গল্পগুচ্ছতে প্রকাশিত লেখার বিষয়ভাবনা বা বক্তব্যের দায় লেখকের । সম্পাদক কোনভাবেই দায়ী থাকবেন না ।

বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৪

সোনালী মিত্র


সময়গ্রন্থি

বেশ কয়েক বছর পর দেশে ফিরছে শুভ্রা । হাওড়া মুখি ট্রেনটায় বসে মনে হয় এত তাড়াতাড়ি না ফিরলেই হত ,আরো কয়েকটা বছর সে দিব্যি দিল্লীতেই কাটিয়ে দিতে পারত।যখন কলকাতায় ছিল ভগবানের কাছে বারংবার প্রার্থনা করে গেছে তার সদ্য বিবাহিত জীবন একমাত্র সুখের হতে পারে যদি দেশের বাইরে চলে যায় ।আর ভগবান ও তেমন নিষ্ঠুর নয় বোধহয় । স্বামীর ট্রানেস্ফার হয়েছে কলকাতা থেকে ১৭০০ শো কিলোমিটার দূরেই । আচ্ছা দূরে চলে গেলেই কি মন থেকেও কাউকে দূরে সরিয়ে দেওয়া যায় ? ''কফি কফি ম্যাম কফি লি জিয়ে ''-- ,ডাক শুনে হোঁচট খেল চিন্তা এমন ই হয় আজকাল , মাঝে মাঝেই কিছু ফেলা আসা স্মৃতি ফিরে ফিরে আসে চোখে চোখেই ।হয়ত বা বাস্তব কে দেখার জন্য চোখ বন্ধ করার দরকার পড়ে না । জানলা থেকে চোখ ফেরাতেই চোখে পড়ল পাশের সিটের বাচ্চাটি ভারি মিষ্টি, ছোট্ট ছোট্ট দু টো হাত দিয়ে ওর মায়ের গলা জরিয়ে ধরে কিসি করছে । চোখটা জ্বলে ওঠে তাড়াতাড়ি ল্যাপটপে চোখ রাখে ওদের দিক থেকে চোখ সরিয়ে ।তার নিজের ও তো এমন টা হতে পারত , হয়নি । হয়ত ভগবান শাস্তি দিয়েছেন তার পাপের

পাপ,পাপ ঠিক কোনটা ? আট বছর আগে সে যা করে গেছে সেটা নাকি আজ ও যা করে চলেছে সেটা ? রজত তো তাকে কম ভালবাসে না , তবে সে ভালবাসায় কোন উষ্ণতা নেই ,কোন চাওয়া পাওয়া নেই ।কিন্তু জোর করেই শুভ্রা এটা ভেবে ভাল থাকে যে ভালবাসাটা আছেই , না হলে এতগুলো বছর কি ভাবে তারা এক সাথে আছে ?

ট্রেন একদম রাইট টাইমে চলছে । পাশের ভদ্রলোক বেশ জোরে জোরে কাকে যেন ফোনে কিসব বলছেন । ট্রেন ও বড় তাড়াহুড়ো করে ছুটছে যেন তার প্রেয়সী তার অপেক্ষায় ।এসব ভেবে নিজেই হেসে ফেলে শুভ্রা । প্রেয়সী! প্রেম ! এসব নামে ঘেন্না ধরে গেছে । এককালে সেও যথেষ্ট সুন্দরী ছিল , অঢেল প্রেমের ফুল তার পায়ের কাছে গড়াগড়ি খেয়েছে। যখন ইচ্ছে হয়েছে কোন ফুলের গন্ধ নিয়েছে , দূর থেকেই নিয়েছে , ফুল হাতে তুলে পর্যন্ত নেয়নি । যখন ক্লাস নাইনে পড়ত তখন আলাপ রজতের সাথে।বাবা ঠিক করে দিয়েছিল টিউশন টিচার বাড়ি এসে ভাইকে আর তাকে পড়াবে । প্রথমে শুভ্রার খুব গোঁসা হয়েছিল। নাইন মানেই তার সব বন্ধুরা মজা করে স্যারের বাড়ি পড়তে যাবে আর তাকে কোন বুড়োর কাছে বাড়ি বসে পড়তে হবে। কিন্তু সে দিন সন্ধ্যায় যখন রজত এলো তাদের বাড়ি শুভ্রার দারুণ লাগলো নতুন স্যারকে ।খুব ভাল পড়ান , ভাল বোঝান , তার চেয়েও ভাল স্যার এক দম বন্ধুর মত হয়ে মেশেন আর মেরেকেটে শুভ্রার চেয়ে বছর পাঁচেকের বড় হবেন ।ব্যাস সদ্য ফোটা ফুল কোথা থেকে যে কি হল শুভ্রার মন বাধা পড়ল রজতের মনে।

