
আমদানী - রপ্তানী
উচ্চ বংশজাত বংশলোচন বংশ পরম্পরায় হংস ব্যবসায়ী । বংশলোচনের বাবা
বংশীবদন সংসার বন্ধন ছিন্ন করে সংসারত্যাগী হয়ে কোন নিরুদ্দেশে চলে গেছে, অনেক চেষ্টা করেও বংশলোচন তার কোন সন্ধান পায়নি ।
অগত্যা সব আশা ত্যাগ করে সে জাত - ব্যবসায় মন লাগাবার চেষ্টা করে । সংসারে আপনার
বলতে তার মা আর এক ছোট ভাই ।
সংসার ছোট হলেও সেই সংসারকে টেনে নিয়ে চলাও প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে তার পক্ষে ।
বাপের আমলে হাঁসের অনেক কদর ছিল । হাঁস মাংস আর হাঁসের ডিম খুব বিক্রী হত ।
আশপাশের পাঁচ - সাতটা গ্রামে হাঁসের জমজমাট বাজার ছিল । কিন্তু যখন থেকে মানুষের মুরগী - প্রীতি দেখা দিল, ধীরে ধীরে হাঁসের চাহিদা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকায়
বংশলোচনের আর্থিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে লাগলো । এই সঙ্কট থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার
জন্য সে নানা উপায়ের কথা ভাবতে লাগলো, কিন্তু
কোন আশার আলো দেখতে পেল না ।
সব কিছু ধ্বংসের মুখে বংশলোচনের সাথে হঠাৎ একদিন কান্দীগ্রামের
ফন্দীবাজ ছোকরা ফটিক নন্দীর দেখা হয়ে গেল , সাত
সকালে নদীর ধারে । সে তখন সাইকেলে চড়ে পাশের গ্রামে তার এক সাগরেদ মাইকেলের কাছে
যাচ্ছিল নিজের ধান্দায় । বংশলোচনের সামনা সামনি হতে সে জিজ্ঞেস করে , " কি ব্যাপার বংশ , হংস ব্যবসা কেমন চলছে ?"
---- আর বলোনা ভাই, সব
উচ্ছন্নে গেছে । হাঁসের আর বাজার নাই । যেদিকে তাকাই
শুধুই অন্ধকার । বাঁচার পথ খুঁজে পাচ্ছি না ।
---- তাই নাকি, কিন্তু লাকি যে বলছিল তোমার
রমরমা অবস্থা ।
---- ছিল, এখন আর নাই । বাপটা কোথায়
উবে গেল । দুমুঠো খাবার জোগাড় করারও
সংস্থান নাই । এক এক সময় গলায় দড়ি দিয়ে মরে যেতে ইচ্ছে
করে আমার ।
---- মরেও কি শান্তি আছে ? আর
তাছাড়া মরতেই বা যাবে কেন ? তার চেয়ে এক কাজ
করো, এই
ব্যবসা ছেড়ে তুমি আমার রাস্তায় নেমে পড় -- দু পয়সা রোজগার হবে
আবার ঝামেলাও কম ।
---- কি ব্যবসা তোমার আর আমাকেই বা কী করতে হবে ?
---- আমার ব্যবসায় সামান্য রিস্ক যে নেই তা বলবো না, তবে মূলধন লাগাবার কোন
ব্যাপার নাই । শুধু বুদ্ধি লাগিয়ে গায়ে গতরে খাটা ।
---- একটু বুঝিয়ে বলো কাজটা কী করতে হবে ।
---- খাসা কাজ --- আমদানী রপ্তানীর ব্যবসা ।
---- তুমি বললে মূলধনের কোন ব্যাপার নাই, কিন্তু আমি তো শুনেছি আমদানী রপ্তানীর ব্যবসায় প্রচুর
মূলধন লাগে ।
---- আচ্ছা বাবা, আচ্ছা
-- সে ভাবনা তোমার নয় -- তুমি আমার দলে যোগ দাও, তোমার
কোন মূলধন লাগবে না । দু পয়সা কামাও, তোমার সংসারটা বাঁচুক ।
ফটিকের পরামর্শ বংশলোচনের মনঃপুত হওয়ায় আর কথা না বাড়িয়ে সে তার
দলে যোগ দিতে সম্মত হল । রাত্রে তার সাথে দেখা করতে বলে ফটিক সাইকেল চেপে চলে গেল
। তারপর থেকে কিভাবে কি হল কেউ জানে না, তবে
দেখা গেল বংশলোচন সর্বদাই ভীষণ ব্যস্ত । কালক্রমে সবাই লক্ষ্য করলো তার সেই আগের
দশা আর নাই -- তার অবস্থার উন্নতি হয়েছে, খাওয়া
পরার ঠাট বদলেছে, শরীরে একটা চাকচিক্য ভাব
দেখা দিয়েছে । অবস্থা তার যে বেশ ভালই পালটেছে, তা
তাকে দেখে,
