গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বৃহস্পতিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১৫

নীতা মণ্ডল


থিম চেতন দূর্গা

আজ দশমীআমাদের পাড়ার পুজোর থিম ছিল লাইভ ঠাকুরমোড়ের মিষ্টির দোকানের ময়রা হয়েছিল গনেশ, বলিউডের স্বপ্নে বিভোর ঋত্বিক হয়েছিল কার্তিক, পাড়ার হার্টথ্রব চিনির বোন মিনি হয়েছিল সরস্বতী, দয়াশঙ্করবাবুর স্ত্রী মাদূর্গা, মিষ্টির দোকানের কালু অসুর; অনেকটা গণেশের সঙ্গে অসুর ফ্রিস্টাইলে আমরা ওকে পেয়েছিলামলক্ষ্মী পাওয়া দুষ্কর দেখে প্রচুর তেল আর কাঠখড় পুড়িয়ে চিনিকেই রাজী করানো হয়েছিল
আজ ঘট বিসর্জন হলেই মুক্তিযা ঝামেলার কাজ! এদিকে ভোম্বল কাল রাত থেকে দেবদাস হয়ে আছেএখন সব ঝক্কি থেবুর আর আমারথেবু আমার বন্ধুছোটবেলায় থেবড়ে থেবড়ে বসত বলে এমন নাম ওর আসলে এই পুজোটা আমাদের পাড়াটার মতই নতুনশহরতলি যখন দিনেদিনে  বেড়েছে তখনই বৃহৎ একান্নবর্তী পরিবারের মত গজিয়েছে এই রবীন্দ্রপল্লী
পাড়াতে একটা পুজো হবে না!এই পাবলিক ডিমান্ডে বয়োজ্যেষ্ঠ দয়াশঙ্করবাবু পরপর তিনবছর পুজো পরিচালনা করে গতবার হাত গুটোলেন হাল ধরলাম আমরা জন ছেলেছোকড়াদেখলাম বাজেট কমানোটাই আসল চ্যালেঞ্জচেতন দুর্গানামটা তখন আমারই উর্বর মাথা থেকে বেরিয়েছিল

সপ্তমী নির্বিঘ্নে কাটলেও ঋত্বিকের বাইসেপ্স বা সিক্সপ্যাকের প্রদর্শনী আর চিনিকে ঝাড়ি মারা আমাদের মনে জ্বালা ধরালঅষ্টমীতে দয়াশঙ্করবাবুর দুর্গাপ্রতিমার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থাকা দেখে সবাই হেসে ওর গায়ে গড়িয়ে পড়ল

নবমীর সন্ধ্যারতি হতেই ঝাঁপ পড়ে গিয়েছিলসবাই ক্লান্তসবে গড়িয়েছি, ভোম্বলের ফোনমিনি ঘরে ফিরলেও চিনি ফেরেনিচিনির মা ফোন পেয়েই ভোম্বল বুদ্ধি করে ঋত্বিককে ফোন করেছিলসুইচ অফবাড়িতেও নেইমানে দুয়ে দুয়ে চার ছুটে বেরিয়ে গেলাম আমিভোম্বলরাও এলসবার কি রাগ! এসবের জন্যে দায়ী নাকি পুজোর থিম, পরোক্ষে আমি! সত্যিই পালাল নাকি!অথবা কোথায় খুঁজবোএইসব সাতপাঁচ ভেবে যখন পাগল পাগল অবস্থা, ঠিক তক্ষুনি অন্ধকার ফুঁড়ে বেরিয়ে এল একটা সাইকেল
সামনে চিনি না ?’ আমরা চেঁচালাম

ঋত্বিক সিট থেকে নেমে আগ বাড়িয়ে বলল, ‘কিছু প্রণামীর টাকা ঝেঁপেছিলামসুযোগ বুঝে  ফুচকা খাইয়ে আনলাম’ চিনি যেন ওর সম্পত্তি এমন ভাব দেখিয়ে, চোখ মটকে ঋত্বিক আবার সাইকেলের প্যাডেলে চাপ দিলঅন্ধকারে মিলিয়ে গেল দুজন
ভোম্বল দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল, ‘তাই বলে একবারে সামনে বসিয়ে...।
...