দিদি ব্যাগটা একটু সাইড করুন আমারটা বের করব । শুভ্রার চটক ভাঙে , ট্রেন ও তবে হাওড়া ঢুকল! বাবার নিতে আসার কথা আছে । শুভ্রা তাড়াতাড়ি নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নেয়।ওই তো বাপি ট্রেন থামতেই ধীরেসুস্থে নামে , যদিও কিন্তু মনটা অনেক আগেই লাফ মেরে নেমে গেছে ।যেন ছুটছে আর যেন তর সয় না।বাপি ব্যাগ গুলো নামিয়ে নেয় সাথে সাথেই কাটোয়া লোকাল।ট্রেনটায় বেশ ভিড় আছে । কিন্তু এক পরিচিত থাকায় শুভ্রা জানলার ধারেই জায়গা পেয়ে যায়।আর বাপি মনের আনন্দে তার পরিচিতের সাথে বকতে থাকে

এত বক বক কর না তো ।হ্যাঁ , এভাবেই বলে থামিতে দিত তমালকে শুভ্রা ।রজতের সাথে প্রেমের বেশ কিছু বছর কেটে যাওয়ার পর তমাল এসেছিল শুভ্রার জীবনে একদম বিনা নোটিশেই। শুভ্রা গান শিখত সেখানেই তমাল ও গান শিখত।দারুণ দেখতে ছয় ফুট হাইট ,খুব ফরসা , ঠোঁট টা বেদানার মত লাল ।চোখে কি আছে কে জানে ! সব মেয়েই ওর প্রেমে পড়ে।মানে গানের স্কুলে ১৪থেকে ৪২ সবাই ওর প্রেমিকা।শুভ্রা কোন দিনও ফিরেও তাকায় নি আসলে একজন তো আছেই যে ওকে ভালবাসে , তাই আর কিছু চাইনি সে। কিন্তু ছেলেটি শুভ্রার অহংকার মেনে নিতে পারেনি দিন যেতে লাগলো সে শুভ্রার কাছে পৌছাতে মরিয়া হয়ে উঠল।

এক দিন গানের স্কুলে আসার পর জানতে পারল বাস ট্রেন সব বন্ধ বাবাও বাড়ি নেই ফিরবে কি করে ! ত্রাতার ভূমিকায় এগিয়ে এলো তমাল , --- চল আমি বাইকে করে দিয়ে আসছি
-না আমি একাই চলে যেতে পারব
-আরে সব বন্ধ যাবে কিভাবে ?এখন রাগ করার সময় নয়।রাত হয়ে যাবে একটু পরেই তখন কি করবে এতটা রাস্তা । চল
-তোমার বাইকে চেপেছি জানলে আবার বাবা আমায় খুন করে ফেলবে।
-উফ , আগে বাড়ি তো পৌঁছাও তবে তো খুন।চল মাথায় ওড়না জরিয়ে নাও।

সত্যি কিছু করার ছিল না সে মুহূর্তে ।যে ছেলের বাইকে ওঠার জন্য মেয়েরা মুখিয়ে থাকে , সে ছেলেই আজ তাকে সাধছে পায়ে ধরে।মাথায় ওড়নাটা ঢেকে শুভ্রা বাইকে চড়ে বসে।