তার চালচলন থেকে এবং তার
কথাবার্তার ভাবভঙ্গি দেখে বেশ অনুমান করা যাচ্ছে । তবে এটা পরিষ্কার যে ও ফটিকের
সাথে ব্যবসায় নেমেছে এবং তা থেকেই ওর এই উন্নতি । কী এমন ব্যবসা শুরু করলো সে যে
এত তাড়াতাড়ি তার অবস্থার এমন পরিবর্তন ? এ
ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসা করলে কিছু বলা তো দূরের কথা, সে মুখে একদম কুলুপ এঁটে রাখে । অনেক জেদাজেদি করলে বলে, " ঐ একটা ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করেছি " । তার কথা কেউ
বিশ্বাস করে,
কেউ করে না । কাছে দূরের মানুষের
মনে সন্দেহ দানা বাঁধে, ' বেটা
চুরি চামারি করে না তো '? লোকে
কী ভাবলো আর কী বিশ্বাস করলো, তাতে
তার কী আসে যায় ? তার তো দু পয়সা ভালই আমদানী
হচ্ছে এবং সংসারটাও একটু সুখের মুখ দেখতে পাচ্ছে ।
কিন্তু পরস্রীকাতর হরিদাস পাতর বংশলোচনের ভবকিতে ভোলার পাত্তর নয় ।
এই হরিদাস লোকটি অসম্ভব ধুরন্ধর এবং ধান্দাবাজ । সত্যি কথা ভুলেও বলে না । লোক
ঠকিয়ে সংসার চালায় আর পরের ভাল দেখলে রাগে ফুঁসতে থাকে । কেউ উন্নতি করে দু পয়সা রোজগার করলে, সমাজে প্রতিষ্ঠা পেলে সে হিংসায় জ্বলতে থাকে । এই হরিদাস পাতর মনে
মনে দৃঢ় নিশ্চয়,
বংশলোচনের ব্যবসা-ফ্যবসা সব বাজে কথা । ও নিশ্চয় কোন কালা ধান্দায়
নেমে পড়েছে,
তা না হলে এত শিগগির এত উন্নতি
কারও হয় ? এ কী আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ ? হরিদাস মনে মনে প্রতীজ্ঞা করে যে ভাবেই হক তার আসল
রহস্যটা জানা চাইই চাই । পরের দিন থেকেই সে রহস্যানুসন্ধানের কাজে লেগে যায় ।
চেষ্টা থাকলে কী না হয় । কথায় বলে, কষ্ট
করলে কেষ্ট মেলে । তাই সে একদিন জেনে যায় বংশলোচনের জীবিকার সন্ধান । নিজের
টিকটিকিগিরির সফলতায় নিজেকেই ধন্যবাদ দেয় আর মনে মনে বলে , " বাঃ রে আমি " ।
সত্যি অদ্ভুত ব্যবসা বটে বংশলোচনের । আমদানী-রপ্তানীই বটে । একজনের
বাড়ী থেকে জিনিষ চুরি করে নিয়ে আসা, মানে
আমদানী আর সেই চোরাই জিনিষ অন্য কাউকে বিক্রী করে দেওয়া, মানে রপ্তানী । হ্যাঁ, এই রকমই তার ব্যবসা, রমরমিয়ে
চলা আর তরতরিয়ে বেড়ে ওঠা । আবার এই ব্যবসা থেকে তার উপরি আয়ও ছিল । অভিনব
ব্যাপারটা । তার এই ব্যবসা আর অভিনবত্বের কিছু নমুনা পেশ না করলে গল্পটা আর গল্পই
হবে না ।
এখানে একটু বলে রাখা দরকার যে এই বংশলোচন লোকটি স্বভাবগত ভাবে
অত্যন্ত রসিক এবং পরিহাস প্রিয় । এমন সব আজগুবি গল্প সে বলতে পারতো যে তা শুনে
হাসতে হাসতে মানুষের পেটে খিল ধরে যাবার জোগাড় হত । যত রাগই হক তার উপর , তেড়ে গিয়েও তাকে কেউ কিছু বলতে পারত না । তার ঐ নিরীহ
গোবেচারা মুখটার দিকে তাকিয়ে সব রাগ গলে জল হয়ে যেত । তাই তার ঐ চুরির কথা ও অভিনব
কায়দা কৌশলের কথা জানার পরও তারা হা-হা করে হাসতো । তাদের প্রতিক্রিয়া --- "
এই না হলে বংশ " ? তারা আবার অবসর সময়ে বংশ কে
ডেকে তার চুরির ঘটনা শুনতো আর খুব মজা পেতো । আসলে ফটিক নন্দী ছিল নিখাদ চোর এবং
ধরা পড়ে বহুবার সে জেলও খেটেছে । কিন্তু বংশলোচন চুরির সাথে রস মিশিয়ে মানুষের
বিনোদনের খোরাক হয়ে উঠেছে এবং পরবর্তীকালে তার চুরির কাহিনী রূপকথায় পরিণত হয়ে
গেছে ।
