থিম চেতন দূর্গা
আজ দশমী। আমাদের পাড়ার পুজোর থিম ছিল লাইভ ঠাকুর। মোড়ের মিষ্টির দোকানের ময়রা হয়েছিল গনেশ, বলিউডের স্বপ্নে বিভোর ঋত্বিক হয়েছিল কার্তিক, পাড়ার হার্টথ্রব চিনির বোন মিনি হয়েছিল সরস্বতী, দয়াশঙ্করবাবুর স্ত্রী মাদূর্গা, মিষ্টির দোকানের কালু অসুর; অনেকটা ‘গণেশের সঙ্গে অসুর ফ্রি’ স্টাইলে আমরা ওকে পেয়েছিলাম। লক্ষ্মী পাওয়া দুষ্কর দেখে প্রচুর তেল আর কাঠখড় পুড়িয়ে চিনিকেই রাজী করানো হয়েছিল।
আজ ঘট বিসর্জন হলেই মুক্তি। যা ঝামেলার কাজ! এদিকে ভোম্বল কাল রাত থেকে দেবদাস হয়ে আছে। এখন সব ঝক্কি থেবুর আর আমার। থেবু আমার বন্ধু, ছোটবেলায় থেবড়ে থেবড়ে বসত বলে এমন নাম ওর। আসলে এই পুজোটা আমাদের পাড়াটার মতই নতুন। শহরতলি যখন দিনেদিনে বেড়েছে তখনই বৃহৎ একান্নবর্তী পরিবারের মত গজিয়েছে এই রবীন্দ্রপল্লী।
‘পাড়াতে একটা পুজো হবে না!’ এই পাবলিক ডিমান্ডে বয়োজ্যেষ্ঠ দয়াশঙ্করবাবু পরপর তিনবছর পুজো পরিচালনা করে গতবার হাত গুটোলেন। হাল ধরলাম আমরা ক’জন ছেলেছোকড়া। দেখলাম বাজেট কমানোটাই আসল চ্যালেঞ্জ। ‘চেতন দুর্গা’ নামটা তখন আমারই উর্বর মাথা থেকে বেরিয়েছিল।
সপ্তমী নির্বিঘ্নে কাটলেও ঋত্বিকের বাইসেপ্স বা সিক্সপ্যাকের প্রদর্শনী আর চিনিকে ঝাড়ি মারা আমাদের মনে জ্বালা ধরাল। অষ্টমীতে দয়াশঙ্করবাবুর দুর্গাপ্রতিমার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থাকা দেখে সবাই হেসে এ ওর গায়ে গড়িয়ে পড়ল।
নবমীর সন্ধ্যারতি হতেই ঝাঁপ পড়ে গিয়েছিল। সবাই ক্লান্ত। সবে গড়িয়েছি, ভোম্বলের ফোন। মিনি ঘরে ফিরলেও চিনি ফেরেনি। চিনির মা’র ফোন পেয়েই ভোম্বল বুদ্ধি করে ঋত্বিককে ফোন করেছিল। সুইচ অফ। বাড়িতেও নেই। মানে দুয়ে দুয়ে চার। ছুটে বেরিয়ে গেলাম আমি। ভোম্বলরাও এল। সবার কি রাগ! এসবের জন্যে দায়ী নাকি পুজোর থিম, পরোক্ষে আমি! ‘সত্যিই পালাল নাকি!’ অথবা ‘কোথায় খুঁজবো’ এইসব সাতপাঁচ ভেবে যখন পাগল পাগল অবস্থা, ঠিক তক্ষুনি অন্ধকার ফুঁড়ে বেরিয়ে এল একটা সাইকেল।
‘সামনে চিনি না ?’ আমরা চেঁচালাম।
ঋত্বিক সিট থেকে নেমে আগ বাড়িয়ে বলল, ‘কিছু প্রণামীর টাকা ঝেঁপেছিলাম। সুযোগ বুঝে ফুচকা খাইয়ে আনলাম।’ চিনি যেন ওর সম্পত্তি এমন ভাব দেখিয়ে, চোখ মটকে ঋত্বিক আবার সাইকেলের প্যাডেলে চাপ দিল। অন্ধকারে মিলিয়ে গেল দুজন।
ভোম্বল দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল, ‘তাই বলে একবারে সামনে বসিয়ে...।’
...