দ্রুত । যেন এটাই স্বাভাবিক রীতি । কেউ কাউকে নিয়ে এখন আর মাথা ঘামায় না । বিপদেও পাশে দাঁড়ায় না । এক ব্যক্তিগত খোলসের মধ্যে সুখযাপন পর্ব ।
তবু অভ্যেস বশত বিকাশদার বাড়ি যাওয়া আসা থামেনি আমাদের ।আমি মৈনাক আর শম্ভু তিনজনে মিলে অনেক গল্প হয় ।ভবিষ্যতের গল্প। আলো অন্ধকারের গল্প ।দিশা খুঁজে পাইনা ।চারপাশের সবকিছুই আসতে আসতে ছোট হয়ে যাচ্ছে ।কোন ঋজু
বৃক্ষ নেই শুধু বনসাই । নিজের পুকুরটাকে আরও অনেক জলে ভর্তি করার এক আত্মঘাতি খেলা চলছে । প্লাবনের অপেক্ষা ছাড়া উপায় নেই ।
চার
এরপরই মৈনাকের রোগটা শুরু হল । ডাক্তার বলল- ব্লাড ক্যানসার । দুরারোগ্য । অনেক টাকার ব্যাপার । শম্ভু ছুটে এসেছিল আমার কাছে – কিছু একটা করতেই হবে শুভ
আমি শম্ভুর কাঁধে হাত রেখেছিলাম – সব ঠিক হয়ে যাবে দেখে নিস
জানি এ শুধু কথার কথা ।এতে চিড়ে ভেজেনা ।তবু এই কথাগুলি বলা ছাড়া আমার আর কোন উপায় ছিল না ।
কল্পনা আর বাস্তবের টানাপোড়েন যখন চলে তখন মানুষ এভাবেই হয়ত কোনো নাতিশীতোষ্ণ আশ্রয় খুঁজে নেয় । নির্বোধ ভাঙচুর চলে মনের মধ্যে
-বিকাশদাকে ধরলে হয় না ?জিজ্ঞাসা নয় প্রস্তাবের আকারে কথাটা বলেছিল শম্ভু ।আমি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসেছিলাম ।তখনও বুঝতে পারিনি বিকাশদা কখন এসে দাঁড়িয়েছে সবার অলক্ষে ।অনেকদিন পর বাইরে বৃষ্টির মেঘ জমছিল ।ঝমঝম শব্দ হচ্ছিল বুকের মধ্যে ।মৈনাকের কাঁধে হাত রেখেছিল বিকাশদা –আমি তো আছি । দরকার হলে আমার পুকুর ঘরবাড়ি জমানো সব সঞ্চয় শেষ করে দেব ।
আমি চমকে উঠেছিলাম । বাইরে বজ্রপাতের তীব্র শব্দ । নিজের অজান্তেই বেরিয়ে এসেছিল কথাগুলো –
মানুষ তো একদিন মরবেই...।
* মারব টেনে এক থাপ্পড় ।
আমি বিকাশদার দিকে চেয়ে থাকি ।ওর চোখে জল । বাইরে অঝোর বৃষ্টি । আমি নিঃশব্দে ধুয়ে ফেলি চোখ ও গালের আবর্জনা ।বিকাশদা মৈনাকের হাত নিজের মুঠিতে ধরে রাখে । চোখ দুটো চিকচিক করে এক অপূর্ব আলোয় । এই প্রথম বিকাশদার সেই পুকুরটি জলে ভরে ওঠে কানায় কানায় ।