বংশলোচন প্রতি রাত্রে বেরোত চুরি করতে । ব্যাপারটা এই রকমের ছিল --
প্রথমে সে,
ধরুন, যেত জেলে পাড়ায় । সেখান থেকে একটা মাছ ধরার জাল চুরি
করতো । তারপর সেই জাল দিয়ে গ্রামের যে কোন পুকুর থেকে মাছ চুরি করে সেই মাছ পরের
দিন বাজারে বিক্রী করে মোটা টাকা রোজগার করতো, আবার
জালটাকেও অন্য কাউকে কম পয়সায় বিক্রী করে দিত । যার জাল চুরি যেত, সে সোজা বংশ কে গিয়েই পাকড়াও করতো কারণ তার ভালই জানা
ছিল যে এ কাজ তার ছাড়া আর কারও হতে পারে না । বংশ প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে বাধ্য
হয়ে মেনে নিয়ে বলতো ------
-------- যদি দশটা টাকা দাও, জালটা
ফেরত পাবে ।
-------- আগে ফেরত দে, তারপর
পয়সা পাবি ।
-------- তা হবে না -- ফেলো কড়ি, মাখো
তেল । এটা আমার ব্যবসার উশুল ।
অগত্যা তাকে দশটা টাঁকা গচ্চা দিতেই হত, না হলে সে আর জাল ফেরত পাবে না, ভাল করেই জানতো । বংশ বলতো, " কাল সকালে জাল ফেরত পেয়ে যাবে "। এবার মজাটা হল, ঐ জালটা সে যাকে বিক্রী করেছে, রাত্রে তার বাড়ী থেকে আবার সেটা সে চুরি করে এনে আসল
মালিককে ফিরিয়ে দিত । আবার ধরুন কারও বাড়ী তৈরি হচ্ছে, মিস্ত্রী
নতুন নতুন সব দরজা জানালা তৈরি করেছে, বংশ
তার মধ্যে দামী একটা দরজা চুরি করে কাউকে মোটা টাকায় বিক্রী করে দিল আবার মালিকের
কাছ থেকে টাকা নিয়ে পরের রাতে ঐ দরজা চুরি করে তাকে ফেরত দিয়ে দিল ।
এই ভাবেই চলছিল এবং বংশলোচন বেশ ভালই টাকা পয়সা রোজগার করছিল ।
মাঝে মধ্যে আবার ফটিক নন্দীর দলের সাথে বড় রকমের চুরি চামারি করেও তার বেশ ভাল
আমদানী হত । মজা করে মৌজ মস্তিতেই বংশ দিন কাটাচ্ছিল । কিন্তু একদিন মোক্ষম ঘটনাটা
ঘটে গেল । হঠাৎ একদিন দেখা গেল গ্রামের হাই স্কুলের অফিস ঘরের দেওয়ালে টাঙ্গানো বড়
ঘড়িটা চুরি হয়ে গেছে । হেডমাস্টার মশায় সাধারণ চুরির ঘটনা মনে করে এ নিয়ে আর বেশী
নাড়াচাড়া করেননি । সাত আট দিন পর একদিন হেডমাস্টার মশায় গ্রামে তাঁর এক বন্ধুর বাড়ী বেড়াতে গেছেন । লিভিং রুমে বসে বন্ধুর সাথে
গল্প করতে করতে হঠাৎ তাঁর চোখ পড়ে যায় দেওয়ালে টাঙ্গানো ঘড়িটায় । তিনি চিনতে পারেন
ঘড়িটা তাঁর স্কুলের । কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হলেও তিনি বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেন সমস্ত
জড়তা ঝেড়ে ফেলে ----
-------- ঐ ঘড়িটা কবে কিনলে ? সাত
আটদিন আগে আমার স্কুলের ঘড়িটা চুরি হয়ে গেছে। এই ঘড়িটা হুবহু সেটার মত দেখতে ।
-------- আরে এটা স্কুলের ঘড়িটা নাকি ? আমি
তো সাত আটদিন আগে বংশলোচনের কাছ থেকে পঞ্চাশ টাকায় এটা কিনেছি ।
বংশলোচনের ব্যাপারটা হেড মাস্টার মশায়ের ঠিক জানা ছিল না কারণ তিনি
অন্য শহর থেকে এখানে এসেছেন । বন্ধুর কাছে তিনি বংশলোচনের সমস্ত কীর্তিকলাপ শুনে
অবাক হয়ে গেলেন । যাই হক বন্ধুকে পঞ্চাশ টাকা দিয়ে ঘড়িটা নিয়ে এসে যথাস্থানে
সেটাকে টাঙ্গিয়ে দিলেন । দু চার দিন পর ছুটির দিন হেড মাস্টার মশায় বংশলোচন কে
ডেকে পাঠালেন । বিনয়ের অবতার বংশলোচন তাঁর সামনে হাতজোড় করে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো
----
-------- আমাকে ডেকেছেন স্যার ?