কিছু টা যাবার পর তমাল বাইকের স্পিড কমিয়ে দিয়ে বলে-
-শুভ্রা , কয়েক দিন ধরেই তোমায় একটা কথা বলব ভাবছি কিন্তু সাহস জোটাতে পারছি না
-আমায়?কি কথা?
- হ্যাঁ তোমায়। আমি পাগলের মত তোমায় চাই । তোমায় ভালবাসি আমি।
- হা হা হা এ বেশ বলেছ তমাল দা।তুমি তো রোজ কোন না কোন মেয়েকে বলছ ভালবাস।এ আর নতুন কি আমার এই কথা শুনে কোন এফেক্ট হল না।
- প্লিজ ,প্লিজ তুমি বিশ্বাস কর আমি যে দিন থেকে তোমায় দেখেছি সে দিন থেকেই তোমায় ভুলতে পারছি না সব মেয়েরা যেখানে আমার জন্য পাগল, তুমি আমায় এত ইগ্নোর কি করে কর !আমি অবাক হয়ে গেছি
- ও আচ্ছা তবে পুরুষ অহং এ লেগেছে ?যে কোন মেয়ে তোমায় পাত্তা দিচ্ছে না ? আর সেটাই তুমি মেনে নিতে পারছ না। কারণ শুভ্রা ভাল করেই জানে বড় লোকের বখে যাওয়া সন্তান বলতে যা বোঝায় তমাল তাই।
- না শুভ্রা না তোমায় বোঝাতে পারছি না সব মেয়েদের থেকে তুমি আলাদা।তোমার মধ্যে অন্য কিছু আছে যেটা আমায় টানে।আমায় রাতে ঘুমতে দেয় না,আমায় শান্তি দেয় না।
-প্লিজ তমালদা থাম।তোমার এই ন্যাকা ন্যাকা কথা অন্য মেয়েদের শুনিও তারা আত্মহারা হবে আমি নই। বাইক থামাও আমি নেমে যাব।
- নেমে কোথায় যাবে এই মাঝ রাস্তায়?
-যেখানেই যাই অন্তত তোমার সাথে যাব না।
-না আমি থামাবো না, তুমি নামবেও না আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে যদি তুমি আমায় ভাল না বাস তুমি কারোর হবে না।আজ দু জনেই মরবো।
হঠাত করে তমাল গাড়ির স্পিড ভীষণ রকম বাড়িয়ে দেয়।
-কি হচ্ছে , এটা হচ্ছে টা কি? কেন এ রকম পাগলামি করছ?আমি কারো বাগদত্তা।সে আমাকে , আমি তাকে ভালবাসি।আমি তোমায় ভালবাসতে পারব না।
- আমি এত কিছু জানি না শুভ্রা তুমি যদি আমায় না হও তুমি আর কারো ও হবে না।আজ মরবই দু জনে।বল ভালবাস কি না?
সাংঘাতিক ভাবে বাইকের মিটার কাটা ঘুরছে মনে হচ্ছে সত্যি আজ জীবন শেষ।
- হ্যাঁ বাসি বাসি অনেক অনেক বাসি প্লিজ তুমি শান্ত হও ।
ব্রেক কষে তমাল দাড়িয়ে পড়ে। কাঁধে রাখা শুভ্রার হাত টা টেনে এনে কিস করে।
এই প্রথম বার কোন পুরুষ ঠোটের স্পর্শ পেল শুভ্রার নারী দেহ ।প্রেম রজতের সাথে এত বছরের কিন্তু কোন দিন রজত শুভ্রাকে ছোঁয় নি।এত ভাললাগা লুকিয়ে থাকে কোন পুরুষ স্পর্শে!

হুড়মুড়্ করে কিছু লোক নেমে গেল ট্রেন থেকে , .ও তবে ব্যান্ডেল এসে গেছে !চিন্তার অবকাশে ছেদ পড়লো বাবা যেন অনেক রোগা হয়ে গেছে আগের থেকে।অনেক দিন ঠিক করে দাড়িটাও কামায় নি। এখনো মনে হয় পুরোনো অভিমান টা ভুলতে পারে নি ? তাই ওই টুকিটাকি কথা ছাড়া আর কিছু জানতেও চায় নি।হুইসেল দিয়ে ট্রেন ছেড়ে দিল।

