গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বুধবার, ৭ জানুয়ারী, ২০১৫

দীপঙ্কর বেরা


পাখির বাসা


পিছনের দিকে আমগাছে বেশ কয়েকদিন ধরে গোপলা লক্ষ্য করেছে টিয়া পাখি বাসা    করেছেআমগাছটা তাদের নয়এখন প্রায় শীত কমে আসছেআমে বকুলও আসে নি  বাসায় টিয়া ডিম পেড়েছে কি না  ,না উঠলে জানা যাবে নাগোপলা এর আগে গাছে ওঠার চেষ্টা করেছে তাতে হাবু , পেলা ,মৌ , তাপা এমন হেসেছিল যেন মনে হয় গোপলার  গাছে রস পাড়া আঁকা ছবিটার মতগাছে মানুষ না অন্য কেউ  উঠছে না ঝুলছে বোঝার উপায় নেই

তাপসদা কি সুন্দর প্রায়ই গাছে উঠে যায়তাই তাকে ধরেছিল - তাপসদা আমাকে গাছে ওঠা শেখাবেতাপসদা খুব হেলাফেলা  গুরুত্ব দিল নাএমন ভাবে বলল - এইভাবে এখানে চেপে ধরে উপরে দেখে নীচে একেবারে না তাকিয়ে উঠবিআর ভঙ্গি করে গোপলাকে কাতুকুতু দিতে লাগল । - কি ব্যাপার গাছে কেন ? আদিবাসীদের মত গাছে উঠে বিয়ে করবি নাকি ?  আরও এমনসব বলতে লাগল যে গোপলার কান লাল হয়ে গেল

ওর মা প্রায়ই বলে - আমার সোনার গোপালআমরা এবার একটা পাখি পুষবএকেবারে সবুজআমাদের জীবনও হয়ে খুব সবুজ সবুজ  গোপলা ভাবল সবুজ মানে টিয়াতা এনে মাকে একেবারে তাক লাগিয়ে দেবেঅন্য কাওকে বললে সে নিয়ে নিতে পারেতাই কাওকে বলা চলবে নাপ্রাইমারিতে মিড ডে মিল খেয়েই ছুটি  ফিরেই সে প্রায়ই গাছটার কাছে গিয়েছেহ্যাঁ অনেক পাখির সাথে টিয়াটা প্রায়ই থাকে আর কিচমিচ করেবাচ্চা আছে কি না কিছুতেই ঠাহর করতে পারল নাখুব একটা উঁচু নেইওঠা যাবেতবে কবে ওঠা যায়একাফাঁকা দেখে

ভাবতে ভাবতে সময় কাটছেসামনের রবিবারের দুপুরে প্রায় অনেকে এই হাল্কা গরমে বিশ্রাম নেয়চাষের কাজ কম থাকেগোপলা মার পাশ থেকে  আধো ঘুম থেকে উঠেই ছুটে পৌঁছে গেলএদিক ওদিক দেখতে দেখতে বুকটা ধড়াস ধড়াস করতে লাগলনা আজকে উঠতেই হবে  কিছু পাখি আছেটিয়া দেখা যাচ্ছে না
গাছটা বেড় দিয়ে ধরা গেলহাতে হাতে ঠেকে নি  তবে তাপসদার মত উঠতে লাগলকয়েকবার পরেই একটা শক্ত ডাল হাতে পেলধরেই ফেললতাতে চাপ দিতেই আমগাছের বাকলে গেঞ্জিটা গেল ছিঁড়েবাবা এবার পুজোয় অনেক কষ্ট করে মার পছন্দ মত কিনে দিয়েছিলদাম বেশি পড়েছিল বলে বাবা মা কিছু নেয় নিতা হোক পাখির ছানা দেখলে মা কিছু বলবে না তাই গোপলা পা তুলে উপরে উঠে পড়ল

বুকের ধড়াস ধড়াস কমে গেছেআর একটা ডাল পেরলেই সে যেন এভারেস্টে উঠতে পারবে এমন ভাব করে উপরে ডাল ধরে উঠে গেলআরো দু বার উঠেই প্রায় পাখির বাসার কাছে পৌঁছে গেলঅন্য পাখিরা গাছের দোলায় খুব খুব কিচিরমিচির করছে  গোপলা ঝোপের মত আমগাছের অভীষ্ট বাসার পৌঁছে গেল  জয় সে জয় করে ফেলেছেএবার পতাকা পুঁতবেদেখে বাসায় কয়েকটা পালক আর কিছু ডিমের   খোসানেড়ে ঘেঁটে দেখল যদি কোথাও পাখির বাচ্চা থাকেনা কোথাও নেই

মনটা বিষাদে ভরে গেলমাকে কি দেখাবে ? এবার নীচে তাকিয়ে দেখে মাটি অনেক নীচেকি করে নামবে ? তাপসদাকে জিজ্ঞেস করা হয় নি কিভাবে নামতে হয়হাতের ডালটা আরো চেপে ধরলমুখ দিয়ে একটা চিৎকার বেরিয়ে এল কিন্তু কেউ শুনতেই পেল নাযদি পড়ে যায় বিজন মাস্টার মশাইয়ের দেওয়া বুদ্ধির অঙ্ক সে ছাড়া ক্লাসে আর কে করব ? মার পাশে বসে রামায়ণের অন্যরকম ছড়ায় বলা গল্প কে শুনবে ? বাবার হাত ধরে বাজারে গিয়ে আলু সবজি কেনা দেখার মজা কে নেবে ?

ভাবতে ভাবতে নীচে দেখা গেল তাপাকেঁদে কেঁদে বলল – এই , আমাকে একটু নামিয়ে দে না আমি তোকে বড় মাঞ্চ দেবসে ভূত দেখার মত করে খুব চিৎকার জুড়ে পালিয়ে গেল  গড়িয়ে পড়া রোদ ভরা দুপুরে ধীরে ধীরে লোক জড় হলমৌ , হাবু পেলা এমন কি মা এসে গেলসবাই গোপলার কান্নায় খুব মজা করছিলমৌ-এর সামনে গোপলার প্রেস্টিজ পাংচার হয়ে গেল  কিন্তু গোপলার মা বুঝে তাপসদাকে বলতে সে সিঁড়ি দিয়ে ওঠার মত উঠে গোপলাকে হাসতে হাসতে ধরে নামিয়ে আনতে সাহায্য করলতাপসদা বলতে লাগল – কবে বড় হবে ?  থর থর করে কাঁপছ কেন ? এইটুকু গাছে উঠতে পার না ?   আর কেন উঠেছিলে  ?
গোপলা কোন উত্তর দেয় নিএমন কি রাতে বাবার বকা সত্ত্বেও  মার পাশে বসে চুপ করে নিজের কৈশোর পরখ করছিল