-------- তুমি স্কুলের ঘড়িটা কেন চুরি করলে বলতে পারো ?
-------- কি যে বলেন স্যার, আমি
কি এ কাজ করতে পারি ?
-------- আচ্ছা, দেখাচ্ছি মজা । মনোজ, তোমাকে বংশলোচন পঞ্চাশ টাকায় ঘড়িটা বিক্রী করেনি ?
-------- হ্যাঁ, করেছিল ।
-------- গোবিন্দ বাবু, আমার
নাম করে থানায় ফোন করে বড় বাবুকে একটু আস্তে বলুন তো ।
-------- আপনার পায়ে পড়ি স্যার, এমন কাজ করবেন না -- ধনে প্রাণে মারা যাবো । এবারের মত ক্ষমা করে
দিন স্যার,
আর কক্ষনো, কোনদিন এমন কাজ করবো না ।
-------- তুমি চোর, তাই
বলে স্কুলের ঘড়িটা চুরি করতে তোমার লজ্জা হল না ? এত অমানুষ তুমি ?
-------- ঘড়িটা চুরি করার কথা কখনও ভাবিনি । আর তাছাড়া ওটা চুরি
করার কোন মতলবই আমার ছিল না, সত্যি
বলছি ।
-------- তবুও তুমি ঘড়িটা চুরি করলে । কেন চুরি করলে বলতো ?
-------- সেদিন রাত্রে আমি জেলে পাড়া থেকে একটা মাছ ধরার জাল
চুরি করে ইশকুলের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম বোস বাবুর পুকুরে মাছ চুরি করতে । এমন সময়
ইশকুলের ঘড়িটায় ঢং ঢং করে বারোটা বাজলো । ঘড়ির ঐ আওয়াজটাই কাল হল । ঐ আওয়াজটা কানে
যেতেই মনে হল,
আরে বাঃ, ঘড়িটা চুরি করলে কেমন হয় ? যেই ভাবা অমনি কাজ । কিছুতেই আর লোভ সামলাতে পারলাম না
। এবারের মত আমাকে ক্ষমা করে দিন স্যার।
-------- হয় তুমি জেলের ঘানি টানবে, নয়
কোনদিন আর এ রকম কাজ করবে না, মানে
চুরি করা ছেড়ে দেবে । কোনটা তোমার পছন্দ নিজেই ঠিক করে নাও ।
-------- স্যার আমি সত্যি সত্যি চুরি করা ছেড়ে দিতে চাই, কিন্তু আমার সংসারটার কি হবে ? না খেতে পেয়ে উপোষ করে মারা যাবো ।
-------- গতর আছে, খেটে খাও ।
-------- কোথায় কাজ পাবো আমি ? কে
আমায় কাজ দেবে স্যার ?
-------- আমি দেবো । কাজ করবে তুমি ?
-------- তাহলে তো বর্তে যাই ।
-------- ঠিক আছে, কাল থেকে তুমি আমার স্কুলের
মালির চাকরিতে যোগ দাও । রোজগার যদিও একটু কম, তবে
যদি বে-হিসেবি না হও, তাহলে ঠিকই চলে যাবে তোমার
সংসার । যদি রাজী থাকো তো আমায় এক্ষুনি জানাও ।
-------- হ্যাঁ স্যার, আমি
রাজী ।আমি এবার থেকে সৎভাবে বাঁচতে চাই ।
-------- ঠিক আছে, কাল থেকে তোমার চাকরি পাকা
।
অতঃপর বংশলোচন তার
আমদানি-রপ্তানির ব্যবসার পাট চুকিয়ে স্কুলের চাকরি নিয়ে সুখে সংসার করতে লাগলো ।
এক কথায় তার নব জীবন প্রাপ্তি হল । তার অভিনব চুরির কায়দা- কৌশল এখন রূপকথা । মনে
করে সে নিজেও হাসে ।