ট্রেনের দুলুনি তে আমার ভিষণ ঘুম পায় জান শুভ্রা । কিন্তু তোমার মত সুন্দরী পাশে বসে থাকলে নিদ্রা দেবীকেও আসিও না বলতে ইচ্ছে করে ,বলে হো হো করে হেসে উঠেছিল তমাল
-সব লোক তাকাচ্ছে কি হচ্ছে কি ?গাল লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছিল শুভ্রার
আসলে রজত অনেক সংযমী ,শিক্ষিত , মেপে কথা বলে ভবিষ্যৎ চিন্তা করে । আর অনেক বেশি মার্জিত ভাল সুপাত্রের বিচারে রজত একদম ফিট ।তার একটা উজ্জ্বল আগামী ও আছে।আর তমাল বড় বাপের একমাত্র ছেলে বি এ কমপ্লিট করে নি তার আগেই বাবার ব্যাবসায় ঢুকে গেছে ।হুল্লোরবাজ প্রাণ শক্তিতে ভরপুর একটি মানুষ , যে কোন কষ্ট কে যেন নিমেষে ছু মন্তর করে দিতে পারে শুভ্রা অবচেতন যেন নেশার মত টানে তমালের দিকে , অথচ কোন ভাবেই জীবন থেকে রজত কে অস্বীকার করার উপায় নেই অচীন প্রান্তরে বাইকে তমালের সাথে হারিয়ে যেতে যে অনুভূতি কাজ করে রজতের সাথে জীবনের সফল সমীকরণে সে আবেশ কোথায়!
এক অসম্ভব দোটানা ময় জীবন পরিত্রানের উপায় নেই অথচ শুভ্রা ভালবাসাটা ঠিক কি নিজেও বোঝে না।রজত নিরাপদ আশ্রয় কিন্তু ভালবাসা কি ?তমাল উচ্ছ্বল জীবন ভালবাসা কি ? কুরে কুরে খেতে থাকে এই প্রশ্ন বার বার। ঠকাচ্ছে নিজকে আর ওই দুটি ছেলে কেও।
মা একটু চা খাবি? বাপির ডাকে চোখের কোণে জমা জল রুমালের খুটে মুছে নেয় শুভ্রা।
- না ইচ্ছে করছেনা তুমি খাও
বাপির পরিচিত লোকটা তার ছেলের বিয়ের গল্প করছে , বিয়ের দিন নাকি মেয়ে অন্য জনের সাথে পালিয়ে যাওয়ায় বাড়ির পাশের মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে দিতে হয়েছে । এই কথাটুকু শুভ্রার কানে যেতেই মনে পড়ে গেল-

হঠাত করে তমালের মা অসুস্থ হওয়ায় তমালের বিয়ের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে ওর বাড়ির লোক । এ দিকে শুভ্রার তখন বি এ ফাইনাল ইয়ার । তমাল চেয়েছিল বিয়ে করতে শুভ্রা কে।কিন্তু সে ভালবাসারর দাম দিতে পারেনি , শুভ্রা সেই মুহূর্তে ভীষণ রকম স্বাথবাদী হয়ে উঠেছিল। মনের দোলাচালে এক বান্ধবী কে বলেছিল-
-আচ্ছা বলত লক্ষী বড় না স্বরস্বতী বড় ?
বান্ধবী হেসে বলেছিল বুঝেছি কেন বলছিস। দেখ স্বরস্বতী থাকলে লক্ষী দেবী আসবেন কিন্তু লক্ষী থাকলেও স্বরস্বতী আসবে না এখন

কথাটা শুভ্রার মনে গেঁথে গিয়েছিল।সে তমাল কে উপেক্ষা করতে শুরু করেছিল। সামনে রজতের এক দারুন চাকরী স্থিতিশীল জীবন

অথচ তমাল এক গর্বিত পুরুষ , সব অহং ছেড়ে পা ধরেছিল পর্যন্ত শুভ্রার । ছেড়ে যেও না আমায় , আমি বাঁচব না তোমায় ছেড়ে
-কি পাগলামি করছ তমাল , আমার এখনো পড়া শেষ হয় নি আমি চাকরী করতে চাই নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।এখনি আমার পক্ষে বিয়ে অসম্ভব।
-বিয়ের পর কর পড়া , শেষে চাকরী করতে চাইলে ও করতে পারো । তুমি যা চাও তাই হবে শুধু ফিরিয়ে দিও না আজ আমায়
-তোমার মায়ের দেখা মেয়ের সাথে বিয়ে কর।ওনাকে কষ্ট দিও না
-ও আচ্ছা সোজাসুজি বল না তুমি রজতের চাকরী দেখে আমার থেকে সরছ তবে কেন আমায় নিয়ে খেলেছ?এটা জেনে রেখ তুমি আমার মনে থেকেই যাবে সারাজীবন, এটা আমার প্রতিশ্রুতি রইল।
-তমাল তুমি ই এসেছিলে আমার ও রজতের মাঝখানে , সে টা ভুলে যেও না।
-আমি কিচ্ছু বুঝতে চাই না এত।ভালবাসি তোমায়। বিয়ে কর। অন্য মেয়েকে বিয়ে করলে সে হয়ত শরীর পাবে কিন্তু মন তোমার ই থাকবে শুভ্রা , এই প্রতিশ্রুতি রইল তোমার কাছে

সেদিন সে দিন প্রচণ্ড ভাবে অপমান করেছিল তমালকে । চোখের জল নিয়ে ফিরে গিয়েছিল ।শুভ্রা পারে নি ভবিষ্যতকে উপেক্ষা করতে।কিছু দিন বাদে রজত কে বিয়ে করেছিলকিন্তু ভালবাসা!!!!!
সে তো আধরা।না পেরেছিল তমালের হতে , না পারল রজতের হয়ে থাকতে।বিছানায় চরম মুহূর্তে তমালের নাম শুনে চমকে উঠে ছিল রজত।সে দিন ই শেষ ভালবাসা ভেসে গিয়েছিল অলকানন্দা তে। আজ দীর্ঘ আট বছর তারা এক সাথে আছে কিন্তু........

চল মা এসে গেছি । নামতে হবে তো।তাই তো কখন যে নবদ্বীপ চলে এসেছে তার নিজের দেশ , নিজের জন্মভূমি আবার এত বছর পর দেখবে তমালের কাপড়ের দোকান টা গোবিন্দ বস্ত্রালয় এর সামনে দিয়েই যেতে হবে আজ এক বার এক বার কি সে দেখতে পাবে তমাল কে!যার জন্য তার দাম্পত্য জীবন আজ বিপর্যয় ! সে কি এত বছরে এক বার ও মনে করেছে শুভ্রা কে?
ভগবান মনে হয় মন বোঝেন।ওই তো তমাল কোলে একটি সুন্দর ফুটফুটে মেয়ে।এগিয়ে আসছে তবে কি তমাল এত দিন বাদেও চিন্তে পেরেছে শুভ্রাকে ?

-আরে শুভ্রা না ? কেমন আছ?
- ভাল।তুমি ?
-খুব ভাল।এই আমার মেয়ে
-বাহ ভারি মিষ্টি। তোমার মত হয়েছে।
-হা হা আমার ছেলে আরো সুন্দর। ছেলে ওর মায়ের মত হয়েছে তোমার বর কই ? আসে নি ? ছেলে না মেয়ে ?
-কোন টাই না আচ্ছা আসি। পরে কথা হবে এক দিন বউ বাচ্চা দের নিয়ে এস
-হ্যা আমার বউ এর তোমাকে দেখার খুব সখ যাব এক দিন

তমাল ওর বউ কে বলেছে আমার কথা ? কি বলেছে?
বলেছে কি এটাই যে এক মেয়ে ছিল যে ওকে নিয়ে খেলেছে , যে ভীষণ স্বার্থপর , নিজেরটুকু ছাড়া কিছুই বোঝে নি। হাঁটতে হাঁটতে ভাবতে থাকে শুভ্রা তবে তো তমাল ভীষণ সুখী আছে তার জীবনে , কিন্তু কিন্তু শুভ্রার জীবনটা কেন এমন হল ?? কেন হল.........

অন্তরাত্মা যেন প্রতুত্তর দিল এমন টা হবার ই ছিল যে এখনো সময় আছে শুধরে যাবার।কিন্তু নিয়তি খণ্ডাবে কে ! যে প্রতিশ্রুতি তমাল করেছিল সেই প্রতিশ্রুতি বইতে বইতে ক্লান্ত ফেলা আসা পথ ক্লান্তু বর্তমান ক্লান্ত ভবিষ্যত।